logo ১৭ মে ২০২৫
ইউরোপে ইসলাম ধর্মত্যাগীরা প্রকাশ্যে আসতে চাইছে
ঢাকাটাইমস ডেস্ক
২০ নভেম্বর, ২০১৪ ২০:৫৪:৪৮
image

ঢাকা: ইউরোপের অসংখ্য মুসলিম প্রকাশ্যেই তাদের ধর্মত্যাগ করে খ্রিস্টান ধর্মে ধর্মান্তরিত বা সংশয়বাদীতে পরিণত হচ্ছেন। এক্ষেত্রে তারা মুসলিম সম্প্রদায়ের বিধি-নিষেধেরও কোনো তোয়াক্কা করছেন না।


ফরাসি সিনেমা নির্মাতা ছিয়েন্নে ক্যারুন তার দ্য অ্যাপোস্টল নামক সিনেমায় ইতোমধ্যেই এক মুসলিম তরুণের ক্যাথলিক খ্রিস্টান ধর্মে ধর্মান্তরিত হওয়ার কাহিনী তুলে ধরার মাধ্যমে দেখিয়েছেন মুসলিম তরুণরা ধর্মান্তরিত হতে গিয়ে পরিবার ও বন্ধু বান্ধবদের সামনে কী ধরনের বিড়ম্বনার মুখে পড়েন।


সাইদ (৪৬) নামে ফ্রান্সের এক ইসলামত্যাগী বলেন, ‘স্বধর্ম ত্যাগের বিষয়টি নিয়ে আর লুকো-ছাপা করার কিছুই নেই।’ উল্লেখ্য, সাইদ উগ্র ইসলামপন্থা ত্যাগ করে ইভানজেলিকাল প্রোটেস্ট্যান্ট মতবাদে দীক্ষা নিয়েছেন। আর ফ্রান্সের অল্প যে কয়জন স্বধর্মত্যাগী মুসলিম প্রকাশ্যে তাদের ধর্মান্তরিত হওয়ার কথা স্বীকার করেছেন সাইদ তাদেরই একজন।


সাইদ জানান তার সম্প্রদায়ের সদস্যরা তার ধর্মত্যাগের বিষয়টি মেনে নিয়েছে। তবে এ নিয়ে তাকে অনেক হাসি-তামাশা ও জ্বালাতনের শিকার হতে হয়েছে।


তবে মুসলিম ব্রাদারহুড ও সালাফি ইসলামপন্থীরা স্বধর্মত্যাগীদের ব্যাপারে যে কট্টর দৃষ্টিভঙ্গী লালন করে থাকেন, সে ব্যাপারে তিনি সতর্ক করে দেন।


সৌদি আরবে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সাবেক এক ইসলাম ধর্ম প্রচারক রেদোয়ান আত্তিয়া বলেন, ‘মুসলিম সমাজে ধর্মত্যাগ নিষিদ্ধ। কিন্তু কোরআনে এ ব্যাপারে স্পষ্ট করে কোনও শাস্তির কথা উল্লেখ করা হয়নি।তবে হাদিসে ইসলাম ধর্মত্যাগীদের হত্যা করার আদেশ দেওয়া আছে।


উল্লেখ্য, রেদোয়ান আত্তিয়া বর্তমানে বেলজিয়ামের লিয়েজ বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলাম বিশেষজ্ঞ হিসেবে কর্মরত আছেন।


এদিকে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইউরোপে যতো মানুষ ইসলাম ধর্ম ত্যাগ করছেন তার চেয়ে বেশি সংখ্যক মানুষ ইসলাম গ্রহণ করছেন। অবশ্য মুসলিম থেকে ধর্মান্তরিত হয়ে খ্রিস্টধর্মের ইভানজেলিক্যাল মতবাদে দীক্ষা নেওয়ার ঘটনাও বেড়ে চলেছে।


শ্রমিক শ্রেনী ও অভিবাসী মুসলিমরাই মূলত ইভানজেলিকাল মতবাদে দীক্ষা নিচ্ছেন বেশি।


রেদোয়ান আত্তিয়া বলেন, ‘ইউরোপ এবং আরব দেশগুলোতে প্রায় সমানভাবেই নাস্তিকতার প্রবণতা বাড়ছে। কিন্তু নতুন ঘটনা হল,ধর্মীয় বিশ্বাস ত্যাগকারীরা এখন প্রকাশ্যেই তাদের ধর্মহীনতার কথা বলতে চাইছে।’


তিনি বলেন,‘ইসলামের উগ্রপন্থা এবং জিহাদি মতবাদের কারণেই পাল্টা উগ্র ধর্মহীনতার প্রবণতা বাড়ছে।’


আহমেদ নামে বেলজিয়ামের ৪০ বছর বয়সী এক ইসলামত্যাগী প্রকৌশলী জানান, তিনি ইসলাম ধর্ম ত্যাগ করেছেন কারণ ইসলাম এর অনুসারীদের দৈনন্দিন জীবন যাত্রার উপর পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ আরোপ করতে চায়। এছাড়া তিনি মৌলবাদি ইসলামপন্থীদের অতিবেশি কর্তৃত্ববাদী মনোভাবের বিরুদ্ধেও বিষোদগার করেন। তিনি মৌলবাদকে ইসলামের ভন্ডামি বলে আখ্যায়িত করেন।


তবে আহমেদ বলেন, এটা ঠিক যে, আমরা উগ্র ধর্মহীন। কিন্তু মৌলবাদি ইসলামপন্থীরা আমাদের চেয়েও উগ্রপন্থী।


ইমতিয়াজ শামস নামে লন্ডনের ২৫ বছর বয়সী আরেক ইসলামত্যাগী জানান, তিনি খুবই রক্ষণশীল এক মুসলিম পরিবার থেকে বেরিয়ে এসেছেন। দুই বছর আগে প্রকাশ্যেই ধর্মত্যাগ করে পরিবার ছেড়ে আসেন বলে জানান ইমতিয়াজ। তিনি বর্তমানে লন্ডনের ইসলামত্যাগী একটি আন্ডারগ্রাউন্ড দলের সদস্য। দলটিতে প্রায় ৩০০ ইসলামত্যাগী সদস্য রয়েছে।


শামস জানান দলটির সদস্যরা প্রতি সপ্তাহে পরস্পরের সঙ্গে দেখা সাক্ষাৎ করেন। এসময় তারা পরস্পরের ভালো-মন্দের খোঁজ-খবর নেন এবং যত্ন-আত্তি করেন। তবে তাদের গ্রুপটি ইসলামের বিরুদ্ধে কোনও উগ্রতা প্রদর্শন করে না বলেও জানান শামস।


শামস বলেন, ‘কোনও মুসলিমের জন্য ধর্ম বিশ্বাস ত্যাগ করে পরিবার ছেড়ে আসাটা খুবই কঠিন কাজ। কারণ পরিবারের ধর্মবিশ্বাসের প্রতি সম্মান বজায় রেখেও যদি আপনি বের হয়ে আসতে চান তারপরও তারা মর্মাহত হবে। এমনকি তারা ভাববে আপনি তাদের ঘৃণাভরে ত্যাগ করছেন এবং তাদের মুখের উপর থুতু ছিটিয়ে দিয়ে আসছেন!’


শামস জানান, ‘আর তাছাড়া আমার মা আমি জাহান্নামে যাবো ভেবে বেশি মর্মাহত হয়েছেন। আমার প্রতি দরদ থেকেই তিনি এমনটা ভেবেছেন।’


ইমতিয়াজ শামস বলেন, তার ধারণা মতে, লন্ডনের মুসলিম সম্প্রদায়ের ৬ লাখ সদস্যের ১০ হাজার জনই তাদের ধর্মবিশ্বাস নিয়ে সংশয়বাদী হয়ে পড়েছেন।


(ঢাকাটাইমস/২০নভেম্বর/এমএটি)