ঢাকা: ব্যস্ত জীবনে যেখানে ইবাদতের অবসর দিন দিন কমে আসছে, সেখানে ইবাদত কবুল হওয়া না হওয়া নিয়ে ভাববার সময়ও আমরা হারিয়ে ফেলছি।
পবিত্র কোরআন ও রাসূল (সা.)-এর হাদিস থেকে জানা যায়, আমরা যে ইবাদতই করি না কেন, তা আল্লাহর কাছে গৃহীত হওয়ার প্রথম ও প্রধান শর্ত হলো ইখলাস। ইখলাসবিহীন কোনো আমলই আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। বরং সুফিরা মনে করেন, ইখলাসবিহীন আমলই বান্দার জাহান্নামে যাওয়ার জন্য যথেষ্ট।
প্রখ্যাত সুফি ও দার্শনিক ইমাম গাজালী (রহ.) তার বিখ্যাত গ্রন্থ ‘কিমিয়ায়ে সাআদাতে’ লিখেছেন, ‘ইখলাস সকল আমলের মূল। কোনো বান্দা যদি তার সমস্ত জীবনে সামান্য মুহূর্তও আল্লাহর জন্য খালেসভাবে অতিবাহিত করে, তবে তা বান্দার জান্নাতে যাওয়ার জন্য যথেষ্ট হবে। কেননা পার্থিব যে কোনো মোহ ও সমাজের দৃষ্টি আকর্ষণের যাবতীয় লোভ থেকে মুক্ত হয়ে একমাত্র আল্লাহপাকের জন্য সমর্পিত আত্মার সামান্য আমলও ইখলাসের কারণে অনেক বেশি মূল্যবান হয়ে ওঠে।’
ইখলাসের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে হজরত আবু উসমান (রহ.) বলেছেন, নিজের প্রতি মহান আল্লাহর সার্বক্ষণিক দৃষ্টির কথা স্মরণ রেখে সৃষ্ট জীবের সমুদয় কৃত্রিমতা ভুলে যাওয়ার নাম ইখলাস।
ইখলাসের ব্যাপারে আরও সুন্দর ব্যাখ্যা দিয়েছেন বিখ্যাত সুফি ফুজাইল (রহ.)। তিনি বলেন, মানুষের কারণে আমল ছেড়ে দেয়ার নাম রিয়া। আর মানুষের জন্য আমল করার নাম শিরক। কিন্তু এ দুটো থেকে মুক্ত হয়ে একমাত্র আল্লাহর জন্য আমল করাই হচ্ছে ইখলাস।
পবিত্র কোরআনের বিভিন্ন জায়গায় আল্লাহ আমাদের ইখলাসের সঙ্গে একনিষ্ঠ হয়ে ইবাদতে মগ্ন হওয়ার জন্য আদেশ দিয়েছেন।
পবিত্র কুরআনে সূরা বাইয়েনাতের ৫ নং আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘তাদের এছাড়া কোনো নির্দেশ করা হয়নি যে, তারা খাঁটি মনে একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর ইবাদত করবে, নামাজ কায়েম করবে এবং জাকাত দেবে। আর এটাই সঠিক ধর্ম।’
সূরা যুমারের ২ নং আয়াতে আল্লাহ বলেছেন, আমি আপনার প্রতি এ কিতাব যথার্থরূপে নাজিল করেছি। অতএব, আপনি নিষ্ঠার সাথে আল্লাহর ইবাদত করুন। একই সূরার ১১ নং আয়াতে বলা হয়েছে, নবী আপনি বলুন, আমি নিষ্ঠার সাথে আল্লাহর ইবাদত করতে আদিষ্ট হয়েছি।
মহান আল্লাহর কাছে আমাদের যাবতীয় আমল গৃহীত হওয়ার ক্ষেত্রে বাহ্যিক কোনো রঙঢঙ কিংবা কোনো পার্থিব বিবেচনা যে উদ্দেশ্য নয়, তা স্মরণ করিয়ে দিয়ে রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ তোমাদের শরীর এবং আকৃতির দিকে লক্ষ্য করেন না। বরং তিনি তোমাদের অন্তর ও আমলের প্রতি দৃষ্টি দেন।’ (বুখারি ও মুসলিম)। তিনি (সা.) আরও বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই প্রতিটি আমল বা কাজ নিয়তের ওপর নির্ভরশীল।’
সুফিরা বলেন, অনেক ছোট কাজ নিয়তের কারণে মহান আল্লাহর কাছে অতিশয় মূল্যবান ও দামি হয়ে যায়। আবার অনেক বড় কাজ নিয়তের ত্রুটির কারণে তুচ্ছ হয়ে যায়।
হজরত ইয়াকুব আল মাকফুফ বলেছেন, একজন খালেস আমলদার মুমিন তার নেক কাজগুলো এমনভাবে গোপন রাখে যেভাবে সে তার কৃত পাপ কাজগুলো লুকিয়ে রাখে।
(ঢাকাটাইমস/২০নভেম্বর/এমআর)