রমজানের অপরিহার্য আমল তারাবি
ইসলাম ডেস্ক
২৪ জুন, ২০১৫ ১৪:৪৩:৪২

ঢাকা: রমজান মাসের গুরুত্বপূর্ণ আমল হলো তারাবির নামাজ। এই নামাজ সুন্নতে মুয়াক্কাদা। রাসুল (সা.) লাগাতার তিনদিন জামাতের সঙ্গে এ নামাজ আদায় করেন। কিন্তু এতে লোকসংখ্যা এত বৃদ্ধি পায় যে, রাসুল (সা.) আশঙ্কা করলেন এর কারণে তারাবির নামাজ ফরজ করে দেয়া হতে পারে। তাই তিনি সম্মিলিতভাবে জামাতে নামাজ আদায় করলেন না। তবে তারাবির নামাজের প্রতি তার উত্সাহ অক্ষুণ্ন ছিল।
ওমর (রা.)-এর যুগ থেকে নিয়মতান্ত্রিক তারাবির জামাতের প্রচলন ঘটে এবং সাহাবায়ে কেরামের ঐকমত্যের ভিত্তিতে তা সুন্নত সাব্যস্ত হয়। রাসুল (সা.) বিভিন্ন হাদিসে তারাবির ফজিলত বর্ণনা করেছেন। এক হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি রমজানের রাতে ঈমান ও পুণ্যের আশায় তারাবির নামাজ আদায় করবে, তার পূর্ববর্তী পাপগুলো ক্ষমা করে দেয়া হবে।’ অন্যত্র বলেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহ পাক তোমাদের ওপর দিনের বেলায় রমজানের রোজাকে ফরজ করেছেন। আর আমি তোমাদের জন্য (রাতে) তারাবিকে সুন্নত রূপে ঘোষণা দিলাম। যে ব্যক্তি সওয়াবের আশায় রমজানের দিনে রোজা রাখবে আর রাতে তারাবির নামাজ আদায় করবে সে তার পাপ-পঙ্কিলতা থেকে এমনভাবে মুক্ত হয়ে যাবে, যেমন সন্তান মাতৃগর্ভ থেকে (পাপমুক্ত) ভূমিষ্ঠ হয়।’
তারাবির নামাজ যেমন সুন্নতে মুয়াক্কাদা তেমনি এ নামাজে একবার সম্পূর্ণ কোরআন শরিফ খতম করাও সুন্নতে মুয়াক্কাদা। এটা নিজে পড়ে হোক কিংবা শ্রবণ করে। মহল্লার মসজিদে আদায় করলে মহল্লাবাসীর পক্ষ থেকে আদায় হয়ে যাবে। খতমে তারাবি অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ একটি আমল। রমজান মাসে প্রত্যেক আমলের জন্য সত্তর গুণ নেকি বেশি দেয়া হবে। সে হিসেবে কোরআনের প্রতিটি হরফের বিনিময়ে অসংখ্য নেকির আশা করা যায়। তাছাড়া এ নামাজে রুকু-সিজদা ও তাসবিহের পরিমাণও অনেক। হাদিসে বলা হয়েছে ‘একটি সিজদার মূল্য আসমান ও জমিন এবং তাতে যা আছে সবকিছু থেকে উত্তম।’ সুতরাং একদিনের তারাবিতে আমাদের আমলনামায় কত সওয়াব জমা হয় তার হিসাব কষা কঠিন।
কোরআন নাজিলের মাস হিসেবে রমজানের সঙ্গে কোরআনের সম্পর্ক ওতোপ্রোত। এ মাসে কোরআন পড়তে ও শুনতে যে স্বাদ পাওয়া যায় তা অন্য সময় পাওয়া যায় না। এজন্য খতমে তারাবির মাধ্যমে প্রত্যেকেই দীর্ঘ একমাস কোরআনের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে পারা জীবনের জন্য বড় প্রাপ্তি। কিন্তু এ প্রাপ্তির আশা তখনই করা যায় যখন খতমে তারাবিতে কোরআনের হক যথাযথ আদায় হবে। আমাদের দেশে বর্তমানে প্রচলিত খতমে তারাবিতে সে হক কতটুকু আদায় হচ্ছে তা বিবেচনা করা দরকার।
আরবি ভাষায় ‘তারাবি’ শব্দটি ‘তারবিহাতুন’ ধাতু থেকে নির্গত। এর অর্থ হচ্ছে আরাম করা, বিশ্রাম করা। যেহেতু এ নামাজ আরাম করার মাধ্যমে আদায় করার বিধান তাই এ নামাজকে তারাবির নামাজ বলা হয়। কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে আমাদের দেশে এ নামাজ তাড়াতাড়ির নামাজ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। কে কত দ্রুত নামাজ শেষ করতে পারে তা নিয়ে হাফেজদের মধ্যে অঘোষিত এক প্রতিযোগিতা চলতে থাকে। দ্রুত পড়ে অভ্যস্ত হওয়ার কারণে মুসল্লিদের কাছেও একটু দেরি সহ্য হয় না। কোনো হাফেজ একটু ধীরগতিতে পড়লে মনে করা হয় তিনি হয়তো তেমন অভিজ্ঞ নন। এভাবে পড়ার কারণে একদিকে মুসল্লিরা তেলাওয়াতের কিছু্ই বুঝতে পারছে না, শুধু শেষে লম্বা টান ছাড়া, আর অন্যদিকে কোরআনের সঙ্গে চরম বেয়াদবি করা হচ্ছে। দ্রুত রুকু-সিজদা ও অন্যান্য আহকাম পালন করতে গিয়ে সবাইকে রীতিমত হাঁফিয়ে উঠতে হচ্ছে। অসুস্থ ও দুর্বল লোকদের জন্য অত্যন্ত কষ্টসাধ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। সব মিলিয়ে বর্তমানে এ দেশের আরামের নামাজ তারাবি কষ্টদায়ক নামাজে পরিণত হয়েছে।
কোরআনে কারীম হচ্ছে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ আসমানি গ্রন্থ। দুনিয়ার অন্য কোনো গ্রন্থের সঙ্গে এর তুলনা চলে না। তাই এই কোরআন তেলাওয়াতে এর আদবের প্রতি সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হয়।
আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আমি কোরআনকে যতিচিহ্নসহ পৃথক পৃথকভাবে পাঠের উপযোগী করেছি, যাতে আপনি এক লোকদের কাছে ধীরে ধীরে পাঠ করেন এবং আমি একে যথার্থভাবে অবতীর্ণ করেছি। (বনী ইসরাইল-১০৬) অন্যত্র বলেন, ‘কোরআন আবৃত্তি করুন সুবিন্যস্তভাবে স্পষ্টভাবে।’ (মুয্যাম্মিল—৪) আয়াতদ্বয়ের উদ্দেশ্য হচ্ছে দ্রুত কোরআন তেলাওয়াত করবেন না, বরং সহজভাবে, অন্তর্নিহিত অর্থ সম্পর্কে চিন্তা করে উচ্চারণ করবেন। রাতে নামাজে রাসুল (সা.) কিরূপে কোরআন তেলাওয়াত করতেন—এ প্রশ্নের জবাবে হযরত উম্মে সালমা (রা.) রাসুলুল্লাহর (সা.) কেরাত অনুকরণ করে শোনান, তাতে প্রত্যেকটি হরফ স্পষ্ট ছিল। যথাযথ নিয়মে কোরআন তেলাওয়াত না করা কোরআনের সঙ্গে বেয়াদবির শামিল। বর্তমানে আমাদের দেশের মসজিদসমূহে খতমে তারাবির নামে কোরআনের সঙ্গে বেয়াদবি করা হচ্ছে না তো? এ ব্যাপারে সবাইকে আরো সচেতন হতে হবে। প্রয়োজনে একটু সময় বেশি লাগলেও ধীর-স্থিরে, তারতিলের সঙ্গে কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে খতমে তারাবি পড়তে হবে।
(ঢাকাটাইমস/২৪জুন/জেবি)