logo ২৪ এপ্রিল ২০২৫
পুলিশের চাকরিচ্যুতরা বিপজ্জনক
মহিউদ্দিন মাহী
২৫ আগস্ট, ২০১৫ ১১:১২:৪১
image


১৯৯৩ সালের কথা। বরগুনার গোলাম মোস্তফা শাহীন কনস্টেবল হিসেবে যোগ দেন পুলিশ বাহিনীতে। বিভিন্ন থানা, ফাঁড়ি, ডিবি এবং পুলিশ সদর দপ্তর ও এসপির দেহরক্ষী হিসেবে চাকরি করেন। তার হেফাজত থেকে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার, চেক জালিয়াতি ও শীর্ষ সন্ত্রাসীদের সঙ্গে সখ্যের কারণে ২০০০ সালে তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়।

চাকরি হারানোর পর আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন শাহীন। নিজে তৈরি করেন ডাকাত দল ও ছিনতাই পার্টি। পরিচয় দিতেন পরিদর্শক ও সহকারী কমিশনার হিসেবে। ২০০০ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন মহাসড়কে ডাকাতির ঘটনায় যারা আটক হয়েছে তাদের অনেকেরই ‘গুরু’ এই শাহীন।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও অপরাধ জগতে তিনি ‘পুলিশ শাহীন’ হিসেবে পরিচিতি পান। ঢাকা মহানগরে তার একাধিক দল রয়েছে। শাহীন এখন পুলিশের খাতায় তালিকাভুক্ত অপরাধী। রাজধানী ছাড়াও দেশের বিভিন্ন থানায় তার বিরুদ্ধে ২০টি মামলা রয়েছে। হন্যে হয়ে শাহীনকে খুঁজছে পুলিশ-র‌্যাব। ২০১১ সালের ডিসেম্বরে পাঁচ সহযোগীসহ ‘পুলিশ শাহীন’ পুলিশের হাতে অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার হন। এর পরের বছর নরসিংদী জেলা কারাগার থেকে জামিনে বেরিয়ে তিনি আবার পুরনো পেশায় জড়িয়েছেন বলে তথ্য পেয়েছে পুলিশ।

জাতীয় শোক দিবসে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দেওয়া নিয়ে কুষ্টিয়ায় গুলিবর্ষণের ঘটনায় জড়িত ছিলেন বরখাস্ত হওয়া পুলিশ কর্মকর্তা আনিচুর রহমান আনিচ। পুলিশের সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) পদ থেকে দেড় বছর আগে বরখাস্ত হন তিনি। রাজধানীর কাফরুল থানায় কর্মরত অবস্থায় ঘুষ লেনদেনের কারণে তাকে বরখাস্ত করা হয়।

গত ১১ জুন চাঁদাবাজির অভিযোগে রাজধানীর শাহজাহানপুর এলাকা থেকে দুজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাদের মধ্যে নূর ইসলাম পুলিশের নায়েক ছিলেন। ৯ মাস আগে তাকে বরখাস্ত করা হয়।

গত ২৮ জুন রাজধানীর তুরাগ থেকে সাবেক সেনাসদস্যসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তারা হলেন সেনাবাহিনীর সাবেক ল্যান্স করপোরাল আবদুল গফুর, সাবেক সার্জেন্ট গোলাম মোহাম্মদ চৌধুরী, তাদের সহযোগী আজাদ হোসেন রুকন, সোহানুর আলম ও মোহাম্মদ সানাউল্লাহ।

এভাবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী থেকে বিভিন্ন অভিযোগে নানা সময় চাকরিচ্যুত করা হয় সদস্যদের। নিজেরাও কেউ কেউ চাকরি থেকে ইস্তফা দেন। এদের সবারই অস্ত্র চালনাসহ নানা প্রশিক্ষণ থাকে। তাই সাধারণ অপরাধীর তুলনায় এরা নিপুণভাবে কাজ করতে পারে। আবার অপরাধের তদন্ত প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ততা থাকার কারণে কীভাবে অপরাধ করলে পার পাওয়া যাবে, সে বিষয়েও ধারণা থাকে এদের। তা ছাড়া বাহিনীর ভেতর অপরাধপ্রবণ কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগের কারণে আগাম তথ্য পাওয়াও সহজ হয়ে যায় এদের জন্য। ফলে ঘটনার পর দ্রুত এলাকা ছাড়তে সহজ হয় তাদের পক্ষে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাবেক সদস্যদের কেউ কেউ অপরাধীচক্রের সঙ্গে হাত মিলিয়ে দল গড়ে তুলেছেন। চাকরিতে থাকার সময় পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে এসব অপরাধীর সঙ্গে তাদের পরিচয় হয়। কোনো কারণে চাকরি হারানোর পর এই অপরাধীদের যোগসাজশেই মাঠে নামেন সাবেক সদস্যরা। জঙ্গি তৎপরতা বা টাকার বিনিময়ে জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার তথ্যও পেয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

অনেক ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে তল্লাশির নামে তারা মানুষের টাকা-পয়সা কেড়ে নেয়। কখনো আটক বা গ্রেপ্তারের নামে তারা লোকজনকে গাড়িতে তুলে গোপন আস্তানায় নিয়ে যান। সেখান থেকে অপহৃত ব্যক্তির পরিবারের কাছে চাওয়া হয় মোটা অঙ্কের মুক্তিপণ। পুলিশ বা র‌্যাব পরিচয়ে চাঁদা আদায়ের ঘটনাও ঘটছে। তারা টাকার বিনিময়ে জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ দিয়েছেন।

২০১০ সাল থেকে এখন পর্যন্ত পুলিশ-র‌্যাব ও বিজিবি থেকে নানা অপরাধে বরখাস্ত বা চাকরিচ্যুত হয়েছেন ছয় হাজারেও বেশি। বিডিআর বিদ্রোহ মামলায় যে ৮৫০ জনের বিচার চলছে সে হিসাব এর বাইরে। এর মধ্যে বিডিআর বিদ্রোহ মামলায় বরখাস্ত হয়েছেন সবচেয়ে বেশি, এই সংখ্যা পাঁচ হাজারের কিছু বেশি। বাকি এক হাজার পুলিশ ও র‌্যাবের সদস্য। বাহিনীতে থেকেই এই সদস্যরা যেখানে অপরাধে জড়িয়েছেন, সেখানে কোনো কর্তৃপক্ষের অধীনে না থাকলে তারা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠে কি না, সে চিন্তা করা হয়নি কখনো। নানা ঘটনায় দেখা গেছে, এমন আশঙ্কাই সত্য প্রমাণ হয়েছে। অপরাধপ্রবণ ব্যক্তিরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী থেকে বের হয়ে আরও বেশি অপরাধে জড়িয়েছেন।  

পুলিশের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, কঠোর ব্যবস্থা হিসেবে চাকরিচ্যুতি সব সময়। কিন্তু যেহেতু এরা অপরাধপ্রবণ হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে, তাই এদের নিয়মিত নজরদারির আওতায় রাখা উচিত ছিল। কিন্তু বিষয়টি এতদিন গুরুত্ব পায়নি। সম্প্রতি এ নিয়ে আলোচনা হচ্ছে বাহিনীতে।  

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার মাশরেকুর রহমান খালেদ বলেন, ‘আমরা নজরদারি রাখি না, সেটা পুরোপুরি ঠিক নয়। কিন্তু আমাদেরও সীমাবদ্ধতা রয়েছে। সে জন্য হয়ত সবাইকে এর আওতায় আনা সম্ভব হয় না।’

ঢাকা মহানগর উত্তর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার শেখ নাজমুল আলম বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী থেকে চাকরিচ্যুত বা অবসরে যাওয়ার পর যারা ফৌজদারি অপরাধে জড়াচ্ছে, তাদের ওপর গোয়েন্দা নজরদারি রয়েছে। অনেকে ধরাও পড়ছে।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনলোজি (অপরাধ বিজ্ঞান) বিভাগের অধ্যাপক জিয়া রহমান বলেন, আমাদের পুরো পুলিশ বাহিনীর সংস্কার দরকার। তিনি বলেন, ‘স্বাধীন দেশেও নিরাপত্তা বাহিনী ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক ধারাবাহিকতায় চলে। তাদের বেতন কাঠামো থেকে শুরু করে সবকিছুই ঢেলে সাজাতে হবে।’ জিয়া রহমান বলেন, চাকরিচ্যুত পুলিশ কর্মী তো বটেই, সব অপরাধীর ক্ষেত্রেই আলাদা ফাইল করা দরকার। তাদের একটা নিয়ম নীতির মধ্যে আনা উচিত।  

বাহিনীতে নিয়ন্ত্রণে থেকেও অপরাধ

পুলিশ সদর দপ্তরের এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, কনস্টেবল থেকে উপ-পরিদর্শক (এসআই) পদের পুলিশ সদস্যরা অপরাধে জড়াচ্ছেন সবচেয়ে বেশি। আর নানা অভিযোগে ২০১০ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত ৫ বছরে কনস্টেবল থেকে এসআই পদে ৬৩ হাজার ৩৪৯ জনকে লঘুদ-, তিন হাজার ৫৯০ জনকে গুরুদ-, ৪৬১ জনকে বরখাস্ত বা চাকরিচ্যুত ও ১২৩ জনকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে।

পরিদর্শক পর্যায়ে ২০১০ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে ২৩৪ জনের বিরুদ্ধে। এর মধ্যে ২০৭ জনকে লঘুদ- ও ২৭ জনকে গুরুদ- দেয়া হয়েছে। এ সময় ৬৩ জন এএসপি থেকে ওপরের স্তরের কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৪৭ জনকে লঘুদ-, ১২ জনকে গুরুদ-, ১ জনকে চাকরিচ্যুত এবং তিনজন কর্মকর্তাকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে।

পুলিশ সদর দপ্তরের সূত্রমতে, লঘুদ-, গুরুদ- ও বিশেষ দ- এই ভাবে অপরাধী পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে নিজস্ব আইনে ব্যবস্থা নেয় পুলিশ সদর দপ্তরের ডিসিপ্লিন অ্যান্ড প্রফেশনাল স্ট্যান্ডার্ড শাখা। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জমা পড়া অভিযোগও তদন্তের জন্য পুলিশ সদর দপ্তরে পাঠানো হয়।

পুলিশ সদর দপ্তরের হিসাবে গত এক বছরে সারা দেশ থেকে ১৩ হাজার ৭৪৫ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে সিকিউরিটি সেলে অভিযোগ জমা পড়েছে। এর মধ্যে প্রাথমিক তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ৫৬৬ জনের বিরুদ্ধে নেওয়া হয়েছে বিভিন্ন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা।

গত দেড় বছরে পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে অভিযোগের মধ্যে এক হাজার ৮৮১ জনের বিরুদ্ধে আনা হয়েছে চুরি, ডাকাতি, খুন কিংবা ছিনতাইয়ের মতো গুরুতর সব অপরাধ। ৯ হাজার ২৬৫ জনের বিরুদ্ধে আনা হয় হয়রানি, ঘুষ গ্রহণ ও পেশায় নানা অনিয়ম-অনাচারসহ শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ। বাকি দুই হাজার ৫৯৯টি অভিযোগ রয়েছে ক্ষমতার অপব্যবহার ও স্বেচ্ছাচারিতার। সূত্র জানিয়েছে, যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে তাদের মধ্যে আটজন পুলিশ সুপার, তিনজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, ২২ জন সিনিয়র সহকারী সুপার, ৪২২ ইন্সপেক্টর, সাত হাজার ৩৫ জন এসআই, তিন হাজার ৭১৮ এএসআই, এক হাজার ৩১৫ সার্জেন্ট ও টিএসআই, দুই হাজার ৪৩১ হাবিলদার, এক হাজার ২১৯ জন নায়েক ও তিন হাজার ১৩২ জন কনস্টেবল রয়েছেন। ২০১২ সালের জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের ৩০ জুনের মধ্যে জমাকৃত এসব অভিযোগের সব ইতিমধ্যেই নিষ্পত্তি হয়েছে।

এর মধ্যে গুরুতর অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে শতাধিক সদস্যকে গ্রেপ্তার ছাড়াও চাকরিচ্যুত ও বাধ্যতামূলক অবসর দেওয়া হয়েছে ১২৮ জনকে। তবে যাদের চাকরিচ্যুত কিংবা বাধ্যতামূলক অবসর দেওয়া হয়েছে তাদের মধ্যে পুলিশের কনস্টেবল পর্যায়ের সদস্য বেশি। অভিযোগ রয়েছে, পুলিশের সাব-ইন্সপেক্টর, ইন্সপেক্টর, সহকারী পুলিশ কমিশনার কিংবা অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার পদমর্যাদার অনেক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ থাকলেও তাদের বিরুদ্ধে কঠোর কোনো দ- বা ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

এ ছাড়া সদর দপ্তরে পুলিশের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ, সন্ত্রাসীদের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ যোগসূত্র রয়েছে এমন অভিযোগের তদন্ত হচ্ছে এক হাজারেরও বেশি সদস্যের বিরুদ্ধে।

চাকরিচ্যুতসহ নানা সাজা হয়েছে র‌্যাব সদসদ্যেরও। সন্ত্রাস দমনের লক্ষ্য নিয়ে যাত্রা শুরুর পর নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ায় গত ১০ বছরে ২ হাজার র‌্যাব সদস্যের শাস্তি হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাহিনীটির কর্মকর্তারা। এর বড় অংশই সামরিক বাহিনী থেকে আসা কর্মকর্তা।

র‌্যাবের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০০৪ সালে গঠনের পর থেকে বিভিন্ন অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত র‌্যাব সদস্যের সংখ্যা এক হাজার ৯৪৯ জন। এদের মধ্যে জেলসহ বরখাস্ত হয়েছেন ১২ জন, শুধু বরখাস্ত হয়েছেন ১০৭ জন।

বাহিনী গঠনের ৫ মাসের মাথায় ২০০৪ সালের ২৩ আগস্ট গাবতলী হাটে গরু ব্যবসায়ীর কাছ থেকে প্রায় তিন লাখ টাকা ছিনতাই করে হাতেনাতে গ্রেপ্তার হন কয়েকজন র‌্যাব সদস্য। সেটিই ছিল জনসম্মুখে প্রকাশ হওয়া র‌্যাব সদস্যদের প্রথম অপরাধ। ওই ঘটনায় তিনজন র‌্যাব সদস্য জড়িত ছিলেন। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও নেওয়া হয়।

কর্তব্যে অবহেলা, চাঁদাবাজি, আটকে রেখে নির্যাতন, মূল্যবান জিনিস ও টাকা আত্মসাৎ এবং মারামারি, চুরি, কর্মকর্তার অস্ত্র হারিয়ে ফেলা, গ্রেপ্তারকৃত আসামিদের মারধর, গোপন তথ্য ফাঁস, মদপানসহ নানা অপরাধেও সাজাপ্রাপ্তদের জড়িত থাকার প্রমাণ মিলেছে বাহিনীটির অভ্যন্তরীণ তদন্তে।

র‌্যাব জানিয়েছে, সাজাপ্রাপ্তদের কারো কারো বিরুদ্ধে মামলা, কাউকে চাকরিচ্যুত করা, বেতন কেটে নেওয়া, র‌্যাব থেকে মূল বাহিনীতে ফেরত পাঠানো অথবা কাউকে ভর্ৎসনা করা হয়েছে।

বিজিবিতে গত পাঁচ বছরে শাস্তি হয়েছে প্রায় ১১ হাজার জওয়ানের। এদের মধ্যে ছয় হাজার জনকে চাকরিচ্যুত করা হয়। বিডিআর বিদ্রোহ মামলায় যে ৮৫০ জনের বিচার চলছে তারাও আছেন চাকরিচ্যুতের তালিকায়।



বিপদ টের পাচ্ছে পুলিশ-র‌্যাব

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সূত্র বলছে, এই চাকরিচ্যুত বিপুল সংখ্যক প্রশিক্ষিত অপরাধপ্রবণ সদস্য এখন সরকারের এক দুশ্চিন্তার নাম। কারণ চাকরিচচ্যুতির পর এদের কী করতে হবে সে বিষয়ে কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। তবে সম্প্রতি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশের সহকারী মহাপরিদর্শক (মিডিয়া) নজরুল ইসলাম বলেন, যারা অপরাধ করে চাকরিচ্যুত হন তাদের বিষয়ে নিরীক্ষণের বিষয়ে উপরের নির্দেশনা আছে। সেটা নিয়মিতই করা হয়।

নিরীক্ষণের পর কীভাবে তারা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে এমন প্রশ্নের জবাবে ওই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘স্বর্গে থেকেও তো মানুষ অপরাধে জড়িয়ে পড়েছিল। মানুষকে পাহারা দিয়ে কতক্ষণ রাখা যায়।’

র‌্যাব থেকে চাকরিচ্যুতদের ওপর নতুন করে গোয়েন্দা নজরদারির সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাহিনীটি। র‌্যাবের গোয়েন্দা সংস্থাও জানতে পেরেছে শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে চাকরিচ্যুতদের বড় অংশই অপরাধে জড়িয়ে পড়েছেন।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে র‌্যাবের পরিচালক (গণমাধ্যম) মুফতি মাহমুদ খান বলেন, চাকরিচ্যুত করার পর কোনো সদস্যকে র‌্যাবের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো নজরদারিতে রাখা হয়নি। তার যুক্তি, ‘অপরাধের কারণে তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে।’ সাপ্তাহিক এই সময়-এর সৌজন্যে।