logo ২৪ এপ্রিল ২০২৫
বিএনপিতে চার্জশিট আতঙ্ক!
২৬ আগস্ট, ২০১৫ ২০:২৫:৪৬
image

বোরহান উদ্দিন, ঢাকাটাইমস


ঢাকা: খানিক সময় স্বস্তি। আবার অস্বস্তি। এভাবেই চলছে বিএনপি। অনেক দিন কারাগারে থাকার পর অল্প সময়ের ব্যবধানে দলের বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতার জামিনে দলটিতে স্বস্তি ফিরেছিল। কিন্তু হঠাৎই ঘটে তার ছন্দপতন। সম্প্রতি কারাগারে পাঠানো হচ্ছে শীর্ষ নেতাদের। বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতার বিরুদ্ধে চার্জশিটও দেয়া হয়েছে। আর এ থেকে বাদ যাননি দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানও। শোনা যাচ্ছে সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে বিশেষ করে নাশকতার মামলায় দ্রুত অভিযোগপত্র দাখিলের নির্দেশনাও রয়েছে। পুলিশও দ্রুত তদন্ত শেষ করে চার্জশিট দিতে শুরু করেছে। আর এটিই এখন বিএনপির জন্য আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।


মামলায় অভিযোগপত্র হয়ে যাওয়ায় মঞ্জুর হচ্ছে না জামিন আবেদনও। সবশেষ সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যানসহ একাধিক শীর্ষ নেতা এবং চেয়ারপারসনের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দেয়া হয়েছে চার্জশিট। নাশকতার অসংখ্য মামলা চার্জশিটের অপেক্ষায়। আছে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও।


কিছুকিছু মামলার চার্জশিট থেকে অনেক নেতার নাম বাদ গেলেও বেশিরভাগ নেতা চার্জশিট ও গ্রেপ্তার আতঙ্কে ভুগছেন। একইসঙ্গে জোরেশোরে পুনর্গঠনের কাজে নামার আগে এমন পরিস্থিতির তৈরি হওয়ায় দলটিকে বেকায়দায় ফেলছে। যা দলটির নেতারাও স্বীকার করছেন।


বিএনপির অভিযোগ, পুনর্গঠন প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করতে সরকার মিথ্যা মামলায় তাদের নেতাদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দিচ্ছে। কিন্তু এরমধ্যেও পুনর্গঠন কাজ চলবে।


দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য লেঃ জেনারেল (অবঃ) মাহবুবুর রহমান ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সরকার নিজ থেকে পরিস্থিতি জটিল করায় সাংগঠনিক পুনর্গঠন কাজ সঠিক সময়ে শেষ করা আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জ হবে।তবে চ্যালেঞ্জকে মোকাবেলা করে কৌশলে কাজ করতে হবে। কিন্তু এমনটা আশা করিনি।”


৫ জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া অবরোধকে ঘিরে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামসহ বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতা গ্রেপ্তার হন। ইতিমধ্যে মির্জা ফখরুল ছাড়াও আটককৃতদের মধ্যে স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরী,  চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শামসুজ্জামান দুদু, যুগ্ম মহাসচিব মো. শাহজাহান,  যুবদল সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল মুক্তি পেয়েছেন। আগাম জামিন পেয়েছেন হাতেগোনা দুইচার জন এবং তার মধ্যে স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলামও রয়েছেন।


দুদুকের মামলায় জামিন হয়েছে আরেক সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের। অতি সম্প্রতি এসব নেতার জামিন হয়। এতে বিএনপিতেও এক ধরণের স্বস্তি লক্ষ্য করা যায়।


কিন্তু এরই মধ্যে হঠাৎ করে পরিস্থিতি পাল্টে যায়।গ্রেপ্তার করা হয় চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাংবাদিক নেতা শওকত মাহমুদকে। নাশকতার মামলায় জামিন নামঞ্জুর করে আদালত থেকে কারাগারে পাঠানো হয় স্থায়ী কমিটির সদস্য এমকে আনোয়ারকে। কিছুদিন আগে আটক করা হয় ছাত্রদল সভাপতি রাজিব আহসানকে।


এরইমধ্যে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের বিএনপি সমর্থিত মেয়র ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অধ্যাপক এম এ মান্নানকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। জয়দেবপুর থানার নাশকতার মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র গৃহীত হওয়ার প্রেক্ষাপটে তাকে বরখাস্ত করা হয়।


এদিকে দলের শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক খায়রুল করিব খোকন ও যুবদল সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন আলালসহ ৩০ জনের বিরুদ্ধে দেয়া হয়েছে চার্জশিট । ২৫ আগস্ট অবরোধ চলাকালে মতিঝিল থানার নাশকতার মামলায় এই চার্জশিট দেয়া হয়। একই মামলায় যুবদলের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম নিরবসহ ২৩ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও জারি করেন আদালত।


সবশেষ মঙ্গলবার নাশকতার মামলায় চার্জগঠন করা হয় দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ৩২জন নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে। হরতাল-অবরোধে নাশকতার একটি তদন্তাধীন মামলায় তদন্ত শেষে অর্থদাতা হিসেবে তারেক রহমানের সংশ্লিষ্টতা পাওয়ায় তার বিরুদ্ধে চার্জশিট দেয়া হয়েছে বলে দাবি করেছেন পুলিশ।


একইদিনে নাশকতার মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শওকত মাহমুদ, খালেদা জিয়ার প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান সোহেল, বিশেষ সহকারী শিমুল বিশ্বাসসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে।


হঠাৎ করে সরকারের কঠোর অবস্থান বিএনপিকে ভাবিয়ে তুলছে।বুধবার দলের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলনে এমনই ইঙ্গিত মেলে।দলের মুখপাত্র ড. আসাদুজ্জামান রিপন বলেন, “দল পুনর্গঠন বাধাগ্রস্ত করতে শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলায় চার্জশিট দেয়া হচ্ছে। এরফলে আমাদের নির্ধারিত সময়ে পুনর্গঠন কাজ শেষ করা দুরুহ। তারপরও চেষ্টা করছি কিভাবে তরান্বিত করা যায়।”


অবরোধের সময়ের বেশ কয়েকটি মামলার আসামি বিএনপির সম্পাদক পর্যায়ে এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “যে অবস্থা শুরু হয়েছে তাতে আতঙ্কে আছি।কারণ চার্জশিটে নাম চলে আসলে তখন তো রেহাই পাওয়া মুশকিল।”


(ঢাকাটাইমস/২৬আগস্ট/বিইউ/ এআর/ ঘ.)