বরকতময় পানির উৎসধারা
ইসলাম ডেস্ক
০৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৫ ১৬:০৭:২৯

ঢাকা: পবিত্রতা, প্রাণময়তা ও বৈশিষ্ট্যে জমজম কূপের পানি পৃথিবীর সব পানির চেয়ে উত্তম। কাবাগৃহের ফজিলতের সাথে জমজম কূপের মাহাত্ম্য ওতপ্রোতভাবে জড়িত। কাবাগৃহের ইতিহাস ও জমজম কূপ একের সাথে অন্যটি গুরুত্বপূর্ণভাবে জড়িত। হযরত ইব্রাহীম (আ.)-এর ইতিহাসের সাথে জমজম কূপের ইতিহাস বর্ণনা রয়েছে।
হযরত ইব্রাহীম (আ.) যখন শিশু ইসমাঈল (আ.)সহ বিবি হাজেরা (আ.)কে মক্কায় নির্বাসনে পাঠান, তখন থেকেই জমজম কূপের আবির্ভাব হয়। হযরত ইব্রাহীম (আ.) যখন সিরিয়া থেকে মক্কায় পৌঁছেন তার বিবি হাজেরা (আ.) এবং দুধের শিশু হযরত ইসমাঈলকে (আ.) মক্কার মরুভূমিতে রেখে সিরিয়া প্রত্যাবর্তনের উদ্যোগ নিয়েছিলেন। তখন এক মশক পানি এবং একটি থলের মধ্যে কিছু খেজুর তাদের কাছে রেখে গেলেন। হযরত হাজেরা কয়েকদিন পর্যন্ত সে পানি ও খেজুর খেলেন এবং নিজের কলিজার টুকরা হযরত ইসমাঈলকে দুধ পান করালেন। কিন্তু এক সময় মশকের পানি ও খেজুর ফুরিয়ে এল। তিনি তখন এক চরম অসহায়তার মধ্যে নিপতিত হলেন। তাঁর শিশু সন্তানটিও ক্ষুধার তাড়নায় ছটফট করতে লাগলো। বিবি হাজেরা তখন সন্তানের দুর্দশায় তাঁর আদরের দুলালকে দুধ পানে সমর্থ হলেন না। এমতাবস্থায় তৃষ্ণাকাতর মা পানির খোঁজে সাফা ও মারওয়া পাহাড়ে দ্রুতবেগে দৌঁড়াতে লাগলেন। পরপর সাতবার দৌড়ানোর পরও কোনো পানি না পেয়ে মহান আল্লাহর কাছে সাহায্য চান। আল্লাহ রাববুল আলামীন মা হাজেরার দোয়া কবুল করেন। তখন পুত্রের কাছে গিয়ে দেখলেন আল্লাহর কুদরতে তার দুই পায়ের নিচে একটি পানির ফোয়ারা জেগে উঠেছে এবং তা ক্রমশ উথলে উঠছে ও প্রবাহিত হতে চাচ্ছে। হযরত বিবি হাজেরা তখন অত্যন্ত আনন্দিত হলেন এবং চারদিকে পাড় বেঁধে পানি থামানোর চেষ্টা করলেন। তিনি পানিকে থামার নির্দেশ দিয়ে উচ্চস্বরে বলছিলেন ‘জমজম' অর্থাৎ থেমে যাও। হযরত হাজেরার উচ্চারিত সে শব্দেই পৃথিবীর সবচাইতে পবিত্র এ কূপের নাম হয়ে যায় ‘জমজম'।
ঐতিহাসিক আজরিক মন্তব্য করেন, হযরত ইব্রাহীম (আ.) এর পরবর্তীতে বিভিন্ন গোত্র ও সম্প্রদায় মক্কা নগরীতে মানববসতির সূচনা করে। তারা জমজম কূপের নিয়ন্ত্রণ করতো। ঠিক ওভাবেই জুবহাম গোত্রের লোকেরা জমজম কূপের নিয়ন্ত্রণ লাভ করে। জুবহাম গোত্রের লোকেরা হযরত হাজেরা (আ.) এর সঙ্গে চুক্তিসাপেক্ষে জমজম কূপের পানি পান করতো। কালক্রমে তারা মক্কাঘরের পবিত্র মালামাল লুণ্ঠন ও চুরি করতে লাগলো। তারা নানা পাপাচারে লিপ্ত হলো। ফলে আল্লাহর হুকুমে এক সময় জমজম কূপের পানি শুকিয়ে গেল। সংস্কারের অভাবে একসময় জমজম কূপের স্থান ভরাট হয়ে যায়। মানুষ এই কূপের বরকত ও কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হতে থাকে।
খৃস্টীয় পঞ্চম শতাব্দীর সূচনাতে হযরত ইসমাঈল (আ.)-এর বংশধর একজন দৃঢ়চেতা, আত্মপ্রত্যয়ী পুরুষের নেতৃত্বে কাবাগৃহের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব কুরাইশরা ফিরে পায়। তাদের চতুর্দশ পুরুষ খাজা আবদুল মুত্তালিব জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর দাদা। তখন আবদুল মুত্তালিব জমজম কূপ অনুসন্ধানে আগ্রহী ও উদ্যোগী হন এবং তার এক পুত্র যায়েদকে সাথে নিয়ে অনুসন্ধান অব্যাহত রাখেন। এক রাতে তিনি স্বপ্নে জমজম কূপের নিশানা খুঁজে পান এবং কূপটি দেখতে পান।
স্বপ্নের চিহ্ন অনুযায়ী তিনি তাঁর পুত্র হারেসকে সাথে নিয়ে কূপ খননকার্য শুরু করেন এবং বাস্তবেই জমজম কূপ আবিষ্কারে সক্ষম হন। তখন থেকে আবার মানুষ এ কূপের যত্ন নিতে শুরু করেন। জমজম কূপ পৃথিবীর সবচাইতে পবিত্রতম, বরকতময় কূপ। এর পানি পৃথিবীর সর্বোত্তম ও সুস্বাদু পানি। বিভিন্ন হাদীসে এ পানির কল্যাণের কথা উল্লেখ আছে। এক হাদীসে ইরশাদ হয়েছে, জমজমের পানি যে নিয়তে (নেক উদ্দেশ্যে) পান করা হয় তা চরিতার্থ হয়। জমজমের অশেষ কল্যাণ ও বরকতের কথা অনেক হাদীসে রয়েছে। হযরত আবুবকর সিদ্দিক (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (সা.) জমজমের পানি সম্পর্কে বলেছেন, যে তা হচ্ছে বরকতময় এবং তৃপ্তিদায়ক। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আববাস বলেন, রাসূল (সা.) বলেছেন, পৃথিবীর সর্বোত্তম পানি হচ্ছে জমজমের পানি।
রাসূল (সা.) নিজ হাতে পানি উত্তোলন করতেন এবং পান করতেন। জমজমের পানি শুধু তৃষ্ণাই নিবারণ করে না, এর মধ্যে ক্ষুধাও নিবারণের যোগ্যতা রয়েছে। এ পানি মানুষের শরীরের স্বস্তিও প্রবৃদ্ধি করে এবং হজমে সহায়তা করে। এছাড়া জমজমের পানির বাহ্যিক বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এ পানি সম্পূর্ণ জীবাণুমুক্ত। জমজম কূপের আরো একটি অসাধারণ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এ থেকে লাখ লাখ লিটার পানি উত্তোলন করলেও এর পানিতে কখনো স্বল্পতা দেখা যায় না।
জমজম কূপ মূলত মহান আল্লাহ তায়ালারই কুদরতি নিদর্শন। হাজীরা প্রতি বছর লাখ লাখ টন পানি পান করেন। কিন্তু কোনোদিন পানি ফুরিয়ে যায়নি। কেয়ামত পর্যন্ত এই পানির উৎসধারা কোনোদিন বন্ধ হবে না।
(ঢাকাটাইমস/৭সেপ্টেম্বর/জেবি)