বোরহান উদ্দিন, ঢাকাটাইমস
ঢাকা: বিদ্যুস্পৃষ্ট হয়ে ডান হাত পুড়ে যাওয়া নাতি সায়েমকে নিয়ে ১১ সেপ্টেম্বর থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজের ‘বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে’ দৌড়ঝাঁপ করছেন নারায়াণগঞ্জের সেলিমা(ছদ্মনাম)। রোগির অবস্থার উন্নতি হওয়ায় ১ অক্টোবর তাকে বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু এখনো প্রতি সপ্তাহে একদিন ড্রেসিং করাতে রোগিকে নিয়ে তাকে বার্ন ইউনিটে আসতে হচ্ছে।
সম্প্রতি বার্ন ইউনিটের নীচতলায় সেলিমার সঙ্গে এই প্রতিবেদকের কথা হয়। জানালেন, হাসপাতালে ভর্তির পর থেকে তাকে বেশিরভাগ ওষুধ কিনতে হয়েছে।এখন ড্রেসিংয়ের জন্য যা লাগে তাও কিনে দিতে হচ্ছে। সবমিলিয়ে এ পর্যন্ত ওষুধ বাবদ তার প্রায় ১৫ হাজার টাকার মতো ব্যয় হয়েছে।
শুধু সেলিমাই নয়, আরো বেশ কয়েকজন রোগির স্বজনরাও জানান, আগের মতো এখন আর তারা হাসপাতালের ওষুধ পান না। বেশিরভাগ ওষুধ বাহির থেকে কিনতে হচ্ছে।
বার্ন ইউনিট সংশ্লিষ্টরাও ওষুধের স্বল্পতার কথা স্বীকার করেছেন। তবে তারা বলছেন, এটা সাময়িক। খুব অল্প সময়ের মধ্যে সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।
সরেজমিনে বার্ন ইউনিটে ঘুরে জানা যায়, সরকারিভাবে পরিচালিত দেশের প্রথম এই ‘বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিট’টিতে বেশ কয়েকমাস ধরে নানা ধরণের ওষুধের স্বল্পতা দেখা দিয়েছে। যদিও নানা সীমাবদ্ধতার মধ্যেও ইউনিটের চিকিৎসক ও কর্মীরা রোগীদের সেবা দিয়ে প্রশংসার কুড়িয়েছেন। আর সে কারণে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে রোগী নিয়ে বার্ন ইউনিটে ছুটে আসেন।
সংশ্লিষ্টদের দাবি, একশো শয্যার বার্ন ইউনিটে প্রতিদিন গড়ে চারশোর মতো রোগি ভর্তি হচ্ছে। আর বহির্বিভাগে প্রতিদিন চিকিৎসার জন্য আসছে গড়ে ৮০ থেকে ১০০শ জন রোগি।
জানা গেছে, গত আগষ্টের শুরু থেকে বার্ন ইউনিটে ড্রেসিংসহ প্রয়োজনীয় চিকিৎসার জন্য সিল ক্রিম, হার্টসল ইনট্রাভেনাস (আইভি) স্যালাইন, বেবি স্যালাইন ও অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ ও ইনজেকশনের স্বল্পতা চলছে। এই সময়ে বিভিন্নজনের দানের টাকা দিয়ে ওষুধ কিনে চিকিৎসা সেবা দেয়া হচ্ছে!
চলতি অর্থবছরে চাহিদাপত্র দেয়ার পর টেন্ডার হলেও এখনো ওষুধ না আসায় এই সংকট চলছে বলে জানালেন বার্ন ইউনিটের দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা। ইতিমধ্যে সমস্যার কথা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালককে জানানো হয়েছে।তিনি দ্রুত সমস্যা সমাধানের আশ্বাসও দিয়েছেন বলে জানা গেছে।
ইতিপূর্বে বার্ন ইউনিটকে এই ধরণের সমস্যার সম্মুখিন হতে হয়নি বলেও জানান ওই কর্মকর্তা।
বহির্বিভাগের পাশাপাশি ভর্তি রোগীদেরও বেশিরভাগ ওষুধ মেডিকেল থেকে দেয়া হয় বলে জানা গেছে।সেক্ষেত্রে অন্যান্য বিভাগে এমন সমস্যা না হলেও বার্ন ইউনিটের রোগীদের গত কয়েকমাসে বেশিরভাগ ওষুধ কিনতে হচ্ছে।
এদিকে ওষুধের স্বল্পতার কথা স্বীকার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের প্রধান অধ্যাপক ডা. মো. আবুল কালাম ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “গত তিনমাস ধরে কিছু ওষুধের ঘাটতি রয়েছে। তবে ঢাকা মেডিকেল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে দ্রুত ওষুধ পাওয়ার জন্য চেষ্টা করছি।পরিচালকও অল্প সময়ের মধ্যে সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন।” তবে কবে নাগাদ হবে তা তিনি বলতে জানাতে পারেননি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ মিজানুর রহমান ওষুধের স্বল্পতা নেই বলে দাবি করেন।
পরে বার্ন ইউনিটের প্রধান ওষুধের স্বল্পতার কথা নিশ্চিত করেছেন জানালে তিনি বলেন, “একটা তালিকা ইতিমধ্যে স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ে দিয়েছি ।” তবে কবে নাগাদ ওষুধ পাওয়া যাবে তিনিও তা বলতে পারেননি।
(ঢাকাটাইমস/১৮অক্টোবর/বিইউ/এআর/ঘ.)