logo ২৩ এপ্রিল ২০২৫
জামিনে বেরোচ্ছে হামজা ব্রিগেডের জঙ্গিরা
ইব্রাহিম খলিল, ঢাকাটাইমস
০৪ নভেম্বর, ২০১৫ ১৩:৩২:৪৪
image


চট্টগ্রাম: নতুন জঙ্গি সংগঠন শহীদ হামজা ব্রিগেডের (এসএইচবি) আটক সদস্যদের বিরুদ্ধে করা ছয়টি মামলার একটিরও তদন্ত শেষ হয়নি। এর ফাঁকে কারাগার থেকে একে একে জামিনে বেরিয়ে যাচ্ছে এর সদস্যরা।

র‌্যাব সূত্র জানায়, পৃথক অভিযানে হামজা ব্রিগেডের অন্যতম সংগঠক মনিরুজ্জামান ওরফে ডনসহ ৩৯ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে তারা। তাদের  বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম র‌্যাব-৭ বাদী হয়ে মহানগরের হালিশহর এবং বাঁশখালি ও হাটহাজারী থানায় ওই ছয় মামলা করে। এসব মামলার তদন্তের দায়িত্বেও রয়েছেন র‌্যাবের কর্মকর্তারা।

আদালত সূত্র জানায়, হামজা ব্রিগেডের অন্যতম সংগঠক মনিরুজ্জামান ওরফে ডনসহ আটক ৩৯ সদস্য ছয় মামলায় ৬৬টি জবানবন্দি দিয়েছে। কিন্তু তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল হয়নি একটিরও।

ফলে দীর্ঘসূত্রতার সুযোগ নিয়ে আদালতে জামিনের জন্য একের পর এক আবেদন করছে জঙ্গি সদস্যরা। এরই মধ্যে তিনজন জামিনে বেরিয়ে গেছে। জামিনের অপেক্ষায় আছে আরও বেশ কয়েকজন।

সূত্র আরও জানায়, ২০১৩ সালের নভেম্বরে চট্টগ্রাম মহানগরীর ফয়’স লেক এলাকায় একটি রেস্টুরেন্টে সভা করে জঙ্গি সংগঠন হামজা ব্রিগেডের আত্মপ্রকাশ ঘটে। চলতি বছরের শুরুতে সংগঠনটির তৎপরতা প্রথম নজরে আসে র‌্যাবের।

গত ১৯ ফেব্রুয়ারি হাটহাজারী উপজেলার আল মাদরাসাতুল আবু বকর নামের একটি মাদ্রাসায় অভিযান চালিয়ে ১২ জন সদস্যকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। পরে র‌্যাব জানায়, তাদের কাছ থেকে শহীদ হামজা ব্রিগেড সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে।

এ ঘটনায় র‌্যাব বাদী হয়ে হাটহাজারী থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা  করে। এই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন এখনো পর্যন্ত দাখিল করতে পারেনি র‌্যাব। তবে হাটহাজারীতে গ্রেপ্তারকৃত জঙ্গিদের স্বীকারোক্তি মোতাবেক র‌্যাব গত ২১ ফেব্রুয়ারি বাঁশখালী উপজেলার সাধনপুর লটমনি পাহাড়ে অভিযান চালায়। সেখানে সন্ধান মেলে হামজা ব্রিগেডের সামরিক প্রশিক্ষণ ঘাঁটির। এ ঘাঁটি থেকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র-গোলাবারুদসহ গ্রেপ্তার করা হয় পাঁচজনকে।

এ ঘটনায় র‌্যাব বাদী হয়ে বাঁশখালী থানায় সন্ত্রাস দমন ও বিস্ফোরক আইনে দুটি মামলা করে।ওই দুই মামলার তদন্তও শেষ হয়নি। এরপর ২৮ ফেব্রুয়ারি নগরীর হালিশহর এলাকার একটি বাসা থেকে উদ্ধার করা হয় বিপুল পরিমাণ অস্ত্র। গ্রেপ্তার করা হয় হামজা ব্রিগেডের দুই সদস্যকে। এ ঘটনায় র‌্যাব বাদী হয়ে হালিশহর থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে একটি মামলা করে। মামলাটির তদন্তও এখন পর্যন্ত শেষ হয়নি।

এরপর হামজা ব্রিগেডকে পৃষ্টপোষকতার অভিযোগে বিএনপি নেতা ওয়াহিদুল আলমের তনয়া সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার শাকিলা ফারজানা ও তার দুই সহযোগী আইনজীবীকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। পরে গার্মেন্টস কারখানার মালিক এনামুল হককে গ্রেপ্তার করা হয়।  তাদের বিরুদ্ধে বাঁশখালী থানা ও হাটহাজারী থানায় পৃথক মামলা হলেও এর কোনো অগ্রগতি নেই বলে আদালত সূত্র জানায়।

এ সম্পর্কে জানতে যোগাযোগ করলে চট্টগ্রাম র‌্যাব-৭-এর পরিচালক লে. কর্নেল মিফতাহ উদ্দিন ঢাকাটাইমসকে বলেন, ছয় মামলার মধ্যে হালিশহর থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে করা মামলার তদন্ত কার্যক্রম শেষ হয়েছে। চার্জশিটও প্রস্তুত। তা অনুমোদনের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে। অনুমতি পাওয়ার পর আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হবে।

বাঁশখালী ও হাটহাজারী থানায় করা পাঁচ মামলা তদন্তাধীন রয়েছে।শিগগিরই এসব মামলার তদন্ত শেষ করে আদালতে চার্জশিট দেয়া সম্ভব হবে বলে জানান মিফতাহ উদ্দিন।

র‌্যাব-৭-এর পরিচালক বলেন, র‌্যাবের অভিযানে হামজা ব্রিগেডের ৩৯ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের জঙ্গি কার্যক্রম, নেটওয়ার্ক, উদ্দেশ্য-লক্ষ্য স¤পর্কে তারা আদালতে জবানবন্দিও দিয়েছে। হাটহাজারী আবু বক্কর মাদ্রাসা থেকে জঙ্গি স¤পৃক্ততার অভিযোগে গ্রেপ্তার ওই মাদ্রাসার এক বাবুর্চিসহ এ পর্যন্ত তিনজন জামিনে বেরিয়ে গেছে।  আরও বেশ কয়েকজন ামিনের অপেক্ষায় রয়েছে।

লে. কর্নেল মিফতাহ উদ্দিন জানান, সিরিয়াভিত্তিক আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন মুজাহিদিন গ্রুপের আদলে শহীদ হামজা ব্রিগেড নামে সংগঠনটি গঠন করা হয়। সংগঠনটির প্রত্যেক সদস্য ‘ওয়ান ম্যান আর্মি’ হিসেবে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। জামায়াত-শিবির থেকে বিভিন্ন সময়ে বহিষ্কৃত নেতাদের অনেকে এখন এসএইচবির সক্রিয় কর্মী। তাদের খোঁেজ বের করার কাজে তৎপর রয়েছে র‌্যাব।

(ঢাকাটাইমস/৪নভেম্বর/ইখ/মোআ)