logo ২২ এপ্রিল ২০২৫
মুনাফার লোভ: ১৫ কোটি টাকা নিয়ে উধাও
শওকত আলী, ঢাকাটাইমস
০৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ ০০:০৯:০৫
image




চাঁদপুর:  মাসে মাসে বড় অঙ্কের মুনাফার লোভ দেখিয়ে গ্রামের মানুষের কাছ থেকে প্রায় ১৫ কোটি তুলে উধাও হয়ে গেছে যমুনা উন্নয়ন ফাউন্ডেশন নামের একটি প্রতিষ্ঠান। এতে একদিকে যেমন সর্বস্বান্ত হয়েছে গ্রাহকরা, তেমনি বিপাকে পড়েছেন সংশ্লিষ্ট শাখার ম্যানেজাররা। গ্রাহক অসন্তোষ থেকে বাঁচতে তারা এখন পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।



জানা যায়, বছর খানেক আগে যমুনা উন্নয়ন ফাউন্ডেশন চাঁদপুরের বিভিন্ন স্থানে ১০টি শাখা খুলে প্রায় পাঁচ হাজার গ্রাহকের কাছ থেকে সঞ্চয় নেয়। শাখাগুলো খোলা হয় শহরের চেয়ারম্যানঘাটা, সাহেব বাজার, হাজীগঞ্জের রাজারগাঁও, কৈয়ারপুল, ফরিদগঞ্জের টোরামুন্সিরহাট, ফরিদগঞ্জ, গোয়ালভাওর, বালিথুবা, চান্দ্রাবাজার, গৃদকালিন্দিয়া বাজারে।



বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে রেজিস্ট্রেশন নম্বর নিয়ে সংস্থাটি এসব শাখায় স্থানীয় পর্যায়ে ম্যানেজার নিয়োগ করে। পরে তাদের মাধ্যমে গ্রামের সহজ-সরল সাধারণ মানুষকে সেখানে অর্থ সঞ্চয়ের বিপরীতে মাসে মাসে মোটা অংকের মুনাফার লোভ দেখানো হয়। চুক্তিনামা করে এককালীন ও ফিক্সড ডিপোজিটের নামে তাদের কাছ থেকে টাকা আদায় করে।  কেউ ১০ লাখ, কেউ ৫ লাখ, কেউ ২-৩ লাখ, কেউ ৫০ হাজার কিংবা ১ লাখ করে টাকা জমা দেয়।



প্রথম দু-এক মাস জমাকৃত টাকার বিপরীতে লভ্যাংশ দেয়ার পর হঠাৎ করে তা বন্ধ করে দেয়। পরে গ্রাহকদের লভ্যাংশ দেওয়া দূরের কথা, বিনিয়োগকৃত আসল টাকাও প্রদান বন্ধ করে দেয় সংস্থাটি। গ্রাহকরা সংশ্লিষ্ট শাখায় ধরনা দিতে থাকে। একপর্যায়ে অফিস তালাবদ্ধ করে উধাও হয়ে যায় সংস্থাটি।



সম্প্রতি চাঁদপুর সদরের সাহেব বাজার এলাকায় কয়েশ নারী-পুরুষ সংস্থার নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম মিজির বাড়িতে বিক্ষোভ করেন।  তখন তিনি সেখানে ছিলেন না। বাড়িতে থাকা বৃদ্ধ বাবা-মা বিক্ষুব্ধ গ্রাহকদের আশ্বস্ত করলে পরিস্থিতি শান্ত হয়। পরে দু-চারজনের টাকা ফেরত দেয়া হলেও বাকিরা আজও তাদের জমাকৃত টাকা পায়নি।



এ ব্যাপারে হাজীগঞ্জের রাজারগাঁও শাখার ম্যানেজার ফজলুর রহমান বলেন, “আমার শাখার মাধ্যমে প্রায় সাড়ে ৩০০ গ্রাহকের কাছ থেকে দেড় কোটি টাকার মতো তুলে আমি হেড অফিসে জমা করি। ছয়-সাত মাস পর সংস্থার ঢাকা প্রধান কার্যালয় গুটিয়ে সংস্থার চেয়ারম্যানসহ কর্মকর্তারা গা ঢাকা দেন। বিপাকে পড়ি আমরা যারা স্থানীয়ভাবে শাখার ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করেছি তারা।



একই অভিযোগ ফরিদগঞ্জ শাখার ম্যানেজার সাইফুল ইসলামের। তিনি তার শাখার মাধ্যমে ৬০০ গ্রাহকের প্রায় দুই কোটি টাকা হেড অফিসে জমা দিয়ে এখন সে টাকার দেনার বোঝা নিয়ে এখন পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।



জানা যায়, সংস্থাটির চেয়ারম্যান হলেন কুষ্টিয়া জেলার মোহিনী মিলস এলাকার মো. আ. কাইয়ুমের ছেলে মো. আক্তার হোসেন। তিনি ঢাকার ৬৭/৩/বি উত্তর গোলাপবাগ (৪র্থ তলা) বিশ্বরোড স্থানে প্রধান কার্যালয় স্থাপন করে দেশের বিভিন্ন স্থানে শাাখা খুলে গ্রাহকের কাছ থেকে অর্থ নিয়ে উধাও হয়েছেন। সংস্থাটির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব  কর্মকর্তার মোবাইল ফোনের নম্বর অনেক আগে থেকে বন্ধ।



রাজারগাঁও এলাকার মোসা. সোহেলি আক্তার তার ছাগল, হাঁস-মুরগিসহ বিক্রি করে ও জীবনের কষ্টার্জিত অর্থ ৫ বছরের জন্য ফিক্সড ডিপোজিট করেন ওই সংস্থায়।  কিন্তু সব হারিয়ে এখন তিনি পাগলপ্রায়।  সংস্থাটির অফিস বা কর্মকর্তা কাউকে খুঁজে পাচ্ছে না তিনি।  কার কাছে কোথায় অভিযোগ করবেন তারও কোনো সঠিক সমাধান পাচ্ছেন না।



এ ব্যাপারে জেলা মার্কেটিং কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিমের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, উক্ত সংস্থাটির কার্যক্রম সম্পর্কে তার কোনো কিছুই জানা নেই। তাছাড়া কেউ তার কাছে এ ব্যাপারে কোনো অভিযোগও করেননি।



(ঢাকাটাইমস/৮ফেব্রুয়ারি/প্রতিনিধি/মোআ)