logo ২১ এপ্রিল ২০২৫
বিএনপিতে চাপা ক্ষোভ!
বোরহান উদ্দিন, ঢাকাটাইমস
১৩ এপ্রিল, ২০১৬ ০০:১৯:৫৬
image



ঢাকা: দলের কাউন্সিলের পর মহাসচিবসহ বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও সাংগঠনিক সম্পাদকদের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। এর পর থেকে দলের ভেতরে বাইরে নানা গুঞ্জন শুরু হয়েছে। কেউ কেউ প্রত্যাশার চেয়েও বড় পদ পেয়ে আছেন ফুরফুরে মেজাজে। আবার কাঙ্ক্ষিত পদ না পেয়ে অনেকে হতাশ। এসব নিয়ে নেতা ও সমর্থকদের মধ্যে বিরাজ করছে চাপা ক্ষোভ। সরাসরি এ নিয়ে মুখ না খুললেও ঘনিষ্ঠদের সঙ্গে আলাপ চারিতায় এই ক্ষোভের বিষয়টি ফুটে উঠছে।






কেউ আবার সুযোগ বুঝে শীর্ষ নেতাদের কাছে নিজেদের ক্ষোভের কথা জানাতেও ভুল করছেন না। ভবিষ্যতে কিছু হবে এই আশায় অনেকে মুখ বুজে রয়েছেন। সিনিয়র নেতারাও সেভাবেই তাদেরকে সান্ত্বনা দেয়ার চেষ্টা করছেন।






বঞ্চিতদের ক্ষোভ নিয়ে দলের শীর্ষ নেতাদের কাছে জানতে চাওয়া হলে তারা বলছেন, দলে নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা থাকবে এটা যেমন স্বাভাবিক, তেমনি সবাইকে পদ দেয়া যাবে না এটাও ঠিক। ক্ষোভ থাকলেও সবাই দলের সিদ্ধান্ত মেনে নেবেন এমন প্রত্যাশা তাদের। যদিও দুই একটি পদ ছাড়া এখন পর্যন্ত কমিটিতে যেসব নেতার স্থান হয়েছে এটাকে অনেকেই স্বাগত জানিয়েছেন।






এদিকে প্রত্যাশার পরও যারা পদ পাননি তাদের মধ্যে অনেককেই বিব্রতকর পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হচ্ছে। পদ না পাওয়া এই নেতাদের বিরোধী পক্ষকে প্রকাশ্যে উল্লাস করতে দেখা গেছে। আবার অনেকে ফেসবুকে নানা ধরনের মন্তব্য বা কুৎসা রটাচ্ছে যা পদ না পাওয়া ওই নেতাদের জন্য বিব্রতকর।






প্রসঙ্গত, গত ১৯ মার্চ রাজধানীতে ষষ্ঠ কাউন্সিল করেছে বিএনপি। ওইদিন দলের চেয়ারপারসন ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান এবং ১১দিন পর ঘোষণা করা হয় মহাসচিব, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব ও কোষাধ্যক্ষের নাম।






সবশেষ গত রবিবার সাতজন যুগ্ম মহাসচিব ও সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে নয়জনের নাম ঘোষণা করা হয়। এই দুই পদে নতুন মুখ ১৩ জন।






কাউন্সিলের পর কমিটি কবে হবে, কারা কোন পদে আসছেন এমন আলোচনার মধ্যে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল যুগ্ম মহাসচিব ও সাংগঠনিক সম্পাদক পদে কারা আসছেন এই বিষয়টি। ঘোষণার পর দেখা গেছে, এসব পদে সাবেক ছাত্রনেতাদের পাশাপাশি বয়সে তরুণদের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।






আগামী দিনে দলের কাণ্ডারী হবেন দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তাই দলে তারেক রহমান যাতে সহজেই খাপ খাইয়ে নিতে পারে সে দিকটা সামনে রেখেই অপেক্ষাকৃত তরুণ এবং তারেক ঘনিষ্ঠদের সামনে আনার চেষ্টা করছেন খালেদা জিয়া।






পুনর্গঠিত কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম মহাসচিবরা হলেন ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, মজিবুর রহমান সারোয়ার, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, হাবিব উন নবী খান সোহেল, হারুনুর রশিদ ও লায়ন আসলাম চৌধুরী। এর মধ্যে মাহবুব উদ্দিন খোকন গত কমিটিতে যুগ্ম মহাসচিব ছিলেন। অন্যদিকে সরোয়ার ও হারুন সাংগঠনিক সম্পাদক, আসলাম চৌধুরী সহ-সাংগঠনিক, আলাল যুবদল সভাপতি, খোকন শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক, সোহেল স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি থেকে পদোন্নতি পেয়েছেন। 






সাংগঠনিক সম্পাদকেরা হলেন ঢাকায় ফজলুল হক মিলন, চট্টগ্রামে ডা. শাহাদাত হোসেন, খুলনায় নজরুল ইসলাম মঞ্জু, রাজশাহীতে রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, বরিশালে বিলকিস জাহান শিরিন, রংপুরে আসাদুল হাবিব দুলু, ময়মনসিংহে সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স ও ফরিদপুরে শামা ওবায়েদ। এর মধ্যে মিলন ও আসাদুল হাবিব দুলু গত কমিটিতেও সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। এবারও তাদের একই পদে রাখা হয়েছে।






এছাড়া মঞ্জুসহ-সাংগঠনিক সম্পাদক, শাহাদাত হোসেন চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক, শিরিন বরিশাল দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক, রুহুল কুদ্দুস দুলু স্বনির্ভরবিষয়ক সম্পাদক, প্রিন্সসহ-প্রচার সম্পাদক, শামা ওবায়েদ জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ছিলেন।






এবারই প্রথম দুজন নারীকর্মীকে গুরুত্বপূর্ণ পদে দেয়া হয়েছে। যা নিয়ে খোদ মহিলা দলের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে বলে জানা গেছে। বিশেষ করে, মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক শিরিন সুলতানাকে টপকে ওই সংগঠনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদককে বরিশালের সাংগঠনিক সম্পাদক করায় এ ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে বলে জানা গেছে।






সম্প্রতি বিএনপি মহাসচিবের কাছে শিরিন সুলতানা নিজের ক্ষোভের কথা জানিয়েছেন। এছাড়া তার ঘনিষ্ঠদের কাছেও নিজের ক্ষোভের কথা বলেছেন সাবেক এই ছাত্রনেতা।






জানা গেছে, বরিশাল বিভাগে এই পদ প্রত্যাশীদের মধ্যে এগিয়ে ছিলেন দলের নির্বাহী কমিটির সহ-স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক এ বি এম মোশাররফ হোসেন এবং নির্বাহী কমিটির সদস্য মাহবুবুল হক নান্নু। এছাড়াও এই পদের প্রত্যাশী ছিলেন সাবেক এমপি অধ্যাপক মেজবাহ উদ্দিন ফরহাদ,আকন কুদ্দুসুর রহমানসহ বেশ কয়েকজন।






এদের মধ্যে এগিয়ে ছিলেন এমন একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকাটাইমসকে বলেন,“রাজনৈতিক সংঘাতপূর্ণ বিভাগ বরিশালে একজন মহিলাকে দায়িত্ব দেয়ার সিদ্ধান্ত দলের জন্য বুমেরাং হবে। হয়তো আমি বা অন্য কেউ এই পদে এলে বিভাগের অন্য শীর্ষ নেতাদের জন্য তা থ্রেট হতে পারে এই আশঙ্কায় অভ্যন্তরীণ রাজনীতির কারণ বঞ্চিত হয়েছি।” তবে দলের সিদ্ধান্ত তিনি মেনে নিয়েছেন বলেও জানান।






নতুন কমিটিতে যুগ্ম মহাসচিব হয়েছেন বরিশাল অঞ্চলের এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকাটাইমসকে বলেন, “বিভাগের অন্যান্য শীর্ষ নেতাদের সম্বোধনের ক্ষেত্রে নতুন সাংগঠনিক সম্পাদককে সবচেয়ে বড় সমস্যায় পড়তে হবে।আর নারী নেতৃত্বকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে আন্তর্জাতিক চাপ থাকলেও বাংলাদেশে সেই পরিবেশ এখনো হয়নি, এটা মনে রাখলে ভালো হতো।”






এদিকে চট্টগ্রাম বিভাগেও সাংগঠনিক সম্পাদক নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য মাহবুবুর রহমান শামীম, চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি আবু সুফিয়ান, জেলা বিএনপির সাবেক নেতা নাজিমুর রহমান নাজিমসহ বেশ কয়েকজনকে বঞ্চিত করা হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।






এছাড়া সদ্য বিদায়ী সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম আকবর খন্দকারকে কোনো পদে না রেখে আসলাম চৌধুরীকে যুগ্ম মহাসচিব করা নিয়েও কেউ কেউ প্রশ্ন তুলছেন।






যদিও এ নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি গোলাম আকবর। ঢাকাটাইমসকে তিনি বলেন, “দল যা ভালো মনে করেছে সেটাই করেছে। সুতরাং এ নিয়ে মন্তব্য করলে বিভেদ বাড়বে।”






তবে খুলনায় মঞ্জুকে সাংগঠনিক সম্পাদক করার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন দীর্ঘদিন ওই পদে থাকা মশিউর রহমান মঞ্জু। ঢাকাটাইমসকে তিনি বলেন, “তিনি (মঞ্জু)যোগ্য, দক্ষ রাজনীতিক। আশা করি তিনি দলের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারবেন। আমারও এই পদে থাকার বিন্দুমাত্র ইচ্ছা ছিল না।”






সার্বিক বিষয় নিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান ঢাকাটাইমসকে বলেন, “দলে যার যেমন অবদান তাকে সেইভাবে মূল্যায়ন করা হয়েছে। সেক্ষেত্রে চেয়ারপারসন যাকে বেশি বেশি যোগ্য মনে করেছেন তাকে সেই দায়িত্ব দিয়েছেন। আর সবাইকে তো আর সব পদে দেয়া সম্ভব না।”






(ঢাকাটাইমস/১৩এপ্রিল/বিইউ/জেবি/এআর)