logo ২১ এপ্রিল ২০২৫
বাইরে নীরব, ভেতরে সরব জামায়াত
বোরহান উদ্দিন, ঢাকাটাইমস
১৩ মে, ২০১৬ ০০:১৬:২৪
image



ঢাকা: অনেক দিন ধরে রাজনীতির মাঠে ‘সুসংগঠিত’ দল বলে পরিচিত জামায়াতে ইসলামী অনেক দিন ধরেই চুপ। ২০ দলীয় জোটের সঙ্গে সম্পর্ক, কর্মসূচি কোথাও দেখা যায় না দলটির নেতাকর্মীদের। এমনকি আগে গোপনে বৈঠক করার যে ধারাটি ছিল, সেটিও এখন আর সেভাবে হচ্ছে না।






দলটির এই অস্বাভাবিক নীরবতায় অনেকে মনে করছে জামায়াতের রাজনীতি কার্যত শেষ হয়ে গেছে। কিন্তু বাস্তবতা বলছে ভিন্নকথা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মাঠের রাজনীতির বদলে নেতাকর্মীদের মন এখন দল গোছানোর দিকে। কেন্দ্রের নির্দেশনা মতো আনুষ্ঠানিক বৈঠকের বদলে নানা কৌশলে সাংগঠনিক শক্তি সঞ্চয়ের জন্য ভেতরে ভেতরে সারা দেশে কাজ চলছে দলের।






একই সঙ্গে জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ হলে কোন প্রক্রিয়ায় সামনে দল চলবে, সেসব বিষয় নিয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে আগামী দিনের কর্মপরিকল্পনা তৈরি করছেন শীর্ষ নেতারা।






দলটি নিষিদ্ধ হলে নতুন নামে জামায়াত মাঠে নামবে এমন গুঞ্জনও আছে। ইতিমধ্যে নাম ঠিক করা হয়েছে, গণমাধ্যমে একাধিক নাম প্রকাশ পেলেও এ বিষয়ে চূড়ান্তভাবে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।






কৌশলে চলছে সাংগঠনিক কাজ






আগের মতো আনুষ্ঠানিকভাবে সাংগঠনিক কাজ করতে না পারলেও বসে নেই জামায়াতের নেতাকর্মীরা। বর্তমান অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে কেন্দ্র থেকে দেয়া নির্দেশনা অনুযায়ী তৃণমূল পর্যায়েও ভিন্ন কৌশলে চালানো হচ্ছে সাংগঠনিক কার‌্যক্রম। কখনো কখনো সবার কাছে দলীয় সিদ্ধান্ত পৌঁছে যাচ্ছে ব্যক্তিগত আলাপে। কখনো আবার আড্ডার ফাঁকে সেরে নেয়া হয় সাংগঠনিক আলাপ।






জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে যোগাযোগ আছে বিএনপি জোটের এমন একটি দলের কেন্দ্রীয় এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে এই প্রতিবেদককে এভাবেই জামায়াতের বর্তমান সাংগঠনিক কার্যক্রম চালানোর কৌশলের বর্ণনা দেন।






তিনি জানান, কিছুদিন আগে রাজধানীর হাতিরঝিলে জামায়াত-শিবিরের দুজন মধ্যম সারির নেতা ও জনা বিশেক কর্মীকে ঘুরতে দেখা যায়। তাদের দুজনের সঙ্গে পূর্বপরিচয় থাকায় কথা বললে আসল  রহস্য জানা যায়। তারা জানান, “যে অবস্থা, কোথাও তো বসতে পারছি না। তাই বলে তো দলের কাজ বন্ধ রাখা যাবে না।”






গত এপ্রিলের শুরুর দিকে রাজধানীর বাড্ডা এলাকায় মাগুরা জেলা শিবিরের একজন দায়িত্বশীলের বিয়ের আয়োজনেও এমন তৎপরতা দেখা গেছে। অনুষ্ঠানে শিবিরের ঢাকা মহানগরের বেশ কয়েকজন নেতা তাদের কর্মীদের নিয়ে সেখানে উপস্থিত ছিলেন। তারা সবাই এক টেবিলে বসেন। বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা ও খাওয়া-দাওয়ার ফাঁকে নিজেদের মধ্যে সাংগঠনিক  আলাপেও তাদের ব্যস্ত দেখা গেছে।






আত্মগোপনে থাকা কেন্দ্রীয় নেতারাও নানা কৌশলে বিভিন্ন স্থান সফর করছেন। ইতিমধ্যে দলের সর্বোচ্চ ফোরাম কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ, কর্মপরিষদ ও মজলিশে শূরায় সারা দেশ থেকে বাছাই করা তরুণ নেতাদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। একই সঙ্গে সারা দেশে দলের গুরুত্বপূর্ণ শাখা কমিটিগুলোতেও তরুণদের অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে।






এ লক্ষ্যে জামায়াতের কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বর্তমান পরিস্থিতিতে রাজপথের আন্দোলনের পরিবর্তে সাংগঠনিক মূল কাজ তথা দাওয়াতি কাজের দিকে বেশি জোর দিচ্ছে দলটি। পাশাপাশি চলছে অন্যান্য কার্যক্রমও। বিশেষ দাওয়াতি সভায় ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেলসহ কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ ও কর্মপরিষদের সদস্যরাও অংশ নিচ্ছেন।






তৃণমূলে দলের সাংগঠনিক কার‌্যক্রম শক্তিশালী করতে জামায়াত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে সুযোগ হিসেবে নিয়েছে। তারা চলমান ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী দিচ্ছে। তাদের পক্ষে জোরালো প্রচারণাও চালানো হচ্ছে। এখন পর‌্যন্ত অনুষ্ঠিত নির্বাচনগুলোতে বেশ কিছু জায়গায় জামায়াতের প্রার্থীরা বিজয়ীও হয়েছেন।






সরকারের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের অপেক্ষা






নতুন দল, নতুন নেতৃত্ব নিয়ে জামায়াত মাঠে নামছে এমন খবর অনেক দিন ধরে বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে। তবে নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন বাতিল হলেও এখনো রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতকে নিষিদ্ধ করেনি সরকার, যদিও সরকার বলছে জামায়াত নিষিদ্ধ করা সময়ের ব্যাপার মাত্র।






জানা গেছে, সরকার শেষ পর‌্যন্ত কী সিদ্ধান্ত নেয় সেদিকে তাকিয়ে আছে জামায়াতের শীর্ষ নেতারা। নিষিদ্ধ হলে কোন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে দলটি রাজনীতির মাঠে থাকবে সে ব্যাপারেও চিন্তাভাবনা অনেকটা চূড়ান্ত করে রেখেছে।






জামায়াতের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র বলছে, যদি শেষ পর্যন্ত জামায়াত নিষিদ্ধ হয় সে ক্ষেত্রে তরুণ নেতৃত্বকে সামনে এনে নতুন নামে রাজনীতির মাঠে নামার চিন্তা আছে দলে। আর নিষিদ্ধ না হলে বর্তমানে যারা নেতৃত্বে আছেন তাদের নিয়েই দল সামনে এগিয়ে যাবে।






জামায়াতের সঙ্গে যোগাযোগ আছে বিএনপি জোটের এমন শরিক দলের এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকাটাইমসকে জানান, জামায়াতের ব্যাপারে সরকারের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের দিকে তাকিয়ে আছে দলটির নেতাকর্মীরা। কারণ জামায়াত নিষিদ্ধ হলে নতুন নামে নতুন নেতৃত্বে দল পরিচালনা করবেন তারা।






নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জামায়াতের মধ্যম সারির একজন নেতা ঢাকাটাইমসকে বলেন, “এর চেয়েও কঠিন অবস্থার মধ্য দিয়ে জামায়াতকে রাজনীতি করতে হয়েছে। তাই নতুন করে দল গোছানোর প্রয়োজন নেই। বর্তমানে যেসব কাজ চলছে তা স্বাভাবিক সাংগঠনিক কার্যক্রমেরই অংশ। সরকারের নানা জুলুম-নির্যাতন উপেক্ষা করেই এসব কার্যক্রম চলছে, চলবে। যেহেতু আপাতত সেভাবে কর্মসূচি নেই, তাই সংগঠন গোছানোর দিকেই বেশি মনযোগ দেয়া হচ্ছে।”






কে হচ্ছেন নতুন আমির?






দীর্ঘদিন ধরে ভারপ্রাপ্ত আমির ও ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল দিয়ে চলে আসা জামায়াতের শীর্ষ পদ দুটিতে বিতর্কমুক্ত তরুণ মুখ আসছেন বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে। একইভাবে দলের নির্বাহী পরিষদ, কর্মপরিষদ ও মজলিশে শূরা পুনর্গঠন করা হচ্ছে।






দলের দুই শীর্ষ পদের নেতাদের ফাঁসির রায় কার‌্যকর হওয়ায় সে পদগুলোতে এখন কারা আসছেন তা নিয়ে নানা জল্পনা-কল্পনা চলছে বলে জানা গেছে।






দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, দলটির আমির নির্বাচনের সময়সীমা তিন বছর। তবে গত বছরের জুনে দলের মুদ্রিত গঠনতন্ত্রের ৫৯তম সংস্করণের ধারা ১৫-এর ৬ এর (ঘ) উপধারায় বলা হয়েছে, “কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের বিবেচনায় নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে জামায়াতের আমির নির্বাচন অনুষ্ঠান যদি কিছুতেই সম্ভব না হয়, তাহলে কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ নিযুক্ত ভারপ্রাপ্ত আমির কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার অনুমোদন সাপেক্ষে নিজ পদে বহাল থাকবেন।”






এ কারণে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী বাধ্যবাধকতা তৈরি না হওয়ায় তিন বছরের জায়গায় বর্তমান ভারপ্রাপ্ত আমির মকবুল আহমাদ দুই সেশন ধরে দায়িত্ব পালন করছেন।






জানা গেছে, বর্তমান পরিস্থিতিতে রুকন সম্মেলনের মাধ্যমে আমির নির্বাচনের সুযোগ না থাকায় ভিন্নপন্থায় রুকনদের ভোট বা মতামত নিয়ে আমিরসহ অন্যান্য পদে নেতা নির্বাচনের চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে। জামায়াত নিষিদ্ধ না হওয়া পর্যন্ত দলটির ভারপ্রাপ্ত আমিরের দায়িত্বে থাকা মকবুল আহমাদই ‘ভার’মুক্ত হয়ে আমির এবং ডা. শফিকুর রহমান সেক্রেটারি জেনারেল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।






তবে, এর ব্যত্যয় ঘটলে নায়েবে আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বা ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল ডা. শফিকুর রহমান আমির হতে পারেন। ঢাকা মহানগর কমিটির আমির রফিকুল ইসলাম খান, নির্বাহী পরিষদের সদস্য অধ্যাপক তাসনীম আলম ও হামিদুর রহমান আযাদের মধ্য থেকে যেকোনো একজন সেক্রেটারি জেনারেল হতে পারেন বলে জানা গেছে।






এর বাইরে নায়েবে আমির, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল, সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী ফোরাম নির্বাহী পরিষদ, কর্মপরিষদ ও মজলিশে শূরা কমিটি পুনর্গঠন হবে। এতে গত তিন দশক যারা ছাত্রশিবিরে নেতৃত্ব দিয়েছেন, তারা জায়গা পেতে পারেন।






(ঢাকাটাইমস/১৩মে/মোআ)