ঢাকা: বন্ধুদের নিয়ে বিকালের নাশতা করতে রাজধানীর পান্থপথের ধানসিঁড়ি প্লাস রেস্তোরাঁয় যান মুনিফ আম্মার। নাশতা শেষে বিল দিতে গিয়ে ঘটে বিপত্তি। ১৫ টাকার আধা লিটার পানির দাম রাখা হয়েছে ২০ টাকা। বিষয়টি নিয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করলেও কোনো সমাধান হয়নি। অগত্যা ভোক্তা হিসেবে এ অন্যায়ের প্রতিবাদ করার সিদ্ধান্ত নেন মুনিফ।
বিলের মেমো নিয়ে মুনিফ আম্মার হাজির হন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে। আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সেখানে লিখিত অভিযোগ করেন তিনি।
সপ্তাহ খানেক পর মুনিফ আম্মারের কাছে একটি চিঠি পাঠিয়ে শুনানিতে অংশ নেয়ার আহ্বান করে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। শুনানি শেষে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ধানসিঁড়ি প্লাস রেস্তোরাঁকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। জরিমানার ২৫ শতাংশ পাঁচ হাজার টাকা দেয়া হয় মুনিফকে।
এই টাকাটা মুনিফ আম্মারকে খুশি হয়ে দেয়া হয়নি। ভোক্তা অধিকার আইনেই এই বিধান করা হয়েছে। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন ২০০৯-এর বিধানমতে, দায়েরকৃত আমলযোগ্য অভিযোগ তদন্তে প্রমাণিত ও জরিমানা আরোপ করা হলে আদায়কৃত জরিমানার ২৫ শতাংশ অভিযোগকারীকে প্রদান করা হবে।
মুনিফ আম্মার ঢাকাটাইমসকে বলেন, “ভোক্তারা বিভিন্ন জায়গায় প্রতারিত হচ্ছে নিয়মিত। কিন্তু বেশির ভাগই প্রতারণার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে না। প্রতিবাদ করলে যে প্রতিকার আছে তার প্রমাণ আমি নিজে।”
ভোক্তা অধিকারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বাংলাদেশে ভোক্তার অধিকার সংরক্ষণে আইন হলেও সাধারণ ভোক্তারা এ বিষয়ে সচেতন নন। আবার অনেকেই জানে না যে এমন আইন আছে। তাই এ বিষয়টি নিয়ে আরও প্রচার-প্রচারণার প্রয়োজন।
বিষয়টি নিয়ে কথা হয় বেসরকারি ব্যাংক কর্মকর্তা তাসমিন ফারিয়া তিশার সঙ্গে। তিনি ঢাকাটাইমসকে বলেন, “ভোক্তাদের অধিকার নিয়ে আইন আছে বিষয়টি আমি জানি না।”
আবার অনেক ভোক্তা আছেন, যারা বিষয়টি জানলেও সময়ের অভাবে অভিযোগ করতে পারেন না। কারণ হিসেবে তারা বলেন, অভিযোগ করার পরে শুনানিতে অংশ নিতে হয়। আবার এ শুনানি হয় অফিস সময়ে। অফিস সময়ে শুনানির ঝামেলা এড়াতেই তারা অভিযোগ করেন না।
তবে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর দাবি করছে, বিষয়টি সারা দেশে ছড়িয়ে দিতে দেশের সব উপজেলায় সভা-সেমিনার করা হয়েছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ভোক্তা সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং প্রতিদিনই অভিযোগ আসছে।
২০১০ সালের ৬ এপ্রিল থেকে গত মাসের ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত অধিদপ্তর ১৬ হাজার ৩০২টি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ১২ কোটি ৫৫ লাখ ৪১ হাজার ৯৫০ টাকা জরিমানা করে। তার মধ্যে ২৭৫ জন লিখিত অভিযোগকারীকে পাঁচ লাখ ৬৪ হাজার ৫০০ টাকা দেয়া হয়।
অন্যদিকে ২০১৪ সালের ৬ আগস্ট থেকে গত এপ্রিল মাস পর্যন্ত ভোক্তাদের ৬৪৭টি অভিযোগ বিবেচনায় আনে ভোক্তা অধিদপ্তর। এর মধ্যে ৪৭৮টি অভিযোগ নিষ্পত্তি করে। তদন্তাধীন রয়েছে ১৬৯টি অভিযোগ। নিষ্পত্তিকৃত অভিযোগ থেকে ১২ লাখ ৭৭ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানা করে ভোক্তা অধিদপ্তর।
অভিযোগকারীদের জরিমানার ২৫ শতাংশ দুই লাখ ৯০ হাজার ৮৭৫ টাকা দেয়া হয়।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান ঢাকাটাইমসকে বলেন, ভোক্তা অধিদপ্তরের এমন আইন শুভ সূচনা। তবে এ বিষয়ে আরও প্রচার-প্রচারণা দরকার। বিশেষ করে জরিমানার ২৫ শতাংশ টাকা অভিযোগকারী ব্যক্তিকে পুরস্কার হিসেবে দেয়া হয়, এ বিষয়টিও গুরুত্ব দিয়ে প্রচার করা উচিত।
তবে গোলাম রহমান বলেন, ভোক্তাদেরও অধিকার সম্পর্কে সচেতন হতে হবে। তারা যদি অধিকার নিয়ে সচেতন না হয়, তাহলে আইন করেও সুফল পাওয়া যাবে না।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আবুল হোসেন মিঞা ঢাকাটাইমসকে বলেন, “আমরা নিয়মিতই অভিযোগ পাচ্ছি। তবে ১৬ কোটি মানুষের দেশে সেটা আশানুরূপ নয়।
তবে তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, “এখন অনলাইনে অভিযোগ করার সুবিধা থাকায় ভোক্তারা আগের চেয়ে বেশি অভিযোগ করছে। আমরা আশা করছি আগামী দিনে ভোক্তাপর্যায় থেকে অভিযোগ আরও বাড়বে।”
ভোক্তা অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ভোক্তা পর্যায় থেকে যেসব অভিযোগ আসছে তার বেশির ভাগই হচ্ছে মোড়কজাত পণ্যের বিষয়ে। ভোক্তারা অন্য বিষয়ে যে অভিযোগ করতে পারবে সে বিষয়টিও জানে না।
ভোক্তার প্রতিকার
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী- পণ্যের মোড়ক ব্যবহার না করা; পণ্য বা সেবার মূল্য তালিকা সংরক্ষণ ও প্রদর্শন না করা; ধার্যকৃত মূল্যের বেশি দামে পণ্য, ওষুধ বা সেবাসামগ্রী বিক্রয়; ভেজাল পণ্য বা ওষুধ বিক্রয়, খাদ্য পণ্যে নিষিদ্ধ দ্রব্যের মিশ্রণ, মিথ্যা বিজ্ঞাপনে প্রতারিত হলে, ওজনে কারচুপি, মেয়াদ উত্তীর্ণ পণ্য বা সেবা সরবরাহসহ ২০টি কর্মকা-কে অপরাধের আওতায় আনা হয়েছে।
এসব অপরাধে ক্ষেত্রভেদে ২০ হাজার থেকে দুই লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। এক বছর থেকে তিন বছর পর্যন্ত সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদ-ের বিধানও রাখা হয়েছে।
ভোক্তা অধিকার লক্স নের শিকার হলে যেকোনো ভোক্তা আইনের আশ্রয় নিতে পারবেন। এ জন্য জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে লিখিত আবেদন করতে হবে। আবেদনে অভিযোগকারীর নাম, ঠিকানা, বাবা-মায়ের নাম, ফোন/ফ্যাক্স/ই-মেইল নম্বর ও পেশা উল্লেখ করতে হয়।
অভিযোগ পাঠানোর ঠিকানা- মহাপরিচালক, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, ১, কারওয়ানবাজার (টিসিবি ভবন- অষ্টম তলা), ঢাকা। ফোন-৮১৮৯১০৫, ০১৭৭৭৭৫৩৬৬৮। ই-মেল:
[email protected]
(ঢাকাটাইমস/১২মে/মোআ)