logo ০৯ জুলাই ২০২৫
অনুপ্রবেশে হুমকির মুখে অ্যামাজনবাসী
ঢাকাটাইমস ডেস্ক
০২ জুন, ২০১৬ ২০:১৯:১১
image



ঢাকা: আধুনিক বিশ্বের চাকচিক্যময়তার বাইরেও পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে কিছু মানুষ বসবাস করে আসছে। তারা বাহারি রঙের কাপড়ের পোশাক পরে না, টেলিভশন দেখে না, সুরম্য অট্টালিকায় বসবাস করে না। মোবাইল ফোন, কম্পিউটারসহ কোনো ধরনের প্রযুক্তিপণ্য তারা ব্যবহার করেন না। সোজা কথা সভ্য জগতের আধুনিক সব ধরনের সুযোগ-সুবিধার বাইরে তারা। কারণ তাদের প্রকৃতির মধ্যেই জন্ম, এখানেই বেড়ে ওঠা। আর মৃত্যুবরণ করেন প্রকৃতির কোলেই। তারা হলেন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী।বিশ্বের সবচেয়ে বড় বনভূমি অ্যামাজান জঙ্গলে বাস করেন এরকম কিছু বিপন্ন নৃ-গোষ্ঠী।     






ঘন জঙ্গলের রোমান্টিক দৃশ্যে ভরা অ্যামাজনের বিপন্ন নৃ-গোষ্ঠীর সঙ্গে টানা দুই বছর কাটিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ স্থানীয় দুই নৃ-বিজ্ঞানী।  






অধ্যাপক কিম হিল এবং রবার্ট ওয়াকার বলেছেন, “এখানকার সম্প্রদায়দের একা রেখে তাদেরকে রক্ষা করা একটি ‘বিভ্রম’। তাদেরকে রক্ষা করার একমাত্র উপায় হচ্ছে নিয়ন্ত্রিত প্রোগ্রামের মাধ্যমে ‘ফোর্স কনট্যাক্ট বা জোরপূর্বক যোগাযোগ’। অবৈধ কাঠুরিয়াদের হুমকি, খনিজ অনুসন্ধানকারী এবং যেসব রোগব্যাধী প্রতিরোধের ক্ষমতা নেই তা থেকে তাদের বাঁচানো সম্ভব হবে এই প্রোগ্রামের মাধ্যমে।”






একটি দাতব্য প্রতিষ্ঠান এই দুর্দশাগ্রস্ত মানুষ পক্ষে প্রচারণা চালিয়ে আন্তর্জাতিক মনোযোগ আকর্ষণ করার চেষ্টা করছে। তারা বলেন, ফোর্স কনট্যাক্টের এই ধারণা প্রত্যাখ্যান করেছেন স্থানীয় নৃ-গোষ্ঠীরা। 






গোয়াজাজারা আদিবাসীদের তৈরি একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে সারভাইভাল ইন্টারন্যাশনাল নামে ওই দাতব্য প্রতিষ্ঠানটি। ব্রাজিলের উত্তরপূর্বে কিছু বিপন্ন নৃ-গোষ্ঠীর সঙ্গে বসবাস করছেন গোয়াজাজারা সম্প্রদায়।






তারা সতর্ক করে বলছেন, অন্য দেশের নৃ-বিজ্ঞানীদের তৈরি এই পরিকল্পনা হবে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের জন্য আরেকটি গণহত্যা।   






সারভাইভল ইন্টারন্যাশনালের ক্যাম্পেইন ডিরেক্টর ফিওয়ানা ওয়াটসন বলেন, “বিপন্ন নৃ-গোষ্ঠী, বন উজাড় এবং অ্যামাজন জঙ্গলকে বাঁচাতে রাষ্ট্রের অনুপস্থিতিতে গুয়াজাজারা আদিবাসী গ্রুপটি নিজেরাই এই বিষয়ে দায়দায়িত্ব নিয়েছেন।” 






দাতব্য প্রতিষ্ঠানটি হিল এবং ওয়াকার বরাবর একটি খোলা চিঠি দিয়ে সতর্ক করে বলেছে, ফোর্স কনট্যাক্ট আদিবাসীদের মধ্যে নতুন রোগব্যাধী নিয়ে আসবে। সশ্রস্ত্র বহিরাগতদের সঙ্গে তাদের সহিংসতা হবে এবং তাদের প্রাকৃতিক সম্পদ চুরি হবে। ১০০ বছর আগে গোয়াজাজারা নৃ-গোষ্ঠী প্রথম বহিরাগতদের সংস্পর্শে এসে রোগব্যাধির সংক্রমণে নিজেদের ধ্বংস করেছিল। এখানকার নৃ-গোষ্ঠীদের সবচেয়ে ভালো জায়গা এখানেই। তারাই ভালো জানে এই অঞ্চলে কোনটি তাদের জন্য ভালো।






ফিওয়ানা ওয়াটসন আরও বলেন, “ক্রমবর্ধমানভাবে আদিবাসীরা এখন বিপন্ন নৃ-গোষ্ঠীদের রক্ষায় মুখ খুলছে। ইতিপূর্বে এ রকম কখনো দেখা যায়নি। হিল এবং ওয়াকারের প্রস্তাব হচ্ছে- যোগাযোগে প্ররোচিত করা, শিক্ষিত করা, নৃ-গোষ্ঠীদের টিকা দেয়া, যদি তাদের সঙ্গে অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের সংঘর্ষ হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাদের এই প্রস্তাবটি অনেকটা ঈশ্বরের সঙ্গে খেলার সমতুল্য।”     






মিস ওয়াটসন বলেন, “অতীতে যোগাযোগের সংস্পর্শে এসে ৯০ শতাংশ ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী প্রথম বছরেই মারা গিয়েছিল। আর এটি যদি ৫০ শতাংশও হয়, তাহলেও বিশাল সংখ্যক মানুষ প্রাণ হারিয়েছিল। এটির সবচেয়ে ভালো উদাহরণ হচ্ছে, সম্প্রতি আওয়া নৃ-গোষ্ঠীর দুইজন নারী বহিরাগতদের সংস্পর্শে এসেছিল। কারণ কাছাকাছি কাঠুরিয়াদের উপস্থিতি ছিল। সেরা চিকিৎসা সুবিধা নিয়ে মানুষ তাদের চিকিৎসায় সাহায্য করতে এসেছিল। তারা যক্ষ্মা রোগে মৃত্যুবরণ করেছিল। এমনটি আর ঘটবে না, তার কোনো নিশ্চয়তা আপনি দিতে পারবেন না। এটি অত্যন্ত দায়িত্বহীন কাজ হবে।”     






মিস ওয়াটসন আরও বলেন, “ব্রাজিল সরকারের বিশেষজ্ঞরা ১৯৮৭ সালে পুরোপুরি যোগাযোগবিহীন নীতি প্রবর্তন এবং সংবিধানে তাদের জমিতে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের অধিকার সন্নিবেশিত করেছিল। এখনো বিশ্বাস করা হয়, এটি ছিল সবচেয়ে ভালো পদক্ষেপ। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে স্বতন্ত্র বিচ্ছিন্ন গ্রুপের সংখ্যা ১০০ থেকে বেড়ে ১০৭ এ দাঁড়িয়েছে।”






হিল এবং ওয়াকারের জটিল যুক্তি নিয়ে গত বছর একটি আবেগপূর্ণ সম্পাদকীয় ছাপা হয়। সেটি ছিল, যোগাযোগের কিছু গঠন অনিবার্য ছিল। এটিকে ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য তৈরির চেষ্টা এবং নিয়ন্ত্রিত উপায়ে এই পদ্ধতিকে প্ররোচিত করতে যথাসম্ভব চেষ্টা করা।      






অধ্যাপক হিল বলেন, একটি গ্রুপ বিচ্ছিন্ন থাকার মতো তেমন কিছু নেই। কারণ তারা মনে করে, এটা ঠিক আছে, দুনিয়ার অন্য কারো সঙ্গে তাদের যোগাযোগের দরকার নেই। অধিকাংশ নৃ-গোষ্ঠীর লোকজন বহিঃবিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগে আগ্রহী। তবে তারা খুব ভয় পায়। 






মিস ওয়াটসন বলেন, “নৃ-গোষ্ঠীরা এক ধরনের প্রাক-যান্ত্রিক স্বর্গে বাস করছে।প্রচারকর্মীরা এই বিভ্রম দূর করতে কাজ করছে না। কিন্তু এটি অধিকারের প্রশ্নে চলে যায়। প্রচুর তথ্য-প্রমাণ রয়েছে দেখানোর জন্য যে, বিপন্ন নৃ-গোষ্ঠী যোগাযোগে আগ্রহী নয়। আওয়া নৃ-গোষ্ঠীর মতো অনেকেই সত্তর দশকের দিকে প্রথম যোগাযোগ স্থাপন করেন। তাদের মধ্যে অনেকেই আমাকে বলেছেন, সবচেয়ে ভালো হয় তাদের যদি জঙ্গলে থাকতে দেয়া হয়। তারা কোনো প্রাগৈতিহাসিক প্রত্যাবর্তন নয়। তারা সমসাময়িক সম্প্রদায় যারা নিজেদের মত বেঁচে থাকতে চায় এবং এটি তাদের ইচ্ছা।” সূত্র: দ্য ইন্ডিপেনডেন্ট।        






(ঢাকাটাইমস/০২জুন/এসআই/জেবি)