logo ১৫ মে ২০২৫
পরিবেশ সুরক্ষা ও ইসলাম
ইসলাম ডেস্ক
০৪ জুন, ২০১৬ ১৫:৪০:০৬
image



ঢাকা: ৫ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস। ইসলাম পরিবেশ রক্ষায় বিশেষ গুরুত্বারোপ করেছে। আমাদের এ সুন্দর পরিবেশ মহান আল্লাহ পাক সৃষ্টি করেছেন। মানুষের কল্যাণ ও জীবনধারণের প্রয়োজনে পরিবেশে বিদ্যমান যাবতীয় জিনিসও আল্লাহ তৈরি করেছেন। তিনি কোনোটাই অপ্রয়োজনে তৈরি করেননি। সুরা ইয়াসিনের ৩৩ নম্বর আয়াতে আল্লাহ পাক আমাদের পরিবেশে উপস্থিত ভূমিকে মানুষের কল্যাণে কিভাবে নিয়োজিত করেছেন তার সুন্দর বর্ণনা দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘তাদের জন্য একটি নিদর্শন মৃত ভূমি। আমি একে সজ্জীবিত করি এবং তা থেকে উত্পন্ন করি শস্য, তা তারা ভক্ষণ করে। আমি তাতে সৃষ্টি করি খেজুর এবং প্রবাহিত করি ঝরনা। যাতে তারা ফল পায়।’ সূরা আল-বাকারার ২২ নম্বর আয়াতে আল্লাহ পাক আরো বলেন, ‘যে পবিত্র সত্তা তোমাদের জন্য ভূমিকে বিছানা ও আকাশকে ছাদস্বরূপ স্থাপন করে দিয়েছেন আর আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করে তোমাদের জন্য ফল-ফসল উত্পন্ন করেছেন তোমাদের খাদ্য হিসেবে।’






মহান আল্লাহ পাক মানুষের জন্য কতটুকু জিনিসের প্রয়োজন তার কথাও উল্লেখ করেছেন আল কোরআনে। সূরা আল-কামারের ৪৯ নম্বর আয়াতে আল্লাহ পাক বলেন, ‘নিশ্চয়ই আমি সকল জিনিস সৃষ্টি করেছি সুস্পষ্টভাবে ও সুনির্দিষ্ট পরিমাপ অনুযায়ী।’ পানি বর্ষণের কারণ এবং তার কল্যাণের কথা বলতে গিয়ে আল্লাহ পাক সূরা আল-বাকারার ১৬৪ নম্বর আয়াতে বলেন, ‘আল্লাহ তা’আলা আকাশের দিক থেকে যে পানি বর্ষণ করেন, সে পানি দ্বারা পৃথিবীকে মৃত্যুর পর সজীব করেন। প্রত্যেক প্রকারের জীবজন্তুর বিস্তৃতি ঘটান। আসমান ও জমিনের মাঝখানে নিয়ন্ত্রিত বায়ু ও মেঘ পানির পরিবর্তনে জ্ঞানী সম্প্রদায়ের জন্য নিদর্শন বিদ্যমান।’






সত্যি কথা বলতে কি, দুনিয়াজুড়ে আজ যে জ্বরা, রোগ-শোক, বন্যা, ঝড়-তুফান ও সুনামির মতো বিপর্যয় ও ভয়ানক অশান্তিকর ঘটনাগুলো ঘটছে, তা আমাদের নিজেদেরই তৈরি। মহান আল্লাহ পাক এ প্রসঙ্গে সূরা রুমের ৪১ নম্বর আয়াতে বলেছেন, ‘জলে-স্থলে যে বিপর্যয় দেখা দিয়েছে তা মানুষের অর্জনেরই ফসল।’






পরিবেশকে ভালো ও উন্নত রেখে কিভাবে উত্তম জীবনধারণ ও কল্যাণ অর্জন করা যায়, তার দিকনির্দেশনা দিয়েছেন আমাদের প্রিয়নবী হজরত মুহাম্মদ (স)। তিনি পরিবেশের প্রতি ছিলেন খুবই যত্নবান। একদা জনৈক ব্যক্তি একটি গাছের পাতা ছিঁড়লে তিনি ওই ব্যক্তিকে এ রকম না করার পরামর্শ দেন এবং বললেন, ‘প্রতিটি পাতা আল্লাহর মহিমা ঘোষণা করে।’ বৃক্ষরোপণকে উত্সাহিত করেছেন মহানবী (স)। কেননা, গাছ-পালা, লতা-পাতা ইত্যাদি থেকে খাদ্য ও শস্য উৎপাদিত হয়। আর মানুষ ও জীবজন্তুর খাদ্য এখান থেকে সরবরাহ হয়। মানুষ ও জীবের জন্য অক্সিজেন তৈরি করে গাছপালা। এভাবে পরিবেশকে পরিচ্ছন্ন ও উপযোগী রাখে বৃক্ষ। এই বৃক্ষের বৃদ্ধি ও তা রক্ষাকে সাদকার সওয়াবের সাথে তুলনা করেন মহানবী (স)। হযরত আনাস (রা) থেকে বর্ণিত এক হাদিসে মহানবী (স) বলেন, ‘কোনো মুসলমান যদি একটি বৃক্ষের চারা রোপণ করে অথবা ক্ষেত খামার করে, অতঃপর তা মানুষ, পাখি কোনো জন্তু তা ভক্ষণ করে, তা হলে তা তার জন্য সাদকার সওয়াব হবে।’ অপর এক হাদিস হযরত আয়েশা (রা) হতে বর্ণিত হয়েছে। ওই হাদিসে মহানবী (স) বলেছেন, ‘যদি নিশ্চিতভাবে জানো যে, কিয়ামত এসে গেছে তখন হাতে যদি একটি গাছের চারা থাকে যা রোপণ করা যায়, তবে সেই চারাটি লাগাবে।’






এইভাবে আমরা পানির কথাও বলতে পারি।  এই অতি প্রয়োজনীয় এবং জীবনধারণের অন্যতম উপকরণ পানি বিশুদ্ধ রাখার নির্দেশ দিয়ে গেছেন ইসলামের নবী হযরত মুহাম্মদ (স)। তিনি পানির উৎস যেমন নদী-নালা, খাল-বিল, পুকুর-ডোবা ইত্যাদি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার তাগিদ দিয়েছেন। মহানবী (স) পানিতে আবর্জনা, মলমূত্র ও বর্জ্য ত্যাগ করতে নিষেধ করেছেন। তিনি ঘোষণা করেছেন, ‘তোমরা লা’নত আনয়নকারী তিন প্রকার কাজ থেকে নিজেদের বিরত রাখো। তা হলো পানির উৎসসমূহে, রাস্তা-ঘাটে ও বৃক্ষের ছায়ায় মলমূত্র ত্যাগ করা।’ তিনি আরো বলেছেন , ‘তোমরা কেউ বদ্ধ পানিতে প্রস্রাব করে তাতে অজু করো না।’






পরিবেশ সুন্দর, পরিচ্ছন্ন ও দূষণমুক্ত রাখার অন্যতম উপায় হচ্ছে নিজেদের দেহ-মন, ঘর-বাড়ি, রাস্তা-ঘাট ও পারিপার্শ্বিক পরিবেশকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা। এ ব্যাপারে বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (স) বলেছেন, ‘তোমরা তোমাদের পারিপার্শ্বিক পরিবেশকে দূষণমুক্ত করো এবং পবিত্র পরিচ্ছন্ন রাখো।’ তিনি আরো বলেন, ‘ঈমানের ৭২টি শাখা। তার মধ্যে সর্বোত্তমটি হলো লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ আর সর্বনিম্ন হচ্ছে রাস্তাঘাট থেকে ক্ষতিকারক জিনিস দূর করা।’






(ঢাকাটাইমস/০৪জুন/জেবি)