খুলনা: কমিটি গঠনের কোনো খবর না থাকলেও খুলনা মহানগর বিএনপির নেতৃত্বে আসতে অনেক আগে থেকেই দৌড়ঝাঁপ করে আসছেন ডজন খানেক নেতা। নেতৃত্ব পেতে এই নেতারা ইতিমধ্যে পাঁচ-ছয় ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। নিজেদের মতো করে দলীয় বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছেন তারা।
তবে তাদের দাবি, বর্তমান পরিস্থিতিতে নবীন-প্রবীণের সমন্বয়ে কমিটি গঠন, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনসহ খুলনায় দলের ভিত মজবুত করার প্রতি জোর দিচ্ছেন তারা।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১০ সালের শেষ দিকে দ্বিবার্ষিক সম্মেলনের মাধ্যমে খুলনা মহানগর ও জেলা বিএনপির কমিটি গঠিত হয়। নজরুল ইসলাম মঞ্জুকে সভাপতি ও মনিরুজ্জামান মনিকে সাধারণ সম্পাদক করে গঠন করা হয় নগর কমিটি। প্রায় চার বছর আগে এই কমিটির মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও নতুন কমিটি গঠনের কোনো উদ্যোগ এখনো পরিলক্ষিত হয়নি। ফলে নেতৃত্ব-প্রত্যাশীরা হতাশ ও ক্ষুব্ধ হয়ে এখন নিজেরাই নেতৃত্বে আসার জন্য তোড়জোড় শুরু করেছেন। এ ক্ষেত্রে সিনিয়র-জুনিয়রের তোয়াক্কা করছেন না অনেকে।
খুলনা বিএনপির একাধিক সূত্র জানায়, বর্তমানে খুলনা মহানগর বিএনপির নেতৃত্ব পেতে চাইছেন এক ডজনের বেশি নেতাকর্মী।
তারা হলেন বর্তমান সভাপতি ও কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম মঞ্জু, সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান মনি, সিনিয়র সহসভাপতি সাহারুজ্জামান মোর্তজা, যুগ্ম সম্পাদক অধ্যক্ষ তরিকুল ইসলাম তরিক, সাংগঠনিক সম্পাদক ফখরুল আলম, কোষাধ্যক্ষ এস এম আরিফুর রহমান মিঠু, নুরুজ্জামান খোকন, তরিকুল ইসলাম জহির ও শফিকুল আলম তুহিন।
এর মধ্যে নজরুল ইসলাম মঞ্জু ও মনিরুজ্জামান মনি রয়েছেন একটি ধারায়। অন্য ধারাগুলোর মধ্যে রয়েছে সাহারুজ্জামান মোর্তজা ও এস এম আরিফুর রহমান মিঠু; ফখরুল আলম ও তার ভাই শফিকুল আলম তুহিন; সাহারুজ্জামান মোর্তজা ও অধ্যক্ষ তারিকুল ইসলাম তারিক; মনিরুজ্জামান মনি ও তারিকুল ইসলাম তারিক; নুরুজ্জামান খোকন ও সাবেক যুবদল নেতা তরিকুল ইসলাম জহিরকে নিয়ে একেকটি ধারা। তারা খুলনা মহানগর বিএনপির হাল ধরতে চাইছেন।
সূত্র জানায়, অনেক আগে থেকেই দলীয় ফোরামে অভিযোগ রয়েছে, নগর বিএনপির বর্তমান সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জু সরকারদলীয় নেতাদের সঙ্গে আঁতাত করে চলছেন। তিনি দল পরিচালনা করছেন নিজের একান্ত অনুগতদের দিয়ে। ফলে নেতৃত্ব-প্রত্যাশী অনেক নেতাই দলীয় কর্মকা- থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছেন।
তবে এই অভিযোগ বরাবরই অস্বীকার করে এসেছেন নজরুল ইসলাম মঞ্জু। তিনি বলেন, “দল পরিচালনার ক্ষমতা যাদের নেই তারাই এ ধরনের মিথ্যা ও ভিত্তিহীন অভিযোগ উত্থাপন করেন। এসব অভিযোগকারী দলের স্বার্থের বদলে ষড়যন্ত্র করে দলকে ক্ষতিগ্রস্ত করার অপচেষ্টায় লিপ্ত।”
অভিযোগ রয়েছে, সম্মেলনের মাধ্যমে একসময়ের জনপ্রিয় ওয়ার্ড কমিশনার মনিরুজ্জামান মনি খুলনা মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হলেও দলের প্রতি তিনি উদাসীন। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর সারা দেশে বিএনপি দলীয় নেতাকর্মীরা আন্দোলন-সংগ্রামে লিপ্ত থাকলেও তিনি অসুস্থাতার অজুহাতে নিজেকে আড়াল করে রাখেন। তবে নজরুল ইসলাম মঞ্জুর পর সভাপতি পদে তার নামটাই উচ্চারিত হচ্ছে সবচেয়ে বেশি।
সিনিয়র সহসভাপতি সাহারুজ্জামান মোর্তজা ছিলেন কমিউনিস্ট পার্টির নেতা কমরেড রতন সেন হত্যা মামলার অন্যতম আসামি। তবে তিনি বলেন, ১৯৯৩ সালে আদালতের মাধ্যমে সেই মামলা থেকে তিনি বেকসুর খালাস পেয়েছেন। তিনি বলেন, দল পরিচালনার সক্ষমতা তার রয়েছে। নেতাকর্মীরা যদি তাকে সভাপতি পদে চায় তাহলে তার কোনো আপত্তি নেই।
দলীয় সূত্র আরও জানায়, বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে ফখরুল আলম খুলনায় টেন্ডারের নিয়ন্ত্রক ছিলেন। তবে তিনি এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তার কোনো লাইসেন্স ছিলো না, তাই টেন্ডারবাজি করার প্রশ্নই ওঠে না। এটা তার বিরুদ্ধে একটা অপপ্রচার। এবার তিনি সাধারণ সম্পাদক হতে চাইছেন বলে সূত্র জানিয়েছে। তবে খুলনার তিন নেতা (মঞ্জু, মনি ও মোর্তজা) কেন্দ্রের সঙ্গে যুক্ত হলে সভাপতি পদেও আসতে পারেন ফখরুল। তবে সাধারণ সম্পাদকের পদেই আগ্রহ বেশি তার।
এক-এগারোর সরকারের সময় যৌথ বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হন যুবদলের সাবেক নেতা তরিকুল ইসলাম জহির। এর আগে তার নামে দায়ের হয় দলীয় কর্মী মনু ও আলতাফ হত্যা মামলা। তবে জহির সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “ওগুলো ছিল রাজনৈতিক প্রতিহিংসামূলক মামলা। আদালতেও তা প্রমাণিত হয়।” খুলনা মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পেলে দলকে আরও বেশি গতিশীল এবং ত্যাগী নেতাকর্মীদের মূল্যায়নের ব্যবস্থা করা হবে বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, গত দুই যুগে অনেক নেতাকর্মী নিজেদের গুটিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছেন। তাদের আবার সক্রিয় করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
খুলনা মহানগর বিএনপির সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জু বলেন, দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে কেন্দ্র থেকে সম্মেলনের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত দেয়া হয়নি। কেন্দ্র থেকে যেভাবে নির্দেশনা দেয়া হবে, সেভাবেই পদক্ষেপ নেবেন তারা।
(ঢাকাটাইমস/১৩জুলাই/মোআ)