logo ২০ এপ্রিল ২০২৫
সেই প্রকৌশলী হাসনাত করিমকে নিয়ে ধূম্রজাল
মোসাদ্দেক বশির ও আশিক আহমেদ, ঢাকাটাইমস
০৪ জুলাই, ২০১৬ ১৩:০৪:৪৯
image



ঢাকা: রাজধানীর গুলশানে স্প্যানিশ হোটেল-হলি আর্টিজানে জিম্মিদশা থেকে শনিবার সকালে স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে বের হয়ে আসা প্রকৌশলী হাসনাতকে নিয়ে ধুম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে। ডিবি পুলিশ নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এই শিক্ষককে জিজ্ঞাসাবাদ করছে। এরই মধ্যে তার বাসভবনে অভিযান চালিয়ে হাসনাতের ব্যবহার করা ল্যাপটপটি জব্দ করেছে পুলিশ। তিনি ছাড়াও ওই দিনের ঘটনায় আটক আরও চারজন ডিবি পুলিশের হেফাজতে রয়েছে।






জিম্মি দশায় হাসনাতের গতিবিধি সন্দেহের জন্ম দিয়েছে। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা কথাবার্তা চালু হয়েছে। হলি আর্টিজানে হামলাকারী পাঁচ জঙ্গির মধ্যে একজন ছিলেন (নিবরাস ইসলাম) নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র। প্রকৌশলী হাসনাত করিমও নর্থ সাউথের শিক্ষক ছিলেন। তাই অনেকেই হাসনাত করিমকে সন্দেহের চোখে দেখছে।






নিহত জঙ্গি নিবরাস ইসলাম এবং শিক্ষক হাসনাত একই বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র-শিক্ষক হওয়া ছাড়াও জিম্মিদশায় তার গতিবিধির কারণে তাকে নিয়ে সর্বমহলেই সন্দেহ তৈরি হয়েছে। তাছাড়া জঙ্গি সম্পৃক্ততায় নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষকদের নিয়ে এর আগেও প্রশ্ন উঠেছে। গণমাধ্যমে এর আগে বহু প্রতিবেদন ছাপাও হয়েছে।






এছাড়া কমান্ডো অভিযানের পর প্রকাশিত বেশ কয়েকটি ভিডিও ফুটেজে জঙ্গিদের সঙ্গে তার খোলামেলা কথা-বার্তা, হাঁটা-চলা এবং সকালে জঙ্গিদের সঙ্গে তাকে ছাদে দেখা যাওয়া এবং সকালে স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে নির্বিঘ্নে জিম্মি দশা থেকে বের হয়ে আসা নিয়ে নানা কথাবার্তা হচ্ছে ফেসবুকে।






এছাড়া ন্যাড়া মাথার এই লোকটি কখনও রেস্টুরেন্টের ভেতর অস্ত্র হাতে, কখনও জঙ্গিদের সঙ্গে ছাদে ধূমপানরত দেখা গেছে। আটক জিম্মিদের সঙ্গে করে রেস্টুরেন্টের বাইরে এগিয়ে আসতেও তাকে দেখা যায়।






পরিচয় প্রকাশ পাওয়ার আগ পর্যন্ত তিনি সবার কাছে ন্যাড়া মাথার লোক বলে পরিচিত ছিলেন। তাকে নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছেও প্রশ্ন করা হয়েছিল। ফেসবুকে নেড়া মাথার লোকটি কোথায় উধাও হয়ে গেল তা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বলেন, ঘটনাটি খতিয়ে দেখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।






এ ব্যাপারে হাসনাত করিমের পিতা প্রকৌশলী রেজাউল করিমের কাছে জানতে চাইলে তিনি ঢাকাটাইমসকে বলেন, হাসনাত করিমকে এ ঘটনায় ফাঁসানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।আমি ডিবি কার্যালয়ে যাব।পুলিশ যদি তাকে ছেড়ে না দেয় আইনগত পদক্ষেপ নেয়া হবে।এ বিষয়ে তিনি সংবাদ সম্মেলনও করবেন বলে ঢাকাটাইমসকে জানিয়েছেন।






জঙ্গি হামলায় নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এই শিক্ষকের সংশ্লিষ্টতা সম্পর্কে র‌্যাবের ডিজি বেনজীর আহমেদ বলেন, বিষয়টি যাচাই করে দেখা হচ্ছে।






জঙ্গিদের সঙ্গে হাসনাত করিমের আচরণ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান, ছেলের বউ শারমিন পারভিনের মাথায় হিজাব থাকায় তাকেও তারা খুব সমাদর করেছে। রাতে খেতেও দিয়েছে।



নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটিতে এখন শিক্ষকতা করছেন কি না জানতে চাইলে রেজাউল করিম বলেন,'এখন নয়,অনেক আগে সেখানে শিক্ষকতা করতো। দেশের বাইরে পড়তে যাওয়ার আগে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছেন সে।'






এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের গণমাধ্যম শাখার অতিরিক্ত উপকমিশনার ইউসুফ আলী ঢাকাটাইমসকে বলেন, হাসনাত করিম ডিবি কার্যালয়ে আছেন। তবে তিনি আটক বা গ্রেপ্তার সে ব্যাপার তার কাছে কোনো তথ্য নেই। এ ব্যাপারে কথা বলার জন্য ডিবির সিনিয়র কোনো কর্মকর্তাকে বার বার চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি।






হাসনাত করিমের বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতা ছেড়ে হাসনাত করিম ইংল্যান্ডে প্রকৌশলী বিষয়ে পড়াশোনা করতে যান। এরপর যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে এমবিএ ডিগ্রি নেন। তিনি গুলশান ২ নম্বরের ৬৮ নম্বর সড়কে বসবাস করেন।






শনিবার সকালে যৌথ বাহিনীর অভিযানের সময় স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে হলি আর্টিজান থেকে বের হয়ে তিনি সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, ছেলে রায়ান করিমের জন্মদিন উপলক্ষে মেয়ে সাফা করিম ও স্ত্রী শারমিন পারভীনকে নিয়ে ক্যাফেতে গিয়েছিলেন।






এ সময় তিনি বলেন, যারা কোরআন পড়তে জানে তাদেরকে ছেড়ে দিয়েছে জিম্মিকারীরা। তার স্ত্রী হিজাব পরায় তাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেনি তারা। রাতে একবার খেতেও দিয়েছিল তাদেরকে। পরে হাসনাত করিমের পরিবারকেও ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়।






ছেলে উদ্ধার হয়ে আসার পর হাসনাত করিমের মা মিসেস করিম জানান, সন্ত্রাসীরা ২০ জনকেই রাত ১০টার পরে জবাই করেছে। তারা সংখ্যায় ছিল ৫ জন।






তিনি বলেন, জিম্মিদশা থেকে মুক্তি পাওয়ার পর অল্প আলাপের পরই হাসনাতকে স্ত্রী-সন্তানসহ নিয়ে যায় ডিবি পুলিশ।






উল্লেখ্য, গত শুক্রবার রাতে বন্দুকধারীরা গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁতে হামলা চালিয়ে সেখানকার দেশি-বিদেশি সবাইকে জিম্মি করে। পরের দিন শনিবার সকালে সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে কমান্ডো অভিযানে জিম্মি সংকটের অবসান হয়।






(ঢাকাটাইমস/০৪ জুলাই/এআর/ঘ.)