ঢাকা: বাংলাদেশে রেল সার্ভিস দীর্ঘদিন ধরেই অবহেলিত-এটা সর্বজন স্বীকৃত। রেল নিয়ে গণমাধ্যমে কোনো প্রতিবেদন প্রকাশ মানেই রেলের কোনো নেতিবাচক দিক উঠে আসা। এই সার্ভিসটি নিয়ে কত প্রবাদই না চালু রয়েছে আমাদের দেশে-‘নয়টার ট্রেন কয়টায় ছাড়ে’, আরও কত কী!
তবে সম্প্রতি ‘সোনার বাংলা এক্সপ্রেস’ চালু হওয়ার পর কিছুটা হলেও রেল নিয়ে মানুষের নেতিবাচক ধারণা বদলাতে শুরু করেছে। গত শনিবার থেকে একজোড়া রেল ঢাকা-চট্টগ্রামে চলাচল শুরু করছে। ঘড়ি ধরে রেলটি ছাড়ছে এবং গন্তব্যে পৌঁছছে। এক কথায় বাংলাদেশের রেল ভ্রমণে যাত্রীদের এমন অভিজ্ঞতা খুব কমই আছে অতীতে।
গতকাল বুধবার সকালে কমলাপুরে গিয়ে সোনার বাংলার যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, নতুন এই ট্রেনটিতে সব সুবিধাই রয়েছে। সেবার মান থেকে শুরু করে সবকিছু্ই ঝকঝকে তকতকে। কী নেই এই রেলের কামরাগুলোতে-সময়মতো ছেড়ে যাওয়া এবং গন্তব্যে পৌঁছা, যাত্রীদের প্যাকেজজাত খাবার সরবরাহ, ইন্টারনেট সুবিধা, টিভি, ফ্যান, এসিসহ সবই রয়েছে। ফ্যান ও লাইটের সুইচও হাতের নাগালে। চাইলে বন্ধ ও চালু করা যাচ্ছে। যাত্রীরাও বেশ সন্তুষ্ট। রেল যাত্রী ও স্টেশনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গত কয়েকদিনের অভিজ্ঞতা হচ্ছে-রেলের ছেড়ে যাওয়া ও গন্তব্যে পৌঁছার ক্ষেত্রে সময়ের কোনো হেরফের ঘটেনি।
কমলাপুর রেলওয়ের স্টেশন মাস্টার মো. সাখাওয়াত হোসেন খাঁন ঢাকাটাইমসকে বলেন, সময় ধরেই সোনার বাংলা এক্সপ্রেস ট্রেনটি যাতায়াত করছে। এখন পর্যন্ত এর কোনো ব্যাত্যয় ঘটেনি।
গত ২৫ জুন বেলা সাড়ে ১১টায় কমলাপুর রেলস্টেশনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিলাসবহুল এ ট্রেনটির উদ্বোধন করেন। এর পর নিয়মিতই চলাচল করছে রেলটি।
ট্রেনটি সকাল ৭টায় কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে ছেড়ে শুধুমাত্র বিমানবন্দর রেল স্টেশনে দাঁড়িয়ে বিরতিহীনভাবে চট্টগ্রাম গিয়ে পৌঁছে ১২টা ৪০ মিনিটে। ফিরতি ট্রেন চট্টগ্রাম থেকে বিকাল ৫টায় ছেড়ে বিরতিহীনভাবে কমলাপুর রেল স্টেশনে পৌঁছে রাত ১০টায়।
১৬টি যাত্রীবাহী কোচ নিয়ে ট্রেনটি চলাচল করে। কমলাপুর স্টেশন থেকে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে ছাড়ার ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই ট্রেনের প্রত্যেক কোচে খাবার নিয়ে হাজির হন কর্মীরা।
খাবার সরবরাহের দায়িত্বে রয়েছে বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন। খাবার বাবদ ১৯৫ টাকা টিকিটের সঙ্গে নিয়ে নেয়া হয় বিমানের মতো। যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ট্রেন ছাড়ার ঘন্টাখানেকের মধ্যেই খাবারের প্যাকেট নিয়ে হাজির হন কর্মীরা, প্রতি প্যাকেটে একটি করে আপেল, একটি ম্যাঙ্গ জুস, এক পিস কেক, দুটি খেজুর থাকে।
রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, তিন ক্যাটাগরিতে টিকিট দেওয়া হয়ে থাকে সোনার বাংলা এক্সপ্রেসের। শোভন চেয়ার টিকিটের মূল্য ৬০০ টাকা, এসি চেয়ারের মূল্য এক হাজার টাকা এবং এসি সিট-এর টিকিটের মূল্য নেয়া হয় ১১০০ টাকা।
তবে খাবার নিয়ে দুই/এক যাত্রী এই প্রতিবেদকের কাছে ক্ষোভ ঝাড়লেন। মঙ্গলবার চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা এসেছিলেন সোহেল আহমেদ নামের এক ব্যবসায়ী। কাজ সেরে পরের দিন বুধবার সকালে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন। তিনি ঢাকাটাইমসকে বলেন, খাবারের যে প্যাকেট সরবরাহ করা হচ্ছে তা মোটেই যৌক্তিক নয়। খাবার বাবদ আমাদের কাছ থেকে যে ১৯৫ টাকা নেয়া হচ্ছে সে অনুযায়ী বিনিময়ে খুব কমই দেয়া হচ্ছে।
তবে তিনি ট্রেনের অন্যান্য সকল সব ব্যাপারে তিনি সন্তোষ প্রকাশ করেন। আলিফ আহমেদ যাচ্ছিলেন চট্টগ্রামের দিকে। কথা হয় তার সঙ্গেও। তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন, বাংলাদেশে এই প্রথম রেলে ভ্রমণ করে আরাম পাচ্ছি। ভালো লাগছে। সব আধুনিক সুবিধাই রয়েছে এখানে। এই সার্ভিস চালু হওয়ার মধ্যদিয়ে বাংলাদেশের রেল সার্ভিস আরও একধাপ এগিয়ে গেল। তিনি বলেন, সিটে বসেই হাতের নাগালের মধ্যে ফ্যান, লাইটের সুইচ অন অফ করা যাচ্ছে। হাতের কাছেই স্পিকার টিউনারও রয়েছে।সোনার বাংলা এক্সপ্রেসে চড়ে এমন অভিজ্ঞতা প্রায় সকল যাত্রীরই।
খাবার নিয়ে যাত্রীদের অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের ব্যবস্থাপক সিতাংশু চক্রবর্তী ঢাকাটাইমসকে বলেন, ঈদের পর থেকে পাঁচটি ম্যানু সরবরাহ করা হবে। রমজান মাস হওয়ায় খাবার মেনু কিছুটা দুর্বল। ঈদের পর খাবার নিয়ে এই অভিযোগ আর থাকবে না।
(ঢাকাটাইমস/৩০জুন/জিএম/এআর/ ঘ.)