ঢাকা: বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে সৌদি আরবের সম্পর্ক বরাবরই অন্যরকম, সেই জিয়াউর রহমানের আমল থেকে। প্রতিবছরই সৌদি বাদশার রাজকীয় মেহমান হিসেবে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর সৌদি সফর ও ওমরা পালনের ঘটনা ছিল নিয়মিত ব্যাপার। কেন যেন সেই নিয়মে কিছুটা ছেদ পড়েছে। গত দু বছর ধরে যাওয়া হয়ে উঠছে না তাঁর। এবার রমজানের মাঝামাঝি খালেদা জিয়া ওমরা পালনের জন্য সৌদি আরব যাচ্ছেন বলে রোজার প্রথম দিকে একাধিক গণমাধ্যমে প্রতিবেদন ছাপা হয়।
তবে, খালেদার সৌদি আরব সফর নিয়ে বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিএনপি নেত্রীর সৌদি আরব সফর নিয়ে কেউ নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারছেন না।
গতবছর সবকিছু ঠিকঠাক হয়ে যাওয়ার পরও শেষ মুহূর্তে সৌদি আরবে ওমরায় যাওয়ার সিদ্ধান্ত বাতিল করা হয়। শুক্রবার ১৮ রমজান পার হয়েছে। রমজান জুড়েই বিভিন্ন প্রোগ্রামে তাঁর শিডিউল রয়েছে। ফলে এবারও যে খালেদা জিয়ার সৌদি আরব যাওয়া হচ্ছে না তা মোটামুটি নিশ্চিত করেই বলা যায়।
তবে কেন হঠাৎ করে দীর্ঘদিনের মিত্র সৌদি আরবে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত তা নিয়ে দলের বিভিন্ন পর্যায়ে যোগাযোগ করেও সঠিক কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। দলের একাধিক শীর্ষ নেতার সঙ্গে খালেদার সৌদি সফর নিয়ে এই প্রতিবেদকের কথা হয়েছে। এ ইস্যুতে সবাই অন্ধকারে, কেউই নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারছেন না।
বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয় কেন্দ্রীক একাধিক নেতাও ঢাকাটাইমসকে মোটামুটি নিশ্চিত করেছেন, এবছর অন্তত ওমরা করার জন্য খালেদা জিয়ার সৌদি আরব যাওয়া হচ্ছে না। কেননা অন্যান্য বছর ২০ রমজানের দিকে ওমরা করতে যান এবং শবে কদরের নামাজ শেষ করে তিনি দেশে ফেরেন। কিন্তু, এখন পর্যন্ত সেরকম কোনো আলামত পাওয়া যাচ্ছে না। কোনো উদ্যোগও চোখে পড়ছে না।
যদিও বিএনপির একটি সূত্র বলছে, ২৪ রমজানের দিকে তিনি (খালেদা জিয়া)ওমরা পালন করতে গেলেও যেতে পারেন। সেক্ষেত্রে লন্ডন থেকে তারেক রহমান ও তার পরিবারের সদস্যরা যোগ দিতে পারেন। তবে সূত্রটি নির্ভরযোগ্য নয়।
এদিকে, দলের বাকি কমিটির নেতাদের নাম ঘোষণা করা হতে পারে বলেও কথা শোনা যাচ্ছে। বলাবলি হচ্ছে-রমজানেই সে সম্ভাবনা বেশি। বিএনপির মহাসচিবসহ বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতা রমজানের মধ্যে কমিটি ঘোষণা হতে পারে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন। তবে সব কিছুই নির্ভর করছে নেত্রীর ওপর।
বিএনপি চেয়ারপারসনের ওমরা পালন করতে যাচ্ছেন কিনা এমন প্রশ্নে বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘এ বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই।’
আর বিএনপি চেয়ারপারসনের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক উপদেষ্টা এনামুল হক দেশের বাইরে থাকায় তাঁর সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলা সম্ভব হয়নি।
জানতে চাইলে চেয়ারপারসনের প্রেস উইং সদস্য শায়রুল কবির খান ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘ম্যাডামের (খালেদা জিয়া)৩০জুন পর্যন্ত ইফতারের শিডিউল দেয়া আছে। এরমধ্যে তিনি ওমরায় যাবেন কিনা বলতে পারছি না।’
এদিকে গতবছরও ভিসা, বিমানের টিকিট সব চূড়ান্ত হওয়ার পরও হঠাৎ করে সৌদি সফর বাতিল করেন খালেদা জিয়া। এমনকি সফরসঙ্গীদের ভিসাও চূড়ান্ত হয়েছিল।
কথা ছিল তিনি ঢাকা থেকে দুবাই হয়ে সৌদি আরবে যাবেন। অন্যদিকে লন্ডন থেকে তারেক রহমান ও স্ত্রী-কন্যা এবং মালয়েশিয়া থেকে প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী-কন্যা দুবাই থেকে খালেদা জিয়ার সফর সঙ্গী হবেন। সে অনুযায়ী সৌদির রাজকীয় মেহমান হিসেবে ১৩ জনের ভিসাও সংগ্রহ করা হয়। কিন্তু হঠাৎ করেই বাতিল করা হয় সৌদি সফর।
তবে কি কারণে সফর বাতিল করছিলেন তা নিয়ে নানা ধরনের কথা বাজারে চালু আছে।
নির্ভরযোগ্য খবর বলছে, ওই সময় বিএনপি চেয়ারপারসনের নিয়মিত সফরসঙ্গীদের মধ্যে তাঁর বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস ও প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান সোহেলের বিরুদ্ধে নাশকতার একটি মামলায় চার্জশিট দেয় পুলিশ। ফলে তাদের ইমিগ্রেশনে গ্রেপ্তারের একটি শঙ্কা ছিল। এছাড়াও দলের কয়েকজন সিনিয়র নেতা খালেদা জিয়ার সফরসঙ্গী হওয়ার কথা থাকলেও মামলা জটিলতার কারণে তারা যেতে পারছিল না।
অপরদিকে তার বড় ছেলে দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ভিসা জটিলতার কারণে সৌদিতে আসতে পারবেন না। যে কারণে সবকিছু চূড়ান্ত হওয়ার পরও শেষ পর্যন্ত খালেদা জিয়া সফর বাতিল করেন বলেও শোনা যায়।
আবার খালেদা জিয়া ভিসা দেয়া হয়নি বলেও গণমাধ্যমে খবর বেরিয়েছিল।
অবশ্য বিএনপির পক্ষ থেকে তাকে (খালেদা জিয়া) ভিসা না দেয়া এবং তারেক রহমানের ভিসা জটিলতা নিয়ে যে খবর প্রকাশিত হয় তাকে ভিত্তিহীন বলে দাবি করা হয়েছিল।
ওইসময় দলের মূখপাত্রের দায়িত্বে থাকা বিএনপি নেতা ড. আসাদুজ্জামান রিপনের বক্তব্য ছিল এমন- ‘ওমরা পালন নিয়ে পত্রপত্রিকার প্রকাশিত সংবাদের বাস্তব ভিত্তি নেই। তারেক রহমান সৌদি আরবের ভিসা পেয়েছেন এবং খালেদা জিয়াকে সৌদি বাদশাহ ওমরা পালনের জন্য প্রতিবারের ন্যায় এবারো আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। তবে তিনি কেন যাননি সেটা তার ব্যক্তিগত বিষয়, এটা রাজনৈতিক বিষয় নয়।’
এদিকে গুঞ্জন আছে, দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপির সঙ্গে সৌদি আরবের সম্পর্ক আগের মতো নেই। উল্টো শেখ হাসিনা সরকারের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে সৌদি আরবের পারষ্পরিক বোঝাপাড়ার কারণে ভালো সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সৌদি আরব সফর এবং সেখানে নানা ইস্যু বিশেষ করে সৌদি আরবের নেতৃত্বে জঙ্গি ও সন্ত্রাসবিরোধী জোটের প্রতি শেখ হাসিনার অকুণ্ঠ সমর্থনের কারণে ঢাকার সরকারে প্রতি সৌদি রাজ পরিবারের আস্থা ও বিশ্বাস তৈরি হয়েছে। এছাড়া সৌদি আরবে শ্রমিক পাঠানো বিশেষ করে নারী শ্রমিক পাঠানোর ব্যাপারে বেশ কিছু অগ্রগতি হয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, সৌদি আরবের নেতৃত্বে সামরিক জোটে বাংলাদেশ সরকারের জোরালো অবস্থান দু দেশের সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছে। এর বাইরে প্রয়োজনে কাবা শরীফ, মহানবী (স.)এর রওজা মোবারকের নিরাপত্তায় সেনা পাঠানোর প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার বিষয়টি দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় নেয়ার ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রাখছে। এসবই হয়তো খালেদা জিয়ার ওপর একটা মনস্তাত্বিক চাপ তৈরি হয়ে থাকতে পারে। একারণে হয়তো খালেদার সঙ্গে সৌদি আরবের একটা দূরত্ব তৈরি হয়ে থাকতে পারে।
যদিও বিএনপি নেতারা বিষয়টি মানতে নারাজ। তারা বলছেন, জিয়াউর রহমানের সময় থেকে বিএনপির সঙ্গে সৌদি আরবের সম্পর্ক ভালো। এখনো তা অটুট আছে।
বিএনপি চেয়ারপারসনের একজন উপদেষ্টার কাছে বিষয়টি জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি ঢাকাটাইমসকে বলেন,‘এমন খবর আপনারা কোথায় পান জানি না। ওমরা করতে যাওয়া না যাওয়ার সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েনের কোনো সম্পর্ক নেই। হয়তো ম্যাডাম (খালেদা জিয়া) ব্যক্তিগত কোনো সিদ্ধান্ত থেকে এবার ওমরায় যাবেন না।’
(ঢাকাটাইমস/২৫জুন/বিইউ/এআর/ঘ.)