logo ২১ এপ্রিল ২০২৫
দুর্নীতিতে ডুবছে কর্ণফুলী পেপার মিল
সরকারের ৬১ লাখ টাকা বাঁচিয়ে দিলেন এক কর্মী
মহিউদ্দিন মাহী, ঢাকাটাইমস
১৩ জুন, ২০১৬ ১৩:১১:০৮
image




ঢাকা:  সব কিছুই সাজানো ছিল। সরকারি কাগজকলের প্রায় ৬১ লাখ টাকা নিজেদের পকেটে ঢুকাবেন-পরিকল্পনা ছিল তিন ঠিকাদারের। তাদের সহযোগী ছিলেন কাগজকলেরই ১১ কর্মকর্তা। তারাও সহযোগিতা করেন ঠিকাদারদের। টাকা আত্মসাতের জন্য ব্যবহার করা হয় ভুয়া পে অর্ডার ও ব্যাংক গ্যারান্টিও। কিন্তু সব জেনে যান একজন। সরকারি টাকা মেরে পকেট ভরাবে অন্যরা-মানতে পারেননি তিনি। সব কিছু জানিয়ে দেন দুর্নীতি দমন কমিশনকে। আর তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিয়ে সরকারের টাকাটা বাঁচিয়ে দিল দুদক। মামলাও হয়েছে তিনটি। অনুমোদন হয়েছে আরও পাঁচটি।



তবে কার জন্য সরকারি এই টাকা রক্ষা পেলো তার নাম বা পরিচয় জানা যায়নি। দুদক তার কিছুই প্রকাশ করেনি। দুর্নীতিবিরোধী সরকারি সংস্থাটির একজন কর্মকর্তা কেবল জানিয়েছেন, ওই লোকটি কাগজকলেই চাকরি করেন।



দুদকের দুর্নীতির মামলায় তিন ঠিকাদার ছাড়াও আসামি করা হয়েছে কেপিএমের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনোয়ারুল ইসলাম তালুকদারসহ বর্তমান ও সাবেক ১১ কর্মকর্তাকে।



কেপিএমে কর্মরত যে কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে তারা হলেন, অতিরিক্ত প্রধান ব্যবস্থাপক ও বাণিজ্যিক বিভাগের প্রধান এ কে এম আনিসুজ্জামান, উপব্যবস্থাপক (্ক্রয়) কাজী মো. তৈয়ব মিয়া, অতিরিক্ত প্রধান রসায়নবিদ গোলাম সরোয়ার, উপ-ব্যবস্থাপক নুরুল আলম তালুকদার, মহাব্যবস্থাপক বিদ্যুৎ কুমার বিশ্বাস।



দুদক সরকারি কাগজকলটির সাবেক যেসব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এই দুর্নীতি চেষ্টার প্রমাণ পেয়েছে তারা হলেন,  সাবেক প্রধান ব্যবস্থাপক (হিসাব ও অর্থ) গোলাম ফারুক (বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশনের-বিসিআইসি প্রধান অর্থ কর্মকর্তা), সাবেক উপ-প্রধান হিসাবরক্ষক আবুল কালাম আজাদ, সাবেক অতিরিক্ত প্রধান ব্যবস্থাপক মো. দারুজ্জামান, সাবেক মহাব্যবস্থাপক  (কারিগরি) সাদ্দাত হোসেন, সাবেক অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী বিনয় প্রকাশ চাকমা, সাবেক মহাব্যবস্থাপক (এমপিআইসি) আব্দুস ছাত্তার মজুমদার। এদের বেশিরভাগই অবসরে গেছেন।  



যে চার ঠিকাদারকে আসামি করা হয়েছে তারা হলেন, মেসার্স হাজী আব্দুল গণি অ্যান্ড সন্স ও মেসার্স ইকবাল অ্যান্ড ব্রাদার্স স্বত্বাধিকারী ইকবাল হোসেন চৌধুরী, মেসার্স ইলেক্ট্রো ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী ইস্তিয়াক হোসেন দিদার এবং একই প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপক আলমগীর হোসেন।



অগ্রণী ব্যাংকের রাঙামাটি জেলার চন্দ্রঘোনা শাখার ব্যবস্থাপক আবদুল মান্নান মৈশানকেও এই মামলায় আসামি করা হয়েছে। তিনি দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির সদস্য ছিলেন বলে জানিয়েছে দুদক।



দুদকের কর্মকর্তারা জানান, এই একটি ঘটনায় মামলা হলেও তদন্ত করতে গিয়ে সরকারি কাগজকলটির আরও বহু দুর্নীতির খোঁজ পেয়েছেন তারা। ভুয়া কাগজপত্র দাখিল বা পে অর্ডারের মাধ্যমে এর আগেও বিপুল পরিমাণ টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। এসবের অনুসন্ধানও চলছে।   



মামলার অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা ও দুদকের রাঙ্গামাটি জেলার সহকারী পরিচালক জাহিদ কালাম ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘অনুুসন্ধানে  প্রমাণ পাওয়ার পরই আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। আসামিদের শিগগির গ্রেপ্তার করা হবে। আর অনুমোদন হওয়া বাকি মামলাগুলোও শিগগির করা হবে।’



কেপিএমের একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকাটাইমসকে জানান, সংস্থাটির কর্মকর্তা, সিবিএ নেতা ও ঠিকাদারদের যোগসাজসের কারণে দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে। এ কারণেই লাভজনক কারখানাটি এখন লোকসানি প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়ে বন্ধের উপক্রম হয়েছে।



দুদকের রাঙামাটির সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক সফিকুর রহমান ভূইঁয়া বলেন, ‘কেপিএমের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের কারণেই প্রতিষ্ঠানর দুর্দশা তৈরি হয়েছে। ইতিমধ্যে তিনটি মামলা করেছি। আরও অভিযোগ পেয়েছি’।



দুদকের মামলায় যে অভিযোগ



মামলায় বলা হয়, হাজী আব্দুল গণি অ্যান্ড সন্স’ এবং ও মেসার্স ইকবাল অ্যান্ড ব্রাদার্স ও মেসার্স ইলেক্ট্রো ইন্টারন্যাশনালের মালিকপক্ষ কর্ণফুলী পেপার মিলের কাগজ উৎপাদনের প্রধান কাঁচামাল পাল্পউড (নরমকাঠ) সরবরাহে অনিয়ম করে। এই প্রক্রিয়ায় কাগজকলটি থেকে ভুয়া ব্যাংক গ্যারান্টি ও পে-অর্ডারের মাধ্যমে ৬০ লাখ ৬৪ হাজার ৬৬৩ টাকা আত্মসাৎ করার চেষ্টা করেছে ঠিকাদাররা। আর এতে সহযোগিতা করেন ওই ১২ কর্মকর্তা।



এ বিষয়ে মামলার আসামিদের বক্তব্য দেয়া সম্ভব হয়নি। ঠিকাদার তিনজন ও একজন ব্যাংকার এবং চার জন কেপিএমের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাদের পাওয়া যায়নি। কাগজকলটির বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালকের ব্যক্তিগত মোবাইল ফোনটিও বন্ধ রেখেছেন।



(ঢাকাটাইমস/১৩জুন/এমএম/ডব্লিউবি)