logo ২১ এপ্রিল ২০২৫
আজ সৌদি যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী, নেই প্রবাসীকল্যাণমন্ত্রী
মহিউদ্দিন মাহী, ঢাকাটাইমস
০২ জুন, ২০১৬ ২৩:১৩:৪৪
image




ঢাকা: আজ শুক্রবার বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শ্রমবাজার সৌদি আরব সফরে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২০০৮ সাল থেকে সে দেশে শ্রমশক্তি রপ্তানি নিয়ে যে টানাপোড়েন চলছে, এই সফরের মধ্য দিয়ে তার একটা সুরাহা হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এমনও শোনা যাচ্ছে, এবার সৌদি আরবের শ্রমবাজার বাংলাদেশের জন্য পুরোপুরি উন্মুক্ত হতে পারে।



কিন্তু এই গুরুত্বপূর্ণ সফরে প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গীর তালিকায় নেই এই খাতের অর্থাৎ প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি।



প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে বলা হচ্ছে, ব্যক্তিগত সফরে অস্ট্রেলিয়ায় থাকা মন্ত্রী নুরুল ইসলাম দেশে ফিরবেন আগামী শনিবার। তার আগের দিন প্রধানমন্ত্রী সৌদি আরবের উদ্দেশে দেশ ছাড়বেন। তাই তার সফরসঙ্গী হতে পারছেন না প্রবাসীকল্যাণমন্ত্রী।



তবে মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রীর সৌদি আরব সফরে প্রবাসীকল্যাণমন্ত্রীকে আসলে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। কেননা প্রধানমন্ত্রী চাইলে নুরুল ইসলাম বিএসসি অস্ট্রেলিয়া থেকে সরাসরি সৌদি আরব গিয়ে সফরে যোগ দিতে পারতেন। প্রধানমন্ত্রীর অনেক সফরে এমন ঘটনা এর আগে বহু আছে। কিন্তু সৌদি সফরে প্রবাসীকল্যাণমন্ত্রীর ক্ষেত্রে তা হচ্ছে না।



নুরুল ইসলাম বিএসসিকে এই সফরে এড়িয়ে যাওয়ার পেছনে বেশ কয়েকটি কারণের কথা জানায় সূত্র। এর মধ্যে রয়েছে সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে বাংলাদেশের শ্রমবাজার স্বভাবিক করতে না পারা, প্রধানমন্ত্রীর পূর্বনির্ধারিত সৌদি সফরের সময় ব্যক্তিগত সফরে মন্ত্রীর অস্ট্রেলিয়া যাওয়া।



আর একটি সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রীর সৌদি সফরে প্রবাসীকল্যাণমন্ত্রীর বাদ পড়ার ক্ষেত্রে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কৌশলী তৎপরতাও একটি কারণ। কেননা প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী থাকছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী। এ সফরে সৌদির শ্রমবাজার উন্মুক্ত হওয়ার ক্ষেত্র তৈরি হলে এর কৃতিত্ব নিতে চাইবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।



পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি ঘনিষ্ঠ সূত্রে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফরসঙ্গী হিসেবে অন্যান্যের মধ্যে রয়েছেন তার ছোট বোন শেখ রেহানা, জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি শফিকুর রহমান, শীর্ষ ব্যবসায়ীসহ জ্যেষ্ঠ কয়েকজন সাংবাদিক ও ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তা।



প্রধানমন্ত্রীর এই সফরে মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসির না-থাকা সম্পর্কে জানতে চাইলে প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম ঢাকাটাইমসকে সম্প্রতি বলেন, “মন্ত্রী ব্যক্তিগত সফরে অস্ট্রেলিয়া আছেন। তিনি ৪ জুন ঢাকায় ফিরবেন। প্রধানমন্ত্রী সৌদি আরব যাবেন ৩ জুন। ফলে মন্ত্রী যোগ দিতে পারছেন না। এর বেশি কিছু বলতে পারছি না।”



জানতে চাইলে জনশক্তি রপ্তানিকারকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিজের (বায়রা) মহাসচিব মনসুর আহমেদ কামাল ঢাকাটাইমসকে বলেন, “সৌদি আরব আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি দেশ। সবচেয়ে বেশি জনশক্তি ওই দেশে। বর্তমানে সৌদিতে জনশক্তি রপ্তানিতে কিছু সমস্যা আছে। আমরা আশা করছি প্রধানমন্ত্রীর সফরে সব সমস্যার সমাধান হবে।”



কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর এই সফরে প্রবাসীকল্যাণমন্ত্রীর না থাকা সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে বায়রা মহাসচিব বলেন, “জনশক্তি নিয়ে যদি কোনো চুক্তি হয় সেখানে তো প্রবাসীকল্যাণমন্ত্রী ও সচিবের থাকাটা জরুরি বলে আমি মনে করি। আমরা জানতে পেরেছি প্রধানমন্ত্রীর এ সফরে ছয়টি চুক্তি হবে। এর মধ্যে জনশক্তি রপ্তানি নিয়েও চুক্তি হওয়ার কথা রয়েছে। প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি এখানে থাকা উচিত বলে আমি মনে করি। তবে সার্বিকভাবে প্রধানমন্ত্রী থাকলে আসলে অন্যদের দরকারও হয় না। তিনি সবকিছুই করতে পারেন।”



প্রধানমন্ত্রীর কার্যানলয়ের একটি সূত্র জানায়, শুক্রবার সন্ধ্যায় বাংলাদেশ বিমানের বিশেষ ফ্লাইটে জেদ্দা যাবেন প্রধানমন্ত্রী। রাতেই মক্কায় ওমরা পালন করবেন তিনি। এরপর ৫ জুন সৌদি বাদশার সঙ্গে জেদ্দার রাজকীয় প্রাসাদে বৈঠক করবেন প্রধানমন্ত্রী। ৬ জুন তিনি মহানবীর রওজা শরিফ জিয়ারতের জন্য মদিনা যাবেন।



সৌদি আরব সফরে প্রধানমন্ত্রী দুই দেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট দ্বিপাক্ষিক, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবেন।



সৌদি বাদশাহর সঙ্গে বৈঠকে সে দেশে বাংলাদেশিদের শ্রমবাজার সম্প্রসারণ, দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি, বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রকল্পে অধিক হারে সৌদি সহায়তা, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ইস্যুতে সহযোগিতা এবং হজ ব্যবস্থাপনাসহ বিভিন্ন বিষয়ে দুই শীর্ষ নেতা মত বিনিময় করবেন।



প্রধানমন্ত্রীর সফরকালে সৌদির ডেপুটি ক্রাউন প্রিন্স, উপ-প্রধানমন্ত্রী, প্রতিরক্ষামন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী, শ্রমমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রীসহ দেশটির নেতারা তার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন।



সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রধানমন্ত্রীর এ সফরের মধ্য দিয়ে সেখানকার শ্রমবাজার বাংলাদেশের শ্রমিকদের জন্য সম্পূর্ণ উন্মুক্ত হতে পারে। বাড়তে পারে বাংলাদেশে সৌদি আরবের বিনিয়োগ ও অন্যান্য সহযোগিতাও। সফরকালে দুই দেশের মধ্যে ‘ফরেন অফিস কনসালটেশন (এফওসি)’, সাংস্কৃতিক সহযোগিতা এবং তথ্যপ্রযুক্তি খাতে চুক্তি বা সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরসহ বেশ কয়েকটি চুক্তি হতে পারে বলে নিশ্চিত করেছে কূটনৈতিক সূত্র।



৭ জুন বাংলাদেশ বিমানের বিশেষ ফ্লাইটে মদিনা থেকে সরাসরি ঢাকায় ফেরার কথা প্রধানমন্ত্রীর।



বাদশাহ আব্দুল্লাহ বিন আব্দুল আজিজের মৃত্যুর পর গত বছরের জানুয়ারিতে বিশ্বের শীর্ষ তেল রপ্তানিকারক সৌদি আরবের শীর্ষ পদে সালমান বিন আব্দুল আজিজ অধিষ্ঠিত হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রথম সফর এটা।



এর আগে ২০০৯ সালে দ্বিপক্ষীয় সফরে সৌদি আরব গিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী।  এই সফরের পর দেশটিতে বাংলাদেশি শ্রমিকদের ইকামা পরিবর্তন এবং অবৈধ শ্রমিকদের সাধারণ ক্ষমার মতো বেশ কিছু পদক্ষেপ নেয়া হয়।



গত কয়েক বছরে ঢাকা ও রিয়াদের সম্পর্ক বেশ ঘনিষ্ঠ ও শক্তিশালী হয়েছে। দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়েও সফর হয়েছে।  সৌদি আরবে প্রায় ২৫ লাখ বাংলাদেশি কর্মী কাজ করছেন।  সেখানে আধা দক্ষ ও দক্ষ জনশক্তির বিপুল চাহিদা রয়েছে।  সৌদিতে আরো বেশি জনশক্তি রপ্তানির জন্য প্রধানমন্ত্রীর এই সফরকে কাজে লাগাতে চায় বাংলাদেশ।



বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শ্রমবাজার সৌদি আরবে  বাংলাদেশের শ্রমশক্তি রপ্তানি নিয়ে বর্তমানে এক ধরনের টানাপোড়েন আছে। ২০০৮ সাল থেকে সৌদি আরব সরকার বাংলাদেশের শ্রমিকদের ভিসা দেয়া প্রায় বন্ধ করে দেয়। এতে পুরো শ্রমবাজারে বিরূপ প্রভাব পড়ে। জনশক্তি রপ্তানি প্রায় অর্ধেকে নেমে আসে।



২০০৮ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে সরকার গঠনের পর ২০০৯ সালের প্রথম দিকে সৌদি আরব সফরে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি সৌদির তৎকালীন বাদশার সাথে সাক্ষাৎ করে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার অনুরোধ জানান। পরে তৎকালীন প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন কয়েক দফা সৌদি আরব সফর করেন।



এসব প্রচেষ্টায় ফল হিসেবে গত বছর বাংলাদেশী পুরুষ কর্মীদের জন্য আংশিকভাবে উন্মুক্ত হয় সৌদি আরবের শ্রমবাজার। নারী কর্মীর সঙ্গে গৃহশ্রমিক কোটায় শর্তসাপেক্ষে পুরুষ কর্মী নেয়া শুরু করে দেশটি। পুরুষ গৃহকর্মীরাও নারীদের মতো বিনা খরচেই সৌদি আরবে যাওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন। এর মধ্য দিয়ে সে দেশে চার লাখ বাংলাদেশির কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা তৈরি হয়।



(ঢাকাটাইমস/২মে/এমএম)