ঢাকা: গ্রীষ্মের প্রথম মাস হলেও অতটা উত্তপ্ত থাকে না বৈশাখের অর্ধেক সময়। গরম কেবল পড়তে শুরু করে এই মাসের শুরুতে, আর সূর্য উত্তপ্ত হয়ে উঠে মাসের শেষ দিকে। গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারে এই বৈশাখ মাসটা এপ্রিলের মাঝামাঝি থেকে শুরু হয়ে থাকে মের মাঝামাঝি পর্যন্ত। তাই গ্রীষ্মের মূল উত্তাপটা টের পাওয়া যায় আসলে মের শুরু বা মাঝামাঝি সময়ে আগে। কিন্তু এবার এপ্রিল ছিল ভয়ঙ্কর। স্বাভাবিকের চেয়ে পাঁচ ডিগ্রি সেলিসিয়াস পর্যন্ত অতিরিক্ত তাপমাত্রায় জীবন করেছে হাঁসফাঁস।
সে তুলনায় পুরো মে মাসটিই বলতে গেলে ছিল বৃষ্টিস্নাত। কখনও ঝড়, কখনও ঘূর্ণিঝড়, কখনও নিম্নচাপ, কখনও লঘুচাপের কারণে পুরো মাসটিতেই প্রায় কালো মেঘে ঢাকা ছিল আকাশ। ফলে প্রখর রৌদ্রতাপ তপ্ত করতে পারেনি ধরনী।
এবার এপ্রিলে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪০ ছাড়িয়েছে প্রথমবারের মতো। তবে মের সর্বোচ্চ তামপাত্রা ছিল ৩০ এক আশেপাশে। জুনে তাপমাত্রা এর চেয়ে কিছুটা বেশি হবে জানালেও এই মাসেও বেশ ভালোই বৃষ্টি হবে বলে জানিয়েছে আহাওয়া অধিদপ্তর।
এপ্রিল জুড়ে তীব্র গরম আর মে তে বর্ষার মত শীতল আবহাওয়া- আবহাওয়ার এই পরিবর্তনকে স্বাভাবিক হিসেবে দেখছেন না বিশেষজ্ঞরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক তৌহিদা রশীদ ঢাকাটাইমসকে বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ইতোমধ্যে আমরা অনেক সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছি। ঋতু পরিবর্তনের সময়কালে হেরফের হচ্ছে। অনেক ঋতু স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে দীর্ঘ হচ্ছে। আবার কোন কোন ঋতু ছোট হচ্ছে। পরিবর্তনজনিত এই পরিস্থিতিতে আমাদের খাপ খাওয়াতে হবে। এছাড়া বিকল্প নেই।
তবে আবহাওয়া অধিদপ্তর অবশ্য একে বড় ধরনের কোনও পরিবর্তন হিসেবে দেখতে নারাজ। কর্মকর্তারা বলছেন, কোন কোন বছর আবহাওয়ায় এমন পরিবর্তন হতেই পারে। আবহাওয়াবিদ আবদুর রহমান ঢাকাটাইমসকে বলেন, সাধারণত মে মাসে গরম থাকে। তবে এবার বৃষ্টিপাত ও ঝড় হওয়ায় মে মাসে তাপমাত্রা কম ছিল। আবার এপ্রিলে অস্বাভাবিক গরম ছিল। এটা আপাতদৃষ্টিতে অস্বাভাবিক মনে হলেও আবহাওয়া বা জলবায়ুতে বড় ধরনের পরিবর্তন হিসেবে দেখার সুযোগ নেই।
আবহাওয়া অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এপিল মাসে সিলেট বিভাগে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি এবং রাজশাহী বিভাগে প্রায় স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত হয়েছে। তবে সার্বিকভাবে সারাদেশে স্বাভাবিকের অর্ধেকেরও কম বৃষ্টি হয়েছে। আবার ৬ এপ্রিল থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত দেশের অনেক স্থানের উপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারী ধরনের তাপ প্রবাহ বয়ে যায়। রাজশাহী, খুলনা ও রংপুর বিভাগের কোন কোন অঞ্চলে এ কারণে আবহাওয়া অনেক বেশি উত্তপ্ত হয়ে উঠে। আর ২৯ এপ্রিল রাজশাহীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪১.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে যায়।
আবার মে মাসের দেশের উত্তর, উত্তর পূর্বাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলে ২৩ দিন বজ্রসহ মাঝারি বা তীব্র বৃষ্টি, কালবৈশাখী বা বজ্রঝড় হয়েছে। অতি বর্ষণে দেশের উত্তর, উত্তর-পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের কিছু কিছু এলাকায় বন্যাও দেখা দিয়েছে।
জুনে কেমন থাকবে আবহাওয়া?
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে জুনের প্রথমার্ধে সারাদেশে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু (বর্ষাকাল) বিস্তার লাভ করতে পারে। মাস জুড়েই বৃষ্টিপাত হতে পারে। তবে বৃষ্টি বেশি হবে চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগে। সব চেয়ে কম বৃষ্টিপাত হতে পারে খুলনা ও রাজশাহী বিভাগে। আর ঢাকা বিভাগে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ মাঝারি পরিমাণের থাকবে। এই মাসে বঙ্গোপসাগরে দুটি বা একটি মৌসুমী নিম্নচাপ সৃষ্টি হতে পারে বলেও জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা।
(ঢাকাটাইমস/৩১মে/এমএম/ডব্লিউবি)