রমজান এলেই কিছু পণ্যের দাম বাড়ে, কারণ কী? রাজধানীর মৌলভীবাজারের আর এম ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী মনির হোসেন বললেন, ‘সহজ হিসাব বুঝতে পারলেন না? অতি মুনাফা।’ দাম যতই বাড়–ক মানুষ কিনবেই। পণ্যের পাইকারি এই বিক্রেতার কথার সঙ্গে সোজাসাপ্টা দ্বিমত কারওয়ানবাজারের খুচরা বিক্রেতা আয়নাল হকের। ‘পাইকাররা (পাইকারি বিক্রেতারা) দাম বাড়ায়। বেশি দামে কিনি। বেচি বেশি দামে’, বলেন তিনি।
দুই শ্রেণির বিক্রেতা নিজেদের পক্ষে নানা যুক্তি দাঁড় করান। বিশ্ববাজারের দোহাই তো আছেই। মজুদ আছে ঢের, তারপরও তেল, ছোলা, পেঁয়াজ, ডালের দাম বাড়ছে। বিশ্ববাজারে দাম বেড়েছে, সংগতি রাখতে দেশের বাজারেও দাম বাড়িয়ে দেন মজুদদার বা আমদানিকারকরা। অথচ দাম না বাড়ালে লাভে কোনো কমতি হতো না। সুযোগ আছে, তাই বাড়াবাড়ি করতে দোষ কী। উল্টো চিত্রটা ভালো নয়। দাম বাড়লে বাড়ানোর বিপরীতে দাম কমলে সহজে পণ্যের দাম নেমে আসে না। তখন যুক্তি, বেশি দামে কেনা। দাম কমালে লোকসান কে গুনবে?
ব্যবসায়ীদের এই কৌশলী মারপ্যাঁচে আর যাই হোক সাধারণের হাপিত্যেস। হিমশিম খাচ্ছে কম আয়ের মানুষ। আর মুনাফার ভাগ যাচ্ছে পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতাদের পকেটে। বাজার দর যাই হোক তারা বরাবরই থাকেন নিরাপদে। বৃহস্পতিবার মৌলভীবাজার ঘুরে পণ্যের দামের যে চিত্র মিলেছে তা কিছুটা স্বস্তির হলেও একই দিন কারওয়ানবাজারের খুচরা চিত্র বিস্ময়ের। পাইকারি দামের চেয়ে খুচরা বাজারে একই পণ্যের দামের ব্যবধান কেজিতে ৩০ থেকে ৩৫ টাকা। কোনো কোনো পণ্যে তারও বেশি।
ব্যবসায়ীদের কাছে বড়ই মিষ্টি চিনি
মৌলভীবাজারের আর এম ট্রেডার্সে ৫০ কেজি ওজনের চিনির বস্তা বিক্রি হচ্ছে দুই হাজার ৭০০ টাকায়। হিসাবে প্রতি কেজি ৫৪ টাকা। অথচ কারওয়ানবাজারে খুচরা বিক্রেতারা চিনি বিক্রি করছেন ৬৫ থেকে ৬৮ টাকায়। হিসাবে প্রতি কেজিতে খুচরা বিক্রেতারা মুনাফা গুনছেন সর্বনি¤œ ১১ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১৪ টাকা। কিন্তু বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, আমদানিকৃত চিনি সবধরনের খরচ মিলিয়ে কেজিপ্রতি ৪২ থেকে ৪৩ টাকা হওয়ার কথা। মুনাফা ও পরিবহন ব্যয়জুড়ে দিলে চিনির দাম খুচরা কেজি প্রতি ৫৪ টাকা হওয়ার কথা। অথচ বাজার চিত্র বলছে পাইকারি ও খুচরা দুটোই নির্ধারিত দামের ধারেকাছে নেই। তার ওপর রমজান শুরু হলে যে চিনির দাম আরও বাড়বে না, এটা নিশ্চিত করে বলার কেউ নেই।
পাইকারি ও খুচরা বাজারের দামের মধ্যে সামঞ্জস্য রাখার জন্য মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করা সময়ের দাবি হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, সরকারি পর্যায়ে নজরদারি বাড়লে অতিমুনাফার লাগাম কিছুটা টেনে ধরা সম্ভব হবে। তা না হলে বেপরোয়া দাম নির্ধারণ নিয়ন্ত্রণ কঠিনই বটে।
ছোলার আমদানি ব্যয় ৪১ টাকা, বিক্রি ৯০
সারা দিন রোজা রাখার পর দিন শেষে ইফতারে ছোলা না হলে আয়োজনে পূর্ণতা আসে না। সারা বছর যেমন তেমন, রমজান এলে ছোলার চাহিদা বাড়ে কয়েকগুণ। পাল্লা দিয়ে বাড়ে দাম। এবার রোজার আগে থেকেই ছোলার দাম বেড়ে গেছে।
চাহিদার তুলনায় আমদানি হয়েছে বেশি, তারপরও কেন প্রতিদিন দাম বাড়ছে? জবাবে মৌলভীবাজারের মৌসুমী স্টোরের স্বত্বাধিকারী তুষার বললেন, ‘আমদানিকারকরা সব নিয়ন্ত্রণ করেন। আমাদের কিছুই করার নেই।’ তবে গত বছর আনা ছোলার দাম কিছুটা কম বলে জানান তিনি। তুষার জানান, প্রতি কেজি ছোলা পাইকারি বিক্রি করেন ৯০ টাকা দরে। সেই হিসাবে ৫০ কেজির বস্তা চার হাজার ৫০০ টাকা। দ্বিগুণ দামে বিক্রি করেন কাবলি ছোলা। দেখতে কিছুটা বড় ও সাদা রঙের। বিক্রেতা জানান, এটা বড় লোকের খাবার। দাম সব সময়ই বেশি।
দুই দোকান পরেই নিউ মিতালী ট্রেডার্সের মালিক আব্দুস সালাম অবশ্য ছোলা বিক্রি করছেন মৌসুমী স্টোরের চেয়ে কমে। প্রতি কেজি ছোলা পাইকারি দাম ৮২ টাকা। আকারে একটু বড় সাদা রঙের ছোলা এখানে বিক্রি হচ্ছে ৮৮ টাকা। তিনি জানালেন সাদা রঙের এই ছোলা আসে মিয়ানমার থেকে। মৌলভীবাজারে যে ছোলা কেজিপ্রতি বিকাচ্ছে ৮২ টাকায়, কারওয়ানবাজারে এসে তা কিনতে হচ্ছে ৯২ থেকে ৯৫ টাকায়। ভালোটার দাম বেশি বলে শেষমেশ ক্রেতার পকেট থেকে খসছে সর্বোচ্চটাই। অথচ সাদা চোখে ভালো-খারাপের তফাত করা সহজ নয়।
চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ ব্যবসায়ীদের তথ্য মতে, এখন যে ছোলা বাজারে আসছে তা আমদানি হয়েছে প্রায় দুই মাস আগে। এই ছোলা শুল্কায়ন শেষে খাতুনগঞ্জ পর্যন্ত পৌঁছানোসহ মূল্য হচ্ছে মণপ্রতি ১ হাজার ৫৩০ টাকা বা প্রতি কেজি ৪১ টাকা। এর সঙ্গে যোগ হবে আমদানিকারকের প্রায় ১৫ শতাংশ ব্যাংক ঋণ, ৩ শতাংশ মুনাফা, পাইকারি পর্যায়ে পরিবহন ও মুনাফাসহ ৬ শতাংশ এবং খুচরা পর্যায়ে আরও ১৫ শতাংশ মুনাফা। এই হিসেবে এক কেজি ছোলার সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য হওয়ার কথা ৫২.৭৫ টাকা।
দাম বৃদ্ধির পর একটা শব্দ সহজেই বাতাসে ভাসে, অসাধু চক্র। ক্রেতাদের অভিযোগ, এই অসাধুর চক্র সংখ্যা কত বেশি? কেন বারবারই শুনতে হয় তাদের কথা? নাকি অসাধু চক্রের জুজু দেখিয়ে আড়ালে আছেন পরিচিত ‘সাধুরাই’। বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যবসায়ীর সঙ্গে বাতচিতে জানা গেল, অসাধু চক্র বলতে আদতে হয়ত কিছুই নেই। যদি থেকেই থাকে তাহলে তারা ব্যবসায়ীদের বাইরে তো কেউ নন। যা করছেন এই ব্যবসায়ীরাই করছেন। শুল্ক ফাঁকি থেকে শুরু করে সব ধরনের কারসাজিতে তারা পটু। দেশে সরবরাহ বেশি থাকলেও দেখা যায় অনেক পণ্য তারা বিদেশ থেকে আমদানি করতে উৎসাহী। কারণ, আমদানি করতে পারলে পণ্যে মুনাফা বেশি করা যায়। নি¤œমানের পণ্য বিক্রি হয় বেশি দামে। তার ওপর আন্তর্জাতিক বাজারের মুলো তো আছেই ঝুলানো।
তেল নিয়ে তেলেসমাতি
একই তেল বোতলের আকার ভিন্ন, ব্র্যান্ডে তফাত, তাই দামেও তফাত। পাইকারি ও খুচরা দামে ফারাক তো আছেই। পাইকারি বাজারে ৫ লিটারের চারটি তীর সয়াবিন তেলের বোতল বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ৬৭০ টাকায়। তাতে প্রতিটির দাম পড়ছে ৪১৭ টাকা। অথচ খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে বোতলপ্রতি ৩৮ থেকে ৪০ টাকা লাভে ৪৫৫ থেকে ৪৪৭ টাকায়। আবার কোম্পানি ভেদে এই পাঁচ লিটারের বোতলজাত তেল বিকাচ্ছে ৪৭০ টাকায়। মৌলভীবাজারের মেসার্স হোসেন ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী বাবু তীরের ১৬ লিটারের তেল পাইকারি বিক্রি করছেন এক হাজার ৩৮০ টাকায়। টিনজাত এই সয়াবিন তেল কারওয়ানবাজারে পাইকারি বিক্রেতারা ক্রেতাদের কাছ থেকে রাখছেন আরও কুড়ি টাকা বেশি।
দামের এই অসামঞ্জস্যতার মূলে কী? রহস্যই রয়ে গেছে। সরকার নির্ধারিত নীতিমালা মানলে আকাশ-পাতাল লাভের প্রবণতা কমে আসত বলে মনে করেন বাজার বিশেষজ্ঞরা। অথচ কে শোনে কার কথা। কার্যত ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণ রীতিমতো চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সিন্ডিকেটে জিম্মি হয়ে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। কনজুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমানও তাই মনে করেন। তিনি বলেন, ‘ব্যবসায়ীদের কারসাজির কারণে রমজানের আগেই জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাচ্ছে। সরকারের উচিত হবে মূল্য কারসাজির সঙ্গে জড়িত কিংবা অবৈধ মুনাফাকারী ওই সব ব্যক্তিকে চিহ্নিত করে কঠোর শাস্তি দেওয়া। নয়ত দাম বাড়ার এই প্রতিযোগিতা নতুন নতুন কৌশলে চলবেই। এতে ক্ষতি হবে সাধারণ ভোক্তাদেরই।’
ডালের বাজারেও অতি মুনাফা
ডালের বাজারেও আছে দামে বেজায় ফারাক। কোনো কোনো ক্ষেত্রে মসুর ডাল বিক্রি হচ্ছে ন্যায্য দামের চেয়ে ২৭ টাকা বেশি। পাইকারি বাজারে মসুরের দেশি ডাল বিক্রি হচ্ছে ১৩২-১৩৩ টাকায়। অস্ট্রেলিয়ান ডাল বিক্রি হচ্ছে ৯৬ টাকা কেজিতে। এই অস্ট্রেলিয়ান ডাল আকারে বড়। এটা ভুল করে অনেকে বলেন ইন্ডিয়ান মসুরের ডাল। অথচ বিক্রেতা আব্দুস সালাম জানালেন, ইন্ডিয়া থেকে কোনো ডাল আসে না। অস্ট্রেলিয়া থেকে আরেকটি ডাল বাংলাদেশে আসে। যেটাকে বলা হয় ক্যাঙ্গারু মসুর। এই ডাল প্রতি কেজি পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকায়।
চট্টগ্রামের আমদানিকারকরা বললেন, মসুর ডালের খুচরা মূল্য সব ধরনের মুনাফা ও পরিবহন ধরে হওয়ার কথা ছিল ১২৪ টাকা। কিন্তু খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ১৫৫ টাকায়। কোনো ধরনের নিয়ন্ত্রণ না থাকায় ক্রেতাদের গুনতে হচ্ছে অতিরিক্ত টাকা। খাতুনগঞ্জের খবর বলছে, আমদানি করা মটর ডাল দাম পড়ে প্রতি কেজি প্রায় ২৮ টাকা। অথচ খুচরা বাজারে এই ডাল বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫৫ টাকায়।
ক্রয়মূল্যের দ্বিগুণ দামে বিক্রি হয় পেঁয়াজ
পেঁয়াজের ঝাঁজও ছাপিয়ে গেছে মুনাফা। এক কেজি পেঁয়াজে প্রায় দ্বিগুণ লাভ করছেন বিক্রেতারা। অথচ আমদানি ব্যয় থেকে শুরু করে সবধরনের খরচ মেটানোর পর ১৫ শতাংশ লাভ ধরে দাম ঠিক করলেও প্রতি কেজি ইন্ডিয়ান পেঁয়াজ বিক্রি হওয়ার কথা ২২ টাকা ৫০ পয়সা থেকে ২৩ টাকায়। সেই পেঁয়াজ এখন বিক্রি হচ্ছে ৩৫ টাকায়। দেশি পেঁয়াজের গায়ে আগুন। প্রায় ৫০ টাকা গুনতে হচ্ছে এক কেজি দেশি পেঁয়াজ বাজারের ব্যাগে তোলার জন্য। পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের চাহিদা বেড়েছে। কিন্তু দাম বাড়ছে প্রতিদিনই।
বাজারে দেশি পেঁয়াজের আমদানি ভালো। কারণ কৃষকরা এখন পেঁয়াজ তুলছেন। এতে সরবরাহ বাড়ছে ঠিকই কিন্তু দাম কমছে না। আবার ওদিকে কৃষক পাচ্ছে না ন্যায্যমূল্য। ঝিনাইদহের কৃষকরা জানিয়েছেন, তারা ৮ থেকে ১০ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ বিক্রি করছেন। দিনাজপুরের চাষিরা পেঁয়াজ বিক্রি করছেন সর্বোচ্চ ১১ টাকায়। কিন্তু খুচরা বাজারে এই দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে প্রায় ৫০ টাকায়। চড়া দামের পেছনে কৃত্রিম মজুদ সংকটকে দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা।
হাত ঘুরে আর খেজুরের দাম বাড়ে
খেজুরের সন্ধানে যেতে হয়েছে রাজধানীর বাদামতলী বাজারে। বুড়িগঙ্গা লাগোয়া এই বাজারে ফলফলাদির আড়ত। খেজুরের বিক্রি এখন বেড়েছে। আমদানিও ভালো। বিপ্লব এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী আল-আমিন জানান, আগামী এক মাস খেজুরের ব্যবসাই তার ধ্যানজ্ঞান। দেশের বাজারে যেসব খেজুর পাওয়া যায় তার সিংহভাগই আসে সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে। খেজুরের মানে আছে রকমফের।
বিক্রেতা মো. ইসরাফিল বলেন, এক কার্টনে থাকে ১২টি প্যাকেট। ওজন ছয় কেজি। পাইকারি বিক্রি দুই হাজার ৩৫০ টাকা। আবার ১০ কেজি ওজনের খোলা খেজুর বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ১৫০ থেকে এক হাজার ২০০ টাকায়। দুবাইয়ের ফরিদা খেজুর বিক্রি হচ্ছে হাজার টাকায় পাঁচ কেজি। নাগাল খেজুর ১২ প্যাকেট একসঙ্গে এক হাজার ৪০০ টাকা। ওজন ছয় কেজি। খুচরা বাজারে এই খেজুরের দামে অনেক তফাত। ১৯৫ টাকায় কেনা প্রতি প্যাকেট খেজুর খুচরা বিক্রেতারা রাখছেন ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত। ১২০ টাকা কেজি খোলা খেজুর খুচরা বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকার বেশি দামে। তাও আবার বড়-ছোট আলাদা করে বিক্রি করা হচ্ছে ভিন্ন দামে। খেজুরের দামের তারতম্য নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। যে কারণে মৌসুমি ব্যবসায়ীরা হাতিয়ে নিচ্ছেন অতিরিক্ত মুনাফা।
নজরদারি কেবল কথার কথা
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলছে, রমজানে প্রয়োজনীয় দ্রব্য চাহিদার চেয়ে বেশি আমদানি হয়েছে। জোগান ভালো। দাম বাড়ার তো কারণ নেই। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘রোজায় যেন দাম না বাড়ে এ ব্যাপারে নজরদারি করা হবে। তখন কারসাজির সুযোগ থাকবে বলে মনে হয় না।’ তবে মন্ত্রণালয়ের এই নজরদারির কোনো নমুনাই দেখা যায়নি বাজারে।
নিত্যপণ্যের দাম যৌক্তিক ও সহনীয় রাখতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে নতুন করে ১৪টি মনিটরিং কমিটি করা হয়। এই কমিটির দায়িত্বের মধ্যে অস্বাভাবিক মজুদ ঠেকানো এবং সরবরাহ ঠিক রাখাও পড়ে। কিন্তু কমিটিগুলো এখন প্রায় নিষ্ক্রিয়। যে কারণে বাজার নিয়ন্ত্রণে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ চোখে পড়ছে না। আসছে রমজানকে সামনে রেখে মনিটরিং কমিটিগুলো পুনর্গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। কিন্তু তা এখনো আছে চূড়ান্তের অপেক্ষায়।
ওদিকে ৬ মাসের জন্য গঠিত মনিটরিং কমিটিগুলোর মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ৩০ জুন। বর্তমানে অধিকাংশ কমিটির প্রধানের পদই খালি। তাই কমিটিগুলোকে পুনর্গঠন করার সিদ্ধান্ত নিলেও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় তা এখনো করেনি। কমিটিগুলোর প্রধান করা হয় উপসচিব পদমর্যাদার ১৪ জন সরকারি কর্মকর্তাকে। যাদের বেশিরভাগই বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং এর অধীনস্থ সংস্থায় কাজ করছেন। এ সময়ের মধ্যে ওই ১৪ জন কর্মকর্তার অনেকেই বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে অন্য মন্ত্রণালয় বা দপ্তরে বদলি হয়েছেন। কেউ পদোন্নতি পেয়েছেন, কেউ গেছেন অবসরে। আবার যারা অন্য মন্ত্রণালয় থেকে বদলি হয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে যুক্ত হয়েছেন এমন অনেকেই আছেন যারা বাজার মনিটরিং কমিটিতে নেই।
আন্তর্জাতিক বাজারের জুজু
নিত্যপণ্যের পর্যাপ্ত মজুদ আছে। তারপরও আন্তর্জাতিক বাজারে বেড়েছে অজুহাতে দেশের মজুদদাররাও বাড়তি মুনাফা লুটছেন। চাইলে পণ্য আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান এস এ গ্রুপের ব্যবস্থাপক মো. রাসেল হোসাইন উত্তর দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। অপর প্রতিষ্ঠান মেঘনা গ্রুপের উপদেষ্টা এম এইচ মুন্সী বলেন, এ ব্যাপারে আমি কিছু বলতে পারব না। তবে বাংলাদেশ ডাল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি শফি মাহমুদ বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে ডালের দাম বেড়েছে। বাংলাদেশ-ভারত-নেপাল সব দেশেই ডালের উৎপাদন কম হয়েছে। এসব কারণেই বর্তমানে দাম বাড়ছে। ছোলার দাম আন্তর্জাতিক বাজারে গত বছরের তুলনায় প্রতি টনে তিন শ থেকে চার শ মার্কিন ডলার বেড়েছে। আমদানিকারক সব প্রতিষ্ঠানেরই দাবি আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্যবৃদ্ধির প্রভাবেই দেশীয় বাজারে মূল্য বাড়ছে।
এবারও বাজারে থাকবে টিসিবি
রমজান উপলক্ষে সারা দেশের ১৭৪টি পয়েন্টে টিসিবি ট্রাক বসাবে। যেখানে চিনি, মসুর ডাল, ছোলা, সয়াবিন তেল ও খেজুর সরকারনির্ধারিত দামে বিক্রি হবে। রাজধানী ঢাকার ২৫টি পয়েন্টে, চট্টগ্রামে ১০টি, অন্য বিভাগীয় শহরে পাঁচটি করে ট্রাক বসবে। এছাড়া জেলা শহরে দুটি করে মোট ১৭৪টি স্থানে অস্থায়ীভাবে ট্রাক বসিয়ে স্থানীয় বাজারের তুলনায় কিছুটা কম দামে পাঁচটি পণ্য বিক্রি করা হবে বলে জানিয়েছেন টিসিবির জনসংযোগ কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির। রমজান উপলক্ষে পাঁচ শ মেট্রিক টন সয়াবিল তেল, দেড় হাজার টন ছোলা খোলাবাজারে ছাড়া হবে।
এর আগের অভিজ্ঞতা বলছে, টিসিবির এই স্বল্প পরিসরে বিক্রি কার্যক্রম বাজার নিয়ন্ত্রণে কোনো কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে না। বিক্রির পরিসর তবে কেন বাড়ছে না, এমন প্রশ্নের জবাব অবশ্য সংস্থাটির কর্মকর্তাদের কাছে নেই। সংস্থাটির সক্ষমতা বৃদ্ধির বিষয়টি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের, কেবল এটা বলেছেন কয়েকজন কর্মকর্তা।- সাপ্তাহিক এই সময়-এর সৌজন্যে।