logo ২১ এপ্রিল ২০২৫
আসলামের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়ার গুঞ্জন!
বোরহান উদ্দিন, ঢাকাটাইমস
২১ মে, ২০১৬ ১৯:১৬:০১
image



ঢাকা: ইসরায়েলের সঙ্গে আঁতাত করে সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রের সঙ্গে আসলাম চৌধুরীর সম্পৃক্ততার অভিযোগ বারবার নাকচ করলেও এ নিয়ে এখনো অস্বস্তি কাটেনি বিএনপিতে।






ওই ঘটনায় দলে আসলামের পক্ষে-বিপক্ষেও বক্তব্য আসছে। এমনকি দল থেকে এই যুগ্ম মহাসচিবকে অব্যাহতি দেয়ার কথাও উঠছে বলে শোনা যাচ্ছে। তবে এ বিষয়ে জোরালো কোনো দাবি কিংবা কোনো ধরনের সিদ্ধান্ত হয়নি।






এদিকে যাকে ঘিরে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ, সেই ইসরায়েলি রাজনীতিক মেনদি এন সাফাদি বিএনপির নেতা আসলাম চৌধুরীর সঙ্গে সাক্ষাতের কথা স্বীকার করলেও চক্রান্তের অভিযোগ নাকচ করেছেন। একই সঙ্গে প্রকাশ্যে কোনো সাক্ষাৎ অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের সরকারের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করার অভিযোগ হাস্যকর বলেও সাফাদির দাবি।






এ ছাড়া ভারতে বসে বাংলাদেশে অভ্যুত্থান ঘটানোর পরিকল্পনা করবেন সাফাদি, এমন অভিযোগকে অবিশ্বাস্য বলে মনে করে তাকে আমন্ত্রণকারী সংগঠন ‘ভারতীয় সিটিজেনস সিকিউরিটি কাউন্সিল’।






আর যে আগ্রায় সাফাদির সঙ্গে  আসলাম চৌধুরীর সাক্ষাৎ হয় সেখানকার মেয়র জানিয়েছেন, তিনি (আসলাম) যে বাংলাদেশের নাগরিক সেটাই তিনি জানতেন না।






জানা গেছে, সাফাদি ও আগ্রার মেয়রের এমন বক্তব্যের পর বিএনপির শীর্ষ নেতারা আসলামের বিষয়টিকে শুধু সরকারের ষড়যন্ত্র হিসেবেই দেখছেন। শুরুতে তারা ধোঁয়াশার মধ্যে থাকলেও এই বক্তব্যের পর তা কেটে গেছে বলে মনে করছেন নেতারা।






বিষয়টি স্বীকার করে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপি চেয়ারপারসনের একজন উপদেষ্টা ঢাকাটাইমসকে বলেন, “যেখানে বিএনপি স্বপ্নেও ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্কের কথা ভাবে না, সেখানে একজন যুগ্ম মহাসচিবের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগের ঘটনায় কিছুটা হলেও হোঁচট খেতে হয়েছে। কিন্তু এখন সব পরিষ্কার। শুধু বিএনপি নয়, সবাই মনে করছে এটা বিএনপিকে বেকায়দায় ফেলতে বড় ধরনের অপপ্রচার।”






ইসরায়েলের লিকুদ পার্টির নেতা মেন্দি এন সাফাদির সঙ্গে বৈঠক এবং সরকার উৎখাতের অভিযোগে গত রবিবার গ্রেপ্তার করা হয় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব লায়ন আসলাম চৌধুরীকে। পরদিন সোমবার পুলিশ তাকে আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড চাইলে সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।






মেন্দি এন সাফাদির সঙ্গে সাক্ষাতের কথা স্বীকার করলেও কথিত বৈঠকের কথা অস্বীকার করে আসলাম চৌধুরী। তিনি একে তার ও দলের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র বলেও দাবি করেন। তার সুরেই কথা বলেন বিএনপির শীর্ষ নেতারা।






বিএনপি নেতারা বলছেন, আসলাম চৌধুরী ব্যক্তিগত সফরে ভারত যাওয়ার পর তাদের সাক্ষাৎ হয়েছে। এর সঙ্গে দলের কোনো সম্পর্ক নেই। আর বিএনপি ষড়যন্ত্রে বিশ্বাস করে না।






তবে শুরুতে বিষয়টিকে খুব বেশি আমলে না নিলেও এ নিয়ে সরকারের কর্তাব্যক্তিদের বিএনপিকে জড়িয়ে বক্তব্য দেয়া এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কড়া অবস্থানের কারণে নড়েচড়ে বসে বিএনপি।






দলীয় সূত্রে জানা গেছে, মেন্দি এন সাফাদির সঙ্গে আসলাম চৌধুরীর বৈঠকের বিষয় হাইকমান্ড কিছুই জানত না। কেন তিনি সাফাদির সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেন, দেশে ফিরে একাধিক গণমাধ্যমে এ বিষয়ে সাক্ষাৎকার দিলেন, এসব বিষয় নিয়ে দলের মধ্যে নানা ধরনের সন্দেহ দানা বাঁধছে বলে জানা গেছে।






হঠাৎ করে রাজনীতির গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন হওয়া আসলাম চৌধুরী নিজেকে আরো লাইমলাইটে আনতে এমনটা করেছেন কি না এমন গুঞ্জনও বাতাসে ভাসছে। কেউ কেউ মনে করছেন, পরিস্থিতি এমন হবে তা তিনি (আসলাম চৌধুরী) ভাবতে পারেননি।






তবে দলের বেশির ভাগ নেতাকর্মী মনে করেন আসলাম চৌধুরী ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছেন।






দলীয় সূত্রে জানা গেছে, বৈঠকের খবরটি নিয়ে নানা মহলে আলোচনা শুরু হলে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া আসলাম চৌধুরীকে ডেকে পাঠান। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চাইলে তিনি চেয়ারপারসনকে ভারত সফর, সাফাদির সঙ্গে সাক্ষাৎসহ সার্বিক বিষয় অবহিত করেন। আসলাম চৌধুরীর দেয়া ব্যাখ্যার পর খালেদা জিয়া বিষয়টিকে ষড়যন্ত্র বলেই মনে করেন বলে জানা গেছে।






আর আসলাম চৌধুরী সাংবাদিকদের কাছে সাফাদির সঙ্গে বৈঠকের কথা স্বীকার করে বলেছেন, আগ্রার মেয়র আমাকে সংবর্ধনা জানান। তখন মেন্দি এন সাফাদিকেও সংবর্ধনা জানানো হয়। কিন্তু মেন্দি যে ইসরায়েলের লিকুদ পার্টির নেতা, তা আমি জানতাম না।  একই সঙ্গে গণমাধ্যমে সাফাদির সঙ্গে বৈঠকের ছবি গণমাধ্যমে  প্রকাশ হওয়ায় বিস্ময় প্রকাশ করেন তিনি।






এই যখন অবস্থা তখন সবশেষ স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আসলাম ইস্যুতে আলোচনা হয়। এ সময় বেশ কয়েকজন সদস্য বিষয়টি নিয়ে তদন্তও দাবি করেন।






পরে খালেদা জিয়া আবারও আসলাম চৌধুরীকে ডাকলে তিনি আসেননি বলে শোনা গেছে। ফলে সন্দেহ আরো ঘনীভূত হয়।






তবে তার না আসার পেছনে দুটি কারণের কথা শোনা গেছে। এক. গ্রেপ্তারের ভয়। দুই. তার পিত্তথলিতে অপারেশন।






এদিকে আসলাম চৌধুরী গ্রেপ্তার হওয়ার পর খালেদা জিয়া দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীকে তার গুলশানের কার‌্যালয়ে ডেকে পাঠান। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, এ সময় আসলাম চৌধুরীর বিষয়টিকে ব্যক্তিগত বলে নেতাদের বক্তব্য দেয়ার জন্য বলা হয়। বৈঠকে তাকে (আসলাম) দল থেকে বহিষ্কার বা অব্যহতি দেয়ার বিষয়ও কথা হয়। কিন্তু কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।






এ বিষয়ে রুহুল কবির রিজভী ঢাকাটাইমসকে বলেন, এ বিষয় অফিসিয়ালি কিছু বলা যাচ্ছে না। এমন কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।






স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকাটাইমসকে বলেন, “বহিষ্কারের আলোচনা হতে পারে, আমার জানা নেই। তবে স্থায়ী কমিটির বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তাকে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।” 






যদিও গত শুক্রবার সংবাদ সম্মেলনে আসলাম চৌধুরীর বিরুদ্ধে কোনো সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে কি না এমন প্রশ্নে মির্জা ফখরুল সরাসরি কোনো উত্তর দেননি। তিনি বলেন, “এটা তার ব্যক্তিগত সফর। এর সঙ্গে দলীয় কোনো সম্পর্ক নেই। যেহেতু তিনি দলের একজন কর্মকর্তা তাই আমাদের অবশ্যই এ নিয়ে কথা বলতে হবে।”






এদিকে শেষ পর‌্যন্ত আসলাম চৌধুরীর বিষয়ে সাংগঠনিক কোনো ব্যবস্থা নেয়া ঠিক হবে কি না তা নিয়ে নানা হিসাব-নিকাশ চলছে বলে জানা গেছে। তবে এর সম্ভাবনা  ক্ষীণ বলে জানা গেছে।






এ ছাড়া তিনি ইতিমধ্যে গ্রেপ্তার হয়ে রিমান্ডে আছেন। সে কারণে এই মুহূর্তে কোনো ব্যবস্থা নেয়া ঠিক হবে কি না তাও ভাবা হচ্ছে।






অন্যদিকে অভিযোগ পুরোপুরি অস্বীকার করার পর তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিলে অভিযোগ স্বীকার করার নামান্তর হবে কি না সে চিন্তাও করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।  






(ঢাকাটাইমস/মোআ)