logo ২১ এপ্রিল ২০২৫
বিনা পরোয়ানায় গ্রেপ্তার কমেছে
আশিক আহমেদ, ঢাকাটাইমস
০২ জুন, ২০১৬ ০৮:৩৪:২৭
image



ঢাকা: বিনা পরোয়ানায় গ্রেপ্তার করা যাবে না- আপিল বিভাগের এমন আদেশের পর রাজধানীতে সন্দেহভাজন হিসেবে প্রেপ্তারের সংখ্যা কমেছে।






ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতের হাজতখানা সূত্র জানায়, ৫৪ ধারা সংক্রান্ত আপিল বিভাগের রায়ের আগে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ১০ জনকে সন্দেহভাজন হিসেবে আটক করে আদালতে পাঠাতো পুলিশ। কিন্তু ২৪ এপ্রিল রায়ের পর থেকে এখন পর্যন্ত সাত জনকে সন্দেহভাজন হিসেবে আটক করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।






২৪ মে আপিল বিভাগের রায়ের দিন পাঠানো হয়েছে একজনকে, পরদিন পাঁচ জন এবং ২৮ মে ১ জনকে আটক করে আদালতে পাঠানো হয়। অথচ চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে গত ২৪ মে পর্যন্ত এই ধারায় কয়েকশ মানুষকে আটক করে আদালতে পাঠায় পুলিশ।






আপিল বিভাগের রায়ের পরও সন্দেহভাজন হিসেবে গ্রেপ্তার কেন বন্ধ হয়নি- জানতে চাইলে পুলিশের একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা ঢাকাটাইমসকে বলেন,  আপিল বিভাগ তার রায়ে ৫৪ ও ১৬৭ ধারায় গ্রেপ্তার ও রিমান্ডে নেয়ার বিষয়ে দিক নির্দেশনা দেবে বলে জানিয়েছে। আপিল বিভাগ এ বিষয়ে কী বলে, সেটা দেখে সিদ্ধান্ত নেবে পুলিশ। তাই আপিল বিভাগের পুরো নির্দেশনা পাওয়ার আগে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার বন্ধ হবে না।






এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের অপরাধ ও তথ্য বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার আমিনুর রহমান বলেন, ‘আপিল বিভাগের রায়  ঘোষণার পর আমরা হাইকোর্টের রায়ের নির্দেশনা অনুসরণ করছি। আটকের পর তিন ঘণ্টার মধ্যে তাকে এর কারণ জানানো, তার পরিবারের সদস্যদেরকে জানানো এবং পছন্দ মত আইনজীবী নিয়োগের সুযোগ দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি এই ধারায় আটক কাউকে রিমান্ডে নেয়ার আবেদন করা হয়নি’। 






পুলিশ চাইলে অন্য আইনেও আটক করতে পারে যে কাউকে






পুলিশের একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ৫৪ ধারা ছাড়াও পুলিশ আসলে অন্যান্য অনেক আইনেই যে কাউকে আটক করতে পারে। প্রতিটি থানায় অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা থাকে। পুলিশ এসব মামলায় কাউকে গ্রেপ্তার দেখাতে পারে। এ ছাড়া ঢাকা মহানগর পুলিশ আইন (ডিএমপি অ্যাক্টে) গ্রেপ্তার করা সম্ভব। বিশেষ করে এই আইনের ৭৭ ধারায় চিৎকার করা, কারও গতিরোধ করা, ৭৮ ধারায় শান্তি ভঙের উস্কানি, ৬৯ ধারায় ফুটপাতে পণ্য বিক্রি, ৭৬ ধারায় উত্ত্যক্ত করা, ৭৪ ধারায় নারী-পুরুষের অবৈধ মেলামেশার অভিযোগ যে আনা খুব একটা কঠিন কাজ হবে না বলে মনে করেন ওই পুলিশ কর্মকর্তা।






মানবাধিকার কর্মীরা বলেন, আইনশৃঙ্খলা ও জননিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য পুলিশকে সরকার বেশ কিছু আইনি সুবিধা দিয়েছিল। কিন্তু পুলিশ এগুলো নিজেদের স্বার্থে অপব্যবহার করে টাকা কামানোর সুযোগ হিসেবে ব্যবহার করছে। তাই আইনের শাসন ও মানবাধিকার নিশ্চিত করতে হলে পুলিশকে দেয়া ক্ষমতা কমানো এখন সময়ের দাবি।






জানতে চাইলে আইনজীবী সারা হোসেন ঢাকাটাইমসকে বলেন, যে কোন আইনে গ্রেপ্তারের ক্ষেত্রে পুলিশকে কিছু দিন নির্দেশনা দিয়েছে উচ্চ আদালত। সেগুলো মেনে চললে নাগরিক অধিকারগুলো রক্ষিত হবে।






গ্রেপ্তারের ক্ষেত্রে আদালতের নির্দেশনা






উল্লেখ্য, ফৌজদারী কার্যবিধির ৫৪ ও ১৬৭ ধারায় গ্রেপ্তার নিয়ে ২০০৩ সালের ৭ এপ্রিল হাইকোটের দেওয়া রায়ের নির্দেশনাগুলোর মধ্যে ছিল, ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার কাউকে নিবর্তনমূলক আটকাদেশ  দেওয়া যাবে না। কাউকে গ্রেপ্তার করার সময় পুলিশ তাঁর পরিচয়পত্র দেখাতে বাধ্য থাকবে। গ্রেপ্তারের তিন ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিকে কারণ জানাতে হবে। জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজন হলে ম্যাজিস্ট্রেটের আদেশক্রমে কারাগারের ভেতরে কাচ দিয়ে নির্মিত বিশেষ কক্ষে জিজ্ঞাসাবাদ করতে হবে। কক্ষের বাইরে তাঁর আইনজীবী ও নিকটাত্মীয় থাকতে পারবেন। জিজ্ঞাসাবাদের আগে ও পরে ওই ব্যক্তির ডাক্তারি পরীক্ষা করাতে হবে।






আপিল বিভাগের নীতিমালার অপেক্ষা






ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ও ১৬৭ ধারা নিয়ে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের আপিল খারিজ করে বিচারকরা বলেছেন, ‘এই দুই ধারার কিছু বিষয় সংবিধানের কয়েকটি অনুচ্ছেদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এ কারণে হাইকোর্ট কয়েক দফা সুপারিশ করেছে। এ বিষয়ে কিছু সংশোধনী থাকবে। আমরা একটি নীতিমালা ঠিক করে দেব’।






তবে ২৫ মে আপিল বিভাগ এই রায় দিলেও সেই নীতিমালা এখনও দেয়নি সর্বোচ্চ আদালত। এই দুই ধারা নিয়ে বেরিয়ে রিট আবেদনকারী পক্ষের আইনজীবী সারা হোসেন বলেন, ‘আপিল বিভাগ নীতিমালা দেয়ার আগ পর্যন্ত হাইকোর্টের নির্দেশনাগুলো বহাল থাকছে। তা মানায় এক ধরনের বাধ্যবাধকতা তৈরি হয়েছে’।






(ঢাকাটাইমস/২জুন/এএ/ডব্লিউবি)