ঢাকা: ঢাকা মহানগর বিএনপির কার্যালয় বলতে এখন নয়াপল্টনের ভাসানী ভবনকেই চেনেন নেতাকর্মীরা। তবে মূল কার্যালয় নয়াবাজারের নবাব ইউসুফ মার্কেটের দ্বিতীয় তলায়। ঢাকা সিটি করপোরেশনের এই মার্কেটটি দ্বিতীয় বুড়িগঙ্গা সেতুর ঠিক উত্তর প্রান্তে অবস্থিত। সম্ভবত বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের অনেক নতুন নেতাকর্মীর কাছে জায়গাটি অপরিচিত!
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নিয়ন্ত্রণাধীন এই মার্কেটে দীর্ঘদিন ধরে অবস্থিত বিএনপির কার্যালয়ে সাড়ে ছয় লাখ টাকা ভাড়া বকেয়া পড়েছে বলে জানা গেছে। অতীতে মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এই ভাড়া পরিশোধ করলেও বর্তমান আহ্বায়ক মির্জা আব্বাস এ নিয়ে বিপাকে পড়েছেন বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।
এদিকে শুরুতে বকেয়া পরিশোধের জন্য থানার নেতারা ও সাবেক কমিশনারদের চাঁদা তোলার নির্দেশ দিলেও তা থেকে সরে এসেছেন মির্জা আব্বাস। দলের একটি সূত্রে জানা গেছে, চাঁদা তুলে বকেয়া ভাড়া পরিশোধের খবরে মির্জা আব্বাসের ওপর চটেছেন স্বয়ং দলীয় প্রধান বেগম খালেদা জিয়া। এ কারণে মির্জা আব্বাসের নির্দেশনা অনুযায়ী মহানগরের নেতাদের কাছ নেয়া নেয়া চাঁদা ইতিমধ্যে ফেরত দেয়া শুরু হয়েছে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে ভাড়া পরিশোধ না করায় ঢাকা মহানগর বিএনপির নয়াবাজারের কার্যালয়ের প্রায় সাড়ে ছয় লাখ টাকা বকেয়া পড়ে। সম্প্রতি মহানগর বিএনপির এক বৈঠকে বিষয়টি তোলা হয়। এ সময় মহানগরের আহ্বায়ক মির্জা আব্বাস সাবেক কমিশনারদের বকেয়া পরিশোধের জন্য বলেন।
একজন সাবেক কমিশনার এতে আপত্তি জানালে তাকে বলা হয়, “তোমরা কমিশনার ছিলা। অনেক টাকা-পয়সা ইনকাম করেছো। তোমরা বকেয়া পরিশোধ করে দাও।”
মির্জা আব্বাসের এমন বক্তব্যের জবাবে ওই কমিশনার পাল্টা যুক্তি তুলে ধরে বলেন, “আমরা ছিলাম শুধু কমিশনার। আপনারা মন্ত্রী ছিলেন। বড় নেতা। আপনাদের তো অনেক টাকা।”
এ নিয়ে বৈঠকের একপর্যায়ে মির্জা আব্বাস রেগে যান বলেও জানা গেছে।
পরে সিটি করপোরেশনের সাবেক দুই কমিশনারকে বকেয়া পরিশোধের জন্য নেতাদের তালিকা করার নির্দেশ দেন আব্বাস। এদের একজনকে আহ্বায়ক ও অন্য একজনকে সদস্যসচিব করা হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকা মহানগর বিএনপির এক নেতা ঢাকাটাইমসকে জানান, নির্দেশ অনুযায়ী খিলগাঁও এলাকার একজন নেতাকে (আব্বাসের অনুসারী)দিয়ে তালিকা তৈরি করে ভিন্ন ভিন্ন অঙ্কের টাকার চাঁদার কথা সংশ্লিষ্টদের জানানো হয়। সে অনুযায়ী অনেকে টাকা জমাও দেন।
তবে আব্বাসের ঘনিষ্ঠ সূত্রের খবর বলছে ভিন্ন কথা। মহানগরের এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকাটাইমসকে বলেন, “আব্বাস ভাই নিজে দেয়ার কথা বলেছিলেন। কিন্তু কমিশনাররা আগ বাড়িয়ে বকেয়া টাকা পরিশোধের কথা বলেন।”
এদিকে চাঁদা তুলে বকেয়া ভাড়া পরিশোধের খবর কে বা কারা বেগম খালেদা জিয়ার কানে পৌঁছান। পরে তিনি এ নিয়ে মির্জা আব্বাসের সঙ্গে কথা বলে তাকে ভাড়া পরিশোধ করার জন্য বলেন।
এই যখন অবস্থা, তখন আগের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন ঢাকা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক। পরে তিনি তালিকা তৈরির কাজে জড়িতদের যাদের টাকা পাওয়া গেছে তা ফেরত দেয়ার জন্য বলেন।
গত কয়েক দিনে বেশ কয়েকজনকে টাকা ফেরত দেয়া হয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে পুরান ঢাকার একজন নেতা ঢাকাটাইমসকে বলেন, “আমি ৪০ হাজার টাকা দিয়েছিলাম, পরে তা ফেরত দেয়া হয়েছে। আরো অনেকে ফেরত পেয়েছেন।”
ওই নেতা আরো জানান, খালেদা জিয়া ভাড়া পরিশোধের কথা বলার পর মহানগরের অন্য এক সভায় এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন মির্জা আব্বাস। কারা এ খবর চেয়ারপারসনের কাছে দিয়েছে তাও জানতে চান।
এ সময় তিনি সাবেক আহ্বায়ক সাদেক হোসেন খোকা-সমর্থিত এক নেতাকে বলেন, “তোমরা তো একটি পক্ষের রাজনীতি করো। না হলে এই খবর ম্যাডাম (খালেদা জিয়া) কীভাবে জানলেন।”
উত্তরে ওই নেতা তাকে বলেন, “আমি খালেদা জিয়ার রাজনীতি করি। এ ছাড়া কোনো পক্ষে নেই।”
চাঁদা তোলার দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল এমন এক নেতার সঙ্গে কথা বলতে টেলিফোন করলে প্রথমে তিনি কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন। পরে অবশ্য বলেন, “অনেক কথাই তো দলে হয়, তা নিয়ে বসে থাকলে সমস্যা। এখন এই টাকা আব্বাস ভাই দিয়ে দেবেন। এটা নিয়ে আর বাড়াবাড়ির দরকার নেই।” কথা শেষে নিজের নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ করেন তিনি।
জানা গেছে, এরশাদের আমল থেকে ওই জায়গাটি বিএনপির মহানগর কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। গত কয়েক বছর ধরে ভাড়া বকেয়া পড়ে যায়।
এদিকে ইতিমধ্যে বকেয়া টাকার অর্ধেক জমা দিয়ে বাকি টাকা দেয়ার জন্য ৩০ জনুয়ারি পর্যন্ত সিটি করপোরেশন থেকে সময় নেয়া হয়েছে বলে দাবি করেন সাবেক একজন কমিশনার।
বকেয়া অর্ধেক টাকা পরিশোধ ও বাকি টাকা দেয়ার জন্য সিটি করপোরেশন থেকে সময় নেয়ার বিষয়টি পুরান ঢাকার একজন বর্তমান কমিশনার দেখভাল করছেন বলে জানা গেছে।
বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে মির্জা আব্বাসের সঙ্গে টেলিফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।
(ঢাকাটাইমস/১জুন/মোআ)