ঢাকা: মাত্র সাড়ে তিন মাসের মাথায় পুলিশ রাজধানীর রামপুরার বনশ্রীর দুই শিশু হত্যার ঘটনায় অভিযোগপত্র চূড়ান্ত করা হয়েছে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা জানিয়েছেন, মা মাহফুজা মালেক জেসমিনকে একমাত্র আসামি করে চাঞ্চল্যকর এই মামলার অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল করা হবে আগামী বুধবার।
ঠাণ্ডা মাথায় দুই সন্তানকে শ্বাসরোধে হত্যার কথা উল্লেখ থাকছে অভিযোগপত্রে। সোমবার ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ ঢাকাটাইমসকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
মামলার বাদি জেসমিনের স্বামী আমানুল্লাহ জামিনের মুক্তি পাওয়ার পর থেকেই আগের বাসা বদল করে অনেকটা আত্মগোপনে চলে গেছেন।
গত ২৯ ফেব্রুয়ারি রাতে রাজধানীর রামপুরা থানাধীন বনশ্রীর বি-ব্লকে সাততলা বাড়ির চতুর্থ তলা থেকে ইশরাত জাহান অরণী ও তার সহোদর ভাই আলভী আমানকে অসুস্থ অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
রাত পৌনে আটটার দিকে কর্তব্যরত চিকিৎসক সহোদরদের মৃত ঘোষণা করেন। এ নিয়ে সারাদেশে ব্যপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। বাবা আমানুল্লাহ ও মা জেসমিনের আচরণ নিয়ে সন্দেহ তৈরি হয়।
পরে র্যাব স্বামী-স্ত্রীকে তাদের গ্রামের বাড়ি থেকে আটক করে ঢাকায় নিয়ে আসে। শেষ পর্যন্ত ‘মা’ র্যারের কাছে ও আদালতে সন্তান হত্যার কথা স্বীকার করেন। সেই থেকে জেসমিন কারাগারে।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সহকারি কমিশনার (খিলগঁও জোন) মো. ইকবাল হোছাইন ঢাকাটাইমসকে বলেন, আগামী বুধবার ইনশাআল্লাহ আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া হবে। এরই মধ্যে অভিযোগপত্র চূড়ান্ত করা হয়েছে। অভিযোগপত্রে জেসমিনকেই একমাত্র আসামি করা হয়েছে। তাকে বিনাপ্ররোচনায় ঠা-া মাথার খুনি হিসাবে অবহিত করা হয়েছে।
নিহতদের মধ্যে অরণী রাজধানীর বেইলী রোডে অবস্থিত ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের স্কুল শাখার সপ্তম শ্রেণীর ছাত্রী ছিল। আর আলভী বনশ্রীতে অবস্থিত হলি ক্রিসেন্ট স্কুলের নার্সারির ছাত্র ছিল।
প্রথমে রাজধানীর রামপুরা থানায় মামলা দায়ের করা হলেও পরে অধিকতর তদন্তের জন্য ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের কাছে ন্যাস্ত করা হয়। পরে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মাহফুজা মালেক জেসমিনকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করেন।জিজ্ঞাসাবাদে তিনি অকোপটে দুই সন্তানকে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন। তবুও গোয়েন্দা পুলিশ কিছু আলামত সংগ্রহ করে ডিএনএ পরীক্ষা জন্য পাঠায় সিআইডির ল্যাবে। এ নিয়ে তদন্ত কর্মকর্তার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ডিএনএ প্রতিবেদনের সঙ্গে জেসমিনের বক্তব্যের হুবহু মিল পাওয়া যায়। ফলে অভিযোগপত্র দিতে আর কোন বাধা নেই।
গোয়েন্দা সূত্র বলছে, ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে শ^াসরোধে দুই শিশুকে হত্যার কথা বলা হয়েছে। এছাড়াও তাদের সুরতহাল প্রতিবেদনে দুই শিশুর গলায় দাগ রয়েছে। সেখানে আঙ্গলের ছাপ রয়েছে। থুঁতনিসহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাতের চিহ্ন দেখা গেছে। দুজনেরেই জিহ্বায় কামড় লেগে ছিল। আর চোখগুলোতে রক্ত জমাট বেঁধে ছিল। শ্বাসরোধে হত্যা করলে যে ধরনের আলামত দেখা যায়, তার সবই রয়েছে শিশু দুটির শরীরে। অভিযোগপত্রে এসবই উল্লেখ করা হয়েছে।
(ঢাকাটাইমস/১৩জুন/এএ/এআর/ ঘ.)