logo ২১ এপ্রিল ২০২৫
রাজনীতিতে দুর্বৃত্তায়ন আছে, একমত আ.লীগ-বিএনপি
বোরহান উদ্দিন ও তানিম আহমেদ
১৬ জুন, ২০১৬ ১৭:১৩:১৬
image



ঢাকা: গাজীপুরের আওয়ামী লীগ নেতা আহসান উল্লাহ মাস্টার হত্যা মামলার আপিল রায় ঘোষণার সময় হাইকোর্ট তার পর্যবেক্ষণে বলেছেন,  রাজনীতিতে দুর্বৃত্তায়ন এবং রাজনৈতিক দলগুলোর উচ্ছৃঙ্খল কর্মীনির্ভরতা বাংলাদেশে সুষ্ঠু রাজনৈতিক সংস্কৃতির বিকাশে অন্তরায়।






হাইকোর্টের এমন পর্যবেক্ষণের সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন দেশের প্রধান দুই দল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপি।  তারা দেশের রাজনীতিতে দৃর্বৃত্তায়ন ও উচ্ছৃঙ্খল কর্মীনির্ভরতা বন্ধ করতে  কাজ করছেন বলে জানান।






তবে সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাখাওয়াত হোসেন মনে করেন, রাজনীতিতে দুর্বৃত্তায়ন অতীতে ছিল, এখনো আছে।  কিন্তু এখন রাজনীতির জায়গায় রাজনীতি নেই।






ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, বাংলাদেশে রাজনীতিতে দৃর্বৃত্তায়ন ও উচ্ছৃঙ্খল কর্মীর রাজনীতি শুরু হয়েছে ১৯৭৫ সালে ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার মধ্য দিয়ে। এরপর যারা ক্ষমতায় এসেছে তারাই এমন কর্মকাণ্ড করেছে, যার শিকার হতে হয়েছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের।






হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণের বিষয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম ঢাকাটাইমসকে বলেন, এমন পর‌্যবেক্ষণ হাইকোর্ট দিতেই পারেন। এটা অস্বীকার করছি না দেশের রাজনীতিতে দুর্বৃত্তায়ন ও উচ্ছৃঙ্খল কর্মী নেই। তবে আওয়ামী লীগ দুর্বৃত্তায়ন ও উচ্ছৃঙ্খল কর্মীনির্ভর রাজনীতি বিশ্বাস করে না।  এই কারণে আমাদের আহসান উল্লাহ মাস্টারসহ বিভিন্ন নেতাকর্মী এ নেতিবাচক কর্মকাণ্ডের শিকার হয়।”






নাসিম বলেন, “বাংলাদেশের রাজনীতিতে এমন পরিস্থিতি আগে ছিল না।  সামরিক শাসক জিয়াউর রহমানের আমল থেকে দেশে এ সাংস্কৃতি শুরু হয়।”






দলটির আরেক সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য নূহ-উল আলম লেনিন বলেন, “হাইকোর্টের এমন পর‌্যবেক্ষণের সঙ্গে আমি দ্বিমত করি না। কারণ আমাদের দেশে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে আইনের শাসনের অবসান ঘটতে শুরু করে। হত্যা, সন্ত্রাস ও দুর্বৃত্তায়নকে শাসকরা একরকম প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়ে ফেলে; আর সেটা করেন জিয়া, এরশাদ ও খালেদা।”






তবে সেই দুর্বৃত্তায়নের ধারা এখন বন্ধ হয়ে গেছে তেমনটা মনে করেন না লেনিন। তিনি বলেন, “এই দুর্বৃত্তায়ন যে কেবল ক্ষমতায় থাকলেই হয়, এমন নয়। আদর্শহীন রাজনীতি যখন অর্থ উপার্জনের সহজ পথ হয়ে যায়, তখন দুর্বৃত্তায়ন লাগামহীন হয়ে পড়ে। সেই অর্থে আমরা এ অভিশাপ থেকে মুক্ত নই।”






লেনিন বলেন, “বঙ্গবন্ধু,চার জাতীয় নেতা, আহসান উল্লাহ মাস্টার হত্যার বিচার হলো, কিংবা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করার মধ্য দিয়ে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার পথ অনেকখানি উন্মুক্ত হয়েছে। কিন্তু তারপরও এ কথা বলা যায় না যে আমাদের দেশে আইন হাতে তুলে নেয়ার প্রবণতা  কিংবা রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন বন্ধ হয়ে গেছে।”






এদিকে আদালতের পর‌্যবেক্ষণের বিষয়ে আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে একমত বলে জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান। একই সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতাদের অনেক বক্তব্যের সঙ্গে তার দ্বিমতও আছে।






ঢাকাটাইমসকে মাহবুব বলেন,“বাংলাদেশের রাজনীতিতে সাংঘাতিক রকমের দুর্বৃত্তায়ন ঘটেছে। বলা যায় দুর্বৃত্তায়নের রাজনীতি চলছে। ফলে প্রতিনিয়ত হত্যা, অরাজকতা চলছে। তাই আমি আদালতের পর‌্যবেক্ষণকে শ্রদ্ধা জানাই।”






মাহবুবুর রহমান বলেন, “শেখ মুজিবুর রহমানসহ অনেকগুলো হত্যার বিচার হয়েছে, কিন্তু জিয়াউর রহমান হত্যার বিচার কিন্তু এখনো হয়নি। অথচ এটা কত বড় হত্যাকাণ্ড। এই বিচার না হওয়াটা দুঃখজনক।”






এ অবস্থা থেকে উত্তরণের উপায় হিসেবে সাবেক এই সেনাপ্রধান বলেন, “রাজনীতি থেকে দুর্বৃত্তকে নির্বাসনে পাঠাতে হবে। দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে। কারণ দেশে এখন আইন আছে শাসন নেই। রাজনীতিতে সততা, নিষ্ঠা, পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধা বাড়াতে হবে। পাশাপাশি বন্ধ করতে হবে প্রতিহিংসা ও ব্লেম গেইম।”






প্রায় একই রকম মনে করেন সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাখাওয়াত হোসেন। তিনি ঢাকাটাইমসকে বলেন, “হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণ নিয়ে দ্বিমত করার কোনো কারণ নেই। কারণ এখন রাজনীতি হলো- ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করার জন্য যা করার তা-ই করা। এটি অতীতে ছিল, এখনো আছে। এ ছাড়া রাজনীতি তো রাজনীতির জায়গায় নেই। দেশে প্রতিনিয়ত ঘটে চলেছে গুম, হত্যা আর সন্ত্রাস।”






বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক ছাত্রনেতা শামসুজ্জামান দুদু অবশ্য বলছেন, “১৯৭১ সালে যে চেতনা নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ সংগঠিত হয়েছিল, তা থেকে সরে যাওয়ার কারণেই মূলত রাজনীতিতে বর্তমান অব্স্থার সৃষ্টি হয়েছে। কারণ স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র না থাকলে আইনের শাসন থাকে না। আর তাতে অন্যায়, অনাচার, দুর্নীতি বেড়ে যায়। ”






আদালতের পর‌্যবেক্ষণের সঙ্গে দ্বিমত করার কারণ নেই জানিয়ে দুদু বলেন, যদি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ফিরে যাওয়া যায় তাহলেই কেবল রাজনীতিকে দুর্বৃত্তায়নের হাত থেকে রক্ষা করা সম্ভব।






বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে রাজনীতিতে দুর্বৃত্তায়নের শুরু হয়েছে, আওয়ামী লীগের নেতাদের এমন বক্তব্যের সঙ্গে কিছুটা ভিন্নমত পোষণ করেন দুদু। তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগের নেতাদের বক্তব্য একেবারে অমূলক নয়। তবে শেখ মুজিবুর রহমান হত্যার আগে মাত্র সাত মাসে ৪০ হাজার রাজনৈতিক নেতাকর্মী হত্যা করা হয়েছিল, তা ভুলে গেলে চলবে না। মূলত ওই সময়েই রাজনীতিতে সন্ত্রাস ও দুর্বত্তায়নের প্রবেশ শুরু।”






(ঢাকাটাইমস/১৬জুন/মোআ)