logo ২০ এপ্রিল ২০২৫
এত নিখুঁত প্রশিক্ষণ ওরা পেল কোথায়?
ঢাকাটাইমস ডেস্ক
০৩ জুলাই, ২০১৬ ২১:০৭:০৬
image



ঢাকা: রাজধানীর অভিজাত গুলশানের স্প্যানিশ হোটেল আর্টিজানে ২০ জনকে জিম্মি করে হত্যা করা হয় শুক্রবার রাতে। আর এদের বেশিরভাগই বিদেশি নাগরিক। ঐ রাতেই হোটেলের ভেতরের রক্তাক্ত ছবি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেয়া হয়। প্রকাশ করা হয় জঙ্গিদের ছবিও। সব জঙ্গির ‍মুখেই মুখভরা হাসি ছিল।এতো গুলো নিরীহ মানুষকে নৃশংসভাবে খুন করার পরও জঙ্গিদের মুখে এতো হাসি কেন-এ প্রশ্ন অনেকের মুখে। বাংলাদেশের আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য থেকে শুরু করে বাংলাদেশের মানুষের কাছে এই সব কিছুই নতুন।এর আগে এর রকম ভয়াবহ অভিজ্ঞতার মুখোমুখি আর হতে হয়নি।






তবে হোটেলে হামলার ঘণ্টাখানেকের মধ্যে জঙ্গিদের ছবি প্রকাশের মধ্য দিয়ে আইএস যে বার্তাটি দিতে চেয়েছে সেটি অত্যন্ত জোরালো এবং স্পষ্ট।






বিশ্লেষকরা বলছেন, তাদের কাছে এই অভিযানের উদ্দেশ্য ছিলো অত্যন্ত পরিষ্কার। কিভাবে সেটা করতে হবে সেবিষয়েও তাদের ধারণা ছিলো স্পষ্ট।






সেনাবাহিনীর সাবেক  কর্মকর্তা ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক সাখাওয়াৎ হোসেন বলেছেন, “ছবিগুলোতে হামলাকারীদের অভিব্যক্তিতে এটা স্পষ্ট তারা পরিষ্কার করেই জানতো তারা কোথায় যাচ্ছে, কি করতে যাচ্ছে। তাদের পরিণতি কি হতে পারে। এই অভিযান শেষে তারা সেখান থেকে পালাতে আসেনি।”






ছবিগুলোতে দেখা যায় সবাই কালো পাঞ্জাবি পরে আছে। দেখতে একই রকমের পাঞ্জাবি। এসব পোশাক হয় একই জায়গা থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে অথবা একই দর্জির কাছে বানানো হয়েছে।






কালো এই জামাটি আইএসের পোশাক।






সাখাওয়াৎ হোসেন বলেছেন, “পশ্চিমা নাগরিকদের জবাই করে হত্যার যেসব ভিডিও আইএস ইন্টারনেটে ছেড়েছে সেগুলোতে জিহাদিদেরকে এরকম কালো রঙের পোশাক পরে থাকতে দেখা যায়। এটা আইএসের জল্লাদ বা একজিকিউশনারের ইউনিফর্ম।”






এই কালো রঙের আরেকটি অর্থ হচ্ছে আত্মত্যাগ। অর্থাৎ তারা যে তাদের জীবন উৎসর্গ করতে যাচ্ছে সেটা তাদের পোশাকের মধ্যেও ঘোষণা করা হচ্ছে।






“খোরাসান ব্রিগেডের সদস্যরাও প্রতীক হিসেবে এধরনের পোশাক পরিধান করতো,” বলেন মি. হোসেন।






অস্ত্র হাতে এই তরুণরা পেছনে আইএসের পতাকা রেখে দাঁড়িয়ে আছে।






কালো পতাকায় শাদা রঙে লেখা লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু।






তাদের মাথায় আরবদের মতো করে ফেটি বা কেফেয়া বাঁধা।






মি. হোসেন বলেন, “আরব যোদ্ধারা এই কেফায়া পরে থাকে। রণক্ষেত্রে যারা যুদ্ধ করছে তাদের কাছে এটি একটি প্রতীকের মতো।”






পাঁচজন জিহাদি প্রায় একই কায়দায় অস্ত্র ধরে হাস্যমুখে তাকিয়ে আছে ক্যামেরার দিকে।






দেখে মনে হয় তাদের সবার হাতে একটাই অস্ত্র। অত্যন্ত পেশাদারদের ভঙ্গিতে তারা সেই অস্ত্রটি ধরে রেখেছে।






মধ্যপ্রাচ্যে জিহাদিদের লড়াই-এ এখন এই অস্ত্রটির প্রচুর ব্যবহার হচ্ছে।






তিনি বলেন, “বর্তমানে সন্ত্রাসীদের কাছে সবচে পছন্দের অস্ত্র হচ্ছে এই একে ফোরটি সেভেন। তাদের হাতে যে অস্ত্রটি দেখা যাচ্ছে সেটি একে ফোরটি সেভেন না হলেও, একে সিরিজের।”






একজন বাদে বাকি প্রত্যেকেরই হাতের আঙ্গুল বন্দুকের ট্রিগার থেকে দূরে।






“এই পজিশনের অর্থ হচ্ছে তারা পুরোপুরি প্রস্তুত। হাত ট্রিগারের বাইরে। রাইফেলটা এমনভাবে রাখা যে এটিকে শুধু একটু উপরের দিকে তুলে গুলি করতে হবে ব্যাস এতোটুকুই,” বলেন মি. হোসেন।






বলা হচ্ছে, এই তরুণদের কেউ কেউ চার পাঁচ মাস ধরে নিখোঁজ ছিলো। ধারণা করা হচ্ছে, এই সময়ে তাদেরকে বড়ো ধরনের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।






সাখাওয়াৎ হোসেন বলেন, “শুধু মগজ ধোলাই করা নয়, এরকম একটি অভিযানের জন্যে তাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে পুরোপুরি প্রস্তুত করা হয়েছে।”






“শুধু হত্যা করার ব্যাপারেই তাদেরকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়নি। কিভাবে ইন্টারনেট পরিচালনা করতে হবে, ছবি পাঠাতে হবে , সেসব ছবি কিভাবে আপলোড করতে হবে, কিভাবে নিরীহ মানুষের মতো কথা বলতে হবে সেসব বিষয়েও তাদেরকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এই অপারেশনের জন্যেই তাদেরকে পুরোপুরি প্রস্তুত করা হয়েছে,” বলেন মি. হোসেন।






কোথায় তাদেরকে এই প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে সেটি একটি বড়ো প্রশ্ন।






দেশের ভেতরে এমনকি মধ্যপ্রাচ্যে গিয়েও তারা প্রশিক্ষণ নিয়ে থাকতে পারে।






সাখাওয়াৎ হোসেন বলেছেন, “আফগানিস্তান, পাকিস্তান, ওয়াজিরিস্তান, ফ্রন্টিয়ার ও কাশ্মীরের মতো জায়গায় গিয়েও তাদের প্রশিক্ষণ হতে পারে। এসব জায়গায় যাওয়াও আজকাল খুব কঠিন কিছু নয়। শুধু সীমান্ত পাড়ি দিতে হয়।”






“এছাড়াও আজকাল সশরীরে কোথাও গিয়ে প্রশিক্ষণ নিতে হয় না। জিহাদিদের কাছে ইন্টারনেটেও এই প্রশিক্ষণের মডিউল সরবরাহ করা হতে পারে। প্রশিক্ষণের ভিডিও মডিউলও পাওয়া যায়,” বলেন তিনি।






দেশের বাইরে প্রশিক্ষণ নিয়ে থাকলে দেখতে হবে গত কয়েক বছরে এই ছেলেগুলো কোথায় ছিলো, কোথায় কোথায় গিয়েছিলো।






ছবিতে দেখা যায় যে তাদের সবার মুখে নির্মল হাসি।






বিশ্লেষকরা বলছেন, এর অর্থ হচ্ছে তারা পুরোপুরি মোটিভেটেড। তাদের ভেতরে কোনো সংশয়, কোন রকমের দ্বিধাদ্বন্দ্ব নেই।






সাখাওয়াৎ হোসেন বলেন, “সে যে জোর করে হাসছে না সেটাও বোঝা যাচ্ছে। নিজের জীবন উৎসর্গ করার জন্যে সে প্রস্তুত। ইহজগতে নয় পরকালে সে যা কিছু পাবে তার জন্যে সে প্রস্তুত। তাদের সবার মুখে সেরকমই এক প্রশান্তির হাসি,”।






(ঢাকাটাইমস/ ০৩ জুলাই/ এআর/ ঘ.)