logo ২১ এপ্রিল ২০২৫
গণশুনানি
গ্যাস সঞ্চালন চার্জ বাড়ানোর প্রস্তাবের তীব্র বিরোধিতা
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
০৭ আগস্ট, ২০১৬ ১৪:৫০:৩০
image



গ্যাসের দাম প্রায় দ্বিগুণ করতে সঞ্চালন ও বিতরণ কোম্পানিগুলোর প্রস্তাবের তীব্র বিরোধিতা করেছেন ব্যবসায়ী ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা। কোম্পানিগুলো আবাসিক ও বাণিজ্যিক গ্যাসের দাম গড়ে ৮৭ শতাংশ বাড়াতে চায়। তবে আবাসিকে দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে দ্বিগুণ।






বিতরণ কোম্পানিগুলোর দাবি, গ্যাসের চাহিদা পূরণ করতে বিদেশ থেকে তরল গ্যাস বা এলএনজি আমদানির প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে। এই গ্যাস আসলে জ্বালানির দাম অনেক বেড়ে যাবে। তাই এখনই গ্যাসের দাম বাড়ানো উচিত।






এই দাম বাড়ানোর প্রস্তাবের ওপর রাজধানীর কারওয়ান বাজারে এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনে গণশুনানির প্রথম দিন বিতরণ কোম্পানির প্রতিনিধি, ব্যবসায়ী নেতা, ভোক্তা অধিকারের পক্ষে কাজ করা সংগঠনের প্রতিনিধি, জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা অংশ নেন।






শুনানিতে বিচারকের আসনে ছিলেন কমিশনের চেয়ারম্যান এ আর খান, সদস্য মাকসুদুল হক ও রহমান মুরশেদ। আর প্রস্তাবকারী পক্ষে ছিলেন গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেড-জিটিসিএল এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক  মাহবুব সারওয়ার, পরিচালক (অর্থ) শরিফুর রহমানসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। এই শুনানি চলবে ১৮ আগস্ট পর্যন্ত।






শুরুতেই দাম বাড়ানোর পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করা হয় গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেড (জিটিসিএল) এর পক্ষ থেকে।






গণশুনানিতে যেসব কথা উঠে আসলো






জিটিসিএলকে জেরা করেন কনজ্যুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-ক্যাবের প্রতিনিধি এম সামসুল আলম। তিনি গ্যাসের দাম বৃদ্ধি সংক্রান্ত ১৪টি প্রশ্নের ব্যাখ্যা চান জিটিসিএলের কাছে। অনেক প্রশ্নেরই সদুত্তর দিতে পারেনি জিটিসিএল।






শুনানির শুরুতেই জানতে চাওয়া হয় গ্যাসের দাম বাড়ানোর এক বছরের মাথায় আবার দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করার আইনি সুযোগ আছে কি না। এই প্রশ্নের জবাব কৌশলে এড়িয়ে যান জিটিসিএল কর্মকর্তারা।






এরপর সঞ্চালন সংস্থাটিকে জেরা করেন ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি মাতলুব আহমাদ। তিনি বলেন, ‘আমরা জিটিসিএলের প্রস্তাব ঘেঁটে দেখেছি-বিদেশ থেকে তরল গ্যাস আমদানিকে সামনে রেখে তারা গ্যাসের দাম বৃদ্ধির এ প্রস্তাব করেছে। কিন্তু এই গ্যাস আসতে কমপক্ষে দুই বছর সময় লেগে যাবে। এটি আসার আগেই দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব দেয়া মোটেই যুক্তিসঙ্গত নয়।’






মাতলুব আহমাদ বলেন, ‘গত বছরই গ্যাসের দাম বাড়ল। এ বছরের মাথায় ফের বৃদ্ধি পেলে শিল্প কারখানা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’






এ পর্যায়ে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের চেয়ারম্যান এ আর খান মাতলুব আহমাদের কাছে জানতে চান, এলএনজি আসলে গ্যাসের দাম কতটুকু বাড়বে।






-তিনগুনেরও বেশি- জবাব দেন মাতলুব আহমাদ।






-ওই সময় যদি হঠাৎ করে এতো দাম বেড়ে যায় তা কি জনগণ স্বাভাবিকভাবে নেবে?-আবার বলেন এ আর খান।






-আমি এসেছিলাম জিটিসিএলকে জেরা করতে। এখন দেখি আমিই জেরার মুখোমুখী হলাম-বলেন মাতলুব আহমাদ।






এফবিসিআই সভাপতি বলেন, ‘আমাদের জবাব হচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওই সময় জনগণের কথা চিন্তা করে এমন সিদ্ধান্ত নেবেন যা জনগণের পক্ষেই যাবে। যেমনটা আমরা বিদ্যুৎ খাতে দেখেছি।






তার এমন বক্তব্যে রেগুলেটরি কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, ‘বিদ্যুতে ভর্তুকি দেয়া হয়েছিল। এনএনজিতেও সরকার ভর্তুকি দেবে? সব জায়গায় ভর্তুকি দিলে দেশের অবস্থা কী দাঁড়াবে?’






শুনানিতে অংশ নিয়ে বাংলাদেশের কমিউটিস্ট পার্টির নেতা রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, ‘উচ্চমূল্যে এলএনজি আমদানির কথা বলে কেন জিটিসিএল গ্যাসের দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব দিল এটাই আমার মাথায় আসছে না। ভবিষ্যতে তরল গ্যাস আমদানি হবে আর সেটির উপর ভিত্তি করে দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব হাস্যকর।’






বাংলাদেশি বংশোদ্ভত অস্ট্রেলীয় নাগরিক খন্দকার সালেহ সূফী ও গণসংহতি আন্দোলনের সমন্বয়কারী জুনায়েদ সাকিও গণশুনানিতে অংশ নিয়ে গ্যাসের দাবি বৃদ্ধির প্রস্তাবের বিরোধিতা করেন।  






দাম কত বাড়ানোর প্রস্তাব






গ্যাসের দাম গড়ে ৮৭ শতাংশ বাড়াতে কমিশনের কাছে প্রস্তাব পাঠিয়েছে ছয়টি বিতরণ কোম্পানি। তারা আবাসিকে এক চুলার গ্যাস বিল ৬০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে এগারোশো এবং দুই চুলায় মাসিক বিল ১২শ টাকা করার প্রস্তাব করেছে।



মিটার ব্যবহারকারীদের জন্য প্রতি ইউনিট সাত টাকা থেকে বাড়িয়ে প্রায় ১৭ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া সিএনজিতে ৮৩ শতাংশ বাড়িয়ে ইউনিট প্রতি প্রায় ৫০ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে।



বাণিজ্যিক ব্যবহারকারীদের গ্যাস বিল ৭২ শতাংশ বাড়িয়ে ইউনিটপ্রতি ১৯ টাকা এবং শিল্পে ছয় টাকা ৭৪ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ১০ টাকা ৯৫ পয়সা করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে বিইআরসিতে।



সবচেয়ে বেশি দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে পাওয়ার বিদ্যুৎকেন্দ্রে সরবরাহ করা গ্যাসের ক্ষেত্রে। এই গ্যাসের দাম ১৩০ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব কথা হয়েছে। এসব প্রস্তাবের গণশুনানি চলবে আগামী ১৮ আগস্ট পর্যন্ত। এর আগে গত সেপ্টেম্বরে গ্যাসের দাম প্রায় ২৬ দশমিক দুই নয় শতাংশ বাড়ানো হয়।






প্রস্তাবের প্রতিবাদে বিক্ষোভ






গণশুনানিস্থলের পাশেই গ্যাসের দাম বৃদ্ধিও প্রস্তাবের প্রতিবাদেও বিক্ষোভ মিছিল করেছে গণসংহতি আন্দোলন। সংগঠনটি শুনানির শুরুর পরপরই টিসিবি ভবনের সামনেই বিক্ষোভ শুরু করে। তারা গ্যাসের দাম বৃদ্ধি মানা হবে না, বলে স্লোগান দেয়।






(ঢাকাটাইমস/৭আগস্ট/এমএম/ডব্লিউবি)