logo ০৪ জুলাই ২০২৫
খোঁজ-খবর ছাড়া বিয়ে করে এখন জ্বলছেন সালেহা
মহিউদ্দিন মাহী, ঢাকাটাইমস
২২ আগস্ট, ২০১৬ ০৮:১৭:০৮
image



সালেহা খাতুন। বয়স ৩৫। এক কন্যাসন্তানের মা। বাড়ি ঝিনাইদহে। আট বছর আগে কোনো খোঁজ-খবর না নিয়েই চাঁদপুরের সাজেদুল হকের সঙ্গে বিয়ে হয় তার। বিয়ের চার বছরের মাথায় এই দম্পতির কোল জুড়ে আসে এক ফুটফুটে কন্যাসন্তান। ভালোই চলছিল তাদের সংসার। কিন্তু গত দুই বছর ধরে অশান্তির অনলে জ্বলছেন সালেহা খাতুন।






স্বামী আরেকটি বিয়ে করে লাপাত্তা। কোনো খোঁজ নেন না স্ত্রী-সন্তানের। সালেহা এখানে-সেখানে স্বামীর সন্ধান করেন, কিন্তু কোনো খোঁজ মেলে না তার। স্বামীর বাড়ির কারও সহযোগিতা নেবেন, সেটাও সম্ভব হচ্ছে না। কারণ তার বাড়ি চেনেন না সালেহা।






২০০৮ সালে যখন তাদের বিয়ে হয়, তখন ঢাকার টঙ্গীতে এক বাসায় ভাড়া থাকতেন সালেহা। পাশে ভাড়া থাকতেন সাজেদুল। সাজেদুলের ভাইয়ের সঙ্গে সখ্য ছিল সালেহার পরিবারের। বাবা-মাহারা সালেহাকে ভাই বিয়ে দেন সাজেদুলের কাছে। সাজেদুল স্ত্রী সালেহাকে নিয়ে ঘরসংসার বাঁধেন ঠিকই, কিন্তু একদিনের জন্যও তাকে গ্রামের বাড়িতে নেননি।






স্বামী লাপাত্তা হওয়ার পর অসহায় সালেহা দুই বছর ধরে দ্বারে ঘুরছেন। কোনো কূল পেয়ে অবশেষে বিচার চেয়েছেন মহিলা অধিদপ্তরের নারী নির্যাতন সেলে। নির্যাতন সেলের পক্ষ থেকে সালেহার স্বামীর স্থায়ী ঠিকানায় নোটিশ পাঠানো হয়। গত এক সপ্তাহেও এর কোনো জবাব আসেনি।






রবিবার মহিলা অধিদপ্তরের নারী নির্যাতন সেলে এই প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় সালেহা খাতুনের। নিজের অসহায়তার কথা তুলে ধরে তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘আমার আর কোনো রাস্তা নেই। আমি সাজেদুলের বিচার চাই। সরল মনে তার ঘরসংসার করেছি দীর্ঘ আট বছর। কখনো ভাবিনি সে আমার সঙ্গে প্রতারণা করবে।’






কেন বাড়িঘর না দেখে এভাবে একজন মানুষের সঙ্গে সংসার বাঁধলেন? সালেহা বললেন, ‘আমার মামা-বাবা কেউ নেই। ছোটবেলায় ভাইদের কাছে বড় হয়েছি। দুই বোন আমরা। ভাইরা চেয়েছে কোনোমতে বিয়ে দিলেই তারা বেঁচে যান। তাই ভালোভাবে না দেখেই বিয়ে দিয়েছেন। আর কষ্ট করছি আমরা। বড় বোনেরও একই অবস্থা। স্বামী প্রতিদিনই নির্যাতন করছে। তার পরও বড় বোন সংসার ছাড়ছে না। সংসার ছেড়ে কোথায় যাবে। সবকিছু নীরবে সহ্য করছে সে।’






নারীদের এমন পরিস্থিতির বিষয়ে জানতে চাইলে মহিলা অধিদপ্তরের নারী নির্যাতন সেলের উপপরিচালক মোসাম্মত ফেরদৌসি বেগম ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আমাদের কাছে নারী নির্যাতনের প্রচুর অভিযোগ আসে। আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করি সমস্যা সমাধান করার। কিন্তু না পারলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মাধ্যমে আদালতে পাঠিয়ে দেই।’






সালেহার সমস্যাটি নিয়ে ফেরদৌসি বেগম বলেন, “আমরা অভিযোগ পেয়েছি। কিন্তু বিবাদীর কোনো হদিস নেই। তার হদিস না পেলে ব্যবস্থা নেয়া কঠিন।’






বিয়ের মতো একটি সামাজিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে আরও বেশি সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দিয়ে প্রশাসন ক্যাডারের এই উপসচিব বলেন, ‘বিয়ের সময় সবচেয়ে বড় বিষয় হলো- কার সঙ্গে বিয়ে হচ্ছে, তার পারিবারিক ব্যাকগ্রাউন্ড কী, বাড়িঘর- সবকিছু দেখেই সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত। তা না হলে বিপদে পড়ার আশঙ্কা থাকে।’






(ঢাকাটাইমস/২২আগস্ট/মোআ)