logo ০৩ জুলাই ২০২৫
বাঁশির সুরে বাঁধা জীবন
মনোনেশ দাস, ঢাকাটাইমস
০৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ০৮:৩৯:৩২
image




মানুষটি কখনো একলা পথে হেঁটে যেতে যেতে ছড়িয়ে যান বাঁশির উদাসী সুর। কখনো বা হাটবাজারের কোলাহল ছাপিয়ে বেজে ওঠে তার বাঁশির মূর্ছনা। প্রায় অর্ধশতাব্দী ধরে এভাবে আনন্দ-বেদনার সুর ফেরি করে  যাচ্ছেন ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার রামগোপালপুর ইউনিয়নের পাঁচাশি গ্রামের সিরাজুল ইসলাম।



১৫ বছর বয়স থেকে সিরাজুল দেখছেন বাঁশির সুরে ভুবন ভরিয়ে দেওয়ার স্বপ্ন। সবার কাছে ‘বাঁশি ভাই’ নামে পরিচিত ৭০ বছরের সিরাজুল ইসলামের হাতে তাই  দিনের ১২ ঘণ্টাই দেখা যায় বাঁশি। তরুণ বয়সে দোকানে পছন্দসই বাঁশি না পেয়ে নিজেই তৈরি করে নেন মনের মতো করে, আর তাতে তুলতে থাকেন মায়াবি সুর। এখন তার বাঁশির সুরে পথচারীরা থমকে দাঁড়ায়। কিছু সময়ের জন্য হলেও সুরের মায়াবি জালে আচ্ছন্ন হয় তারা।



নিজের মনের ক্ষিধা মেটানোর পাশাপাশি এই সুরের মাধ্যমে উপার্জিত অর্থে পরিবারের ভরণ-পোষণ চলছে সিরাজুলের। বাবার অভাবের সংসারে পড়াশোনার চিন্তা ছিল বিলাসিতা। তাই সেদিকে আর যাওয়া হয়নি তার। বাশির সুরে বেঁধেছেন জীবন।



ময়মনসিংহ জেলার প্রায় প্রতিটি উপজেলার হাঁট-বাজারে ঘুরে বাঁশি বাজান আর ফেরি করেন এই বাদ্যযন্ত্র। এর চাহিদা খুব বেশি না থাকলেও তার বাঁশির সুরে হাটবারে উপজেলা সদর বাজারের পরিবেশে এনে দেয় ভিন্ন মাত্রা। অনেকেই নিজের পছন্দের কোনো সুরের কথা বলে তা বাজিয়ে শোনানোর আবদার করেন সিরাজুলের কাছে। তিনিও শ্রোতার আবদার ফেলতে পারেন না। ঠোঁটে তোলেন মোহন বাঁশি। বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মঞ্চ, নাটক, যাত্রাপালা ও গান-বাজনার আসরেও সিরাজের বাঁশির মূর্ছনা ওঠে।



সিরাজুল ইসলাম বাজানোর পাশাপাশি বিক্রিও করেন নানা ধরনের বাঁশি। এর মধ্যে রয়েছে কল, মোহন, ফনেক, টিপরা, নাগিনী ইত্যাদি। নিজের হাতে বানানো এসব বাঁশি তিনি হাটের দিনে এবং বিভিন্ন স্থানে বাদ্যযন্ত্রের দোকানে পাইকারি বিক্রি করেন।



বাশি বাজিয়ে আর বিক্রি করেই থেমে নেই সিরাজুল। নিজের বাদনদক্ষতা ছড়িয়ে দিতে বাড়িতে খুলেছেন বাঁশি শেখানোর স্কুল। সেখানে অনেকেই আসছে তার কাছে শিখতে।



এই প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় সিরাজুলের। সাক্ষাতের শুরুতে তার বাঁশিতে বেজে ওঠে ‘খাঁচার ভিতর অচিন পাখি, কেমনে আসে যায়’ গানের সুর।



এ রকম শত শত গানের সুর পথে পথে ঘুরে ফেরি করেন সিরাজুল। সিরাজুল বলেন, এভাবে দীর্ঘ ৪৫ বছর ধরে চলছে তার পথচলা। বংশীবাদন আর বিক্রির আয়ে চলছে  স্ত্রী, দুই ছেলে, দুই মেয়ে নিয়ে তার সংসার। দিনশেষে তার উপার্জন ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা।



জীবনের শেষ প্রান্তে এসে তার ভবিষ্যৎ স্বপ্ন কী জানতে চাইলে তিনি জানান, নতুন কোনো স্বপ্নের উদয় নেই তার মনের রাজ্য। তবে একটা চাওয়া আছে তার, জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত সুর তুলে যেতে চান বাঁশিতে।



(ঢাকাটাইমস/৫সেপ্টেম্বর/মোআ)