‘যুদ্ধের প্রামাণ্য ছবি আর নগ্নতার পার্থক্য বোঝে না ফেসবুক’
আন্তর্জাতিক ডেস্ক, ঢাকাটাইমস
১০ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ১১:২৭:২২

নাপাম বোমা হামলার ছবি ফেসবুক থেকে তুলে নিয়ে তীব্র সমালোচনার মুখে আবার সেটি ফিরিয়ে দিয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম কর্তৃপক্ষ। ভিয়েতনাম যুদ্ধের সময় তোলা এই ছবি সেসময় বিশ্বজুড়ে হৈচৈ ফেলে দিয়েছিল।
নাপাম বোমায় পুড়ে যাওয়া নয় বছরের এক নগ্ন মেয়ে রাস্তা দিয়ে দৌড়ে পালাচ্ছে। পেছনে দেখা যাচ্ছে বোমা হামলার পর কালো ধোঁয়ার কুন্ডলী। ভিয়েতনাম যুদ্ধের ভয়াবহতা ফুটে উঠেছিল এই ছবিতে। বিশ্বের শত শত প্রকাশনায় বহু বার প্রকাশিত হয়েছে এই ছবি। কিন্তু সম্প্রতি ফেসবুক একটি পোস্ট থেকে 'নগ্নতার' অভিযোগে এই ছবিটি সরিয়ে নিয়েছিল। সমালোচনার মুখে সেটি আবার ফেসবুক শেয়ারের সুযোগ দিয়েছে।
নরওয়ের সর্বাধিক প্রচারিত আফটেনপোস্টেন পত্রিকার সম্পাদক এসপেন এজিল হ্যানসেন অভিযোগ করেন, ফেসবুক এই ছবিসহ পুরো পোস্ট ডিলিট করে দিয়েছে। এমনকি যে রিপোর্টার এই ছবি পোস্ট করেছিলেন তার অ্যাকাউন্টও সাসপেন্ড করা হয়েছে। মার্ক জাকারবার্গ আসলে তার ক্ষমতার অপব্যবহার করছেন।
ফেসবুক অবশ্য দাবি করে, সাংস্কৃতিক কারণে 'নগ্নতা' বলে বিবেচিত হতে পারে এমন বিষয় তাদের নিষিদ্ধ করতে হয়।
তবে হ্যানসেন এই যুক্তি মানতে নারাজ। তিনি বলেন, নাপাম বোমা হামলার এই বিখ্যাত ছবিটি ফেসবুকে পোস্ট করার ২৪ ঘন্টারও কম সময়ের মধ্যে সরিয়ে নেয়া হয়।
মার্ক জাকারবার্গের বিরুদ্ধে খোলা চিঠিতে তিনি সেন্সরশিপের অভিযোগ তুলেন। জাকারবার্গকে বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর সম্পাদক উল্লেখ করে লিখেছেন, ‘বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম এখন স্বাধীনতা খর্ব করতে চাইছে এবং এটি অনেক সময় করা হচ্ছে স্বৈরাচারী কায়দায়। যদি আপনি একটি যুদ্ধের প্রামাণ্য ছবির সঙ্গে শিশুদের নগ্ন ছবির পার্থক্য বুঝতে না পারেন, তাহলে তা কেবল নির্বুদ্ধিতারই প্রসার ঘটাবে।’
বিখ্যাত ছবিটিতে যে মেয়েটিকে দৌড়ে পালাতে দেখা যাচ্ছে তার নাম কিম ফুক। সায়গনের (এখন হো চি মিন সিটি নামে পরিচিত) উত্তরে ১৯৭২ সালে যখন নাপাম বোমা হামলা হয় তখন তার বয়স মাত্র নয়। কিম ফুকের সমস্ত শরীর মারাত্মক দগ্ধ হয়। ছবিটি তুলেছিলেন ফটোগ্রাফার নিক উট। তিনি এবং ব্রিটিশ টিভি সাংবাদিক ক্রিস্টোফার ওয়েন কিম ফুককে হাসপাতালে নিয়ে যান। কিম ফুকের বাঁচার আশা ছিল না। তবে বিস্ময়করভাবে তিনি বেঁচে যান। ১৪ মাস চিকিৎসার পর বাড়ী ফিরে যান।
ক্রিস্টোফার ওয়েন ২০১০ সালে এই ঘটনার স্মৃতিচারণ করে বলেন, বোমা হামলার পর প্রচণ্ড তাপে মনে হচ্ছিল কেউ যেন নরকের দরজা খুলে দিয়েছে। তারপর দেখলাম কিম এবং অন্য শিশুরা দৌড়ে আসছে। তাদের কেউ কোন শব্দ করছিল না। কিন্তু যেই মাত্র তারা বড়দের দেখলো, চিৎকার করে কাঁদতে শুরু করলো।
কিম ফুকের বয়স এখন ৫৩। তিনি থাকেন কানাডার টরোন্টোতে। বোমা হামলার আঘাতের যন্ত্রণা তাকে এখনো বয়ে বেড়াতে হচ্ছে।
(ঢাকাটাইমস/১০সেপ্টেম্বর/জেএস)