logo ১১ এপ্রিল ২০২৫
চোখের জলে সমাহিত সেই শিশু
ফরিদপুর প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
২৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ১৯:৩৬:২৬
image



রাজধানী ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে মারা যাওয়া ফরিদপুরের সেই নবজাতক গালিব হায়াতের দাফন সম্পন্ন হয়েছে। কাফনের কাপড় পড়া গালিবা বাবার কোলে চড়ে জানাজায় আসে। জানাজা শেষে স্বজনদের চোখের জলে তাকে চিরবিদায় জানানো হয়।






সোমবার বিকালে শহরের কমলাপুর এলাকার কেন্দ্রীয় ঈদগাহ ময়দানে জানাজা শেষে গালিবার মরদেহ আলীপুর কবরস্থানে দাফন করা হয়। জানাজায় আত্মীয়স্বজনসহ প্রতিবেশীরা অংশ নেন।






এতে ইমামতি করেন ঈদগাহ জামে মসজিদের পেশ ইমাম মাওলানা আদিলউদ্দিন। জানাজার আগে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন দাদা আবুল কালাম মিয়া, বাবা নাজমুল হুদা মিঠু, স্বজন বেলাল এবং অধ্যাপক এমএ সামাদ।






এর আগে বিকাল ৪টা ৫২ মিনিটে গালিবের কফিন বাড়িতে নিলে সেখানে এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। কান্নায় ভেঙে পড়েন মা, বাবা, দাদা ও দাদিসহ আত্মীয়-স্বজনরা।






এ সময় সেখানে উপস্থিত অনেকেই চোখের জল ধরে রাখতে পারেননি। সেখানে গালিবার গোসল শেষে তাকে কাফনের কাপড় পরানো হয়।






পরে মিঠু প্রায় দেড়শ গজ দূরের ঈদগাহ ময়দানে জানাজার জন্য গালিবাকে কোলে করে নিয়ে যায়।






কান্নাজড়িত কণ্ঠে গালিবা হায়াতের দাদা আবুল কালাম মিয়া বলেন, গালিবা হায়াতের চিকিৎসার জন্য সহযোগিতা করার জন্য চিকিৎসক ও সাংবাদিকসহ সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি কৃজ্ঞতা জানান। বিশেষ করে উন্নত চিকিৎসার জন্য গালিবাকে হেলিকপ্টারে করে ঢাকার নিতে সহযোগিতার জন্য তিনি সংশ্লিষ্টদের মোবারকবাদ জানিয়ে সবাইকে গালিবার রুহের মাগফেরাতের জন্য দোয়া কামনা করেন।






এ ঘটনার জন্য শিশু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ গঠিত ছয় সদস্যের তদন্ত কমিটির প্রধান ফরিদপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) ড.কেএম কামরুজ্জামান আজ বিকালে জানান, এই কমিটির তদন্ত শেষ পর্যায়ে রয়েছে। আমরা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে অর্থাৎ আগামী ২৯ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার জেলা প্রশাসক বেগম উম্মে সালমা তানজিয়ার কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে পারবো বলে আশাবাদী।






ফরিদপুরের সিভিল সার্জনের কার্যালয় কর্তৃক গঠিত তিন সদস্যের দ্বিতীয় তদন্ত দলের প্রধান ডা. ঊষারঞ্জন চক্রবর্তী জানান, আমাদের তদন্তও বর্তমানে সাক্ষ্যগ্রহণ পর্যায়ে রয়েছে। সার্বিক দিক বিবেচনা করে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে এ কমিটির আরও সাতদিন সময় প্রয়োজন হবে।






এদিকে ফরিদপুরের সিভিল সার্জন ডা. অরুণ কান্তি বিশ্বাস জানান, আজ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. মো আবুল কালাম আজাদের নির্দেশনায় এ ঘটনা তদন্তে রাজবাড়ী জেলার সিভিল সার্জন ডা. মো. রহিম বক্সকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের আরও একটি তদন্ত দল গঠন করেছে। তিনি বলেন, ওই কমিটি খুব শিগগিরই তদন্ত কাজ শুরু করবে।






ফরিদপুর শহরের কুঠিবাড়ী কমলাপুর এলাকার বাসিন্দা  ফরিদপুর জেলা ক্রিকেট দলের সাবেক সদস্য নাজমুল হুদা মিঠুর স্ত্রী অ্যাডভোকেট নাজনীন আক্তার পপি অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। প্রসব বেদনায় কাতর পপিকে গত বুধবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে স্বজনরা তাকে শহরের ডা. জাহেদ মোমেরিয়াল শিশু হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে গাইন বিভাগে নিয়ে অনকল চিকিৎসক রিজিয়া আলম তাকে শয্যা সংকটের কথা বলে ভর্তি নিতে চাননি। এর এক পর্যায়ে পপি ওই চিকিৎসকের কক্ষে একটি কন্যা সন্তান প্রসব করেন। খবর দিলে অস্ত্রোপচার কক্ষ থেকে বেরিয়ে রিজিয়া আলম নবজাতককে দেখে নাড়ি না পেয়ে তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ওই রাত তিনটার দিকে স্বজনরা একটি কার্টনে করে নবজাতককে কবর দিতে নিয়ে যায়। কিন্তু ওই রাতে সংশ্লিষ্টরা আলীপুর কবরস্থানে কবর না দিয়ে সকালে কবর দেওয়ার কথা জানান। পরে ওই কার্টনটি একটি কবরে রেখে আসে স্বজনরা। পরদিন বৃহস্পতিবার ভোর সাড়ে ছয়টার দিকে নবজাতককে কবর দিতে গেলে সে কেঁদে ওঠে। প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই স্বজনরা তাকে আবার শিশু হাসপাতালে এনে ভর্তি করে। সেখানে তাকে ইনকিউবেটরে রেখে চিকিৎসা দেয়া হয়। আর তার রাখা হয় গালিবা হায়াত (আয়ুস্মান)। পরে সিভিল সার্জনের নির্দেশে গঠিত চিকিৎসক দলের প্রধান ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. আব্দুল্লাহিস সায়াদ গালিবাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকার নেয়ার পরামর্শ দেন।






এ বিষয়ে পত্র-পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তির সহযোগিতায় শনিবার বিকালে হেলিকপ্টারে করে গালিবাকে ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রবিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে সে মারা যায়।






(ঢাকাটাইমস/২৬সেপ্টেম্বর/প্রতিনিধি/জেবি)