ঢাকা: মন্ত্রী হওয়ার পর এলাকায় গিয়েছেন হাতে গোনা কয়েকবার। দলের স্থানীয় নেতাকর্র্মীদের সঙ্গে সম্পর্কও খুব একটা ভাল না তার। এলাকায় তিনি না থাকলেও ছোট ভাই সালাউদ্দিন আহমেদ বাচ্চুর কর্মকা-ে ক্ষুব্ধ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীসহ স্থানীয়রা। তাছাড়া নরসিংদীর পৌর মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক লোকমান হোসেন খুন হওয়ার পর অভিযোগের তীর তার ও তার ভাইয়ের দিকে। দলে সন্তোষজনক ভূমিকা রাখতে না পারায় সভাপতিম-লীর সদস্য পদটিও হারাতে হয়েছে তাকে। প্রথমে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেয়া হলেও পরে সরিয়ে নেয়া হয় শ্রম মন্ত্রণালয়ে।
সূত্র ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানায়, দলের কেন্দ্রে, মন্ত্রণালয় কিংবা সংসদীয় এলাকা কোথাও মন্ত্রী রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজুর ‘পারফরমেন্সে’ সন্তুষ্ট নন দলের হাইকমান্ড। সবমিলিয়ে আগামী নির্বাচনে নরসিংদী-৫ (রায়পুরা) আসন থেকে বর্তমান সাংসদ রাজুর মনোনয়ন পাওয়া অনেকটাই অনিশ্চিত হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ পরিস্থিতিতে আগামী নির্বাচনে নরসিংদী-৫ আসন থেকে আওয়ামী লীগ কাকে মনোনয়ন দেবে- এনিয়ে স্থানীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে আলোচনা রয়েছে। তবে লোকমানের স্ত্রী তামান্না নুসরাত বুবলি আগামী নির্বাচনে দল থেকে মনোনয়ন চাইতে পারেন বলে সূত্রে জানা গেছে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপকমিটির সহ সম্পাদক রেজাউল কবির কাউসারও ওই আসন থেকে দলের টিকিট চাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে তার ঘনিষ্ঠরা জানিয়েছেন।
সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচনকে সামনে রেখে গোয়েন্দা সংস্থার এক প্রতিবেদনে নরসিংদী-৫ আসনকে আওয়ামী লীগের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ বলা হয়েছে। তবে প্রার্থী মনোনয়নে পরিবর্তন আনলে দলের জন্য আশা আছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়। এদিকে স্থানীয় সূত্রে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নরসিংদীর রায়পুরাসহ জেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে মন্ত্রী রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজুর অন্তর্দ্বন্দ্ব রয়েছে। নেতাকর্মীদের তোপের মুখে গত একবছর ধরে নিজের এলাকাতে যেতেই পারছেন না রাজু। যে করেই হোক আগামী নির্বাচনে রাজুর মনোনয়ন ঠেকাতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন নেতাকর্মীরা। নির্বাচনে মনোনয়ন দিতে নরসিংদীর তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকে এসব বিষয় দলীয় নেতারা তুলে ধরবেন বলে জানা গেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, আগামী নির্বাচনে নরসিংদী-৫ (রায়পূরা) আসন থেকে সাবেক পৌর মেয়র লোকমান হোসেনের স্ত্রী তামান্না নুসরাত বুবলি দল থেকে মনোনয়ন চাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। দলের নীতি নির্ধারণী পর্যায় থেকেও তার প্রতি সমর্থন রয়েছে। তবে দলের আরেকটি সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপকমিটির সহ সম্পাদক রেজাউর কবির কাউসার ওই আসন থেকে দলের টিকিট চাইতে পারেন। তবে যে করেই হোক স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা নরসিংদী-৫ আসনে পরিবর্তন চান।
অবশ্য নরসিংদী জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও লোকমানের ছোট ভাই শামীম নেওয়াজ মনে করেন দল চাইলে লোকমান পরিবার আগামী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে। তিনি ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, ‘এখন পর্যন্ত লোকমান পরিবারের কেউ মনোনয়ন চাওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়নি। তবে দল আমাদের ওপর আস্থা রাখলে তার সর্বোচ্চ মূল্যায়ন করা হবে।’
শামীম নেওয়াজ বলেন, ‘গত পাঁচ বছরে নরসিংদীতে স্থানীয় প্রশাসনকে হাত করে ক্ষমতার ব্যাপক অপব্যবহার করেছেন তিনি। এমনকি স্থানীয় মাদক ব্যবসায়িদেরকেও আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়েছেন। আমার ভাই লোকমানের জনসমর্থনে ক্ষুব্ধ হয়ে সাংসদ রাজু তার ছোটভাই সালাউদ্দিনকে দিয়ে তাকে খুন করিয়েছেন। তাছাড়া নির্বাচনে জয় ও মন্ত্রী হওয়ার পর এলাকাতেও এসেছেন হাতে গোনা কয়েকবার। শুধু রায়পূরা নয় পুরো নরসিংদীবাসীই মন্ত্রী রাজুকে আগামীতে আর চান না।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর একজন সদস্য ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, মন্ত্রী হিসেবে দলে রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজুর যে ধরনের ভূমিকা থাকার কথা ছিল তা নেই। যে কারণে তাকে সভাপতিম-লীর সদস্য পদ থেকে সরিয়ে উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য করা হয়েছে। তাছাড়া প্রথমে তাকে টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেয়া হয়। কিন্তু পরে তাকে সেখান থেকে সরিয়ে শ্রম মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। অন্যদিকে এলাকাতেও তার অবস্থান ভাল না। তাই একসময়ের গুরুত্বপূর্ণ নেতা রাজিউদ্দিন রাজু দলে কার্যত বোঝা হয়ে পড়েছেন।
প্রসঙ্গত, ২০১১ সালের ১ নভেম্বর নরসিংদী জেলা পৌরসভার মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক লোকমান হোসেনকে সন্ত্রাসীরা তার বুকে, পেটে ও হাতে গুলি করে। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। মৃত্যু হয়। ওইদিন জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে একটি দলীয় সভায় এ ঘটনা ঘটে। ওই খুনের সঙ্গে মন্ত্রী রাজুর ছোট ভাই সালাউদ্দিন আহমেদ বাচ্চু জড়িত বলে শুরু থেকেই দাবি করে আসছে লোকমানের পরিবার।
(ঢাকাটাইমস/ ১০ সেপ্টেম্বর/ এইচএফ/ ১২.০১ঘ.)