logo ১০ মে ২০২৫
মনোনয়ন প্রত্যাশীদের গন্তব্য এখন দলীয় কার্যালয়
মোসাদ্দেক বশির ও সালাহউদ্দিন জসিম
০২ সেপ্টেম্বর, ২০১৩ ১৫:৫০:৩৬
image


ঢাকা: সংসদ নির্বাচন কবে হবে, তা নিশ্চিত নয় এখনও। কিন্তু বসে নেই প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা। প্রতিদিনই মনোনয়ন প্রত্যাশীদের ভিড়ে সরগরম থাকে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির কার্যালয়। আগ্রহের কথা জানান দিতে তারা নিয়মিত আসছেন দলীয় কার্যালয়ে। কখনও আসছেন একা, কখনও কর্মী সমর্থকদের নিয়ে।



আওয়ামী লীগের ধানমন্ডি-৩ এর কার্যালয়টি প্রতিদিনই মনোনয়ন প্রত্যাশীদের ভিড়ে সরগরম থাকে। কেন্দ্রীয় নেতাদের হাত ধরে দলের শীর্ষ পর্যায়কে সন্তুষ্ট করতে আপ্রাণ চেষ্টা করছেন তারা। কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে দেনদরবারও চালিয়ে যাচ্ছেন।



কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আসা কয়েকজন নেতা ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে যাদের যোগাযোগ ভাল আগামীতে তারাই পাবেন মনোনয়ন। তাই সম্পর্ক গড়ার চেষ্টায় পিছিয়ে থাকতে চান না কেউ।     



মাস ছয়েক আগেও ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ কার্যালয় দিনের বেলা  বলতে গেলে থাকতো ফাঁকা। সন্ধ্যার পর লোকসমাগম কিছুটা বাড়লেও তা ছোটখাটো জটলা ছাড়া কিছুই ছিল না। কিন্তু সম্প্রতি কার্যালয়টিতে গিয়ে নেতা-কর্মীদের ভিড় চোখে পড়ার মতো।



আগে দুই একজন জ্যেষ্ঠ নেতা, উপ-দপ্তর সম্পাদক আর অফিস সহকারীরা ছাড়া তেমন কেউ না থাকলেও বর্তমানে কার্যালয়ের ফটক থেকে মূল ভবনে যেতে হচ্ছে ভিড় ঠেলে। আর ভবনের ভেতরে বিভিন্ন কক্ষে কক্ষে চলছে জমজমাট আলোচনা।





আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য নূহ-উল আলম লেনিন ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, আমাদের দুইটা কার্যালয় থাকলেও এখন ধানমন্ডি ৩/এ তেই ভিড় বেশি থাকে। কেন্দ্রীয় নেতাদের বেশিরভাগই ধানমন্ডির ওই অফিসেই আসেন। যার কারণে এখানে লোক সমাগম একটু বেশি।



আওয়ামী লীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাস ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে  জানান, ‘আমাদের পার্টি অফিস এমনিতেই সরব থাকে। নির্বাচন সামনে থাকায় মনোয়ন প্রত্যাশীরা একটু আধটু অফিসে আসা বাড়িয়ে দেবেন এটাই স্বাভাবিক।’



এদিকে প্রধান বিরোধী দল বিএনপির দলীয় কার্যালয়ের চিত্র একই রকম।  মনোনয়ন পেতে নয়াপল্টনের কার্যালয়ে নেতাকর্মীরা প্রতিদিনই ভিড় করছেন।





দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে নেতাকর্মীরা কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার জন্য কার্যালয়ে আসছেন। মহানগরীর নেতাদের অনেকে প্রায় প্রতিদিনই দু’একবার ঘুরে যাচ্ছে কার্যালয়টি।



গত ১১ মার্চ কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত সমাবেশে ককটেল বিস্ফোরণ ও ভাঙচুরের পর কার্যালয়টিতে অভিযান চালায় পুলিশ। এসময় দলটির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ শতাধিক কেন্দ্রীয় নেতাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর থেকে কার্যালয়টি ছিল নেতাকর্মী শূন্য।



ওই ঘটনার পর হরতালেও নেতাকর্মীদের কার্যালয়টির সামনে দেখা যায়নি। নিরাপত্তাকর্মী ও অফিস সহকারীসহ এক- দুই জন নেতা গ্রেপ্তার এড়াতে রাত-দিন ২৪ ঘণ্টা অবস্থান করেছেন কার্যালয়টির ভেতরে। তবে সম্প্রতি সময়ে কার্যালয়টির চিত্র সম্পূর্ণ পাল্টে গেছে। সরকারের শেষ সময়ে নেতাকর্মীদের পদভাবে মুখরিত হয়ে উঠেছে কার্যালয়টি।  



দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমান মহাজোট সরকারের মেয়াদ প্রায় শেষ। সামনে জাতীয় নির্বাচন। নির্বাচনে যারা প্রার্থী হতে চান তারা কেন্দ্রীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ বৃদ্ধি করেছেন। এসব নেতারা প্রায় কার্যালয়ে আসছেন। এরা আবার বেশ কয়েজন কর্মীকে সঙ্গে করে নিয়ে আসেন।



এছাড়া বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও দলটির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কারামুক্তি দিবসের কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে দলটির অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরাও তৎপর হয়ে উঠেছে। আগামী ৩১ আগস্ট থেকে ১১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এ উপলক্ষে বিভিন্ন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে দলটি।



নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে আরো জানা যায়, কার্যালয়টির ভেতরে পুলিশি অভিযানে শতাধিক নেতাকর্মীদের আটকের পর কার্যালয়টি ঘিরেও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে বেশ কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছিল। ওই সময় কার্যালয়টির সামনে থেকে অনেক নেতাকর্মী  গ্রেপ্তারও হয়েছেন। এজন্য ওই ঘটনার পর নেতাকর্মীরা কার্যালয়ে আসতেন না। তবে এখন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে তেমন কড়াকড়ি নেই। তাই কার্যালয়টি সবসময়ই জমজমাট থাকে।



বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মো. শামসুজ্জামান দুদু ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সরকারের শেষ সময়ে দেশের মানুষের মত বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে একটি দৃঢ় বিশ্বাস জন্ম নিয়েছে যে এই সরকার আগামীতে ক্ষমতায় যাবে না। এই জন্য নেতাকর্মীরা কার্যালয় ও দলের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে যোগযোগ বৃদ্ধি করছেন। এজন্য সব সময় কার্যালয়টিতে নেতাকর্মীদের ভিড় থাকে।