logo ১০ মে ২০২৫
ব্যতিক্রম এক সাংসদ একরামুল করিম চৌধুরী
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা টাইমস
১০ সেপ্টেম্বর, ২০১৩ ১৯:৪৯:৫১
image


ঢাকা: কমবেশি দেশের সব জায়গাতেই আওয়ামী লীগের মধ্যে অভ্যন্তরীণ কোন্দল প্রায় প্রকাশ্য। গত প্রায় পাঁচ বছরে দেড়শরও বেশি সরকার দলীয় সাংসদ নিজ নির্বাচনী এলাকায় জনপ্রিয়তা হারিয়েছেন। এছাড়া তৃণমূল নেতাকর্মীদের যথাযথ মূল্যায়ন না করায় অধিকাংশ সাংসদদের বিরুদ্ধে নেতাকর্মীদের অভিযোগের অন্ত নেই। এমনটাই বলা হচ্ছে গোয়েন্দা সংস্থার জরিপে। নির্বাচনে মনোনয়ন দেয়া নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তৃণমূলের নেতাদের মতবিনিময়কালে এসব ক্ষোভের কথা অনেকে তুলে ধরেছেন, এখনও ধরছেন। আগামী নির্বাচনে বিকল্প প্রার্থীও চেয়েছেন অনেকে। কিন্তু এ সব কিছুর ঊর্ধ্বে আছেন নোয়াখালী-৪ (সদর-সূবর্ণচর) আসনের সাংসদ ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক একরামুল করিম চৌধুরী। নিজ নির্বাচনী এলাকার জনগণ ও দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে দারুণ জনপ্রিয় তিনি। নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাতা বলা হয় তাকে।



এর আগে নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর মতবিনিময় কালে সাংসদ একরাম চৌধুরীর প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়েছেন নেতারা। নোয়াখালী-৪ আসনে তাঁর কোনো বিকল্প নেই বলেও জানিয়েছেন তারা। তাছাড়া গত প্রায় পাঁচ বছরে ওই আসন থেকে নতুন করে কেউ প্রার্থী হওয়ার আগ্রহ দেখাননি। সব মিলিয়ে তাঁর জনপ্রিয়তা বরাবরই তুঙ্গে।



স্থানীয় সূত্র ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানায়, সোমবার নোয়াখালীর দ্বীপ এলাকায় হাতিয়ার জনগণ সাংসদ একরামুল করিম চৌধুরীর বাড়ি ঘেরাও করে। এসময় তারা আগামী নির্বাচনে সাংসদ একরাম চৌধুরীকে হাতিয়া থেকে প্রার্থী হওয়া দাবি জানান। জবাবে তিনি হাতিয়াবাসীর উদ্দেশে বলেন, ‘হাতিয়ার আসন যেন আওয়ামী লীগের ঘরেই থাকে সে লক্ষ্যেই কাজ করুন। নেত্রী  (শেখ হাসিনা) যাকে মনোনয়ন দেবেন তারা পক্ষেই আপনারা কাজ করবেন।’    



কাল বুধবার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে নোয়াখালী জেলার তৃণমূল নেতাদের মতবিনিময় হওয়ার কথা রয়েছে। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, মতবিনিময়কালে নোয়াখালীর নির্বাচনী এলাকায় দলের অবস্থানের কথা তুলে ধরবেন তৃণমূল নেতারা। নোয়াখালী-৪ ছাড়াও অন্য আসনগুলোতে দলের জয় নিশ্চিতে একরামুল করিম চৌধুরীকে কাজে লাগানোর ব্যাপারে তারা জোর দেবেন বলে জানা গেছে।



দলীয় নেতাকর্মীরা মনে করেন, নোয়াখালী আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে জনপ্রিয়তায় সাংসদ একরাম চৌধুরীর ধারে কাছে কেউ নেই। নিপাট ভদ্রজন হিসেবে পরিচিত এই সাংসদ নিজ নির্বাচনী এলাকার জনগণের মধ্যেও একচেটিয়া জনপ্রিয়তার অধিকারী। সাধারণত জনগণকে প্রয়োজনে সাংসদের কাছে ধর্না দিতে হয়। কিন্তু নোয়াখালী-৪ আসনের জনগণের বেলায় এটি ব্যতিক্রম। আপদে-বিপদে মোটরবাইক হাকিয়ে সাংসদ নিজেই ছুটে যান জনগণের দুয়ারে। গত ১৫ আগস্ট ১৩০ টি গরু জবাই করে নোয়াখালীতে কাঙ্গালিভোজের আয়োজন করে চমক লাগিয়ে দিয়েছিলেন তিনি।  



জনগণের আস্থাভাজন হলেও ২০০১ সালের নির্বাচনে দল থেকে মনোনয়ন পাননি একরামুল করিম চৌধুরী। কিন্তু তার পরও নোয়াখালী-৫ (কোম্পানীগঞ্জ-কবিরহাট) আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছিলেন তিনি। সেবার দলের মনোনীত প্রার্থী বর্তমান যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের চেয়ে বেশি ভোট পেয়ে নির্বাচনে দ্বিতীয় হয়েছিলেন একরামুল করিম। দলের আর বুঝতে বাকি ছিল না তিনি আসলেই কতটা জনপ্রিয়।



সূত্রে জানা গেছে, ওই নির্বাচনের পর দলের হাইকমান্ডের নির্দেশে তাকে নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক করা হয়। সেই সঙ্গে পরবর্তী নির্বাচনে নোয়াখালী অন্য আসন থেকে মনোনয়ন দেয়ার আশ্বাস দেয়া হয়। দল তার তাকে দেয়া সেই আশ্বাস রেখেছিল ২০০৮ সালের নির্বাচনে। নোয়াখালী-৫ নির্বাচনী এলাকার বাসিন্দা হলেও নির্বাচনের টিকিট পান নোয়াখালী-৪ আসন থেকে। কিন্তু তাতে কী? গোটা  নোয়াখালীতেই আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে বেশ প্রভাবশালী তিনি, নির্বাচনে জিতে তারই যেন প্রমাণ দিলেন আরেকবার।

 

নোয়াখালী আওয়ামী লীগকে সুসংগঠিত রাখার পেছনে একরামুল করিম চৌধুরীর ভূমিকার কথা দলের নেতাকর্মীদের মুখেমুখে। সারাদেশে বিভিন্ন জায়গায় ভরাডুবি হলেও নোয়াখালীর উপজেলা, পৌরসভার নির্বাচনে আওয়ামী লীগে একচ্ছত্র জয়ের পেছনেও তাঁর অবদান কম নয় বলে মনে করেন নেতাকর্মীরা। স্ত্রী বেগম কামরুন নাহার শিউলীও কবিরহাট উপজেলার নির্বাচিত চেয়ারম্যান।



দাতা হিসেবেও সাংসদ একরামুল করিম চৌধুরীর বেশ নামডাক রয়েছে। গত বছর অকাল প্রয়াত নোয়াখালী প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক সাংবাদিক অধ্যক্ষ বেলাল উদ্দিন কিরণের পরিবারকে নিজ তহবিল থেকে ২০ লাখ টাকা দিয়েছিলেন তিনি। এছাড়া ১০ লাখ টাকার তহবিল গঠন  এবং আরো ১০ লাখ টাকা প্রদানের উদ্যোগ নেন তিনি।

 

জানতে চাইলে নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি খাইরুল আলম সেলিম ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, একরামুল করিম চৌধুরী মাটি মানুষের নেতা। নোয়াখালী-৪ আসনে তার বিকল্প কেউ নেই। আগামী নির্বাচনে তার নিজের আসন ছাড়াও অন্য আসনগুলোতে তাঁর নেতৃত্বে দলের জয় নিশ্চিত করতে সবাইকে এক সঙ্গে কাজ করতে হবে।   



জানতে চাইলে সাংসদ একরামুল করিম চৌধুরী ঢাকা টাইমসটোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘জনগণের ভালবাসা নিয়ে বাঁচতে চাই। আমার নিজের ওই অর্থে কোনো চাওয়া পাওয়া নেই। বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে ধারণ করে রাজনীতি করছি। আগামীতেও দলের জন্য যা মঙ্গল তাই করব।’

 



(ঢাকাটাইমস/ ১০ সেপ্টেম্বর/ এইচএফ/ ১৩.৫৫ঘ.)