ঢাকা: বাংলাদেশে রানা প্লাজা এবং তাজরিন ফ্যাশন্স কারখানায় দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন যে শত শত শ্রমিক, তাদের জন্য যথাযথ ক্ষতিপূরণ আদায়ের লক্ষ্যে বুধবার থেকে জেনেভায় শুরু হয়েছে আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের সঙ্গে শ্রমিক ইউনিয়নগুলোর এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক।
আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা বা আইএলওর মধ্যস্থতায় এই বৈঠকে ১২টি ক্রেতা প্রতিষ্ঠান যোগ দিতে রাজি হলেও ২০টিরও বেশি নামকরা ব্যান্ড এতে যোগ দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।
ক্ষতিপূরণের দাবিতে আন্দোলনরত আন্তর্জাতিক শ্রমিক অধিকার সংগঠনগুলো বলছে, আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডগুলো কোনোভাবেই এসব দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে তাদের দায় এড়াতে পারে না, এবং ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা তাদেরই করতে হবে।
বিবিসি জানাচ্ছে, আন্তর্জাতিক ক্রেতারা কতো অর্থ ক্ষতিপূরণ হিসেবে দিতে তৈরি আছেন সে সম্পর্কে এখনো স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যাচ্ছেনা।
প্রশ্ন উঠেছে ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের জন্য আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায়ে বাংলাদেশে পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ কী করেছে?
শ্রমিক অধিকার সংগঠনগুলো বলছে, আন্তর্জাতিক ব্রান্ডগুলো এসব দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে তাদের দায় এড়াতে পারে না এবং ক্ষতিগ্রস্তদের দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থায় তাদেরও ভূমিকা রাখতে হবে।
আর জেনেভায় এ বিষয়ে একটি সিদ্ধান্ত হবে বলে বাংলাদেশে শ্রমিক অধিকার নিয়ে যারা কাজ করেন তারা এই বৈঠককে গুরুত্বের সাথে দেখছেন।
তবে এই বৈঠকে গার্মেন্ট মালিকদের সংগঠনের উপস্থিতি না থাকায় একটি ফাঁক থেকে যাচ্ছে বলে বলছেন বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অফ লেবার স্টাডিজ- বিলসের সহকারী নির্বাহী পরিচালক সুলতান উদ্দিন আহমেদ।
তিনি বলেন, বিজিএমইএর এখানে অংশ গ্রহণ করা উচিৎ ছিল নিজ উদ্যোগেই।
তবে বিজিএমইএ-কে এই বৈঠকে আমন্ত্রণ করা হয়নি বলে জানান বিজিএমইএর সহসভাপতি শহিদুল্লাহ আজিম।
তিনি বলেন, “আমাদের অনুষ্ঠানিকভাবে কিছুই বলা হয়নি। আমরা জানতামও না। মিডিয়ার মাধ্যমে জেনেছি এমন একটি বৈঠক হচ্ছে। আমাদের জানালে ভাল হতো। কেননা আমাদের কাছে অনেক তথ্য রয়েছে। আমরা সেগুলো দিয়ে সহযোগিতা করতে পারতাম।”
তবে আজিম বলছেন, রানা প্লাজা ও তাজরিন ফ্যাশন্সের দুর্ঘটনার পর আন্তর্জাতিক ক্রেতারা যা করেছে সেটা খুবই নগণ্য। তিনি বলেন, অনেক প্রতিশ্রুতি থাকলেও তেমন কোনো সহযোগিতা শ্রমিকরা পাননি।
আজিম জানান, শুধু একটি প্রতিষ্ঠান প্রাইমার্ক, দুর্ঘটনার যারা বেঁচে গেছেন বা আহত হয়েছেন, কিংবা মৃতদের পরিবারকে ১৫ হাজার টাকা করে দিয়েছে। তিনি বলেন, “এছাড়া আর কোনো বায়ার কোন সাহায্য নিয়ে এগিয়ে আসেনি। কিন্তু যেহেতু বায়াররা গুরুত্বপূর্ণ স্টেকহোল্ডার তাই আমরা আশা করেছিলাম যে তারাও হাত বাড়াবে। কিন্তু তা হয়নি।”
কিন্ত এতো দিন পার হয়ে যাবার পর এই দুই দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকরা দেশের ভেতরেই বা কী পেলেন?
এই প্রশ্ন রেখে আহমেদ বললেন, বিজিএমইএর ক্ষতিপূরণ দিয়ে দেওয়া উচিৎ ছিল, কিন্তু তারা দেননি। তিনি বলেন, “মৃত শ্রমিকদের পাওনা বেতন, ওভারটাইম, কিছুই তারা দেয়নি, ক্ষতিপূরণ তো অনেক পরের কথা। আমরা চার পাঁচ মাস ধরে অপেক্ষা করছি আন্তর্জাতিক চুক্তির জন্য। দেশের যে বাধ্যবাধকতা সেটাই তো তারা এখনো করেনি।”
এর জবাবে বিজিএমইএর পক্ষে আজিম জানান, তারা এ যাবত অনেককেই সহযোগিতা করেছেন এবং তা এখনো অব্যাহত আছে।
বিজিএমইএ ও সরকারের পক্ষ থেকে, যারা বেঁচে আছে বা আহত হয়েছে তাদের অনেককেই ক্ষতিপূরণ দেয়া হয়েছে। তিনি জানান, নিহত ৭শ ৭৭জন শ্রমিকের পরিবারকে প্রধানমন্ত্রীর তহবিল থেকে ইতিম্যেধ্যই ২ লাখ থেকে ৬ লাখ টাকা করে দেয়া হয়েছে। যাদের অঙ্গহানি হয়েছে তাদের দেওয়া হয়েছে ১০ থেকে ১৫ লাখ করে।
সুলতান উদ্দিন আহমেদ বলছেন, প্রতিটি দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ দিতে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে গিয়ে চুক্তি করতে হয়েছে।
তবে কোনো দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে যদি বিদেশি ক্রেতা প্রতিষ্ঠান না থাকে সেক্ষেত্রে কিভাবে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে সে বিষয়ে একটি জাতীয় মানদণ্ড তৈরি করতে হবে। বিবিসি
(ঢাকাটাইমস/ ১২ সেপ্টেম্বর/ এইচএফ/ ০৯.৫৮ঘ.)