ঢাকা: সরকারের শেষ সময়ে পুলিশ প্রশাসনে অসন্তোষ বাড়ছে। বর্তমান সরকারের শুরু থেকেই যারা সুবিধাভোগী হিসেবে পরিচিত তাদের একটি অংশ এখন থেকেই ভবিষ্যতের ছক কষতে শুরু করেছেন। এদের মধ্যে অনেকে বিএনপি-জামায়াতের ঘনিষ্ঠ অথবা ওই মনোভাবাপূর্ণ কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ-সম্পর্ক বাড়িয়ে দিয়েছেন।
বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট ক্ষমতায় এলে তারা যেন ভাল থাকতে পারেন, এমনটা নিশ্চিত করতেই তাদের এই দৌড়ঝাঁপ। পুলিশ প্রশাসন নিয়ে গোয়েন্দা সংস্থার গোপন প্রতিবেদন সূত্রে এসব তথ্য মিলেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে প্রতিবেদনটি জমা দেয়া হয়েছে বলে ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে নিশ্চিত করেছে।
গোয়েন্দা সংস্থার ঐ প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, পুলিশে মহাপরিদর্শক (আইজিপি) হাসান মাহমুদ খন্দকারের রহস্যজনক ভূমিকা নিয়ে পুলিশের বিভিন্ন মহলে জোর আলোচনা রয়েছে। আইজিপির নেতৃত্বের দুর্বলতা নিয়ে অসন্তোষ রয়েছে পুলিশ প্রশাসনে। আইজিপি হিসেবে পুলিশ সদরদপ্তরের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বিশেষ করে অতিরিক্ত আইজিপিদের সঙ্গে তার যোগাযোগ কম। সেই তুলনায় পদ ও পদবীতে কনিষ্ঠদের সঙ্গেই তার ওঠাবসা বেশি। এদের মধ্যে সহকারী পুলিশ মহাপরিদর্শক (ভারপ্রাপ্ত) প্রলয় কুমার জোয়ার্দারের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠতা পুলিশে চাউর আছে।
জানা গেছে, অন্যান্য জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের চেয়ে এআইজি প্রলয়ের মতামত-পরামর্শকেই বেশি গুরুত্ব দেন আইজিপি। এমনকি প্রলয় জোয়ার্দার আইজিপির কক্ষে থাকাকালে অতিরিক্ত আইজিপিদেরও সেখানে প্রবেশে বারণ রয়েছে। শুধু একদিন-দুদিন নয় একাধিক দিন এমন পরিস্থিতির মুখে পড়তে হয়েছে পুলিশ সদরদপ্তরের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের।
এআইজি প্রলয় কদিন আগে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে দুই বছরের বহির্বিশ্ব ছুটিও নিয়েছিলেন। কিন্তু চাহিদানুযায়ী ছুটি কার্যকরের সময় না মেলায় ছুটি বাতিলের জন্যও আবেদন করেছেন তিনি। আর এসব কিছু আইজিপির ঘনিষ্ঠজন হওয়ায় সম্ভব হয়েছে বলে পুলিশের অনেকে মনে করেন। এতে পুলিশের চেইন অব কমান্ড ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়ছে বলে মনে করেন অনেকে।
এজন্য আইজিপি পদে পরিবর্তন আনার ব্যাপারে ভেতরে ভেতরে জোরালো দাবিও তুলছেন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা। তারা মনে করেন, আইজিপি পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে হারাতে বসা পুলিশের ভেতরকার সাংগঠনিক ক্ষমতা ও দৃঢ়তা আরও জোরদার হবে। পেশাগতভাবেও মনোবল ফিরে পাবেন যোগ্য ও দক্ষরা।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, এআইজি প্রলয় জোয়ার্দার ছাড়াও অতিরিক্ত ডিআইজি আতিক ও হাসান-উল হায়দারও আইজিপির ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পুলিশে পরিচিত। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণে অন্যদের তুলনায় তাদেরকে বেশি গুরুত্ব দেন আইজিপি। এসব ঘটনায় পুলিশে অসন্তোষ দিন দিন বাড়ছে। অতিরিক্ত ডিআইজি আতিক ও হাসান-উল হায়দার মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী হিসাবে পুলিশে আলোচনা রয়েছে।
জানা গেছে, আর্মড ফোর্সেস ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) অতিরিক্ত ডিআইজি হাসান-উল হায়দার ছাত্রজীবনে ছাত্রশিবির করতেন। বর্তমানে জামায়াতের সঙ্গেও তার নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করার বিষয়টি পুলিশের অনেকেরই জানা।
গত ২৯ আগস্ট হাসান-উল হায়দারকে গুরুতর অসদাচরণের দায়ে দুই মাসের বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এমনকি গত ১ সেপ্টেম্বর পুলিশ সদরদপ্তরের এক আদেশে হাসান-উল হায়দারের ব্যবহৃত সরকারি গাড়িটিও প্রত্যাহার করে নেয়া হয়।
কিন্তু তার পরও নিয়মিত অফিস করাসহ সরকারি গাড়িও দিব্যি হাকাচ্ছেন দাপুটে এই কর্মকর্তা। আইজিপির ঘনিষ্ঠজন হওয়া এসব নিয়ে কেউ মুখ খুলতেও সাহস পান না বলে জানা গেছে।
পুলিশের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা মনে করেন, আইজিপির এসব কর্মকাণ্ডে পুলিশে হতাশা দিন দিন বাড়ছে। এর প্রভাব পুলিশ সদরদপ্তর থেকে শুরু করে মাঠ পর্যায়েও ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়তে পারে। তাই এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেয়ার সময় এসেছে বলে মনে করেন তারা।
(ঢাকাটাইমস/০৮অক্টোবর/এফএইচ/এআর/১৪.২৮ঘ.)