logo ০৫ জুলাই ২০২৫
পৃথিবীর সবচেয়ে বিপজ্জনক ছয় সড়ক
অমৃত মলঙ্গী, ঢাকা টাইমস
০৪ নভেম্বর, ২০১৩ ১২:২২:২৭
image


ঢাকা : পৃথিবীর পথে প্রান্তরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে অনেক ঝুঁকিপূর্ণ স্থান। সেইসব স্থানের কোল-ঘেঁষে মুখিয়ে আছে মৃত্যুপুরীর রাস্তা। যেখানে গাড়ি চালানো মানে পরপারে এক পা রাখা! আনাড়ি ড্রাইভাররা যদি এখানে গাড়ি নিয়ে যান, তবে গলা শুকিয়ে যাবে-এটাই স্বাভাবিক।

জেনে নিন পৃথিবীর কোন কোন যায়গায় আছে এমন ছয়টি বিপজ্জনক সড়ক-

১. জালালাবাদ-কাবুল, আফগানিস্তান: আফগানিস্তানের জালালাবাদ থেকে কাবুল পর্যন্ত এই মহাসড়কটি পৃথিবীর সবচেয়ে বিপজ্জনক সড়ক। এটাকে বিপজ্জনক বলার অনেকগুলো কারণ রয়েছে-তারমধ্যে একটি তালেবানদের উৎপাত। তালেবান অধ্যুষিত এলাকা থেকে এই মহাসড়কটি ৬৪ কিলোমিটার ভেতরে। তালেবানরা এই রাস্তা দিয়ে অহরহ যাতায়াত করে। এছাড়া এই রাস্তায় প্রায় প্রতিদিন কোনো না কোনো বড় ধরণের দুর্ঘটনা ঘটে। এই রাস্তার এমনও রেকর্ড আছে যে, একই দিনে মাত্র দুই ঘণ্টার ব্যবধানে ১৩টি মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটেছে এখানে!

২. মস্কো থেকে ইয়াকুটস্কি: মস্কো থেকে রাশিয়ার আরেক বড় শহর ইয়াকুটস্কি শহরে যেতে হলে যে পথের কোনো বিকল্প নেই সেই রাস্তাটিকেই বিশ্বের দ্বিতীয় বিপজ্জনক পথ হিসেবে আখ্যা দেয়া হয়। এন্টার্কটিকার শীতলতম তাপমাত্রার মতোই এখানকার তাপমাত্রা। সমতলভূমির একটি রাস্তাকে কেন বিপজ্জনক বলা হয়?  কারণ এখানে শীতকালের ব্যাপ্তি দশ মাস। এ সময় তুষার আর বরফে ঢেকে থাকে ইয়াকুটস্কির পথ-ঘাট। মস্কো যাওয়ার এ একমাত্র পথও ঢেকে যায় বরফে। অধিকাংশ সময় দশ হাত দূরেও কিছু দেখা যায় না তুষারপাতের কারণে। ফলে গাড়ি দুর্ঘটনা এখানকার নিত্য ঘটনা। আর বাকি দু’মাস গ্রীষ্ম ও বর্ষাকালে এখানে প্রচুর বৃষ্টিপাতের ফলে কাদায় ঢেকে যায় রাস্তা। ফলে কাদায় আটকে যায় গাড়ি। সৃষ্টি হয় বিশালাকার জ্যাম। এ সময় এখানে হাজার হাজার গাড়ি আটকে থাকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা, দিনের পর দিন। আর এখানকার মাড পাইরেট্স বা কাদা দস্যুদের ভয়ঙ্কর চেহারাও ভ্রমণকারী পর্যটকদের মনে স্থায়ী হয়ে যায় চিরজীবনের জন্য!

৩. ‘দ্য ডেথ রোড’, বলিভিয়া: বলিভিয়ার রাজধানীর ঘোলঘেঁষা এই রাস্তাটির  দৈর্ঘ্য ৭০ কিলোমিটার। সাপের চলার পথের মত গঠন এই রাস্তার। এটি বলিভিয়ার মৃত্যু রাস্তা নামে পরিচিত। এই রাস্তায় প্রতিদিন গড়ে ২৬ জন আরোহী প্রাণ হারান।

৪. সিচুয়ান-তিব্বত মহাসড়ক: ২৪১৩ কিলোমিটার লম্বা এই মহাসড়কটি শুরু হয়েছে চীনের সিচুয়ান প্রদেশের চিংগু এলাকা থেকে আর শেষ হয়েছে তিব্বতের লাসায় যেয়ে। ১৪টি উঁচু পাহাড়ের পাদদেশ ছুঁয়ে যাওয়া এই সড়কটি অনেকগুলো গভীর জঙ্গলের বুক চিরে বিস্তৃত। তাছাড়া বিপজ্জনক কয়েকটি নদীর তীর দিয়ে বয়ে গেছে এই রাস্তাটি। এখানে গাড়ি চালানো মানেই মৃত্যুর ঘ্রাণকে সঙ্গী করে যাত্রা করা! প্রতিদিন গড়ে ৮-১০ জনের মৃত্যু হয় এই রাস্তায়।

৫. লস ক্যারাকোল্স পাস, আন্দিজ: আন্দিজ পর্বতমালার ওপর দিয়ে যাওয়া এ দুর্গম পথটি চিলি ও আর্জেন্টিনার মধ্যে সংযোগ স্থাপন করেছে। পর্যটকদের জন্য এ পথটিও অত্যন্ত ভয়াবহ একটি পথ। খাড়া উঠে গেছে পাহাড়ের মাথায়। আবার বিপজ্জনক বাঁক নিয়ে খাড়া নিচে নেমে গেছে। দু’পাশে নেই নিরাপত্তা রেলিং। এ রকম অনেক দৃশ্যই শিহরিত করে পর্যটকদের। বছরের অধিকাংশ সময় তুষারে ঢাকা থাকে এটি। ফলে অধিকাংশ সময়ই অনুপযুক্ত হয়ে যায় চলাচলের। তার পরেও নিয়মিত ব্যবস্থাপনার কারণে মানুষ চলাচল করছে এই পথ দিয়ে ঝুঁকি নিয়েই।

৬. ভান জিল্স পাস, নামিবিয়া: নামিবিয়ার ভান জিল্স পাস বা ‘ডিআর-৩৭০৩’ পৃথিবীর দুর্গম পথগুলোর একটি। যদিও এটি প্রচলিত কোনো সড়ক নয়। তবে পাহাড়ে ওঠার জন্য অ্যাডভেঞ্চার-প্রিয় পর্যটকরা এটি ব্যবহার করেন। পর্যটকরা এক ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্যই প্রচণ্ড উঁচু-নিচু পাথরে মোড়া এ পথ পাড়ি দেন। গভীর সরু গিরিপথ আর বড় বড় নুড়িপাথরের এলোপাথাড়ি ঝাঁকুনি হজম করে প্রায় ১৫ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে হয় পাহাড়ে ওঠার জন্য। রাস্তার শেষ মাথায় উঠলে চোখে পড়ে শান্ত মনোরম এক প্রাচীন উপত্যকা, যা মারিয়েনফ্লুস ভ্যালি নামে পরিচিত। এখানে মৃত্যুর হাতছানি আছে পদে পদে।

(ঢাকাটাইমস/৪নভেম্বর/এএম/১২.১০ঘ.)