logo ২০ এপ্রিল ২০২৫
দুই নেত্রীর একগুঁয়েমিতে দেশ অনেক পেছনে পড়ে আছে: অধ্যাপক ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন
০৬ নভেম্বর, ২০১৩ ১৫:৫৫:৫৪
image


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগে দীর্ঘদিন অধ্যাপনা শেষে বর্তমানে অবসরে আছেন। তিনি বাংলা একাডেমির মহাপরিচালকের দায়িত্ব পালন করেছেন। ডেইলি সান পত্রিকার সম্পাদক হিসেবেও কাজ করেছেন। দেশে ও বিদেশে তার প্রকাশিত বই ২৮ টি ও প্রবন্ধ ৯০ টি। তার বই “সুপারপাওয়ার এন্ড সিকিউরিটি ইন দ্যা ইন্ডিয়ার ওসেন: এ সাউথ ইন্ডিয়ান পার্সপেকটিভ” অনন্যসাধারণ গবেষণা কর্ম হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের পুরস্কার লাভ করে। গবেষণায় স্বীকৃতি হিসেবে অ্যামেরিকান বায়োগ্রাফিকাল ইনিস্টিটিউট তাকে ১৯৯৭ ও ২০০১ এ “ম্যান অব দি ইয়ার ” সম্মাননা প্রদান করে। বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন ও নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে যে রাজনৈতিক সংকটের তৈরি হয়েছে এর সমাধানের নানা বিষয় নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করেছেন ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডট কমের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধির সাথে। আলোচনার চুম্বক অংশটি ঢাকাটাইমসের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হল।

ঢাকা টাইমস: মহাজোট সর্বদলীয় সরকারের কথা আর ১৮ দলীয় জোট তত্ত্বাবধায়কের কথা বলছে। দুই জোটের পরস্পরবিরোধী বক্তব্যে দেশে রাজনৈতিক সংকট দেখা দিয়েছে। এই সংকটের সমাধান কি?

সৈয়দ আনোয়ার হোসেন : রাজনীতিবিদরা যেহেতু এই সমস্যার সমাধান করতে পারেনি তাই দুই নেত্রীকে মাইনাস করতে হবে। দীর্ঘদিন ধরে এই তারা দেশ শাসন করে আসছেন। তাদের একগুয়েমীর কারণে দেশ অনেক পিছনে পরে আছে। তারা রাজনৈতিকভাবে বর্তমান অস্থিরতার কোন সমাধানও দিতে পারেনি। রাষ্ট্রযন্ত্রের টাকা খরচ করে তারা ৩৭ মিনিট কথা বলেছেন। কিন্তু তা গ্রামের ঝগড়াটে মহিলাদের মতো হয়েছে। তাই এই দুই নেত্রীকে মাইনাস করে এগোতে হবে। পাশাপাশি তাদের পরামর্শক বেসামরিক আমলাদেরকের মাইনাস করতে হবে। আমলারা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী। তাদেরকে রাজপথে টেনে আনা বা তাদের নিজেদেরই আসা কোনভাবেই ঠিক নয়। জনতারমঞ্চ তৈরি করে সর্বশেষ মহীউদ্দীন খান আলমগীর আমলাদের রাজপথে টেনে এনে আমলাদের স্বাতন্ত্র নষ্ট করেছেন। তাই আমলা বা বর্তমান রাজনীতিবিদদের নয় সুশীল সমাজকে সংকট সমাধানে আমন্ত্রণ জানানো উচিত। দেশের এই সংকটকালে করণীয় তারাই ঠিক করতে পারেবেন।

ঢাকাটাইমস: বর্তমান রাজনৈতিক সংকটটা আসলে কোথা থেকে শুরু হয়েছে। এক্ষেত্রে সংবিধানের ভূমিকা কেমন হওয়া উচিত বলে আপনি মনে করেন?

সৈয়দ আনোয়ার হোসেন: প্রতিবার নির্বাচনের পূর্বে রাজনৈতিক সংকট তৈরী হয়। এই সংকটের স্থায়ী সমাধানে নির্বাচন কেমন করে হবে এজন্য গণভোট নেয়া যেতে পারে। কিন্তু মহাজোট সরকার ১৫তম সংশোধনীর মাধ্যমে ১৪২ ধারাকে বিলুপ্ত করেছে। বঙ্গবন্ধুৃ মেখ মুজিবুর রহমানের তৈরি করা সংবিধান ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য তার কন্যা শেখ হাসিনা পরিবর্তন করেছেন। যা সত্যিকার অর্থে চরম অন্যায় পদক্ষেপ, খুবই দু:খজনক। এই ধারা বিলুপ্ত করে আওয়ামী লীগ চরম অগণতান্ত্রিক কাজ করেছে। তাই ধারাটি সংশোধনীর মাধ্যমে পুনরায় ফিরিয়ে আনতে হবে। না ভোটের প্রচলন করতে হবে। তাহলেই প্রথাভিত্তিক রাজনীত বন্ধ হয়ে যাবে।

তবে শেখ হাসিনার কাছে আমার প্রশ্ন, আপনি বিরোধী দলে থাকলে কি খালেদা জিয়াকে সর্বদলীয় সরকারের প্রধান মেনে নিতেন? যেটা নিজে পছন্দ করেননা সেটা কেন অন্যকে বলেন!

ঢাকা টাইমস: নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়ে আপনার মতামত কি?

সৈয়দ আনোয়ার হোসেন: নির্বাচন কমিশনতো সরকারের পুতুল। মেরুদন্ডহীন, ঠুটো জগন্নাথ। এই নির্বাচন কমিশনের অধীনে আগামী নির্বাচন দেখতে চাই না। নিয়ম ছিল দলের মনোনয়ন পেতে হলে  প্রাথমিকভাবে ৩ বছর দলের সদস্য থাকতে হবে। অসৎ উদ্দেশ্যের জন্যই এই শর্ত বাদ দেয়া হয়েছে। আওয়ামীলীগ নিজ স্বার্থেও জন্য এই কাজটি করেছে। এখন ভালভাবে তারা মনোনয়ন বানিজ্য করতে পারবে। এই ব্যাপওে নির্বাচন কমিশনই ভালভাবে জানতেন না।

ঢাকা টাইমস: বর্তমান পরিস্থিতির পরিবর্তন না  হলে কী সেনাবাহিনী বা তৃতীয় কোন শক্তি ক্ষমতায় আসবে?

সৈয়দ আনোয়ার হোসেন: আমি মনে করি সেনাবাহিনী ক্ষমতায় আসবে না। তাদের আসার ইচ্ছাও নেই। তবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন থাকলে তারা আসতে পারে। এরকম পরিস্থিতি হলে এর জন্য দায়ী থাকবেন রাজনীতিবিদরা। তবে তারা নিজে থেকে ক্ষমতায় আসবে না। অতীতে আমরা পাকিস্তানের ক্ষেত্রে এরকম দেখেছি। রাজনৈতিক সংকট সমাধানে বিদেশীদের সহায়তায় সেনাবাহিনী ক্ষমতা নিয়ে নিয়েছে। তবে বাংলাদেশে এখনও সেরকম পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়নি।

ঢাকা টাইমস: সঠিক সময়ে নির্বাচন হবে বলে কী মনে করেন?

সৈয়দ আনোয়ার হোসেন: নির্বাচন হবে। হতে বাধ্য। নির্বাচন হয়তো করিয়ে নেয়া হবে। সংলাপ এবং আপোষ না হলেও নির্বাচন হবে। তখন হয়তো ঝুলন্ত সংসদ হবে। নির্বাচন হলে হয়তো আওয়ামী লীগ একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে না। সরকার গঠনে সমস্যা হবে। অন্যদের সাহায্য নিয়েই সরকার গঠন করতে হবে।

ঢাকা টাইমস: ঢাকা টাইমসের পক্ষ থেকে আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।



সৈয়দ আনোয়ার হোসেন: আপনাকেও ধন্যবাদ।