logo ০২ জুলাই ২০২৫
মৃত স্বামী ফেরার পর...
ফিচার ডেস্ক, ঢাকাটাইমস
২২ ডিসেম্বর, ২০১৩ ১৩:১৬:০৭
image

ঢাকা: তখন ২০০২ সাল। হঠাৎ পরিবার, রেলের নিম্ন পদের চাকরি ছেড়ে উধাও আব্দুল সেলিম। তার স্ত্রী নাইদা বেগম দুই সন্তানকে নিয়ে ভাসলেন অথৈ সাগরে। দিন যায়, মাস যায় স্বামীর দেখা নেই। এদিকে চুলোয় হাড়ি ওঠে না। অবশেষে নাইদা পুলিশের কাছে ‘স্বামী নিখোঁজ’ মর্মে অভিযোগ দায়ের করেন। ঘটনাটি ভারতের চেন্নাইয়ের।


এভাবে কেটে যায় সাত বছর। পুলিশ-প্রশাসন কোনো হদিস করতে পারে না সেলিমের। অবশেষে  আইনের ১০৮ নম্বর ধারা অনুযায়ী রেল কর্তৃপক্ষ সেলিমকে ‘সম্ভাব্য মৃত’ ঘোষণা করে। স্বামীর অবর্তমানে তার স্ত্রী রেলকর্তৃপক্ষের কাছে একটি চাকরির জন্য ছুটে যান। এ টেবিল ওটেবিল ঘুরে অবশেষে স্ত্রী নাইদা একটি চাকরিও পেয়ে যান।


এরপর রেলের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা নাহিদার প্রতি সহানুভূতি দেখিয়ে তাকে পরিচ্ছন্নতাকর্মী হিসেবে নিয়োগ দেন। ২০০৯ সালে নিয়োগ পান নাইদা। নাইদার চাকরির আয় আর স্বামীর পেনশনের টাকা দিয়ে ভালোই চলছিল তাদের সংসার।


এরপর ঘটনা মোড় নেয় অন্যদিকে। ২০১১ সালে সবাইকে অবাক করে ফিরে আসেন সেলিম। তখন কর্তৃপক্ষের কাছে চাকরি ফিরে পাওয়ার আবেদনও করেন সেলিম। এতদিন চাকরিতে অনুপস্থিত থাকার কারণ হিসেবে যৌক্তিক কোনো ব্যাখ্যা দিতে না পারলেও সেলিম বলেন, ‘আমি হুবলিতে কুলি হিসেব কাজ করছিলাম। কিন্তু সেখানে ভালোভাবে চলতে আমার কষ্ট হচ্ছিল।তাই ফিরে আসা।’


এদিকে সেলিম জীবিত থাকায় রেল কর্তৃপক্ষ নাইদাকে চাকরিতে ইস্তফা দেয়ার জন্য নোটিশ পাঠায়। সেইসঙ্গে প্ররোচনার দায়ে নাইদাকে কেন্দ্রীয় প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালে হাজির হতে বলা হয়। কিন্তু ট্রাইব্যুনাল নাইদার পক্ষে রায় দিয়ে বলেন, নাইদা বেগম রেলওয়ের সঙ্গে কোনো প্রকার প্রতারণা করেননি। তার স্বামীকে কেবল মাত্র ‘সম্ভাব্য মৃত’ ঘোষণার পরেই তিনি চাকরি লাভ করেছেন।


এরপর কেন্দ্রীয় প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালের রায়কে চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে যায় রেলওয়ে। ঘটনাটি এন পাল বসন্তকুমার এবং পি দেবদাসের সমন্বয়ে গঠিত ডিভিশন বেঞ্চে উত্তাপিত হলে বিচারকদ্বয় মামলাটি আইনি ধারায় নিষ্পত্তি করতে ব্যর্থ হন। 


এদিকে ব্যাপারটি মিটমাটের জন্য নাইদা সেলিমের সঙ্গে ঘর করতে সম্মত হন। কিন্তু বাগড়া দেন সেলিম। নাইদাকে নিয়ে পুনরায় সংসার করতে তিনি অসম্মতি জানান।


অবশেষে বিচারকরা সর্বসম্মতিক্রমে একটি সিদ্ধান্তে উপনীত হন। যা সেলিম, নাইদা এবং রেলওয়ে তিনপক্ষই মেনে নিতে রাজি হয়। সিদ্ধান্তে বলা হয়, চাকরিতে দীর্ঘ দিন অনুপস্থিত থাকার কারণে সেলিমকে শাস্তি হিসেবে চাকরি থেকে অবসর নিতে হবে। এক্ষেত্রে সেলিম শুধুমাত্র তার পেনশনের টাকা পাবেন। অপরদিকে পরিচ্ছন্নতাকর্মী হিসেবে নাইদার নিয়োগ বহাল থাকবে।


(ঢাকাটাইমস/ ২২ডিসেম্বর/এএম/ এআর/ ১২.৫০ঘ.)