ঢাকা: নির্বাসিতা বাংলাদেশী লেখিকা তসলিমা নাসরিনের গল্পকে কেন্দ্র করে একটি টেলিভিশন ধারাবাহিক প্রচার করতে গিয়ে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার মুখে পড়েছে কলকাতার টিভি চ্যানেল “আকাশ ৮”।
দু:সহবাস নামের এই টিভি সিরিয়ালটি ১৯ ডিসেম্বর থেকে সম্প্রচার হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আকাশ-৮ চ্যানেলের কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, এই সিরিয়ালটি শেষ মুহুর্তেও অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে। এর সঙ্গে তসলিমা নাসরিনের সম্পৃক্ততার কারণে তাদের জনরোষের সম্মুখীন হতে হচ্ছে।
ধারাবাহিকটির বিজ্ঞাপনে চ্যানেল কর্তৃপক্ষও এখন তসলিমার সম্পৃক্ততাকে খাটো করে দেখানোর চেষ্টা করছেন ।
তসলিমা নাসরিনও বিবিসিকে বলেছেন, তাঁর এই সিরিয়াল নিয়ে অনেকেরই আপত্তি আছে। গত কয়েকদিন ধরেই কলকাতার টিভি চ্যানেল আকাশ-৮ এ চলছিল দু:সহবাস সিরিয়ালের প্রোমো। লেখিকা তসলিমা নাসরিন বলেছিলেন, এর মাধ্যমেই কলকাতায় আবার ফিরে আসছেন তিনি।
কিন্তু লেখিকার কলকাতায় ফেরা রূপকার্থে হলেও এটি এখন এতটাই স্পর্শকাতর বিষয় যে, চ্যানেলটিকে এখন ঘোষণা করে জানাতে হচ্ছে, তসলিমা নাসরিন কলকাতায় আসবেন না। এই ধারাবাহিকও কোনও ধর্মের ভাবাবেগে আঘাত করবে না।
প্রোমোতে অবশ্য এখনো আছে তসলিমার কন্ঠস্বর । যদিও কলকাতায় ফিরছি এ কথা আর তাঁকে বলতে শোনা যাচ্ছে না। বিবিসিকে লেখিকা বলেছেন, তার সিরিয়াল প্রচারের সিদ্ধান্ত নিয়ে চ্যানেলটিই এখন প্রবল চাপের মুখে।
তিনি জানান, ‘আমি শুনেছি আমার ওই ধারাবাহিক নিয়ে অনেকেই ওই চ্যানেলের কাছে আপত্তি জানাচ্ছেন। ওরাও দেখলাম গত দুদিন আমার সিরিয়ালের প্রোমো প্রচার করা বন্ধ রেখেছেন!’ অথচ এই দু:সহবাসকে কেন্দ্র করে তসলিমা অসম্ভব রোমাঞ্চিত ছিলেন। কৃতজ্ঞ ছিলেন ওই চ্যানেলের কর্তৃপক্ষের কাছেও।
তিনি বলেছেন, আমি বলছিলাম দু:সহবাসের হাত ধরে এত বছর পর কলকাতায় ফিরছি। তাতে ভীষণ এক্সাইটিং লাগছিল!
যে লেখিকার কলকাতা বা পশ্চিমবঙ্গেই যাওয়া নিষেধ, তার গল্প নিয়ে সিরিয়াল করার সাহস দেখিয়ে বা তাকে টিভিতে হাজির করে চ্যানেলের প্রযোজকরা যে দারুণ প্রশংসার কাজ করেছেন, তা বলতেও দ্বিধা নেই তসলিমা নাসরিনের।
তবে আকাশ-৮ চ্যানেলের অন্যতম অধিকর্তা ঈশিতা সুরানাও বিবিসির কাছে স্বীকার করেছেন, গল্পের লেখিকার নাম তসলিমা নাসরিন বলেই তাদের এখন থেকেই কিছুটা জনরোষের মুখে পড়তে হচ্ছে।
তিনি জানাচ্ছেন, ‘অনেকেই ফোন করে আমাদের বলছেন তসলিমার গল্প নিয়ে কেন সিরিয়াল করতে হবে? আরো তো অনেক লেখক আছেন তাদের গল্প নিয়ে করলেই তো হয়!’
ওদিকে পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতাসীন তৃণমূল সরকার তসলিমাকে রাজ্যে ঢুকতে না দেওয়ার মনোভাবেই এখনো অনড় আছে। যদিও কলকাতার অগ্রণী কবি সুবোধ সরকারের মতে, শহরের শিল্পী-সাহিত্যিকরা সেই মানসিকতার শরিক নন, কারণ তসলিমাকে তসলিমা করে তোলার পেছনে কলকাতার লেখক-কবিদেরও বিরাট ভূমিকা আছে।
সুবোধ সরকারের কথায়, ‘সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় বা শঙ্খ ঘোষণা না থাকলে, তাদের সমর্থন না পেলে তসলিমা হয়ত আজকের তসলিমা হয়েই উঠতেন না!’
কলকাতা এখনো তত অনুদার হয়নি বলেই আমরা ধারণা। রাজনীতিক বা ধর্মব্যবসায়ীদের কথা বলতে পারব না, কিন্তু কলকাতার সাহিত্য জগৎ কিন্তু অবশ্যই তসলিমাকে দেখতে চায়’ বলছেন কবি সুবোধ সরকার।
কিন্তু যারা দেখতে চান না তারাই অনেক বছর ধরে রাজ্যে ক্ষমতায়, ফলে চট করে তসলিমা নাসরিনের কলকাতায় পা-রাখার এখনই কোনও সম্ভাবনাও দেখা যাচ্ছে না।
এদিকে তসলিমা নাসরিন নিজে অবশ্য দু:সহবাসে একটা ছোট চরিত্রে অভিনয়ের কথাও ভেবে রেখেছেন।এখানে তার লজ্জা উপন্যাসের চরিত্র সুরঞ্জন বাংলাদেশ থেকে পশ্চিমবঙ্গে আসার পর দেখা করবে বাস্তবের লেখিকা তসলিমা নাসরিনের সঙ্গে।
সুরঞ্জন যখন শুনবে লজ্জার লেখিকা কলকাতাতেই থাকেন তখন খোঁজখবর করে তার সঙ্গে গিয়ে একদিন দেখা করবে সে।
এটুকুও শেষ পর্যন্ত সিরিয়ালের জন্য শ্যুট করা হবে কি না, তা চূড়ান্ত হয়নি। কিন্তু বাংলাদেশের পর তার দ্বিতীয় প্রিয় বাসভূমি কলকাতাতেও থাকতে হলে তসলিমাকে যে আপাতত টিভি সিরিয়ালের দুনিয়াতেই সে স্বপ্ন সত্যি করতে হবে, সেটা পরিষ্কার।
(ঢাকাটাইমস/১৭ ডিসেম্বর/এসইউএল/জেডএ.)