logo ৩০ এপ্রিল ২০২৫
ভোলার বিতর্কিত ওসিকে পিবিআইতে বদলি
ভোলা প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
০২ সেপ্টেম্বর, ২০১৪ ১৭:০৪:৫৪
image

ঢাকা : অবশেষে ভোলার তজুমদ্দিন থানার বিতর্কিত ওসি সুলতান মাহমুদকে পুলিশ অপরাধ তদন্ত ব্যুরোতে (পিবিআই) বদলি করা হয়েছে। ২ সেপ্টেম্বর, মঙ্গলবার এসআই আবুল হোসেনের কাছে থানার দায়িত্ব অর্পণ করে কর্মস্থল ত্যাগ করেন ওসি সুলতান। এতে উপজেলার সাধারণ মানুষের মধ্যে স্বস্তি ফিরে এসেছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেছেন স্থানীয়রা।


সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বিভিন্ন বিতর্কিত কর্মকান্ড, এলাকার নিরীহ লোকদের উপর গণহারে চাঁদাবাজি, সরকারি গাছ ও পুকুরের মাছ আত্মসাৎসহ অসংখ্য অভিযোগে ওসি সুলতান মাহমুদকে গত ২০ আগস্ট পিবিআইতে বদলির নির্দেশ দেয় পুলিশ সদর দপ্তর।


অন্যদিকে, বদলির নির্দেশ পেয়েই তা বাতিলের জন্য তদবির করতে ছুটি নিয়ে ঢাকায় চলে যান ওসি সুলতান। ঢাকায় অবস্থান কালে ২৬ আগস্ট তজুমদ্দিন থানায় নিজেকে উপস্থিতও দেখান তিনি। এমন অভিযোগ পেয়ে পুলিশ সুপারের নির্দেশে এএসপি উত্তম কুমার সাহা থানা পরিদর্শনে গিয়ে ওসি সুলতান মাহমুদকে না পেয়ে তাকে অনুপস্থিত দেখান। পরে এ বিষয়ে ওসির বিরুদ্ধে থানায় একটি সাধারণ ডায়রিও দায়ের করেন এএসপি উত্তম কুমার।


অবশেষে মঙ্গলবার পুলিশের এই বিতর্কিত কর্মকর্তা কর্মস্থল ত্যাগ করেছেন। যাওয়ার আগে থানায় ঘোষণা দিয়ে গেছেন আগামি ৭ দিনের মধ্যেই বদলির আদেশ বাতিল করে আবারও এখানেই ফিরে আসবেন।


নাম প্রকাশ না করার শর্তে তজুমদ্দিন থানার এক অফিসার জানান, কিছুদিন আগে ওসি সুলতান মাহমুদ থানার বাউন্ডারির ভেতর থেকে দেড় লাখ টাকা মূল্যের ৮টি মেহগণি গাছ, ৪৫ হাজার টাকা মূল্যের ৩টি তালগাছ ও থানার পুকুর থেকে প্রায় দেড় লাখ টাকার মাছ আত্মসাৎ করেন। বিষয়টি নিয়ে গোপনে তদন্ত চলছে বলেও জানান পুলিশের ওই অফিসার।


এসব গাছের কাঠ দিয়ে নিজ বাসার জন্য ফার্নিচার তৈরি করান ওই বিতর্কিত ওসি। এছাড়া থানার পুকুর ও স্থানীয় মাছের আড়তের বড় বড় মাছ ঢাকায় ওই ওসির এক আত্মীয় ও বিএনপি দলীয় সাবেক এক স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর বাসায় পাঠানো হয়েছে। তার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগও রয়েছে পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে।


বিভিন্ন সূত্রে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, ওসি সুলতান মাহমুদ দুই মেয়াদে তজুমদ্দিন থানায় দায়িত্ব পালন করেন। প্রথম মেয়াদে ২০১৩ সালের ৩১ জুলাই কাজে যোগদানের পরপরই মেঘনা নদীতে সাধারণ জেলে ও মাছ ব্যবসায়ীদের জিম্মি করে ব্যাপক চাঁদাবাজি শুরু করেন। এ সংক্রান্ত সংবাদ বিভিন্ন জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকায় প্রকাশিত হলে সাংবাদিকদের দেখে নেয়ার হুমকিও দেন তিনি।


এসব অভিযোগে ওই বছরেরই ২৮ সেপ্টেম্বর বদলি হয়ে ৪ মাস পর তদবির করে পুনরায় তজুমদ্দিন থানায় যোগ দেন।


স্থানীয়রা জানান, প্রতিটি সাধারণ অভিযোগ (জিডি) দায়েরের জন্য ২ হাজার, পুলিশ তদন্তের জন্য ৫ থেকে ১০ হাজার, প্রতিটি হোন্ডা-নসিমন স্ট্যান্ড থেকে মাসে ১০ হাজার, অবৈধ কারেন্ট জাল থেকে ৫ হাজার, আসামি আটক করে ১০ হাজার, নারী নির্যাতন ও যৌন হয়রানির অভিযোগের কারণে ২০ থেকে ৫০ হাজার টাকা করে চাঁদা আদায় করতেন ওসি সুলতান। তার অনুগত এক কনস্টেবল এ অপকর্মে তাকে সহায়তা করতেন।


ওসির এই লাগামহীন দুর্বৃত্তপনার কারণে হয়রানির শিকার হয়ে সাধারণ জনগন থানায় আসা বন্ধ করে দেন বলেও জানান স্থানীয়রা।


এ ব্যাপারে বরিশাল রেঞ্জের ডিআইজি বীরমুক্তিযোদ্ধা মো. হুমায়ুন কবির এর সাথে আলাপকালে তিনি জানান, ওসি সুলতানের বিরুদ্ধে দুর্বৃত্তপনার অভিযোগের বিষয়টি তারও জানা আছে। যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করেই বিষয়টির তদন্ত করা হবে বলেও জানান তিনি।


ভোলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান জানান, এসব অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগেই তাকে বদলি করা হয়েছে।


(ঢাকাটাইমস/২সেপ্টেম্বর/প্রতিনিধি/এমএটি)