ঢাকা: শারীরিক ও আর্থিক দিক থেকে সামর্থ্যবান মুসলমানের ওপর হজ ফরজ হলেও তা পালনের আকাঙ্খা থাকে প্রতিটি মুসলমানের হৃদয়ে। মুসলমান মাত্রই বায়তুল্লাহ তথা আল্লাহর ঘর কাবাঘর দর্শন এবং তাওয়াফের তীব্র বাসনা পোষণ করেন। যে কাবাঘরের দিকে মুখ করে প্রতিদিন নামাজ আদায় করেন সেই ঘরকে সরাসরি সামনে রেখে নামাজ আদায় এবং আল্লাহ তায়ালার কাছে নিজেকে সমর্পণ,তার ঘরের সামনে বসে তারই কাছে প্রার্থনার অনুভূতিই আলাদা। এজন্য অনেকে হজে যাওয়ার জন্য অর্থ সঞ্চয়ও করেন। অবশেষে আজন্ম লালিত ইচ্ছার বাস্তব রূপ দিতে হজে গমন করেন।
হজে গিয়ে তার মুখের অন্যতম ভাষা হয়ে দাঁড়ায় ‘লাব্বায়েক আল্লাহুম্মা লাব্বায়েক’ অর্থাৎ হে আল্লাহ আমি হাজির, হে আল্লাহ আমি তোমার দরবারে হাজির! এভাবে একজন হাজী কাবা শরিফ তাওয়াফ, সাফা মারওয়া সাঈ এবং মিনা, মুজাদালিফা ও আরাফাতের ময়দানে অবস্থানসহ অনান্য কার্যাদির মাধ্যমে হজ পালন করেন। এভাবেই তার আজন্ম লালিত স্নপ্ন পূরণ করেন। নিজেকে মহান আল্লাহ তায়ালার ঘনিষ্ঠ করার আধ্যাত্মিক দীক্ষা নিয়ে ফেরেন।
যার ওপর শরিয়ত অনুযায়ী হজ ফরজ নয় তিনিও হজ পালন করতে পারবেন। যেভাবেই হোক কেউ হজ পালন করলে সেটা আদায় হবে এবং ইসলামি বিশেষজ্ঞদের মতে সেই অবস্থায় সেটা নফল হিসেবে আদায় হবে। তাছাড়া যারা একাধিকবার হজ পালন করেন তাদের ক্ষেত্রেও বাকিগুলো নফল হিসেবে গণ্য হবে।
বাংলাদেশে প্রতিবছরই হজযাত্রী বাড়ছে। যদিও নানা কারণে এ বছর গত বছরের চেয়ে কিছু হজযাত্রী কম হয়েছে। এবার বাংলাদেশ থেকে প্রায় ৯৯ হাজার মানুষ হজে যাচ্ছেন। হজযাত্রীরা এখন মক্কা মদিনায় অবস্থান করে ইবাদাত-বন্দেগির মধ্য দিয়ে কাটাচ্ছেন। ৭ জ্বিলহজ সন্ধ্যা থেকে শুরু হতে যাওয়া হজের আনুষ্ঠানিকতার জন্য তারা অপেক্ষা করছেন।
হজ একটি ফরজ ইবাদাত। ইসলামের পাঁচটি রোকন বা স্তম্ভের মধ্যে এটি পঞ্চম। নবী করিম (সা.) থেকে এ পর্যন্ত হজ ফরজ হিসেবে পালন হয়ে আসছে। ইসলামি শরিয়ত অনুযায়ী হজ অস্বীকার কিংবা একে অন্য নামে আখ্যায়িত করা কুফরির পর্যায়ে পড়বে।
কাবাঘর জিয়ারাতের মাধ্যমে হজ পালনের নিয়ম আবহমান কাল থেকে চলে আসছে। ইসলামে হজ ফরজ হওয়ার আগে বিভিন্ন যুগে বিভিন্ন নিয়ম-রীতিতে হজ পালিত হয়েছে। রাসূল (সা.)ও আগে কোরাইশদের রীতি অনুযায়ী হজ পালন করেছেন বলে কোনো কোনো বর্ণনায় পাওয়া যায়।
ইসলামে হজ কখন ফরজ হয় তা নিয়ে ইমামদের মধ্যে কিছুটা মতভেদ আছে। আলেমদের একটি অংশের মতে, রাসূল (সা.)এর হিজরতের আগেই হজ ফরজ হয়। তবে পরিবেশ না থাকায় তখন সেটা বাস্তবায়ন হয়নি। অধিকাংশ ইসলামি বিশেষজ্ঞর মতে, হিজরতের পরে হজ ফরজ হয়। হিজরতের পর কখন ফরজ হয় তা নিয়ে অবশ্য মতভেদ আছে।
নেসাব পরিমাণ সম্পদের অধিকারীর ওপর যেমন জাকাত ফরজ তেমনি হজে যাওয়ার আর্থিক ও শারীরিক সক্ষমতা রাখেন এমন প্রাপ্তবয়স্ক স্বাধীন মুসলমানের ওপর একবার হজ করা ফরজ। নামাজ-রোজার মতো সবার ওপর হজ ফরজ নয়।
ইসলামি বিশেষজ্ঞরা হজ ফরজ হওয়ার আটটি শর্তের কথা উল্লেখ করেছেন।
১. মুসলমান হতে হবে। যেহেতু এটি ইসলামের একটি মৌলিক ইবাদাত।
২. স্বাধীন হতে হবে। তাই দাস-দাসীর ওপর হজ ফরজ নয়।
৩. ব্যক্তি শরিয়তের বিধান প্রয়োগযোগ্য বা প্রাপ্ত বয়স্ক হতে হবে। বালক-বালিকার ওপর হজ ফরজ নয়।
৪. সুস্থ হতে হবে। রুগ্ন ব্যক্তির ওপর হজ ফরজ নয়।
৫. সুস্থ মস্তিষ্কসম্পন্ন হতে হবে। যেমন হাদিসে এসেছে, তিন ধরনের লোকের ওপর শরিয়তের বিধান প্রযোজ্য হবে না। বালক যতক্ষণ না প্রাপ্ত বয়স্ক হয়,অসুস্থ মস্তিষ্ক সম্পন্ন যতক্ষণ না সে সুস্থ জ্ঞানে ফিরে এবং ঘুমন্ত ব্যক্তি যতক্ষণ না সে জাগ্রত হয়।
৬. সামর্থ্যবান হওয়া। হজ করে ফেরা পর্যন্ত পরিবারের ভরন পোষনের ব্যয় নির্বাহ করার মতো অতিরিক্ত টাকা থাকলে এবং সে টাকায় হজের ব্যয় বহন করা গেলে তবেই হজ ফরজ হবে। কারণ পবিত্র কোরআনে পরিষ্কারভাবে সামর্থ্য থাকার কথা বলা হয়েছে।
৭. হজে যাওয়ার রাস্তা নিরাপদ হওয়া। যাত্রাপথে বিপদ হতে পারে এমন ব্যক্তির ওপর হজ ফরজ নয়। ৮. নারীর সাথে তার স্বামী বা মুহরিম (যাদের সাথে বিবাহ বৈধ নয়) থাকা। যদি তার ওপর মুসাফিরের হুকুম প্রযোজ্য হয় অর্থাৎ ৪৮ মাইল বা তার বেশি দূরে হয়। সম্মিলিতভাবে এসব শর্ত পাওয়া গেলেই হজ ফরজ হবে।
হজ ফরজ হওয়া মাত্র আদায় করতে হবে নাকি দেরিতে অর্থাৎ সুবিধাজনক সময় আদায় করা যাবে।এ নিয়েও ইসলামি বিশেষজ্ঞ তথা ইমামদের দুই ধরনের মত রয়েছে।
প্রথম মত হচ্ছে: হজ ফরজ হওয়ার সাথে সাথে আদায় না করে দেরিতে আদায় করার অবকাশ আছে। এই মত দিয়েছেন ইমাম আবু হানিফা, শাফেঈ, সুফিয়ান সওরী।
দ্বিতীয় মত: হজ ফরজ হওয়ার সাথে সাথেই আদায় করতে হবে। ইমাম মালিক, আহমদ, আবু ইউসুফ এই মত দিয়েছেন।
(ঢাকাটাইমস/১অক্টোবর/এমআর)