logo ১৮ মে ২০২৫
লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক ধ্বনিতে মুখর আরাফাত
ঢাকাটাইমস ডেস্ক
০৩ অক্টোবর, ২০১৪ ০১:৩৭:৩৯
image

ঢাকা: লাব্বায়েক আল্লাহুম্মা লাব্বায়েক- ধ্বনিতে আজ মুখরিত হচ্ছে ঐতিহাসিক আরাফাত ময়দান। বিশ্বের প্রায় ২০ লাখ মুসলমান সমস্বরে এই এক ধ্বনি উচ্চারণ করছেন। তাদের মাঝে কোন ভেদাভেদ নেই। এক আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য আরাফাতের ময়দানে সমবেত হয়েছেন তারা।


নারী, পুরুষ- সবাই এক সুরে উচ্চারণ করছেন- লাব্বায়েক আল্লাহুম্মা লাব্বায়েক, লা শারিকা লাকা লাব্বায়েক, ইন্নাল হামদা, ওয়ান নিয়ামাতা, লাকা ওয়াল মুল্‌ক, লা শারিকা লাকা। অর্থাৎ হাজির হে আল্লাহ হাজির, আপনার মহান দরবারে হাজির। আপনার কোন শরিক নেই। সব প্রশংসা, নিয়ামত ও সব রাজত্ব আপনারই। আরাফাতের আকাশ-বাতাসে আজ এই এক আওয়াজ। এই আরাফাতের ময়দানে দাঁড়িয়ে সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) তার বিদায় হজের ভাষণ দিয়েছিলেন। আজ এখানে মসজিদে নামিরা থেকে সেই স্মৃতিকে স্মরণ করে দেয়া হবে খুৎবা।


হজযাত্রীরা আজ খুৎবার পর এ মসজিদেই একত্রে জোহর ও আসরের নামাজ আদায় করবেন। দু’ টুকরো সাদা কাপড়ে ইহরাম বাঁধা অবস্থায় হজযাত্রীরা সারাটা দিন মশগুল থাকবেন ইবাদত, বন্দেগিতে। এর আগেই বৃহস্পতিবার শুরু হয়ে যায় পবিত্র হজের আনুষ্ঠানিকতা। লাখ লাখ হজযাত্রী তীব্র গরম ও বাতাসের আর্দ্রতা উপেক্ষা করে পায়ে হেঁটে, বাসে করে অথবা অন্য কোন যানে করে সমবেত হতে থাকেন মিনায়। তারা অবস্থান করেন এখানে।


এর আগে তারা চুল কামান। হাতের ও পায়ের নখ পরিষ্কার করেন। তারপর গোসল করে পবিত্রতা অর্জন করেন। এরপর তারা সাদা কাপড়ে ইহরাম বাঁধেন। আদায় করেন দু’ রাকাত নামাজ। নিয়ত করেন হজের। তারপরই তারা মুহুর্মুহু ‘লাব্বায়েক আল্লাহুম্মা লাব্বায়েক, লা শারিকা লাকা লাব্বায়েক, ইন্নাল হামদা, ওয়ান নিয়ামাতা, লাকা ওয়াল মুল্‌ক, লা শারিকা লাকা’ জপতে থাকেন।


গতকাল সকাল থেকেই তারা সমবেত হতে থাকেন মিনায়। সেখানে আদায় করেন জোহর, আসর, মাগরিব ও এশার নামাজ। সারাদিন সেখানে ইবাদতে মগ্ন থাকেন তারা। তবে পথে পথে তাদেরকে পুলিশি চেকের মুখে পড়তে হয়। অবৈধ হজযাত্রীদের শনাক্ত করতে এবার হজে এ রকম বেশকিছু চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। তা-ও উপেক্ষা করে পাহাড়ি পথে অনেক হজযাত্রী যোগ দিয়েছেন।


হজযাত্রীরা মিনায় ফজরের নামাজ আদায় করেন। আজ সূর্যোদয়ের পর যে কোন সময় গিয়ে সমবেত হন এই ঐতিহাসিক আরাফাতের ময়দানে। এখানে তারা আদায় করেন জোহর ও আসরের নামাজ। আল্লাহর করুণা প্রার্থনা করে সারা দিন করতে থাকেন ইবাদত। সূর্যাস্তের পূর্ব পর্যন্ত তারা এখানে ইবাদত-বন্দেগি করবেন। সূর্যাস্তের পর তারা চলে যাবেন মুজদালিফায়। সেখানে একসঙ্গে আদায় করবেন মাগরিব ও এশার নামাজ। শয়তানকে মারার জন্য সংগ্রহ করবেন পাথর। রাতভর ইবাদতের মাধ্যমে কাটিয়ে দেবেন। এরপর সূর্যোদয়ের আগেই তারা ফিরে যাবেন মিনায়।


আগামীকাল তারা জামারাতে গিয়ে শয়তানের উদ্দেশে পাথর নিক্ষেপ করবেন। তারপর কোরবানি করবেন। চুল, দাড়ি শেভ করবেন। এরপর তারা ইহরাম খুলে ফেলতে পারবেন। এখান থেকে হজযাত্রীরা যাবেন পবিত্র মক্কায়। সেখানে পবিত্র কাবা ঘরকে তাওয়াফ করবেন। মাকামে ইব্রাহিমে আদায় করবেন ২ রাকাত নামাজ। পান করবেন পবিত্র জমজমের পানি। ফিরে আসবেন মিনায়।


তবে আজ ফজরের নামাজের পরই হজযাত্রীরা মিনা থেকে আরাফাতের ময়দানে গিয়ে সমবেত হওয়া শুরু করেছেন। এ জন্য তাদেরকে পাড়ি দিতে হচ্ছে ১০ কিলোমিটার পথ। আরাফাতে অবস্থিত মসজিদে নামিরায় বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর শান্তি কামনা করে দেয়া হবে খুৎবা। ওদিকে মক্কার আমীর ও কেন্দ্রীয় হজ কমিটির চেয়ারম্যান প্রিন্স মিশাল বিন আবদুল্লাহ বলেছেন, পবিত্র হজের প্রথম পর্ব সফলতার সঙ্গে সমাপ্ত হয়েছে। পাসপোর্ট বিষয়ক ডাইরেক্টরেট জেনারেল বলেছে, তারা মঙ্গলবার পর্যন্ত ১৩ লাখ ৮৬ হাজার ৯০৫ জন হজযাত্রীর এন্ট্রি নিবন্ধিত করতে পেরেছেন।


এর মধ্যে বিমানযোগে গিয়েছেন ১৩ লাখ ১৩ হাজার ৯২৬ জন হজযাত্রী। সড়কপথে গিয়েছেন ৫৮ হাজার ৯৮৪ হজযাত্রী ও সমুদ্রপথে গিয়েছেন ১৩ হাজার ৯৯৫ জন। বিশ্বের ১৬০টিরও বেশি দেশ থেকে যাওয়া হজযাত্রীদের নিরাপত্তা দিতে সৌদি আরব সরকার নিয়েছে ব্যাপক নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা। মক্কার বিভিন্ন পয়েন্টে বসানো হয়েছে চেক পয়েন্ট। তাতে রয়েছে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সরঞ্জাম। এর মাধ্যমে নিয়ম ভঙ্গকারীদের শনাক্ত করে তাদের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দেয়া হবে, যাতে তাদের বিচার করা যায়। ভারপ্রাপ্ত স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. আদেল ফাকিয়েহ বলেছেন, লাখ লাখ মানুষ পবিত্র মক্কায় সমবেত হলেও সেখানে কোন রকম সংক্রামক রোগ দেখা দেয় নি। তা সত্ত্বেও কর্তৃপক্ষ পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নিয়েছে।


(ঢাকাটাইমস/৩অক্টোবর/এমএম)