logo ১৮ এপ্রিল ২০২৫
আমি কোনো কাজকেই ছোট করে দেখিনি: কনা আলম
১৩ নভেম্বর, ২০১৪ ১১:৪৩:৩৯
image


একজন সফল নারী উদ্যোক্তা তিনি। নারীদের সৌন্দর্যবিষয়ক পার্লার ওমেন্স ওয়ার্ল্ড-এর স্বত্বাধিকারী। শিক্ষা জীবন শেষে নারীদের ত্বক, সৌন্দর্য ও রূপচর্চা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে জ্ঞানার্জনের জন্য বিভিন্ন দেশে বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জন করেন। কাজের স্বীকৃতি ও সম্মাননাস্বরূপ পেয়েছেন নানা পুরস্কার। নানা ধরনের সামাজিক কর্মকা-ের সঙ্গেও তিনি জড়িত। তার গড়ে উঠা, অর্জন আর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলেছেন । সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বিলকিছ ইরানী

শুরুতে ভেবেছিলেন এত সফল হবেন?

১৯৯১ সালে আমরা ওমেন্স ওয়ার্ল্ড চালু করি। তিনজন মিলে এটা শুরু করেছিলাম। তখনকার সময় চাইনিজরা বেশি পার্লার চালাত। তারা আমাদের দেশে এসেই ব্যবসা করছে। কিন্তু ওদের সেবার মান ভালো ছিল না। তাছাড়া প্রতিযোগিতা না থাকায় তারা টাকা নিয়েছে ইচ্ছামতো। অথচ আমরা দেশে এমন প্রতিষ্ঠান করতে পারি এবং তাদের চেয়েও আরো ভালো সেবা দিতে পারি, সে চিন্তা থেকেই তখন বনানীর ইউএই মৈত্রী কমপ্লেক্সে প্রথম পার্লার দেই। বর্তমানে প্রাতিষ্ঠানিক কাজের জন্য তৈরি আছে দক্ষ ও শিক্ষিত ব্যবস্থাপনা।

সে সময় কি কোনো চ্যালেঞ্জ ছিল?

চ্যালেঞ্জ তো অবশ্যই ছিল। কারণ সে সময় পার্লারকে অবহেলার চোখে দেখা হতো। বাধাও ছিল অনেক। কারণ আমাদের দেশে আগে মেয়েদের কোনো কাজে যেতে দিতে চাইত না। তারা কোনো কাজ করে আয় করুক তা চাইত না। পরিবার, সমাজ সব জায়গা থেকেই বাধা আসত। অনেকেই মনে করত এটা নি¤œমানের কাজ। পার্লার সে সময় সবার কাছে ছোট কাজ বলে মনে হতো। তাই পার্লারে যে সব মেয়ে কাজ করত তারাও নানা বাধা ও কটূক্তির সম্মুখীন হতো। কিন্তু অমি কোনো কাজকেই ছোট করে দেখিনি।

ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনা শেষ করে চাকরি নয়, ব্যবসা করার আগ্রহটা বেশি ছিল আমার। কারো ওপর নির্ভরশীল হয়ে থাকব না, কারো চাকরি করব না, নিজেই স্বাধীনভাবে কাজ করব এই চিন্তা ছিল সবসময়। আমার বাবাও ব্যবসায়ী ছিলেন। বাবার সহযোগিতায় এই ব্যবসায় আসি কিন্তু এসে অনেকের  কটুকথা শুনতে হয়েছে। অনেকেই বলত এত ব্যবসা থাকতে পার্লারের ব্যবসা কেন করছ? কিন্তু আত্মবিশ্বাসী ছিলাম, আমি অবশ্যই এখানে সফল হব। আমি যে কাজটি করছি সেটি একসময় আমার জন্য, দেশের জন্য একটা ভালো কিছু হবে এবং সবচেয়ে বড় যে বিষয় সেটি হচ্ছে মেয়েদের কর্মসংস্থান হবে।

কতজন কর্মী রয়েছে আপনার প্রতিষ্ঠানে?

শুরু করেছিলাম মাত্র তিনজন মিলে। এখন ৬০০ কর্মী কাজ করছে। আমার প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের অধিকাংশ খ্রিস্টান ও অজপাড়া গাঁয়ের গারো মেয়ে যাদের বিনা খরচে নিজস্ব হোস্টেলে থাকার ও খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া কর্মীদের শিশুসন্তানদের থাকার জন্য প্রতিষ্ঠানেই আলাদা বুথের ব্যবস্থা করেছি যাতে ওই মায়েরা নিশ্চিন্তে কাজে মনোনিবেশ করতে পারেন।

সারা দেশে কয়টি শাখা আছে?

সারা দেশে আমাদের ৬টি শাখা আছে। বনানী, গুলশান, উত্তরা, ধানমন্ডি, কাকরাইল ও মিরপুর। আশা আছে দুই-তিন বছরের মধ্যে নিজস্ব পণ্য দেশের বাইরে বাজারজাত করার।

আপনারা কী কী সেবা দেন?

আমাদের প্রতিষ্ঠানে কাটিং, খোপা, ব্রাইডাল এমনিতেই আছে। ৪ বছর হয়ে গেছে নতুন হিসেবে যোগ করেছি ‘স্কিন কেয়ার’-এর ওপরে এসথেটিক ক্লিনিক। মেসতা, ব্রন, রিংকেল, হেয়ার প্রবলেমসহ স্কিনের সৌন্দর্য বিষয়ে সব সমস্যার ট্রিটমেন্ট করা হয়। বেশিরভাগ পণ্যই দেশের বাইরে থেকে আনা। থাইল্যান্ড আর চীনের পণ্যই বেশি। ভারত থেকেও আনা হয়।

আমাদের নিজস্ব কিছু পণ্যও নামে আছে। ১৫ বছর ধরে নিজস্ব পণ্য দিয়ে সেবা দিচ্ছি যা এখন বাজারজাত হচ্ছে। ‘ওমেন্স ওয়ার্ল্ড হারবাল’ নামের সেই পণ্যগুলোর মধ্যে আছে বিউটি মাস্ক, ফেইস মাস্ক, উপটান, তেল, হেয়ার প্যাক ও হেনা।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?

পার্লার যখন শুরু করি তখন মেকআপ, হেয়ার প্যাক ও চুলের যেসব পণ্য নিয়ে কাজ করব সেগুলো দেশের বাইরে থেকে আনতে হয়েছে এমনকি এখনো বাইরে থেকেই আনতে হচ্ছে। এটা একটি সমস্যা। এই সমস্যা যেন সমাধান হয় সে জন্য প্রোডাক্ট লাইনে কাজ করার ইচ্ছা আছে। অর্থাৎ নিজেরাই সব পণ্য তৈরি করে যেন ব্যবহার করতে পারি। এছাড়া আমাদের সেবা গ্রহীতারা সাবান, ফেশওয়াসসহ অন্যকিছু ব্যবহারে দ্বিধাদ্বন্দ্বে থাকেন বাসায় কী ব্যবহার করবেন এ নিয়ে। তাই তারা যেন আমাদের কাছ থেকে চাহিদা মতো পণ্য কিনে নিয়ে ব্যবহার করতে পারে সে রকম পরিকল্পনা আমার আছে।

আপনারা কী কী প্রশিক্ষণ দেন?

আমরা প্রফেশনাল ফুল কোর্স ও শর্ট কোর্স হিসেবে কয়েকটি ধাপে প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকি। ফুল কোর্স তিন মাস আর শর্ট কোর্স দেড় মাস। এছাড়া যারা শিখতে চান তাদের জন্য পার্সোনাল কোর্সও আছে। আমাদের একটি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট বনানীতে আছে। সেখানে আমরা প্রশিক্ষণ দেই। আমাদের ট্রেনিং ইনিস্টিটিউট থেকে অন্তত ২ হাজার মেয়ে প্রশিক্ষণ নিয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কাজ করছে।

কিছু কিছু পার্লারে দ্রুত প্রচার ও লাভের আশায় ত্বক ফর্সা করার এক ধরনের ক্রিম ব্যবহার করা হয়। যা স্কিনের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। আপনার অভিমত কী?

হ্যাঁ, এটা ঠিক। অনেক পার্লার এটা করছে। এটা আসলে ঠিক নয়। এটা খুবই ক্ষতিকর। আর দেশে ক্ষতিকর জিনিস অনেক বের হচ্ছে। শুধু ফর্সা করার ক্ষেত্রেই নয়, আমরা যা খেয়ে বাঁচি সেই খাবারেও এখন ভেজাল। ক্ষতিকর ফরমালিন মিশাচ্ছে। এটা প্রতিরোধ করতে হবে।

প্রথমে সুনাম হলেও পরে তা বদনাম নয়। এছাড়া ফর্সা করা ওই ক্রিম ব্যবহারে একসময় ত্বক আরো কালো হয়ে যায় ও স্কিনডিজিজ হয়। স্কিন একটি সেনসিটিভ জায়গা। পার্লারে সবাই আসে নিজের সৌন্দর্য ধরে রাখতে। তাই এ বিষয়ে নারীদেরও সচেতন থাকতে হবে।

এছাড়া আমাদের দেশ এখন নকল পণ্যে ভরা। আমরা বুঝি না নকল জিনিস কিনছি নাকি আসল জিনিস কিনছি। এ জন্য আমাদের দেশের বাইরে থেকে পণ্য আনতে হয়। অনেক পার্লার নকল ও মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্যও ব্যবহার করে। এ বিষয়ে সরকারকে পদক্ষেপ নিতে হবে।

ওমেন্স ওয়ার্ল্ডে পার্লারের পাশাপাশি আর কোনো সেবা দিচ্ছেন কি?

হ্যাঁ, পার্লারের পাশাপাশি আমরা কাস্টমারদের জন্য বুটিক হাউস দিয়েছি। এখানে সালোয়ার-কামিজ ও শাড়ি পাওয়া যায়। যারা আমাদের এখানে সেবা নিতে আসেন তারা এখান থেকেই প্রয়োজনীয় পোশাক পছন্দ করে নেন।

এসবের পাশাপাশি সামাজিক কিছু দায়িত্বও পালন করে থাকি। আমাদের প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে ২০০৭ সালে বন্যায় ঢাকার সাঁতারকুল এলাকা ও আশপাশের ৫টি গ্রামে ঘরে ঘরে গিয়ে প্রায় ৭০০ পরিবারের কাছে নগদ টাকা, চাল ও ত্রাণসমগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। ২০০৭ সালে প্রলয়ংকরী সিডরে ক্ষতিগ্রস্ত বরগুনা জেলায় অসহায় পরিবারের মাঝে ত্রাণসামগ্রী ও আর্থিক সাহায্যসহ রানা প্লাজায় ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে ত্রাণসহায়তা দেওয়া হয়েছে।

শীতে ত্বকের যতেœ কনা আলমের টিপস

হাতের যতœ

অতিরিক্ত নেইলপলিশ ব্যবহার করা ক্ষতিকর। তাই মাঝেমধ্যে নখকে স্বাভাবিক অবস্থায় রাখা উচিত।

১. কাপড় কাচার পর হাত ভালো করে ধুয়ে ভেজা হাতে ম্যাসাজ ওয়েল মেখে নিন। এরপর খানিকটা লিকুইড সোপ নরম ব্রাশে নিয়ে হাতের কোণে জমা ময়লা বা মরা চামড়া ভালোভাবে পরিষ্কার করুন। তারপর হাতে ভালো কোনো ক্রিম লাগিয়ে নিন।

২. শীতে বাইরে বের হওয়ার সময় দুই হাতে অবশ্যই ময়েশ্চারাইজার মেখে নিবেন।

৩. শীতে ধুলোবালিতে দূষণ বেশি ছড়ায়। তাই এই সময় নখ বড় না রাখাই ভালো।

৪. বারবার হাত পানিতে ভেজালে ত্বক ফুলে ওঠে। শীতে এই সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করে। এ অবস্থায় হাত পানিতে কম ভেজানোই উত্তম।

পায়ের যতœ

মানুষের একটি গুরুত্বপূর্র্ণ অঙ্গ পা। শীতে নানা কারণেই পায়ে সমস্যা দেখা দিতে পারে।

১. শীতে পা ফেটে যায়। পায়ের ফাটা প্রতিরোধে সতর্ক দৃষ্টি দিতে হবে। যেমনÑখালি পায়ে হাঁটা যাবে না, পায়ে ধুলো-ময়লা লাগলে সঙ্গে সঙ্গে তা পরিষ্কার করতে হবে, গোসলের সময় অমসৃণ মেঝে কিংবা ঝামা ইট বা গোড়ালি ঘষার উপকরণ দিয়ে ঘষে  গোড়ালির মরা চামড়া দূর করতে হবে। গোসল বা প্রতিবার পা ধোয়ার পর ভালো করে মুছে এরপর তাতে ভেসলিন বা গ্লিসারিন লাগাতে হবে।

২. রাতে ঘুমানোর সময় কখনোই মোজা পরে শোবেন না। আর নাইলনের মোজা ব্যবহার না করে সুতির মোজা পরুন।

৩. প্রতিদিন গোসলের আগে তেল মেখে নিন। তারপর সাবান মেখে ক্রাবার দিয়ে পায়ের চামড়া, গোড়ালি, আঙুলের কোণ ও ধারগুলো পরিষ্কার করুন। পরিষ্কার করুন নেলব্রাশ দিয়ে নখের চারপাশ, মাঝখানের অংশও।

৪. প্রতিদিন রাতে ঘুমানোর আগে কোনো ভালো ক্রিম দিয়ে পা ম্যাসাজ করুন ।

৫. সপ্তাহে অন্তত দুই-দিন উষ্ণ ও একদিন ঠা-া পানিতে পা ভেজাবেন। এতে শরীরের রক্তপ্রবাহ ভালো হয়।

ত্বক চর্চার টিপস্

১. শীতের সাবান অবশ্যই যেন ময়েশ্চারাইজারযুক্ত হয়। সকালে ঘুম থেকে উঠে মুখ ধোয়ার পর, ঘর থেকে বের হওয়ার আগে, দুপুরে বা সকালে গোসলের পর, বিকেলে ঘুম থেকে উঠে কিংবা বাইরে থেকে ফিরে মুখ ধুয়ে প্রসাধনী লাগাতে হবে। মোটামুটি দিনে তিন-চারবার মুখে প্রসাধনী লাগালেই যথেষ্ট।

২. শীতে মুখের শুষ্কতা, রুক্ষতা দূর করার জন্য প্রথমত যেকোনো ভালো কোল্ডক্রিম ব্যবহার করুন। বিকল্প হিসেবে গ্লিসারিনও লাগাতে পারেন।

৩. যাদের মুখ তৈলাক্ত তারা ভিটামিন ‘ই’ ক্রিম মাখতে পারেন। এতে মুখ তেলতেলে লাগবে না এবং সজীব থাকবে।

৪. শীতের সংস্পর্শে যাদের ত্বক খুব বেশি রুক্ষ হয়ে যায় তারা পেট্রোলিয়াম অর্থাৎ ভেসলিন জেলি ব্যবহার করতে পারবেন।

৫. যেকোনো ক্রিম, ময়েশ্চারাইজার, গ্লিসারিন রাতে শোবার আগে মুখ ধুয়ে পরিষ্কার করে একটু বেশি করে লাগালে ভালো। আর এইসব ক্রিম সবসময়ই চোখের চারদিকে আলতোভাবে একটু বেশি লাগাবেন। শীতের ত্বকের যতেœ অলিভ ওয়েলও ব্যবহার করতে পারেন।

৬. শীতের সময় ঘর থেকে বের হওয়ার আগে শরীরের উন্মুক্ত স্থানে সানস্ক্রীন লাগানো, চোখে সানগ্লাস, প্রয়োজনে মাথায় হ্যাট পরতে পারেন। সঙ্গে ছোট ক্রিম রাখতে পারেন, রাখতে পারেন লিপজেল বা ভেসলিন।

৭. আয়েশ করে রোদে দাঁড়াবেন না। রোদ এড়িয়ে চলুন। যতক্ষণ রোদে থাকবেন মুখে ও শরীরের খোলা জায়গায় সানস্ক্রিন লাগিয়ে নেবেন।

৮. পথে রিকশায় যাওয়ার সময় হুড তুলে রাখবেন। ধুলোবালি থেকে যথাসম্ভব দূরে থকার চেষ্টা করবেন।

৯. এমন জামাকাপড় পরুন যাতে শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রা বজায় থাকে।- সাপ্তাহিক এই সময়-এর সৌজন্যে