‘সামরিক শাসক যখন আসে তখন সে ক্ষমতায় টিকে থাকতে বিভিন্ন দল ভাঙার চেষ্টা করে। সে রকম কাজ হচ্ছে। সরকার গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে ব্যবহার করে এ চেষ্টা করছে। এটা আওয়ামী লীগের কাছ থেকে আশা করি না। আওয়ামী লীগ পুরনো রাজনৈতিক দল। তার তো গণভিত্তি আছে। তারা অন্যদল ভাঙার চেষ্টা কেন করবে?’
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এভাবেই বর্তমান সরকার সম্পর্কে নিজের মন্তব্য তুলে ধরলেন। সম্প্রতি তিনি একান্ত সাক্ষাৎকার দেন।
রাজধানীর উত্তরায় নিজ বাসভবনে বসে তিনি দেশের চলমান রাজনীতি, বিএনপির সাংগঠনিক অবস্থা, সরকারবিরোধী আন্দোলন, ছাত্রদলের নেতৃত্ব নিয়ে কোন্দল, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলাসহ নানা বিষয়ে কথা বলেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন হাবিবুল্লাহ ফাহাদ ও কিরন সেখ
বর্তমান সরকারকে অসাংবিধানিক বলছেন কেন?
আমরা বরাবরই বলেছি এই সরকার অবৈধ ও অনৈতিক সরকার। অসাংবিধানিক আমরা বলিনি। সংবিধানের ব্যাখ্যায় আমরা যাইনি। কারণ, সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী জনগণের ইচ্ছার বাইরে গিয়ে করা হয়েছে। এখানে কোনো গণভোট নেওয়া হয়নি।
তাহলে ৫ জানুয়ারির নির্বাচন মেনে নিতে বাধা কোথায়?
আওয়ামী লীগের দাবির প্রেক্ষিতেই সংবিধানে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান সন্নিবেশিত হয়েছিল। সেটা বাদ দেওয়ার পর এই সংবিধানের আওতায় যখন দলীয় সরকার রেখে কোনো নির্বাচন হয়, তখন সেই নির্বাচন আমরা কিছুতেই মেনে নিতে পারি না। দেশের মানুষ মেনে নেয়নি।
দেশের মানুষ মেনে নেয়নি এটা কীভাবে বুঝলেন?
প্রমাণ মিলেছে ৫ জানুয়ারি। জনগণ ভোট দিতেই যায়নি। ১৫৪ জনকে নির্বাচিত করতে হয়েছে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়। আমাদের হিসাবে ৫ শতাংশ লোকও ভোট দিতে যায়নি।
নির্বাচন কমিশন তো বলছে ভোটারদের উপস্থিতি ভালো ছিল?
নির্বাচন কমিশন যত কথাই বলুক, এই নির্বাচন কমিশনের কোনো গ্রহণযোগ্যতা নেই। বাংলাদেশের ৪২টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের মধ্যে ৩০টি দল নির্বাচন বর্জন করেছে। তারা নির্বাচনে যায়নি। শুধুমাত্র সরকারের সঙ্গে যে কয়েকটি রাজনৈতিক দল আছে তারা সেই নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল। তাই কোনোমতেই এই সরকারকে বৈধ বলা যাবে না।
তাহলে এই সরকারের কার্যক্রমের বৈধতা নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন?
যেই সময়টায় তারা ক্ষমতা আঁকড়ে আছে সেই সময়ের কোনো কাজই নৈতিক নয়, বৈধ নয়।
বর্তমান বিরোধীদল তো এখন সংসদে নিয়মিত উপস্থিত থাকছে। অথচ আপনাদের সময় তো দিনের পর দিন আপনারা অধিবেশনে যাননি।
এ ধরনের বিরোধীদলীয় ব্যবস্থা এক কথায় মকারি (হাস্যকর)। গণতন্ত্রের জন্য এটা একটা তামাশা। একটা বিষয় আমার কাছেই অবাক লাগে, আওয়ামী লীগের মতো ৬৫ বছরের পুরনো দল যারা গণতন্ত্রের জন্য পাকিস্তান আমলেও সংগ্রাম করেছে, পরবর্তীকালেও সংগ্রাম করেছে। সেই দলটিই গণতন্ত্র নিয়ে প্রহসন করছে, তামাশা করছে।
বর্তমান সরকার ব্যবস্থা কি গণতান্ত্রিক নয়?
এটা কোনো গণতন্ত্র নয়। সরকার যে কাজটি করেছে তা সম্পূর্ণ প্রতারণামূলক নির্বাচন। এর মধ্য দিয়ে সংসদ গঠন করা কোনোমতেই গ্রহণযোগ্য নয়। গণতন্ত্রের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই।
সরকার কেন এটা করতে যাবে?
কাজটি তারা করেছে একটিমাত্র কারণে। সেটা হচ্ছে তারা ক্ষমতা থেকে যেতে চায় না। ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করে রাখতে চায়।
এতে কি আওয়ামী লীগের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হওয়ার সুযোগ থাকে না?
এ থেকে সবচেয়ে বড় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আওয়ামী লীগ। তাদের যে রাজনৈতিক ঐতিহ্য, গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম সবকিছুই ধুলিসাৎ, ম্লান হয়ে গেছে। এখন দলটি একনায়কতন্ত্র, স্বৈরশাসন ও ফ্যাসিবাদের সঙ্গে এককাতারে এসে দাঁড়িয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী আপনাদের আন্দোলন ঘোষণা প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘একটা মানুষের গায়ে হাত দিয়ে দেখুক না’। বিষয়টিকে কীভাবে দেখছেন?
তিনি এটা বলে প্রচ্ছন্ন হুমকি দিয়েছেন। এটা সশস্ত্র ও সহিংস হুমকি। বিগত নির্বাচনের সময় এবং তার আগে আন্দোলনের সময় বিরোধীদলের বিরুদ্ধে যে সহিংসতার অভিযোগ আনা হয়েছে সেখানে বিরোধীদল কতটুকু করেছে আর সরকারের এজেন্টরা কতটুকু করেছে এটা তো খুব পরিষ্কার।
গাড়িতে আগুন দিয়ে মানুষ মারার ঘটনাও তো ঘটেছে?
তা ঘটেছে। কিন্তু বিরোধীদল গাড়িতে আগুন লাগিয়ে মানুষ মেরে ফেলেনি। এটা সরকারের এজেন্টরাই করেছে। ওই সময় আমাদের হিসাব অনুযায়ী ৩১০ জনকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। দেখামাত্র পুলিশ, র্যাব তাদের গুলি করেছে। ৬৫ জনকে গুম করে দিয়েছে। তিন মাসের মধ্যে ঢাকা শহরেই ২৪ জনকে গুম করা হয়েছে। ছাত্রদেরও রেহাই দেওয়া হয়নি।
বলতে চাচ্ছেন বিরোধীদল কোনো সহিংসতাই করেনি?
সহিংসতা তো সরকারিদলের লোকজন করেছেন। গায়ে হাত তো বিরোধীদল দেয় না, তারা দেন। আমাদের রাস্তায় দাঁড়াতে দেন না, মিছিল করতে দেন না। এখনো ঢাকা শহরে অলিখিত ১৪৪ ধারা চলছে। সরকারের অনুমতি ছাড়া কেউ কোনো সভা করতে পারছে না। এটা গণতন্ত্র নয়।
অতীতেও কি রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের জায়গাটা এতটাই রুক্ষ ছিল?
আমাদের একটা ঐক্যবদ্ধ সমাজ ছিল। তারা একসঙ্গে ভাষা আন্দোলন করেছেন, মুক্তিযুদ্ধ করেছেন, গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছেন, সেই সমাজকে আজ বিভক্ত করে ফেলা হয়েছে। গ্রামীণ সমাজেও বিভক্তি ছড়িয়ে পড়েছে। শহরের চায়ের দোকান থেকে শুরু করে বাস-ট্রেনÑসবখানে এই বিভক্তি। শুধু ক্ষমতা চিরস্থায়ী করতে সরকার এমন ফ্যাসিবাদী আচরণ করছে।
বঙ্গবন্ধুর সময়কার আওয়ামী লীগ আর এখনকার আওয়ামী লীগের মধ্যে কী ধরনের পার্থক্য চোখে পড়ছে?
শেখ মুজিবুর রহমানের তো মানবিক কিছু মূল্যবোধ ছিল। বিরোধী মতের নেতাদের তিনি সম্মান করতেন। বিরোধীরা জেলে থাকলে তিনি খাবার পাঠাতেন, তাদের পরিবারের খোঁজখবর নিতেন। শেখ হাসিনা তো তাঁর মেয়ে। কিন্তু তিনি তো বিরোধী নেতাদের কীভাবে নিশ্চিহ্ন করে দেবেন সবসময় সেই কাজ করছেন।
বিএনপি চেয়ারপারসনের বিরুদ্ধে করা মামলায় আদালতে হাজিরা দিতে না যাওয়ার জন্য হরতালের মতো কর্মসূচি দেওয়া হয় বলে প্রধানমন্ত্রী অভিযোগ করেছেন...
এটা একেবারেই মিথ্যাচার। আমরা তো সংসদের কাছে বিচারপতিদের অভিশংসনের ক্ষমতার বিরুদ্ধে আন্দোলন করছিলাম। সেই আন্দোলনের অংশ হিসেবে হরতাল দিয়েছিলাম। এবার যারা হরতাল দিয়েছে তাদের সঙ্গে তো আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই। লতিফ সিদ্দিকী সাহেবের বক্তব্যের প্রতিবাদে এই হরতাল দেওয়া হয়েছে। এখানে এই মামলার কোনো সম্পর্ক নেই।
এই মামলা নিয়ে কি বিএনপি চিন্তিত?
মামলাটি তো মিথ্যা। এর কোনো ভিত্তি নেই। একটা পয়সাও কেউ জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের তহবিল থেকে সরায়নি। ওখানে যে টাকা ছিল সে টাকাই আছে।
তহবিল ঠিকঠাক থাকলে কেন মামলা করা হলো?
শুধুমাত্র বেগম খালেদা জিয়াকে হেয়প্রতিপন্ন এবং হয়রানি করার জন্য মামলাটি করা হয়েছে। তহবিলের বিষয়ে বেগম খালেদা জিয়ার কোনো স্বাক্ষর কোথাও নেই। কেউ দেখাতে পারবে না।
বিএনপির আন্দোলনের ঘোষণাকে সরকার গুরুত্ব দিচ্ছে না বলে বিভিন্ন সময় তাদের লোকজনের বক্তৃতায় উঠে এসেছে...
অনেকেরই মনে আছে, সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর পর আমরা যখন আন্দোলন শুরু করলাম, তখনও তারা একই কথা বলেছিল। বলেছিল, বিএনপি আন্দোলন করতে পারবে না। কিন্তু পরে তিন মাস ঢাকা পুরো বাংলাদেশ থেকে তো বিচ্ছিন্ন ছিল। স্থলপথ, রেলপথ, নৌপথ সবই বিচ্ছিন্ন ছিল। বাংলাদেশে এত বড় আন্দোলন অতীতে আর কখনো হয়নি।
কিন্তু গত বছরের ২৯ ডিসেম্বর বিএনপির মার্চ ফর ডেমোক্রেসি কর্মসূচিতে তো নেতাকর্মীদের মাঠে দেখা যায়নি।
২৯ ডিসেম্বর মার্চ ফর ডেমোক্রেসি কর্মসূচির ৩-৪ দিন আগে গোটা ঢাকা শহরে চিরুনি অভিযান চালিয়ে মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়। ঢাকায় আসার পথগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়। হোটেলগুলো খালি করে দেয়। তারা ঢাকায় ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করেছিল। মোড়ে মোড়ে আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসী, পুলিশকে রাখা হয়েছিল। তারা সেই কর্মসূচি সফল করতে দেয়নি।
আপনারা তো সরকার পতনে লাগাতার আন্দোলনে নেমেছিলেন...
আন্দোলন হয়নি কথাটি ঠিক নয়। আন্দোলন হয়েছিল বলেই ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে ঢাকা শহরেই কোনো কেন্দ্রে ভোট পড়েনি। আওয়ামী লীগের লোকেই ভোট দিতে যায়নি। সরকার পড়ে যাওয়ার বিষয়টি তো ভিন্ন। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি আমরা নির্বাচন করিনি? করেছিলাম তো। সেটা তো অন্য বিষয়।
২৯ ডিসেম্বর মার্চ ফর ডেমোক্রেসি কর্মসূচিতে বিএনপি চেয়ারপারসনের বাড়ির সামনে তার সঙ্গে দলের কোনো নেতাকর্মীকে দেখা যায়নি, কেন?
সেদিন চেয়ারপারসনের বাসভবনের চারপাশের রাস্তাতেই বালু বোঝাই ট্রাক রাখা হয়েছিল। কয়েক হাজার পুলিশ, র্যাব মোতায়েন করা হয়েছিল। তাই চেয়ারপারসনের আশপাশে যাওয়ার সুযোগ ছিল না। মানুষের প্রাণের মায়া তো আছে। দেখা হলেই গুলি করেছে। শান্তিনগর, মৌচাকে মিছিল বের হয়েছিল। পুলিশ মিছিলে গুলি চালিয়ে দুজনকে মেরে ফেলেছে।
তাহলে ওইদিন বিএনপির সাংগঠনিক কোনো ব্যর্থতাই ছিল না?
প্রতিটি মানুষের তো জীবনের মায়া আছে। সবাই তো আর সেভাবে আসতে পারে না। তবে হ্যাঁ, ম্যাডামের বাসার আশপাশে আসতে না পারলেও অন্য জায়গায় দলের নেতাকর্মীরা নামতে পারতেন। সেই জায়গায় হয়ত আমাদের কিছুটা ব্যর্থতা রয়েছেই।
মানুষ কি এখন আন্দোলন চায়?
দেশের মানুষ আন্দোলনের জন্য মুখিয়ে আছে। ঢাকার বাইরে যেখানে সভা করেছি, সব জায়গাতেই মানুষের একটাই কথা, আপনারা বসে আছেন কেন? আন্দোলনের ডাক দিচ্ছেন না কেন?
সাংগঠনিকভাবে কি বিএনপি আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত?
বিএনপি সব সময়ই এ রকম একটি দল। আওয়ামী লীগও তাই। আওয়ামী লীগ হয়ত আন্দোলন, সহিংসতা ও মারামারিতে পটু বেশি। যে কারণে ওই জিনিসটা তারা ভালো পারে। আমরা একটা শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক দল।
তাহলে বিএনপি সহিংস আন্দোলনে বিশ্বাস করে না?
গণতান্ত্রিক রীতিনীতিতে বিশ্বাসী দল বিএনপি। নির্বাচনে বিশ্বাসী দল। সহিংসতার মধ্য দিয়ে আন্দোলন করা এটা ভিন্ন বিষয়। এক্ষেত্রে আমরা অতটা পারঙ্গম নাও হতে পারি। কিন্তু রোডমার্চ, লংমার্চ যেই কর্মসূচি পালন করেছি তা জনগণকে সম্পৃক্ত করেই করেছি।
বিএনপি কি শিগগির আন্দোলনে নামবে?
আন্দোলনের জন্য বিএনপি সবসময়ই তৈরি আছে। বিএনপি আন্দোলন করবে। জনগণকে সঙ্গে নিয়েই করবে।
বিএনপির নিজেদের মধ্যে মতানৈক্যের কথা শোনা যায়...
বিএনপি তো কোনো সৈনিক দল নয়। এটা নিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক দল। এখানে বিভিন্ন ধরনের মতামত থাকতেই পারে। কিন্তু বিএনপির মূল লক্ষ সামনে রেখেই তো সবাই এসেছেন। যখন দলের কোনো সিদ্ধান্ত হয়, তখন সবাই এটাকে সামনে নিয়ে যায়। সেটাই অনুসরণ করে।
বিএনপি বিগত সময় ঢাকাতে আন্দোলন চাঙ্গা করতে পারেনি, কেন?
বাংলাদেশে যত আন্দোলনই হয়েছে, সেটার মূল নেতৃত্ব দিয়েছে ছাত্ররা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক আন্দোলন হয়েছে। সেখান থেকেই আন্দোলনের সূচনা হয়েছে। ছাত্ররাই আন্দোলনের মূলশক্তি হয়ে দাঁড়াত। যুবশক্তি ও শ্রমিকরাও এর সঙ্গে থাকে।
এখন ছাত্ররা পারছে না কেন?
দুর্ভাগ্যজনকভাবে এখনকার ছাত্রদের তো রাজনীতিতে অনীহা। তারা তো রাজনীতিই করে না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সরকার এমন একটা অবস্থা তৈরি করে রেখেছে যে, সেখানে অন্য কোনো দলের প্রবেশাধিকারই নেই। কোনো দল ঢুকতেই পারে না। ফলে সেই যুক্তিতে এটা হচ্ছে না।
ঢাকা মহানগর বিএনপি আন্দোলনের জন্য কতটা প্রস্তুত?
ঢাকা মহানগর বিএনপি তখনও শক্তিশালী ছিল। এখন নতুন কমিটি আরও শক্তিশালী হবে বলে আমরা আশা করি।
ছাত্রদলের কমিটিতে পদ পাওয়া নিয়ে বিশৃঙ্খলার কারণ কী?
দেশের বড় বড় দলগুলোতে এটা স্বাভাবিক। ইতোপূর্বেও হয়েছে। কমিটিতে তো স্বল্পসংখ্যক নেতাকে জায়গা দেওয়া হয়। এতবেশি যোগ্য নেতা থাকে যে, তাদের কমিটিতে পদ দেওয়া যায় না। ফলে সেখানে ক্ষোভ-বিক্ষোভ থাকে। নিয়মিত ছাত্ররা যখন কমিটিতে আসত তখনও এটা ছিল। আমরা যখন বাম রাজনীতি করেছি তখনও কমিটি নিয়ে সমস্যা হয়েছে। এটা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, ছাত্র ইউনিয়ন তো একসময় মারামারি করেই দ্বিখ-িত হয়ে গেল। এটা পাকিস্তান আমলের কথা।
ছাত্ররাজনীতির দুর্বলতা কোথায়?
ছাত্ররাজনীতির ক্ষেত্রে একটা বন্ধ্যত্ব সৃষ্টি হয়েছে। নেতৃত্ব তৈরি হচ্ছে না।
এর কারণ কী?
বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজগুলোর ছাত্রসংসদের নির্বাচন হয় না। এ কারণে যে নেতৃত্ব তৈরি হওয়ার কথা ছিল, তা হচ্ছে না। ছাত্রসংগঠনেও তার প্রভাব পড়ছে। সেখানেও নেতৃত্ব তৈরি হচ্ছে না। এই সমস্যাটা ছাত্রদল নয়, সব দলের ক্ষেত্রেই হচ্ছে।
ছাত্রদলের দাঙ্গা-হাঙ্গামার শেষ কোথায়?
এটা সাময়িক একটা সমস্যা। সমাধান হয়ে যাবে। এটা আর দ্বিতীয়দিন দেখবেন না।
ছাত্রদলের বর্তমান কমিটিতে নেতৃত্ব বাছাই প্রক্রিয়া সঠিক হয়েছে?
অবশ্যই ঠিক হয়েছে। এর বিকল্প তো কিছু ছিল না। এটাই সর্বোত্তম।
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বলেছেন, ‘মার্চে নির্বাচন হলে জাতীয় পার্টি প্রস্তুত আছে।’ এটাকে কীভাবে দেখছেন?
জাতীয় পার্টির এরশাদ সম্পর্কে আমি মন্তব্য করতে চাই না। কারণ তিনি প্রচ- রকমের একজন সুবিধাবাদী লোক। ক্ষমতা ছাড়া আর কিছুই বোঝেন না। ক্ষমতার জন্য তিনি যে ধরনের খেলা খেলেন এটা গণতান্ত্রিক রীতিনীতির বিরুদ্ধে।
বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে আলোচনা আছে জানুয়ারিতে আন্দোলন, মার্চে নির্বাচন...
মার্চ-টার্চ জানি না তো। আমরা বলছি, শিগগির নির্বাচন দিন। নভেম্বরে, ডিসেম্বরে, যখনই দেন, নির্বাচন দেন। কারণ যে সংকট তৈরি হয়েছে তা সমাধানের জন্যই নির্বাচন দরকার। একটা অনির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় থাকায় এই সংকট তৈরি হয়েছে। এই সরকারকে তো কেউ মানছে না।
আপনাদের দাবির ভিত্তি কী?
আপনি নিরপেক্ষ গণভোট নিয়েই দেখুন না। দেখবেন, ৯০ শতাংশ লোক এই সরকারের বিপক্ষে মত দেবে। সেই গণভোটে কেন যাচ্ছেন না?
কিন্তু সরকার বলছে তারা জনগণের সমর্থন নিয়েই ক্ষমতায় এসেছে।
একটা নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে তারা ১০ শতাংশ আসনও পাবেন না। কারণ তারা ইতোমধ্যে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। সুস্থ রাজনীতিক ড. কামাল হোসেন, মনজুরুল আহসান খান, মাহমুদুর রহমান মান্নাদের মতো লোকজন কেউ তাদের পক্ষে নেই। শুধু পুলিশ, র্যাব দিয়ে তারা ক্ষমতায় টিকে আছে।
নির্বাচনের দাবি তুলছেন। বিএনপি নির্বাচনের জন্য কি প্রস্তুত?
যেকোনো সময় নির্বাচন দিন, আমরা প্রস্তুত আছি। নির্বাচন হলে জনগণের তোপের মুখে সব উড়ে যাবে।
নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা কী হবে?
অনেক কিছু হতে পারে। এটা তো আলোচনার মাধ্যমে হতে হবে। এমন কোনো ব্যাপার নয়, যেটা আমরা সমাধান করতে পারব না। বসলেই সমাধান হয়ে যাবে। তবে সমস্যা সমাধানের জন্য আন্তরিক হতে হবে।
কিন্তু সরকার তো আলোচনায় বসতে আগ্রহ দেখাচ্ছে না।
এটাই তো সমস্যা। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘খুনিদের সঙ্গে আলোচনায় বসব?’ এখন দেখেন, খুন করল কারা আর উদরপি-ি ঘাড়ে চাপাচ্ছে কাদের। খুন তো করেছেন তার দলের লোক। খোন্দকার মুশতাক গং। এটা ঐতিহাসিকভাবে সত্য। ওই সময় খোন্দকার মুশতাকের মন্ত্রিসভার সদস্য হয়েছে কারা? আওয়ামী লীগের সদস্যরাই। যারা মুশতাক সরকারকে সমর্থন দিয়েছেন, তাদেরকে তো উনিও পরবর্তীতে সংসদ সদস্য বানিয়েছেন এবং এ কে খন্দকার সাহেবকে মন্ত্রীও বানিয়েছেন।
বিএনপি কি তারেক রহমানকে দেশের বাইরে রেখেই নির্বাচনে যাবে?
এটা তো নির্ভর করবে পুরোপুরি পরিস্থিতি-পরিবেশের ওপর। এখন তিনি অসুস্থ। এ মুহূর্তে তার দেশে আসার সুযোগ নেই। তিনি হাঁটতেও পারেন না ঠিকমতো। তিনি সুস্থ হলেই দেশে ফিরবেন।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ব্যাপারে আপনাদের স্পষ্ট কোনো অবস্থান আছে?
স্পষ্ট কথা আছে। দুঃখজনকভাবে কিছুসংখ্যক মানুষ এটাকে বিকৃত করে। জোর করে চাপিয়ে দিতে চায়। আমরা অবশ্যই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চাই। চাই যে এটা নিয়মমাফিক ও স্বচ্ছ হোক। এটা নিয়ে যেন ভবিষ্যতে কোনো প্রশ্ন সৃষ্টি না হয়।
এখন কি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন আছে?
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের ব্যাপারে কিছু কিছু প্রশ্ন তো আন্তর্জাতিকভাবে এসেই গেছে। তারা বলছে, এটা কিছুতেই সঠিক হচ্ছে না। আমেরিকা, ইংল্যান্ডসহ জাতিসংঘের সংগঠনগুলোও এ ব্যাপারে আপত্তি তুলেছে। তারা বলছে, এটা স্বচ্ছ হচ্ছে না। কারণ মিথ্যা কতগুলো বিষয়কে সামনে এনে বিচার করা হচ্ছে।
তাহলে বিচারটা কীভাবে হওয়া দরকার ছিল?
তাড়াহুড়া না করে সময় নিয়ে করলে সঠিকভাবেই তো করা যেত। যারা দোষী প্রমাণিত হতো তাদের শাস্তি দিলে আমাদের কোনো আপত্তি থাকত না। আমাদের কথা হচ্ছে, এটা স্বচ্ছ এবং আন্তর্জাতিকমানের হতে হবে।
আন্তর্জাতিকমানের বিচার কীভাবে করা যেত?
আমরা তো এটাও প্রস্তাব করেছিলাম, জাতিসংঘকেই বলেন তারাই বিচারটা করুক।
বলা হয় বিএনপি ক্ষমতায় গেলে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধ হয়ে যাবে...
আমরা এ কথা কখনই বলিনি। আমরা তো আরও স্বচ্ছভাবে করব।
কোনো রায়ের পর বিএনপি কোনো ধরনের প্রতিক্রিয়া এখন পর্যন্ত জানায়নি, কেন?
আমরা তো কোনো প্রতিক্রিয়া দেব না। এটা খুব সোজা হিসাব। আমরা তো মনে করছি না, রায়গুলো কোনো স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় হচ্ছে। ট্রাইব্যুনালের বিচারপতির স্কাইপের কথাবার্তা ফাঁস হয়ে গেলে তাকে পদত্যাগ করতে হলো। সেখানে কী করে বলব এখানে স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় বিচার হচ্ছে?
২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা মামলার বিষয়টি নিয়ে বিএনপি কি চিন্তিত?
আসলে ওই ঘটনায় কারা জড়িত তা এখনো সঠিকভাবে জানা যায়নি। বারবার মামলার অভিযোগপত্রে পরিবর্তন আনা হয়েছে। শেষমেশ চতুর্থবার প্রতিবেদনে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে জড়ানো হয়েছে। এটা তো কোনোমতেই হতে পারে না।
আসামিরা তো জবানবন্দিতে এসব কথা বলেছেন?
যে লোকটাকে দিয়ে এটা করানো হয়েছে সে তো অস্বীকার করেছে। সে বলেছে, আমাকে অত্যাচার, নির্যাতন করে বলানো হয়েছে। আর যারা ওই ঘটনা ঘটিয়েছে সেই মুফতি হান্নানরা তো একবারও বলেনি আমরা বিএনপির নির্দেশে করেছি। এই জিনিসগুলো তো ভাবতে হবে। এটা হচ্ছে শুধু বিএনপিকে কোণঠাসা করার জন্য।
বিভিন্ন জায়গায় বিএনপি নেতারা আওয়ামী লীগে যোগ দিচ্ছেন, এটাকে কীভাবে দেখেন?
এগুলো অপপ্রচার। এগুলো থাকেই। সরকার তো বিভিন্ন ধরনের অপপ্রচার করবে তার সুবিধার জন্য। দল ভাঙার চেষ্টা করছে। জোট ভাঙার চেষ্টা করছে।
কেন সরকার এটা করছে?
সামরিক শাসক যখন আসে তখন সে ক্ষমতায় টিকে থাকতে বিভিন্ন দল ভাঙার চেষ্টা করে। সে রকম কাজ হচ্ছে। সরকার গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে ব্যবহার করে এ চেষ্টা করছে। এটা আওয়ামী লীগের কাছ থেকে আশা করি না। আওয়ামী লীগ পুরনো রাজনৈতিক দল। তার তো গণভিত্তি আছে। তারা অন্যদল ভাঙার চেষ্টা কেন করবে?
এতে সাংগঠনিক অবস্থার কোনো পরিবর্তন হচ্ছে?
একটা দুইটা লোক কোথায় গেল না গেল এতে সংগঠনের কিছু আসে যায় না।। আওয়ামী লীগেরও তো বহু লোক আমাদের কাছে চলে আসছে।
এই সরকারকে অবৈধ বলছেন। কিন্তু কোনো কারণে এই সরকার যদি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনতে সংবিধান সংশোধন করে তাহলে কতটুকু বৈধ হবে?
সংবিধান তো কোরআন বা বাইবেল নয় যে, এটা পরিবর্তন করা যাবে না। রাজনীতি, সংবিধান, আইন সব তো মানুষের জন্য। মানুষ যদি চায় আমি এটাকে সংলাপের মাধ্যমে সমঝোতা করে নেব তাহলে তো সমস্যা নেই।
ছবি: রাজিব নূর খান