ঢাকা: সিরাজগঞ্জ-২ (সদর ও কামারখন্দ) আসনের সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতা অধ্যাপক ডা. হাবিবে মিল্লাত মুন্না বলেছেন, গত ছয় বছরে উত্তরবঙ্গে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক অবস্থা আরও শক্তিশালী হয়েছে। দলের কর্মী, সমর্থক আরও বেড়েছে। তিনি বলেন, সাংগঠনিকভাবে উত্তরবঙ্গে জামায়াত-বিএনপির প্রভাব আছে বলা হয়। যেকারণে কোনো নেতা সিরাজগঞ্জের হাল শক্তভাবে ধরেননি। তৃণমূল পর্যায়ে এখন এই অবস্থা আর নেই।
বিএনপির অন্তবর্তীকালীন নির্বাচনের দাবির বিষয়ে ডা. মিল্লাত বলেন, জনগণ আওয়ামী লীগকে চায় কি না চায় এটা ঠিক হবে ২০১৯ সালের নির্বাচনে। এর আগে নির্বাচন নিয়ে কোনো আলোচনার সুযোগ নেই। এখন আলোচনা হবে দেশের উন্নয়নকে কীভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়।
সম্প্রতি ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন। ডা. মিল্লাত বাংলাদেশ মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিলের (বিএমআরসি) ভাইস চেয়ারম্যান। বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশনের (বিএমএ) কেন্দ্রীয় পর্ষদের সদস্য। বাংলাদেশ রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি এবং হলি ফ্যামেলি ও রেডক্রিসেন্ট কলেজের পরিচালনা পর্ষদের সদস্যও তিনি। ছিলেন স্বাস্থ্যনীতি প্রণয়ন কমিটির সাধারণ সম্পাদক।
ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে দেয়া সাক্ষাৎকারটি পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হল।
দীর্ঘদিন দেশের বাইরে ছিলেন। সেখানেই বর্ণাঢ্য কর্মজীবন ছিল। দেশে ফেরার ইচ্ছে হল কেন?
১৯৯৩ সাল থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত আমি ইংল্যান্ড-আয়ারল্যান্ডে থাকার পর বাংলাদেশে এসেছি। ইংল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড এবং স্কটল্যান্ডে কার্ডিয়াক সার্জন হিসেবে ১৪ বছর কাজ করেছি। সব সময় ইচ্ছা ছিল দেশে ফিরে আসবো। দেশের মানুষের জন্য কিছু করার তাগিদেই ফিরে আসলাম।
প্রথমে দেশে ফিরে কী করলেন?
দেশে ফিরে প্রথম স্কয়ার হাসপাতালে যোগ দেই। তখন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাব-জেলে ছিলেন। তিনি স্কয়ার হাসপাতালে আমার অধীনে ভর্তি ছিলেন। তার ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের মধ্যে আমি একজন ছিলাম। নেত্রীকে ছেড়ে দেয়ার দাবিতে যারা সোচ্চার ছিলেন আমি তাদের একজন। অনেক হুমকি-ধমকি উপেক্ষা করে কাজ করেছি তখন।
আবার বিদেশে ফিরে গিয়েছিলেন?
স্কয়ার হাসপাতালে থাকতে দেখলাম নির্দিষ্ট একটি শ্রেণির রোগী দেখার সুযোগ পাচ্ছি। যারা উচ্চবিত্ত এবং উচ্চমধ্যবিত্ত। কিন্তু গরীব মানুষের সেবা ও চিকিৎসা করার যে লক্ষ্য নিয়ে এসেছিলাম- তা আমার পক্ষে সম্ভব হতো না। তখন ২০০৮ সালের দিকে আমি আবার দেশের বাইরে চলে যাই।
দ্বিতীয়বার ফিরলেন কবে?
২০০৯ সালে দেশে ফিরে এলাম। এসে বারডেমের ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতালে যোগ দেই। যেখানে অনেক ভাল অস্ত্রোপচার হচ্ছে আমাদের হাত দিয়ে। যেকোনো ধরনের রোগী এই হাসপাতালে আসতে পারে। আমি জীবনে কখনও প্রাইভেট প্র্যাকটিস করিনি। কিন্তু ইব্রাহিম কার্ডিয়াকে বিনামূল্যে রোগী দেখার সুযোগ পেয়েছি।
চিকিৎসক পেশার পাশাপাশি রাজনীতিতে আসার কারণ?
একজন কার্ডিয়াকসার্জন হিসেবে বছরে ৩০০টির অস্ত্রোপচার করতে পারবো। আগামী ২০ বছরে ছয় থেকে সাত হাজার মানুষকে চিকিৎসাসেবা দেয়া যাবে। কিন্তু আমি যদি দেশের নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে থাকি তবে মানুষকে বেশি উপকার করতে পারবো। স্বাস্থ্য খাতের নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে থেকে যেন দেশের এবং মানুষের উপকার করতে পারি এজন্যই রাজনীতিতে আসা।
স্বাস্থ্যনীতি ও কমিউনিটি ক্লিনিক প্রকল্পের সঙ্গেও আপনি কাজ করেছেন।
হ্যাঁ। কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে সারাদেশে কোটি কোটি লোক সেবা পাচ্ছে। এর বাইরে হৃদরোগে আক্রান্ত রোগীদের সরকারি আর্থিক অনুদান দেয়ার বিষয় নিয়ে কাজ করেছি।
কীভাবে এই অনুদান দেয়া হবে?
আগে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে কিডনি, ক্যান্সার, লিবার সিরোসিসের রোগীরা চিকিৎসা সহায়তা পেতো। আমি যখন সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য হলাম তখন চিন্তা করলাম এই তালিকায় হৃদরোগও যুক্ত হওয়া দরকার। কারণ, অসংক্রামক ব্যাধির মধ্যে হৃদরোগ বেশি। শিশুরা এ রোগে সবচেয়ে অবহেলিত।
দেশে শিশু হৃদরোগের পরিস্থিতি কী?
দেশের প্রতিবছর ৩০ হাজার শিশু হৃদরোগে আক্রান্তের তালিকায় যোগ হচ্ছে। এদের বেশির ভাগই গরীব মানুষ। আট থেকে দশবছর ধরে রোগে ভুগে ১২ থেকে ১৪ বছরের মধ্যে বাচ্চারা মারা যায়।
কী পরিমাণ আর্থিক সহায়তা হৃদরোগীরা পাবেন?
হৃদরোগীদের ৫০ হাজার টাকা করে দেয়ার জন্য সংসদীয় কমিটিতে সুপারিশ পাশ করিয়েছি। ব্রেইন স্ট্রোকে যারা আক্রান্ত হন তাদেরও অনুদানের বিষয়টিও এখানে যোগ করা হয়েছে।
সংসদ সদস্য হওয়ার পর কি চিকিৎসা পেশায় সময় দিতে পারছেন?
সংসদ সদস্য হওয়ার পরও আমি অস্ত্রোপচার নিয়মিত করে যাচ্ছি। এবং এটা করতেই থাকবো।
অটিজম নিয়ে কাজ করছেন...
অটিজম নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের সঙ্গে কাজ করছি। তাকে সর্বাত্মক সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছি।
আপনার নির্বাচনী এলাকার মূল সমস্যা কী?
উত্তরবঙ্গ সবসময় কর্মক্ষেত্র, বিদেশে যাওয়ার দিক থেকে পিছিয়ে থাকে। শিক্ষা এবং ভাল চাকরি পাওয়ার দিক থেকেও তারা পিছিয়ে থাকে।
আপনার নির্বাচনী এলাকায় সরকারের গত মেয়াদে কী ধরনের উন্নয়ন হয়েছে?
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন ক্ষমতায় থাকেন তখন আমার এলাকা নয় সারাদেশেই উন্নতি হয়। গত মেয়াদেও চোখে পড়ার মতো উন্নয়ন হয়েছে। এবারও অনেক কাজ হবে। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময়ে সিরাজগঞ্জে কওমী জুট মিল বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। আওয়ামী লীগ সরকার এটিকে জাতীয় জুট মিল নাম দিয়ে খুলে দিয়েছে। চার হাজার লোক এতে কাজ করছে। যার মধ্যে সাতশ নারী। এর মাধ্যমে চার হাজার পরিবারের জীবন-যাপনের ব্যবস্থা হয়েছে।
জাতীয় জুট মিলটি কি লাভজনক অবস্থায় আছে?
জননেত্রী শেখ হাসিনা ২৩ টি জুট মিল খুলে দিয়েছেন। তিনটি লাভজনক প্রতিষ্ঠান। সিরাজগঞ্জের জাতীয় জুট মিল সবচেয়ে বেশি লাভজনক প্রতিষ্ঠান। তার পরও গত বছর থেকে কিছুটা ঝুঁকির মুখে আছি।
কী ধরনের ঝুঁকি?
আমাদের প্রায় ৫০ কোটি টাকার পাটজাত পণ্য গুদামে পড়ে আছে। বাইরে আমাদের ঋণ আছে ১৪ থেকে ১৫ কোটি টাকা। হিসাব করলে দেখা যাবে আমরা ৩৫ কোটি টাকার ওপরে লাভে আছি। সংসদে এনিয়ে বলেছি যে, ২০১৩ সালে পাটজাত দ্রব্য ব্যবহারের জন্য যে আইন হয়েছে তার পুরোপুরি বাস্তবায়ন জরুরি। ঈদের পর এনিয়ে আন্দোলন করতে যাচ্ছি।
আইন মানতে কী ধরনের আন্দোলনের কথা ভাবছেন?
বঙ্গবন্ধু সেতুতে যেসব ট্রাক পাটের বস্তা ব্যতিত চাল, গম, ভুট্টাবহন করবে তাদের জরিমানা করবো। আইনে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা বা একবছরের কারাদ-ের বিধান আছে। সম্প্রতি সিরাজগঞ্জ জেলার আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় এনিয়ে কথা হয়েছে। যদি এই আইন বাস্তবায়ন করা না যায় তবে শ্রমিকদের নিয়ে আমরা আন্দোলন করবো।
সিরাজগঞ্জে শিল্পপার্ক করার বিষয়টি কোন পর্যায়ে আছে?
সিরাজগঞ্জে শিল্পপার্কের জন্য চার’শ হেক্টর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। এখানে এক লাখ লোকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে। এই সরকারের সময়ের মধ্যে এটি শেষ করার পরিকল্পনা আছে। এখানে উত্তরবঙ্গের লোকজনই তো কাজ করবে।
এর বাইরে কর্মসংস্থান বাড়ানোর আর কী পরিকল্পনা আছে?
সারাদেশে পাঁচটি ইকনোমিক জোন হচ্ছে। সিরাজগঞ্জে একটি হচ্ছে। প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা খরচ হবে প্রকল্পটিতে। তিন লাখ লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে। অনেক বড় প্রকল্প। কাজ শেষ করতে একটু সময় লাগবে। ১০ থেকে ১২ বছর দরকার। এজন্য ক্ষমতার ধারাবাহিকতা দরকার।
একটি মেরিন একাডেমি হয়েছে সিরাজগঞ্জে...
মেরিন টেকনোলজি ইনস্টিটিউট সারাদেশে পাঁচটি হয়েছে। যমুনা নদীর সিরাজগঞ্জে একটি হয়েছে। এরই মধ্যে সেখানে একশ শিক্ষার্থী পড়াশোনা শুরু করেছে। তিন বছর পর এখান থেকে ডিগ্রি নিয়ে তারা দেশের বাইরে কাজ নিয়ে যেতে পারবে।
স্বাস্থ্য খাতে এলাকার মানুষের জন্য কী করছেন?
গত পাঁচ বছরে একশ শয্যার হাসপাতালকে আড়াইশ বেডে তোলার কাজ শুরু করেছি। এবছর শেষ হবে। শহীদ মনসুর আলী মেডিকেল কলেজের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। আগামী বছরের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের দিনে সেখানে ক্লাস শুরু হবে।
এছাড়া নতুন করে আর কি চিন্তা করছেন?
সিরাজগঞ্জে একটি হেলথ সিটি করার চিন্তা করছি। স্বাস্থ্য সম্মত একটা শহর করতে চাই। পৃথিবীর অনেক দেশেই এটা আছে। এনিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সঙ্গে আলোচনা চলছে। সিরাজগঞ্জকে মাদকমুক্ত করতে চাই।
শিক্ষা ক্ষেত্রে অগ্রগতি কেমন?
১৯৯৬ সালে যখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছিল তখন সিরাজগঞ্জে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর পাকা ভবন হয়। বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের ভবন নির্মাণ, শহীদ মিনার, ভূমি অফিস, পাবলিক লাইব্রেরি, সাইবার অফিসসহ বিভিন্ন সরকারি কার্যালয় হয়েছে বর্তমান সরকারের গত মেয়াদে।
সিরাজগঞ্জের রেল সার্ভিস দীর্ঘদিন বন্ধ ছিল...
বিএনপি সরকার সিরাজগঞ্জের চারটি রেল সার্ভিস বন্ধ করে দিয়েছিল। বর্তমান সরকারের গত মেয়াদে সিরাজগঞ্জ এক্সপ্রেস আবার চালু হয়েছে। উত্তরবঙ্গের সঙ্গে সিরাজগঞ্জের রেল যোগাযোগ উন্নয়নে আরও কাজ চলছে।
একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্রও তো হয়েছে সিরাজগঞ্জে।
ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বিএনপির সময় বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। সেই তিনি সিরাজগঞ্জের মানুষ হয়ে একটা বিদ্যুৎ কেন্দ্র করতে পারেননি। কিন্তু আমরা ২২৫ মেগাওয়াটের একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র সেখানে করতে পেরেছি। সংসদ সদস্য হওয়ার পর গত নয় মাসে সিরাজগঞ্জের কামারখন্দ উপজেলার ২১টি গ্রামে প্রায় ২০ হাজার নতুন বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়েছি। এই সরকারের সময়ের মধ্যে সিরাজগঞ্জে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ নিশ্চিত করবো।
অন্যান্য অবকাঠামোগত অবস্থার কতটুকু উন্নয়ন করতে পেরেছেন?
ব্রিজ কালভার্ট এবং সড়কের হিসাব সঠিক বলা যাবে না। কারণ, অনেক কাজ হয়েছে। সিরাজগঞ্জ সদরের জামে মসজিদ তিন তলা করেছি গত দুমাসে। আগামী মাস থেকে সিরাজগঞ্জের মালশামারা কবরস্থান মসজিদের উন্নয়ন কাজ শুরু করবো। কামারখন্দ উপজেলার কেন্দ্রিয় মসজিদটিও সুন্দর করে দেবো। এছাড়া শ্মশান, মন্দিরেও অনুদান দেয়া হচ্ছে। কারণ, আমরা ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতিতে বিশ্বাস করি। সাম্প্রদায়িক সম্প্রতি বজায় রাখতে চাই।
উত্তরবঙ্গে বিএনপি-জামায়াতের বেশি প্রভাবের কথা বলা হয়। এখনও কি এ ধরনের প্রভাব আছে?
সাংগঠনিকভাবে উত্তরবঙ্গে জামায়াত-বিএনপির প্রভাব আছে বলা হয়। যেকারণে কোনো নেতা সিরাজগঞ্জের হাল শক্তভাবে ধরেননি। তৃণমূল পর্যায়ে এখন এই অবস্থা আর নেই। বিগত পাঁচ বছরে আমরা সাংগঠনিকভাবে আওয়ামী লীগকে সিরাজগঞ্জে শক্তিশালী করার কাজ করছি। সম্মেলন করেছি। আমাদের কর্মী, সমর্থক আরো বেড়েছে।
তৃণমূল থেকে জেলা পর্যন্ত আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক অবস্থা কী?
আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেছেন জেলায় জেলায় কমিটি করার জন্য। পর্যায়ক্রমে আওয়ামী লীগের প্রায় সব সহযোগী সংগঠনের সম্মেলন করে নতুন কমিটি করছি। ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে সংগঠনের নতুন কমিটি হচ্ছে। আগামী তিনমাসের মধ্যে জেলা কমিটির সম্মেলনও হয়ে যাবে বলে আশা করছি।
সংসদ সদস্যদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় স্থানীয় বরাদ্দ নিয়ে দুর্নীতি-অনিয়মের অভিযোগ ওঠে...
একজন সংসদ সদস্যে জন্য দুর্বল জায়গায় হচ্ছে টিআর, কাবিখার গম। মসজিদ, মন্দিরের গম বিক্রি করে খেলে আর যাই হোক ভাল মানুষ বলা যাবে না তাকে। সংসদ সদস্য হওয়ার পর অনেকেই আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়ে যায়। অনেকে সংসদ সদস্য মনোনয়ন পেয়েও এ কাজ করে। এটি কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়।
আপনি কীভাবে এসব বরাদ্দ বণ্টন করেন?
সব বরাদ্দগুলো নিয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং দলের লোকজনদের নিয়ে বসে কার এলাকায় কতটুকু দরকার আছে আলোচনার ভিত্তিতে তা বণ্টন করে দেই। সাংবাদিকদের দিয়ে কমিটি করে দিয়েছি। পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়েও জানানো হয় কোন কাজের জন্য কতটুকু বরাদ্দ দেয়া হল। আপনারা বুঝে নিন কাজ ঠিকভাবে হচ্ছে কিনা। আমি চেষ্টা করছি স্বচ্ছতার সাথে কাজ করতে।
পাঁচ বছর পর ব্যক্তিগত ভাবমূর্তি কতটুকু ধরে রাখতে পারবেন?
আল্লাহর রহমতে আজ থেকে পাঁচ বছর পর আবার যখন নির্বাচনে যাবো তখন এ কথাগুলো মিলিয়ে দেখবেন। কখনও কোনো দুর্নীতি অনিয়ম পাবেন না। মানুষ আমাদের জন্য দোয়া করছে, প্রশংসা করছে। বিএনপি-জামায়াতের লোকজনও সৎ ও ভাল মানুষ হিসেবে আমার প্রশংসা করে। এটা ধরে রাখবো শতভাগ, ইনশাল্লাহ।
চিত্ত বিনোদনের উৎকর্ষতার জন্য কী করছেন?
সিরাজগঞ্জ শহরের মাঝখান দিয়ে চলে গেছে কাটাখালি নদী। অনেকে এই নদী দখল করেছে। দখলদারদের বিরুদ্ধে শিগগির উচ্ছেদ অভিযান শুরু করবো। এটিকে পুরোপুরি সংরক্ষণ করা গেলে নয়ানাভিরাম একটি কেন্দ্রে পরিণত হবে। শিশু রাসেল পার্ক ১৯৯৭ সালে শুরু হওয়ার কথা ছিল। বিএনপি এটি ভেঙে ফেলেছিল। এবছর আমরা এটির কাজ শুরু করবো।
ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়নের সঙ্গেও আপনি কাজ করছেন?
ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়ন নিয়ে সম্প্রতি একটি সভা হয়েছে। এশিয়া প্যাসিফিকের দেশগুলোর প্রতিনিধিরা তাতে ছিল। বাংলাদেশ থেকে ওই সভায় আটজন অংশ নেয়। আমি তাদের মধ্যে ছিলাম। আমাকে ফোকাল পয়েন্টের দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, ইউএনএফপিএ, ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়নসহ অন্যদের সঙ্গে যোগাযোগ-সম্পর্ক করে কীভাবে কার্যক্রম বাড়ানো যায় এটি ছিল আমার দায়িত্ব।
পার্লামেন্টারি ইউনিয়নের মাধ্যমে কী ধরনের কাজ হবে?
এরই মধ্যে চারটি বিষয় ঠিক করেছি। বাল্য বিয়ে, মা মৃত্যুর হার কমানো, যুব উন্নয়ন এবং জন্ম নিবন্ধন। পার্লামেন্টরি ইউনিয়নে প্রতিনিধি জেনেভা থেকে সম্প্রতি এসেছিলেন। তারা আমাদের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহ দেখিয়েছেন। গ্রাম পর্যায়ে এটিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চলছে।
শুরু হচ্ছে কবে থেকে?
আগামী মাসে কামারখন্দের চারটি এবং সিরাজগঞ্জের ছয়টি ইউনিয়নে তিনটি অনুষ্ঠান করবো। মাননীয় স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ সেখানে থাকবেন। যেখানে বিভিন্ন বয়সের নারীরা বাল্য বিয়ে, মা মৃত্যুর হার কমানো নিয়ে আলোচনা করবেন। চিকিৎসকদের জ্ঞানের বাইরে সরাসরি তাদের কাছ থেকেও এসব বিষয়ে পরামর্শ নেয়া হবে।
কমিউনিটি ক্লিনিকের সেবা বাড়াতে কী ধরনের পরিকল্পনা আছে?
সিরাজগঞ্জে ৪৪টি কমিউনিটি ক্লিনিক আছে। প্রতিটি ক্লিনিকে দক্ষ ধাত্রী দিয়ে সন্তানপ্রসবের ব্যবস্থা করতে চাই। এখনও ৭১ ভাগ নারী বাড়িতে সন্তানপ্রসব করেন। এটিকে আমরা যদি ৫০ শতাংশে নিয়ে আসতে পারি তাহলে মাতৃমৃত্যুর হার কমে আসবে।
ব্যক্তিগত পর্যায়ে আপনি এলাকায় শিক্ষাবৃত্তিসহ শিক্ষামূলক কার্যক্রম প্রসারে কাজ করছেন...
আমার বাবা মারা যান ২০০০ সালের ডিসেম্বরে। তার পর বাবার নামে আনাসারী ফাউন্ডেশন করি। এখান থেকে শিক্ষার্থীদের বৃত্তি দেয়া শুরু করেছি। গত বছরও ছানাউল্লাহ আনসারী বৃত্তি পরীক্ষায় দুই হাজার শিক্ষার্থী অংশ নিয়েছে। সবাইকে আমরা সনদ দিয়েছি। একশর মতো শিক্ষার্থীকে পুরস্কৃত করেছি।
একটি স্কুল করেছেন নিজ খরচে।
বাবা মায়ের নামে ব্যক্তিগত খরচে মল্লিকা-সানাউল্লাহ আনসারী স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছি। সরকার এখন বিনামূল্যে বই দেয়। কিন্তু প্রতিষ্ঠাকাল থেকে আমি নিজের টাকায় বই কিনে বিনামূল্যে শিক্ষার্থীদের দিয়েছি। শিক্ষকদের বেতন-ভাতা, শিক্ষার্থীদের স্কুল পোশাকও আমি দিয়ে আসছি।
বৃক্ষরোপন প্রকল্প হাতে নিয়েছিলেন, সেটি কী অবস্থায় আছে?
সিরাজগঞ্জে ১০ লাখ গাছ লাগানোর কাজে হাত দিয়েছি। এরই মধ্যে আড়াই লাখ গাছ লাগিয়েছি। এতে পরিবেশের উন্নতি হচ্ছে। পাশাপাশি নদী ভাঙন এলাকায় মাটিকে ধরে রাখতে গাছ খুবই উপকারী। সবুজ বিপ্লব ঘটাতে চাই।
মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান ডব্লিউ মজিনা বলেছেন অন্তবর্তীকালীন নির্বাচন বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে। কীভাবে দেখছেন বিষয়টিকে?
মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে এই দেশ স্বাধীন হয়েছে। বিদেশিদের দিকে তাকিয়ে মুক্তিযুদ্ধ হয়নি। এখন দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি নিয়ে তারানকো, মজিনা বা বান কি মুন কী বললো সেদিকে তাকিয়ে থাকলে দেশ এগোবে না। এগুলো মানুষের আলোচনার খোরাক হতে পারে। তবে জনগণই ঠিক করবে যে দেশ কীভাবে চলবে।
তাহলে অন্তর্বর্তীকালীন নির্বাচনের কোনো সম্ভাবনা নেই?
জনগণ আওয়ামী লীগকে চায় বা না চায় এটা ঠিক হবে ২০১৯ সালের নির্বাচনে। এর আগে নির্বাচন নিয়ে কোনো আলোচনার সুযোগ নেই। এখন আলোচনা হবে দেশের উন্নয়নকে কীভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়।
বিএনপি আন্দোলনে যাবে বলছে...
গত বছরের এ সময়টাতে অনেকে বললেন ঈদের পর আন্দোলন করে সরকারকে সরিয়ে দেয়া হবে। ২৫ অক্টোবর সরকারের শেষ সময়। এ ধরনের কথা অনেক আগে থেকেই শোনা যাচ্ছে। কিন্তু কোন ঈদের পর এটা পরিষ্কার নয়। আর আওয়ামী লীগ আন্দোলনে ভীত নয়।
বিএনপি তো দাবি করছে তাদের সঙ্গে জনসমর্থন আছে।
জনপ্রিয়তার সঙ্গে জনসম্পৃক্ততাও দরকার আছে। বিএনপি এখন জনবিচ্ছিন্ন দলে পরিণত হয়েছে। শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করার অধিকার বিএনপি আছে। কদিন আগে ব্রাহ্মণবাড়িয়া, জামালপুরে বেগম খালেদা জিয়ার সমাবেশ হয়ে গেল। সেখানে কেউ তাদের বাধা দেয়নি। সিরাজগঞ্জে ওপর দিয়ে রোড মার্চ হয়েছে। বেগম খালেদা জিয়ার বহরে ছিল ৩৫টি গাড়ি। কিন্তু একটা সময় শত শত গাড়ি যেত। বিএনপির এই দুর্দশা দেখে আমিও অবাক হয়েছি।
বিএনপি নেতারা দাবি করছেন সরকার মামলা-হামলা করছে তাদের ওপর...
জেল-জুলুমের ভয় করেন। জেল-জুলুম আর রাজনীতি তো একই সুতায় গাঁথা। ভয় করলে কি আর রাজনীতি হয়?
দেশে সাম্প্রতিক সময়ে খুন ও গুমের ঘটনা বেড়েছে। এটা সুশাসন প্রতিষ্ঠায় অন্তরায় বলে মনে করছেন অনেকে?
সুশাসন প্রতিষ্ঠায় সরকার কাজ করছে। দুই একটি ঘটনায় দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে না এটা বলা যাবে না।