logo ১৯ এপ্রিল ২০২৫
জামায়াত নিষিদ্ধ নিয়ে হেলাফেলার সুযোগ নেই: নাসিরউদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু
২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৪ ২১:১২:৩১
image


বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক জগতের এক উজ্জ্বল নাম নাসিরউদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু। ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা। গণতান্ত্রিক আন্দোলন আর স্বাধীনতাবিরোধীদের বিরুদ্ধে সংগ্রামে সামনের সারিতেই থাকেন এই বয়সেও। দেখেন একটি উদার, ধর্মনিরপেক্ষ, বৈষম্যহীন সমাজ গড়ার স্বপ্ন। ধর্মকেন্দ্রিক রাজনীতি আর রাষ্ট্রব্যবস্থার বিরুদ্ধে সোচ্চার ছাত্রজীবন থেকেই, রাজনৈতিক ঘাত-প্রতিঘাতে কখনো নিজের দায়িত্ব ভুলে যাননি। আক্ষেপও আছে অনেক কিছুই না করতে পারার, তবে স্বপ্ন হারিয়ে যায়নি  মোটেও। সাম্প্রতিক নানা ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে এই নাট্যব্যক্তিকত্ব মুখোমুখি হাবিবুল্লাহ ফাহাদের।

সাঈদীর মামলার রায় কি প্রত্যাশা পূরণ করতে পেরেছে?

সাঈদীর মামলায় সর্বোচ্চ শাস্তির রায় আমরা পাইনি। আমরা সংক্ষুব্ধ। একাত্তরের রক্তাক্ত ভূমিতে দাঁড়িয়ে আমরা রাজাকার আল-বদরদের দেখি। আজকে যারা বিচার করছেন তারা ২০১৪ সালের একটি স্বচ্ছভূমিতে দাঁড়িয়ে বিচার করছেন। দুইজনের মধ্যে দেখার দৃষ্টিভঙ্গির আকাশ-পাতাল তফাৎ আছে। বিচারকরা তাদের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে রায় দিয়েছেন, সেটা নিয়ে আমি চ্যালেঞ্জ করছি না। কিন্তু এ রায় একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আমার কাছে গ্রহণযোগ্য নয়।

যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের গতি মন্থর হয়ে গেছে বলা হচ্ছে। আসলে এটা কি ঠিক?

বিচারের গতি একটু কম। কিন্তু আমাদের অস্থির হলে চলবে না। আমার মনে হয়, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার তাড়াহুড়ো করে নয়, সময় নিয়ে করা ভালো। তবে সেটা অনাধিকাল পর্যন্ত যেন না চলে। আশা থাকবে পুরো বিচার প্রক্রিয়াটাকে সুচারুরূপে ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা। আবেগতাড়িত হয়ে কিংবা কোনো পক্ষের চাপে যেন বিচারকরা রায় না দেন, এটাই চাওয়া।

আপিল বিভাগের অপেক্ষমাণ মামলাগুলো কি দ্রুত নিষ্পত্তি হওয়া দরকার নয়?

উচ্চ আদালতের আপিল বিভাগে যেসব মামলা গেছে সেগুলোর রায় দ্রুত দিয়ে দেশকে একটি স্থিতিশীল পরিস্থিতির দিকে নিয়ে যাওয়া উচিত।

জামায়াতের সঙ্গে সরকারের অলিখিত আঁতাত হয়েছে বলে অভিযোগ তোলা হচ্ছে...

আমার মনে হয় না এ ধরনের কিছু হয়েছে। এটা একটা অপপ্রচার। মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে যেমনটি হয়েছিল, তেমন। আওয়ামী লীগ কোন কারণে জামায়াতের সঙ্গে আঁতাতে যাবে? বলা হয় আন্তর্জাতিক চাপ। এটা তো কাদের মোল্লার ফাঁসির ব্যাপারেও ছিল। গোলাম আযমের রায়ের সময়ও ছিল। কিন্তু তখন তো কিছু হয়নি।

সংবিধানের ক্ষমতাবলে রাষ্ট্রপতি সাজাপ্রাপ্ত আসামিকে ক্ষমা করে দিতে পারেন। যুদ্ধাপরাধীদের ক্ষেত্রে বিষয়টি কী হবে?

জেনেভা কনভেনশনে বাংলাদেশ স্বাক্ষর করেছে। সেখানে মানবতাবিরোধী অপরাধীদের আলাদা করে চিহ্নিত করা আছে। তাদের কোনো ধরনের অনুকম্পা না দেখানোর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত আছে। সেই আলোকে রাষ্ট্রপতির ক্ষমতাকে অক্ষুণœ রেখে একটি সংশোধনী আনা দরকার। সেটা হচ্ছে মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী ও যুদ্ধাপরাধী ছাড়া আর সবাইকে রাষ্ট্রপতি ক্ষমা করতে পারবেন।

জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধের বিষয়টি কেন জরুরি?

এটা নিয়ে হেলাফেলা করার সুযোগ কারো নেই। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিভিন্ন রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, জামায়াত যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত। তাই আমাদের দাবি যৌক্তিক এবং এর আইনগত ভিত্তি রয়েছে।

জামায়াতকে নিয়ে তো দেশের বড় বিরোধীদল রাজনীতি করছে। এটাকে কীভাবে দেখছেন?

জামায়াতের সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে যারা রাজনীতি করে তারা নিশ্চিতভাবে জনগণ দ্বারা প্রত্যাখ্যাত হয়েছে এবং আগামীতেও হবে।

জামায়াত নিষিদ্ধে বাধা কোথায়?

জামায়াতকে নিষিদ্ধ করতে না পারায় সংকটে আছে বর্তমান সরকার। এ বিষয়টি সামনে নিয়ে আসা জরুরি। মুক্তিযোদ্ধা এবং এদেশের জনগণের দাবি, যুদ্ধাপরাধ আইনে এবং যুদ্ধাপরাধী সংগঠন হিসেবে জামায়াতকে নিষিদ্ধ করা হোক। সরকার দ্রুত উদ্যোগী হবে বলে আশা করছি।

রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতের নিবন্ধন বাতিলের উদ্যোগ তো নেওয়া হয়েছে।

নিবন্ধনের বিষয়টি আলাদা। আরও ১০টি দলের নিবন্ধন বাতিল নিয়ে মামলা হতে পারে। কিন্তু যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে আরও ১০টি দলকে নিষিদ্ধ করার কথা উঠবে না। এখানে দুটি প্রেক্ষাপট আলাদা। যুক্তি আলাদা। দোষও আলাদা। একটি হচ্ছে সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হওয়ায় নির্বাচনে দল হিসেবে যোগ্যতা হারানো। আরেকটি হচ্ছে মানবতাবিরোধী অপরাধ আইনে তাদের নিষিদ্ধ করা এবং শাস্তি দেওয়া।

অর্থমন্ত্রী বলেছেন জামায়াতকে নিষিদ্ধ করা হলে তারা গোপন তৎপরতা চালাতে পারে। এটা দিয়ে তিনি কী বোঝাতে চেয়েছেন?

জামায়াতকে নিষিদ্ধ করলে তারা নিষিদ্ধ দলের মতো ভেতরে ভেতরে আরও সহিংস কাজ করবে, এটাই হয়ত তিনি বলতে চেয়েছেন। কিন্তু গত বছর জামায়াত দেশের সীমান্ত অঞ্চলসহ বিভিন্ন জায়গায় যে দাঙ্গা পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছিল সেটা কি কোনো নিষিদ্ধ দলের সন্ত্রাসী কাজের চেয়ে কোনো অংশে কম? তাদের ওভারগ্রাউন্ডে রেখেও আমরা সুবিধা করতে পারব না।

গোপন তৎপরতা চালাবেÑএই চিন্তা কি জামায়াত নিষিদ্ধে বাধা হতে পারে?

জামায়াত গোপন তৎপরতা চালাবে কি চালাবে না সেটা তাদের সিদ্ধান্ত। সেটার ওপর ভিত্তি করে আইন পরিচালিত হবে না। আইন বিভাগ সেটা দিয়ে প্রভাবিত হবে না।

দায়িত্বশীল একজন মন্ত্রী যদি জামায়াতকে নিয়ে এ ধরনের মন্তব্য করেন তাহলে বিচার প্রক্রিয়ায় এটা কী কোনো প্রভাব ফেলবে না?

মনে হয় না। বিচারকরা এটা খুব একটা দেখেন বলে মনে হয় না। তবে সরকারের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত কী এটা আমি জানি না। কোনো একজন মন্ত্রীর কথা নিয়ে এত আলোচনা না করাই ভালো।

এখনো তো অনেকে জামায়াতের পক্ষ নিয়ে কথা বলেন, বলার চেষ্টা করেন।

জামায়াত-শিবিরকে নিয়ে সমাজের বিভিন্ন মানুষের মধ্যে যে দৃষ্টিভঙ্গি দেখছি, সেটিও সঠিক নয়। কারণ জামায়াত সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে চিহ্নিত হয়েছে। সেক্ষেত্রে অন্য সবকিছু বাদ দিয়ে তাদের যুদ্ধাপরাধী সংগঠন হিসেবে নিষিদ্ধ করা যৌক্তিক।

আরও অনেক দল ধর্মকে পুঁজি করে রাজনীতি করছে। তাদের ব্যাপারে আপনাদের মন্তব্য কী?

আমাদের দাবি, যেকোনো ধরনের মৌলবাদী সংগঠনকে বাংলাদেশে রাজনীতি করা থেকে নিষিদ্ধ করা। সেই সঙ্গে তাদের শেকড়গুলো উৎপাটিত করা হোক। এটা সরকারের মূল দায়িত্ব। এর জন্য যা যা করণীয় তা সরকারকে করতে হবে।

জামায়াতের সামাজিক অবস্থান কতটুকু শক্তিশালী বলে মনে করেন?

গ্রামাঞ্চলে ধর্মীয় অনুভূতিটা প্রবল। মুসলমান হিসেবে নিজেদের আলাদা করার রীতি তাদের মধ্যে আছে। এখানে জামায়াতের একটা সুবিধা আছে। কারণ ধর্মকে ব্যবহার করে তারা সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও শেখ হাসিনাকে তারা যেভাবে চিহ্নিত ও চিত্রিত করছে তা ভাবা যায় না।

এখন সাঈদীর রায় তাদের কাছে কী বার্তা পৌঁছে দিচ্ছে?

এখন অনেকে বলছেন, আল্লাহর নেক নজর আছে সাঈদীর ওপর, তাই তিনি বেঁচে গেছেন। শেখ হাসিনা তাকে ফাঁসিতে ঝোলাতে চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু পারেননি। এটাই লোকে বিশ্বাস করছে।

এর কারণ কী?

সবার মধ্যে শিক্ষার আলো পৌঁছেনি। দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী তো অকাট্য প্রমাণ দিয়ে একজন যুদ্ধাপরাধী হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। এটাই তো আমাদের জন্য বড় অর্জন। কিন্তু এই অর্জনটা রাজনৈতিক দলের মাধ্যমে গ্রামাঞ্চলে সাধারণ মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে পারিনি আমরা।

শিক্ষা ব্যবস্থাকে এ জন্য দায়ী করছেন?

পাঠ্যপুস্তক, মাদ্রাসা, সামাজিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে এখন পর্যন্ত ধর্মনিরপেক্ষতা, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিÑএগুলোর ব্যাপারে কার্যক্রম চালিয়ে যেতে ব্যর্থ হয়েছি। যার জন্য সাধারণ মানুষের মধ্যে সাম্প্রদায়িকতা বা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নিয়ে ভুল বোঝাবুঝি আছে।

আওয়ামী লীগ ইসলামবিরোধী বলে প্রচারণা আছে...

আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দেওয়া দল। যে কারণে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে তারা সামনে নিয়ে আসে। এই দল যদি রাজনৈতিক কলাকৌশলে ব্যর্থ হয়, সেটির দায় তাদের নিতে হবে। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি হিসেবে দলটিকে কোণঠাসা করা এবং তাদের স্বপক্ষে বুদ্ধিজীবীদের কারো কারো সমর্থন দেওয়া ন্যক্কারজনক বলে মনে করি।

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে কতভাগ লোক বিরোধিতা করেছিল?

একাত্তরে দেশের শতকরা ৮০ ভাগ লোক মুক্তিযুদ্ধের সমর্থক, ২০ ভাগ লোক নয়। এটা আমি বিশ্বাস করি।

এর পেছনে যুক্তি কী?

একাত্তরের অভিজ্ঞতা দিয়ে আমি বলতে পারব। আমি হাজার বাঙালিকে পাকিস্তান জিন্দাবাদ স্লোগান দিতে শুনেছি। গ্রামে দেখেছি, যেখানে পাকিস্তানের পতাকা উড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল, পরে আমরা গিয়ে গ্রামগুলোতে আক্রমণ করে পতাকা নামিয়ে লোকদের শাস্তি দিয়েছি। একাত্তরের অক্টোবর-নভেম্বরের দিকে ধামরাই, সাভারেই ঘটেছে এসব ঘটনা।

এই বিরোধীরা কি এখনো আছেন?

তারা এখনো আছে। তাদের বংশধর, জামায়াত, মুসলিম লীগ এখনো আছে। তার সঙ্গে জাতীয়তাবাদী দল নাম দিয়ে আরেকটি শক্তি জড়ো হয়েছে। তারা জামায়াত-শিবির না হলেও আদর্শগত দিক থেকে মিল আছে। এখানে কৌশলে ঐক্য নয়, অন্য কোনো ঐক্য আছে বলে আমি মনে করি।

১৯৭০ সালের নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছিল আওয়ামী লীগ...

১৯৭০ সালের নির্বাচনে ৭০ শতাংশের কিছু বেশি লোক নৌকায় ভোট দিয়েছিল। বাকিরা ভোট দিয়েছিল নৌকার বিপক্ষে। এই হিসাবটা আমরা হারিয়ে ফেলেছি। এটা আমাদের মাথায় রাখা উচিত ছিল। এই বিরোধীরা পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর এই শক্তি খুব দ্রুত সংগঠিত হয়েছে। তারও দুই বছর আগে থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের হাইজাকার প্রমাণের চেষ্টা করে সমাজে জায়গা করে নিয়েছে। ইসলাম গেল, ইসলাম গেল বলে ধুয়া তুলেছে। এসব অপপ্রচার।

জাতীয় নির্বাচনের আগে হেফাজতে ইসলামের উত্থানটার পেছনে কোনো কারণ ছিল বলে মনে করেন?

হেফাজতের আগমন, জামায়াতের উত্থান এবং পরবর্তীতে সহিংসতা এটার পেছনে একটা নীল নকশা ছিল। অনির্বাচিত, অসাংবিধানিক এবং অরাজনৈতিক সরকার আসার পথ তৈরি করা হয়েছিল। এর মাধ্যমে সহজেই বাংলাদেশকে ইসলামী রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে পারত। কিন্তু বর্তমান সরকার তাদের শক্ত হাতে দমন করে সঠিক কাজ করেছে। এছাড়া কোনো উপায় ছিল না।

গণজাগরণ মঞ্চ করার চিন্তা এসেছিল কীভাবে?

২০১৩ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি জামায়াত নেতা কাদের মোল্লার মামলার রায়ের পর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের নিচে দাঁড়িয়ে টেলিভিশনের মাধ্যমে সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলাম, রায় প্রত্যাখ্যান করে প্রতিবাদ জানান। রাস্তায় নেমে আসুন। সেইভাবে ব্লগাররাও আহ্বান জানিয়েছিল। কেউ চারুকলার সামনে, মধুর কেন্টিনে একত্রিত হয়েছি। পরে সবাই সমবেত হয়ে শাহবাগে গিয়েছি।

গণজাগরণ মঞ্চের মূলত উদ্দেশ্য কী ছিল?

গণজাগরণ মঞ্চে নানা মতের, নানা পথের, নানা বিশ্বাসের মানুষ একত্রিত হয়েছিল। সবার লক্ষ্য ছিল যুদ্ধাপরাধীদের বিচার। বিচারে বাদীপক্ষের আপিল করার সুযোগ থাকতে হবে। আমরা ওই আন্দোলন সফলভাবে চালিয়েছি।

শুরু থেকে গণজাগরণের হয়ে কথা বলেছেন আপনি। পরে মুখপাত্র পরিবর্তন হলো কেন?

শুরুর দিন থেকে ধারবাহিকভাবে আমি গণজাগরণ মঞ্চের সঙ্গে জড়িত ছিলাম। আমাকে সবাই চেনে বিধায় নানা ধরনের কথা বলায় সুবিধা হয়েছে। পরে ৮ ফেব্রুয়ারি আমি ব্লগার ইমরান এইচ সরকারকে গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ঘোষণা করি। আমাকে দিয়ে এ ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল।

ওই নেতৃত্ব কি সঠিক ছিল?

সে সময় আমাদের ছাত্র, যুব, অনলাইন এবং সাংস্কৃতিক নেতৃত্ব সঠিকভাবে ছিল। কিন্তু আমরা বুঝতে অক্ষম হয়েছিলাম যে, একটি লক্ষ্যকে সামনে রেখে এখানে জনগণ এসেছে। কারো কোনো ক্যারিশমার জন্য তো কেউ আসেনি। তরুণ নেতৃত্ব গণজাগরণ মঞ্চ চালিয়েছে। সিনিয়র হিসেবে তারা অনেক সময় আমার কথা শুনেছে।

গণজাগরণ মঞ্চের ভাঙন কখন শুরু হলো?

যেদিন মঞ্চ থেকে ঘোষণা দেওয়া হলো যে, আমরা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ঘেরাও করব সেদিন ছাত্রলীগ আমাদের সঙ্গ ত্যাগ করল। তারা বলল আমরা আপনাদের সঙ্গে আর নেই।

তার আগে কী ঘটেছিল?

১৭ ফেব্রুয়ারি মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় বাদী পক্ষকে আপিলের সুযোগ রেখে সংশোধিত আইন পাস হয়। তোফায়েল আহমেদ, রাশেদ খান মেনন, সাবের হোসেন চৌধুরী এবং ফজলে হোসেন বাদশা আমাকে ফোনে বললেন, আমরা আসছি শাহবাগে। আমি বললাম আসুন। তারা আসলেন। তারা বক্তব্য রাখলেন। আইন পাসের বিষয়ে জানালেন। পরে আমরা সংসদকে অভিনন্দন জানালাম। পরবর্তী পর্যায়ে আমরা আলোচনা করে বললাম, আমরা এখন কী নিয়ে ঘরে ফিরব? রাস্তা থেকে সমাবেশ বন্ধ করে। কেন ফিরব? আমরা আমাদের বিজয়ের ফসল জনগণকে দিতে চাই। বিজয়ের ফসল ঘরে তুলতে চাই। সবাই আমাকে ভুল বুঝল।

কেন ভুল বুঝল?

আমি বললাম, এত দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন চালানো যায় না। জনগণ স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে চায়। আন্দোলনের নানা ধরনের ধাপ আছে। এগুলো আমাদের অনুধাবন করতে হবে। কখনো রাস্তায়, কখনো ঘরে, কখনো লেখালেখিতে, কখনো নীরবতায়। আন্দোলন তো বন্ধ হচ্ছে না। এটা তো চলবেই।

তরুণরা কী বলেছিল?

তারা বলল না। আমরা প্রতিটি যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসির রায় শুনে ঘরে ফিরব। এটা ছিল অবাস্তব কথা। জনগণকে যদি সেদিন আমরা সাফল্যের সম্পদ হাতে তুলে দিয়ে বাড়ি পাঠাতে পারতাম তাহলে আবারও এরকম সংকটে ডাক দিলে লাখ লাখ মানুষ আসত।

তাহলে জনগণ কি সফল হয়ে ঘরে ফেরেনি?

জনগণ তো তার গৌরব, বিজয় নিয়ে ঘরে ফেরেনি। গণজাগরণ মঞ্চের ভাঙনের মধ্য দিয়ে বীতশ্রদ্ধ হয়ে ঘরে ফিরেছে। তার মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলো সম্পর্কে নানা কুৎসা রটনার ঘটনা জনগণকে বিভ্রান্ত করেছে। নানা অঙ্গন থেকে এটা করা হয়েছে।

গণজাগরণ মঞ্চে ছাত্রলীগের ভূমিকা কী ছিল?

ছাত্রলীগ ছিল গণজাগরণ মঞ্চের অন্যতম প্রধান শক্তি। তারাই দুই-তৃতীয়াংশ ছিল। পরে যখন ছাত্রলীগ বলে আমরা আর নেই তখন আমরা ছোট হয়ে আসলাম। নিজেদের মধ্যে নানা ধরনের কাদা ছোড়াছুড়ি হয়েছে।

গণজাগরণ মঞ্চের বিভক্তির শুরুটা কীভাবে?

ব্লগ বয়ান দুই ভাগ হলো। কানিজ এবং অনিমেষ একদিকে গেল। আর আরিফ জেবতিক এবং ইমরান এইচ সরকার একদিকে গেল। বাপ্পাদিত্য বসুরা গণজাগরণ মঞ্চ থেকে বেরিয়ে শাহবাগ আন্দোলন করল। শাহীনরা গণজাগরণ মঞ্চ করল যেটা ইমরানবিরোধী। ইমরান নিজেও একটা গণজাগরণ মঞ্চ নিয়ে থাকল। মোট পাঁচটি ভাগ হলো।

এর পেছনে কারো হাত ছিল বলে মনে করেন?

এর পেছনে কারো কোনো ভূমিকা ছিল না বলে মনে করি। এটি আমাদের নেতৃত্বের অদূরদর্শিতা, আবেগ, তাৎক্ষণিক সাফল্যকে সঠিকভাবে বিচার করতে না পারা। তার মধ্যে নতুন করে কর্মসূচি তৈরি করার ব্যর্থতাও আছে। যেই ব্যর্থতার দায় আমিও এড়াতে পারি না।

গণজাগরণ মঞ্চের বর্তমান পরিস্থিতিকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?

আমি গণজাগরণ মঞ্চে এখন আর যাচ্ছি না। সব মিলিয়ে এই মুহূর্তে গণজাগরণ মঞ্চের বিভক্তি এই মঞ্চের সাফল্যকে প্রায় ম্লান করে দিয়েছে। এটি আমাদের জীবনের একটা বড় ট্রাজেডি। আমি কোনো বিভাজনে যাব না। কোনো পক্ষাবলম্বন করব না।

এখনো কি এই বিভেদ দূর করা সম্ভব নয়?

আমরা বলেছি তোমরা নিজেরা নিজেরা কথা বলে এক হও। আমাদের ডাক দাও। আমরা যেতে রাজি আছি। কিন্তু বিভক্তির মধ্যে সেখানে যেতে চাই না। আমরা যারা সুশীল সমাজের মানুষ আছি সবাই ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে সমর্থন দেব।

গণজাগরণ মঞ্চ নিয়ে সরকারের অবস্থান আসলে কী?

কয়েকদিন আগে নতুন করে কর্মসূচি দিয়েছে গণজাগরণ মঞ্চ। ওখানে লোকও তো খুব একটা হয়নি। অল্প কয়েকজন লোক নিয়ে রাস্তা বন্ধ করার অধিকার তো আমাদের নেই। লাখ লাখ মানুষ এসে রাস্তা বন্ধ করে দিক এটাতে আপত্তি নেই।

আওয়ামী লীগ কি এখন গণজাগরণের সঙ্গে আছে?

না থাকলে তো শাহবাগে আমাদের দাঁড়াতেই দিত না। আওয়ামী লীগকে সব সময় গণজাগরণ মঞ্চের সঙ্গে থাকতে হবে এমন কোনো কথা নেই। তাদের তো নিজস্ব রাজনীতি আছে। তারা আমাদের আন্দোলন থেকে কোনো সুবিধা নিতে চায়, সেখানে আপত্তি করলেও তারা নেবে। আমরা তো রাজনীতি করি না। করছি সামাজিক আন্দোলন। কিন্তু আমরা কেন একহতে পারলাম না? আমাদের তো যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ছাড়া অন্য কোনো উদ্দেশ্য নেই। নিশ্চয়ই কারো কোনো উদ্দেশ্য আছে, যেটা আমার জানা নেই।

মুক্তিযুদ্ধের উপ-প্রধান সেনাপতি এ কে খন্দকার শেষ বয়সে এসে বই লিখে মুক্তযুদ্ধ নিয়ে কেন বিতর্ক সৃষ্টি করলেন বলে মনে করেন?

আমার মনে হয় তিনি বড় ভুল করেছেন। ৭ মার্চের ভাষণ তিনি সরাসরি শোনেননি। শুনেছেন একদিন পর রেডিওতে। ওই ভাষণ তো সব জায়গায় রেকর্ড আছে। কোথাও তো জয় পাকিস্তান নেই। তাহলে ওই ভাষণ কি পাকিস্তানই এডিট করে ‘জয় পাকিস্তান’ ফেলে দিয়ে রেডিওতে চালিয়েছে? স্যারের তো এগুলো জানা উচিত ছিল।

তিনি বলেছেন বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষণা দেননি।

তাহলে রাজারবাগ থেকে সুবেদার শাহজাহান ২৫ মার্চ রাতে যে বিদ্রোহ করেছিল সেটা কেন? ২৮ মার্চের টেলিগ্রাফসহ আন্তর্জাতিক পত্রিকাতেও লেখা হয়েছে ‘মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেছেন’। তারা এটা কেন লিখলেন?  চট্টগ্রামে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে ২৬ মার্চ হান্নান ও আবুল কাশেম সন্দ্বীপের কণ্ঠে বঙ্গবন্ধুর দেওয়া স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পড়া হয়। রাস্তাতেও এটা দেওয়া হচ্ছিল। কিন্তু এটা খন্দকার স্যার বিবেচনায় নিলেন না।

এ কে খন্দকার মুক্তিযোদ্ধাদের অবদানকে খাটো করার চেষ্টা করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে তিনি যা লিখেছেন তা দুঃখজনক। তিনি লিখেছেন মুক্তিযোদ্ধাদের গ্রেনেড, পিস্তল দেওয়া হতো। কিন্তু আমাদের পিস্তল দেওয়া হয়নি। আমরা খালি পায়ের যোদ্ধা ছিলাম। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ দুটি বাহিনীর মধ্যে যুদ্ধ ছিল না। ছিল গণযুদ্ধ। এই যুদ্ধ ছিল পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে। জনগণ দ্বারা পরিচালিত ও সংগঠিত। এটাকে সামরিকীকরণের চেষ্টা খুবই অন্যায়ের কাজ।

যুদ্ধের সময় এ কে খন্দকার তো কলকাতায় ছিলেন...

হ্যাঁ, তার পক্ষে তো সম্ভব নয় তিন শ কিলোমিটার দূরে থেকে মুক্তিযোদ্ধারা কীভাবে যুদ্ধ করছে, কে প্রাণ দিয়েছে এগুলোর খবর রাখা। বাংলাদেশের ভেতরে কোথায় কীভাবে লড়াই হয়েছে, এটা তার জানার কথা নয়। স্যার মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে উপ-প্রধান সেনাপতি ছিলেন নমস্ব ব্যক্তি। কিন্তু ভুলভাবে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ব্যাখ্যা করছেন। তার জানাশোনায় ঘাটতি আছে। তিনি গভীরে ঢুকে লেখাটি লেখেননি।

সরকারের পাঁচ সচিব ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে প্রমাণিত হয়েছেন। এটাকে কীভাবে দেখছেন?

এটা খুবই গর্হিত কাজ হয়েছে। শুধু সনদ বাতিল করলেই হবে না। তাদের শাস্তি দেওয়া উচিত। আইনে এ ধরনের অপরাধের জন্য যে শাস্তি রয়েছে সেটাই তাদের প্রাপ্য।

মুক্তিযোদ্ধাদের যেসব সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হচ্ছে তা নিয়ে আপনার মন্তব্য কী?

মুক্তিযোদ্ধাদের সরাসরি যে সুবিধা দেওয়া হচ্ছে সেটা আমি সমর্থন করি। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তান, নাতি-নাতনিদের চাকরিতে, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিতে কোটা সুবিধা দেওয়াকে আমি সমর্থন করি না। কোনো মুক্তিযোদ্ধা কিছু পাওয়ার জন্য মুক্তিযুদ্ধ করেনি। শুধু স্বাধীন দেশ চেয়েছে। নৈতিকতার জায়গা থেকে জাতীয় বীররা কোনো কিছু প্রত্যাশা করে না। কিন্তু অসুস্থতা, বার্ধক্য বা অর্থনৈতিক অনটনে যদি কোনো মুক্তিযোদ্ধাকে সরকার সহায়তা দেয় সেটা আমি সমর্থন করি। তারপর ছেলে বা মেয়েকে একটা চাকরি দিলে সেটাও মেনে নেওয়া যায়। কিন্তু তার পর মুক্তিযোদ্ধার নাম করে নাতি, নাতির ঘরে ছেলেমেয়েকে সুযোগ-সুবিধা দেবেন, এটা করে ৮০-৯০ দশকে জন্মানো তরুণ ছেলেমেয়েদের বঞ্চিত করা হচ্ছে। তারাও আশা করে ভালো একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বে, ভালো চাকরি করবে। এর মধ্য দিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের বড় জনগোষ্ঠী থেকে সরিয়ে ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীতে পরিণত করা হচ্ছে। মুক্তিযোদ্ধারা বাংলাদেশের মানুষের প্রতিনিধিত্ব করে, কোনো ক্ষুদ্রাংশের নয়।

‘গেরিলা’ চলচ্চিত্র নির্মাণের পেছনে কী চিন্তা ছিল?

মুক্তিযুদ্ধ এতবড় ঘটনা সেটা নিয়ে বড় উপন্যাস হয়নি। ভাষা আন্দোলন নিয়ে বড় কোনো উপন্যাস হয়নি। মুক্তিযুদ্ধের ওপর আমি মহাকাব্যিক বিস্তারের সিনেমা করতে চেয়েছিলাম। জাতীয় যুদ্ধের বীরত্বগাথা তুলে আনা যায় কি না সেই চেষ্টা করেছি। দর্শক পছন্দ করেছে, আমি খুশি হয়েছি। কিন্তু আমি মনে করি না আমি অনেক ভালো একটি ছবি বানিয়ে ফেলেছি। আমার আরও ভালো করা উচিত ছিল। আরও বেশি প্রতিনিধিত্বমূলক হতে পারত।

গেরিলার সাফল্যে আপনি কি তৃপ্ত

আমি শিল্পী হিসেবে তৃপ্ত নই। আমার অনেক কাজ করার বাকি আছে বলে মনে হয়। বয়সটা পক্ষে থাকলে অনেক কাজ করতে পারতাম। কিন্তু বয়সটা পক্ষে নেই।

যে আশা নিয়ে ‘গেরিলা’ নির্মাণ করেছেন তা কি পূরণ হয়নি?

আমার চলচ্চিত্রগুলো জনগণকে উদ্বুদ্ধ করেছে। ১৯৯১ সালে ‘একাত্তরের দৃশ্য’ মুক্তি পেয়েছে। এর পর পরই ’৯২ সালে গণআদালত হয়েছে। ২০১১ সালে মুক্তি পেল ‘গেরিলা’। ২০১৩ সালে গঠিত হলো গণজাগরণ মঞ্চ। জয়বাংলা, পদ্মা-মেঘনা-যমুনা তোমার আমার ঠিকানা। এই স্লোগানগুলো গেরিলা ছবির প্রায় পুরোটা জুড়েই ছিল। হলভর্তি দর্শকরাও জয় বাংলা বলে চিৎকার করেছে। স্লোগান দিতে দিতে হল থেকে বেরিয়েছে। এটা তো কম নয়।

মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আগামীতে কাজ করার ইচ্ছা আছে?

হ্যাঁ আছে। কিন্তু সেটা পরে বলব। এখন নয়।

সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট যে উদ্দেশ্য নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিল তা কতটুকু অর্জন হয়েছে?

সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট সামাজিক ও সাংস্কৃতিক শক্তি হিসেবে দাঁড়িয়েছে। যারা বিভিন্ন সময় সমাজের অন্যায় অবিচারের কথা বলে। আগামীতে রাজনৈতিক বিষয়গুলোর পাশাপাশি জোট সাংস্কৃতিক বিষয়গুলোকে সামনে নিয়ে আসবে বলে আশা করি।

আগামীতে জোটের পরিকল্পনা কী?

আসলে দীর্ঘ সময় কেটে গেছে রাজনৈতিক বিষয়গুলোকে সামনে নিয়ে আসতে গিয়ে। সাংস্কৃতিক আন্দোলনের মধ্য দিয়ে পুরো দেশ এবং সরকারের মধ্যে যে পরিবর্তন আনব সেই কাজ এখনো অনেক বাকি আছে।

কী ধরনের পরিবর্তন আনা জরুরি?

দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের ব্যাপার আছে। এখন সরকারের পক্ষ থেকে সংস্কৃতির জন্য মোট বাজেটের মাত্র দশমিক ১১ শতাংশ বরাদ্দ দেওয়া হয়। সেটি নিয়ে আমাদের আপত্তি আছে। সরকার বিষয়টি দেখবে বলে আমরা মনে করি। মসজিদ এবং মাদ্রাসাকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল যেভাবে কুসংস্কার ও ধর্মান্ধতার মধ্য দিয়ে অবচেতনার জন্ম দিচ্ছে, সেটা ভয়াবহ রূপ ধারণ করতে পারে।  

এ থেকে বাঁচতে কী করা উচিত?

সংস্কৃতির বিকাশ বাড়ানো দরকার। এর মধ্য দিয়ে মুক্তবুদ্ধির নাগরিক গড়ে তোলা সম্ভব হবে। সেটাই হবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাস্তবায়ন।

বর্তমান সরকারের বিগত সময়কালকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?   

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আগের চেয়ে কিছুটা ভালো হয়েছে। প্রশাসনিকভাবে সরকার চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি নয়। তবে রাজনৈতিকভাবে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি আছে। দুর্নীতির ঊর্ধ্বে থেকে সুশাসনের মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রপরিচালনা করতে পারলে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা সম্ভব।  

গ্রহণযোগ্যতা অর্জনে সরকারের কী করা উচিত?

৫ জানুয়ারির নির্বাচন অনিবার্য ছিল। ওই নির্বাচন না হলে এটি বাংলাদেশ রাষ্ট্র থেকে অন্য কোনো রাষ্ট্রে রূপান্তরিত হতো। এই সরকারকে গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করতে হলে আইনশৃঙ্খলা, মানব উন্নয়ন এবং সামাজিক উন্নয়নে ব্যাপক কর্মসূচি হাতে নিতে হবে।-এই সময়ের সৌজন্যে