logo ১৯ এপ্রিল ২০২৫
শিক্ষার্থীদের মেধার চর্চা কমে যাচ্ছে:অধ্যাপক নুরুল ইসলাম
১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৪ ২২:১৩:০৬
image


তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের পরিচালক হিসাবে দায়িত্বপালন করছেন। সম্প্রতি ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষাজীবনের নানা খুটিনাটি বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন হাবিবুল্লাহ ফাহাদ।



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় কেন বারবার জালিয়াতির অভিযোগ ওঠে?

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অনেক বড় একটা প্রতিষ্ঠান। সবার আগ্রহ থাকে। তাই অনেকে অবৈধ পন্থায় কিছু করার চেষ্টা করে।

প্রযুক্তি সহজতার কারণে প্রশ্ন ফাঁস বা বাইরে ছড়িয়ে দেওয়া সহজ হচ্ছে। এটা পরিহার করতে হলে পরীক্ষার হলে মোবাইল ফোন একেবারে নিষিদ্ধ করতে হবে।  

ভর্তি পরীক্ষায় প্রশ্ন জালিয়াতির সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেউ কেউ জড়িত বলে অভিযোগ উঠেছে...

যদি কেউ করে তবে সেটা দুঃখজনক। তদন্তে মূল ঘটনা হয়তো বেরিয়ে আসবে। এর পরও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি প্রক্রিয়া অনেক স্বচ্ছ। এখানে কোনো স্বজনপ্রীতি নেই।

মেধা বিকাশের পরিবর্তে শিক্ষার্থীরা কেন প্রশ্নপত্র ফাঁস বা এ ধরনের কাজে জড়াচ্ছে?

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে হয়তো সব মিলিয়ে ৯ হাজারের মতো আসন আছে। কিন্তু লাখ লাখ আবেদন জমা পড়ে ভর্তির জন্য। এটাই হয়তো তাদের অবৈধ পথে ধাবিত করে। তবে এর সংখ্যা খুব বেশি বলে আমরা মনে করি না।

প্রতিবছর লাখেরও বেশি শিক্ষার্থী জিপিএ ৫ পাচ্ছে। কিন্তু শিক্ষার মান নিয়ে প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে।

এত জিপিএ ৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর অনেকে ভর্তি পরীক্ষায় পাস নম্বরও (৪০) পায় না। সৃজনশীল শিক্ষাপদ্ধতি করতে গিয়ে অনেক কিছু বাদ পড়েছে। নম্বর পাওয়া সহজ হয়েছে। ৩০০-৪০০ এমসিকিউ পড়লেই হয়। এতে শিক্ষার্র্থীদের মেধার চর্চা কমে যাচ্ছে। এটাকে আমি সৃজনশীল বলতে রাজি নই।

শিক্ষার্থীদের পাঠ্যবইমুখী করার উপায় কী?

প্রতিবছর পাঠ্যক্রম পাল্টাতে হবে। গাইড কত লিখবে। প্রতিটি বোর্ডে আলাদা সিলেবাস থাকতে হবে। এটা হলেই শিক্ষার্থীরা পাঠ্যবই পড়বে। আর কোনো বিষয়ের জন্য বই নির্দিষ্ট করে দেওয়া যাবে না। এতে অনেক ধরনের বই পড়ার অভ্যাস গড়ে উঠবে।

প্রতিবছর পাঠ্যক্রম পাল্টানো কি আসলে সম্ভব?

অবশ্যই সম্ভব। সিলেবাস ব্যাংক তৈরি করতে হবে। এ জন্য বিশেষজ্ঞ নিয়োগ দিতে হবে। যারা সারা বছর এ নিয়ে কাজ করবে। শিক্ষার মান উন্নয়ন করতে হলে এটা করার বিকল্প নেই। পৃথিবীর অনেক দেশে এভাবেই হচ্ছে।

কেন শিক্ষার্থীরা সমাজকল্যাণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানে পড়তে আসবে?

এখানে ফলিত সামাজিক বিজ্ঞানের চর্চা হয়। অন্যের জন্য করার উদ্দীপনা ও শিক্ষা এখান থেকে দ্রুত অর্জন করা যায়। প্রায় সব জায়গাতেই বস্তুতান্ত্রিকতা। কিন্তু সমাজকল্যাণের শিক্ষা হচ্ছে শুধু নিজের মধ্যে নয়, অনেকের মধ্যে নিজেকে ছড়িয়ে দিতে হবে।

উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশ গমনকে কি আপনি মেধার পাচার বলবেন?

বিদেশের জ্ঞান-বিজ্ঞান আরো পরিশীলিত ও উন্নত। এটা অর্জন করার জন্য যাওয়াটা মোটেও মেধা পাচার নয়। কারণ পড়াশোনা শেষ করে অনেক শিক্ষার্থীই তো ফিরছে।

সমাজকল্যাণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের শুরুর দিকটা কেমন ছিল?

১৯৫৮ সালে কলেজ অব সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার অ্যান্ড রিসার্চ প্রতিষ্ঠা হয়। অর্থায়ন করে জাতিসংঘ ও যুক্তরাষ্ট্র। ১৯৭০ সালে এটা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট হিসেবে অন্তর্র্ভুক্ত হয়।

ইনস্টিটিউট এবং বিভাগের মধ্যে তফাতটা কোথায়?

একটি ইনস্টিটিউটে অনেকগুলো বিভাগ ও প্রোগ্রাম থাকতে পারে। কিন্তু বিভাগের মধ্যে আর বিভাগ থাকে না।

সমাজকল্যাণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের গবেষণা কার্যক্রম কতটুকু আশানুরূপভাবে পরিচালনা করা সম্ভব হচ্ছে?

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আরো যেসব প্রতিষ্ঠানে গবেষণা হয় তার চেয়ে বেশি হয় এখানে। অনার্স ও মাস্টার্স পর্যায়ে ব্যবহারিক গবেষণা আছে। থিসিস আছে মাস্টার্সে। এমফিল এবং পিএইচডি গবেষণাও হচ্ছে।

এই প্রতিষ্ঠানের গবেষণা দেশের নীতিনির্ধারণীতে কতটুকু অবদান রাখতে পেরেছে?

অনেক সময় সমাজসেবা বিভাগ, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় আমাদের গবেষণাগুলো দেখে। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ও এগুলো নিয়ে কাজ করে। তারাও এ জন্য অনেক সময় তহবিল দেয়।

সমাজকল্যাণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা কতটুকু?

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আরো যত ইনস্টিটিউট আছে তার মধ্যে আমাদের আয়তন বড় এবং ভবনে কক্ষের সংখ্যাও বেশি। এখানে সাতটি শ্রেণিকক্ষ আছে। মিলনায়তন, লাইব্রেরি সবই অন্যদের চেয়ে বড়। এদিক থেকে আমরা ভাগ্যবান।

আর সীমাবদ্ধতা?

বিশেষায়িত তিনটি মাস্টার্স প্রোগ্রাম চালু আছে। ভবিষ্যতে আমরা এগুলোকে আলাদা বিভাগ করতে চাই। সেই ক্ষেত্রে আমাদের ভবন লাগবে।

এই প্রতিষ্ঠানের জনবল কি পর্যাপ্ত?

মোটামুটি পর্যাপ্ত। তবে শিক্ষক কয়েকজন দরকার আছে। নতুন পদ তৈরি করে ইউজিসিতে পাঠিয়েছি। অনুমোদন হয়ে এলে এগুলো নিয়োগের চিন্তা হবে।

বাংলাদেশে সমাজকল্যাণ কি পেশা হিসেবে স্বীকৃত?

বাংলাদেশে এখনো এটাকে পেশার মর্যাদা দেওয়া যায়নি। ভারত, পাকিস্তানসহ উপমহাদেশের কোনো দেশেই এটা পেশা নয়। ইউরোপ-আমেরিকার দেশগুলোতে সমাজকল্যাণ পেশার মর্যাদা পেয়েছে।

পেশা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের সীমাবদ্ধতা কোথায়?

বড় বাধা পেশাগত কর্মী নেই। সমাজকল্যাণ থেকে পাস করে এই বিষয়ের ওপরেই কাজ করবে এমন সুযোগ কম। সরকারের পক্ষে এই সুযোগ সৃষ্টি করাও সম্ভব নয়। কেউ মেডিকেল সমাজকর্মী, সংশোধন বা পুনর্বাসন কর্মকর্তা হতে চায় না। তারা মনে করেন, ম্যাজিস্ট্রেট, এসপি, এএসপিতে সামাজিক মান-মর্যাদা অনেক বেশি। কিন্তু অন্য দেশগুলোতে সমাজকর্মীদের নিবন্ধনের মাধ্যমে কাজের নিশ্চয়তা দেওয়া হয়।    -সৌজন্যে এই সময়।